শ্যামল ভৌমিক, কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামে দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় খাল-বিল, নদী-নালা ও আবাদি জমিতে দীর্ঘ সময় পানি জমে থাকায় দেশী মাছের স্বাভাবিক প্রজননের ফলে বৃদ্ধি পেয়েছে দেশী মাছ। এতে জেলার বিভিন্ন হাঁট-বাজারে দেখা মিলছে প্রচুর দেশি প্রজাতির মাছ। দাম কিছুটা হওয়ায় খুশি ক্রেতারা যেমন খুশি, আর দাম কম হলেও অনেক বেশি মাছ ধরতে পেরে খুশি জেলেরাও। বৃষ্টির পানির সাথে উঠে আসা ডিমওয়ালা দেশি প্রজাতির মা মাছগুলো জেলার ১৬টি নদ-নদী ও খাল-বিলসহ বিভিন্ন জলাশয়ে পায় ডিম ছাড়ার এক সুবর্ণ সুযোগ। তাদের বিচরণ ক্ষেত্রে অবাধে ডিম ছাড়ার সুযোগ পাওয়ার ফলে এবার দেশি মাছের প্রচুর সমারোহ দেখা যাচ্ছে জেলা ও উপজেলা শহরসহ গ্রামীণ হাঁট-বাজাগুলোতে। জানা গেছে, জৈষ্ঠ্য-আষাঢ় মাস মাছের প্রজনন কাল। কিন্তু এর আগেই বিভিন্ন জলাশয়, নদী-নালা, খাল-বিলে মা মাছ নিধন করতো এক শ্রেণির অসাধু জেলেরা। বিভিন্ন পয়েন্টে কুঁচ, জুইতা, টেঁটা, কারেন্ট জাল, বেড়জাল, চাই, খরাসহ মাছ ধরার বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে সন্ধ্যা হতে গভীর রাত পর্যন্ত ডিমওয়ালা মা ও পোনা মাছ নিধনের উৎসব চলতো। বর্ষা আসার আগেই খাল বিলে মা মাছ নিধন চললেও দেখার কেউ ছিলোনা। অবৈধ কারেন্ট জাল দিয়ে নির্বিচারে ডিম ওয়ালা মা মাছ ও ছোট পোনা মাছ ধরা, খাল-বিল-ডোবা ভরাট, উন্মুক্ত জলাশয়ে বাঁধ নির্মাণসহ মাছের বিচরণক্ষেত্রের অনুকূল পরিবেশ সংকট হওয়ার কারণে দিনকে দিন দেশীয় প্রজাতির মাছ গুলো বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছিলো। কিন্তু এবার পানি বেশি হওয়ায় এবং দীর্ঘদিন নদ-নদী, খাল-বিল পানিতে পুর্ণ থাকায় সেভাবে মা মাছ নিধন করতে পারেনি অসাধু মাছ শিকারীরা। েেজলার ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা, দুধকুমার, ফুলকুমার, কালজনী, গঙ্গাধর ও সংকোষ নদীসহ বিভিন্ন খাল-বিল মূলত মাছের প্রধান উৎস। ভুরুঙ্গামারী উপজেলার মৎস্যজীবি মন্টু জানান, বর্ষা মৌসুমে মা মাছগুলো ডিম ছাড়ে। ওই সময় এক শ্রেণির অসাধু মৎস্য শিকারি কারেন্ট জাল ও ভারতীয় এক প্রকার টানা জাল দিয়ে মা মাছ শিকার করার ফলে দেশীয় প্রজাতির মাছের প্রজনন হচ্ছিল না। ফলে দেশীয় প্রজাতির এই মাছগুলো বিলুপ্তির পথে। অপর দিকে প্রকৃতির বিরূপ আচরণে বর্ষা মৌসুমেও অপর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতে উত্তরাঞ্চলের খরা প্রবণ এ উপজেলার খাল-বিল, নদী-নালা শুকিয়ে যাওয়ায় দেশি প্রজাতির মাছ বংশ বিস্তার করতে পারতো না। যতটুকু বংশ বিস্তার ঘটতো তাও আবার খরায় শুকিয়ে যাওয়ায় খাল-বিল সেচে নিধন করা হতো দেশি মাছের পোনা। কিন্তু এবার বন্যা ও বৃষ্টির পানি স্থায়ী হওয়ায় উপজেলার সোনাহাট ছড়া, পাইকেরছড়া, বহলগুড়ি বিল, কেদার বিল, তিলাই ছড়া, ভেড়ভেড়ি বিল, দলবাড়ী বিল, ঝুকিয়া বিল, নাউডাঙ্গা বিল, নলেয়া নতুন ছড়া ও শরবোঝা বিল সহ ছোট বড় অনেক খাল বিলে প্রচুর পরিমানে দেশীয় প্রজাতির মাছ পাওয়া যাচ্ছে। সুস্বাদু ও পুষ্টি গুনে ভরা দেশীয় এসব মাছের মধ্যে কৈ, মাগুর, শিং, পাবদা, টেংরা, পুঁটি, ডারকা, মলা, ঢেলা, শৌল, বোয়াল, আইড়, ভ্যাদা, বাইম, খলিশা, ফলি, চিংড়ি, টাকি, চিতল, বালিয়া, কাকিলা, চাপিলা, চাঁদা, গোল চাঁদা, আইড়, গুলশা, পাবদা, দেশি পুঁটি, সরপুঁটি, তিতপুঁটি, বাটা, পিয়ালি, ছোট টেংরা, বড় টেংরা, চান্দা, কাজলি, চ্যাং, ছোট চিংড়ি, বাতাসি, বড় বাইম, শালবাইম, কুচিয়া, টাটকিনি, ধুতরা, গছি, বইরালি, গোলসা প্রজাতির দেশীয় মাছ গুলো বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা কালিপদ রায় জানান, এবার আগাম বন্যা আসায় এবং দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় জেলার বেশির ভাগ এলাকা প্লাবিত হয়ে মাছের প্রজনন স্বাভাবিক ছিল। পাশাপাশি জেলার ১৯টি প্লাবন ভূমিতে দেশী মাছ সংরক্ষণ ও প্রজননের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেয়ায় জেলায় দেশী মাছের সরবরাহ বৃদ্ধি পেয়েছে।
|