ঢাকা ০৭:৪৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo ১৫ বছরে অন্যায় কাজের জন্য পুলিশ দুঃখিত ও লজ্জিত: আইজিপি Logo রাজশাহীতে সড়ক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের ৩ জনের Logo সমমনা দলের সঙ্গে বিএনপি মহাসচিবের বৈঠক Logo জাতীয় ইমাম পরিষদের পৌর শাখার সভাপতি আশরাফুল-সেক্রেটারি কাদির Logo শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে ভারতীয় মদ সহ গ্রেফতার-১ Logo আওয়ামী স্বৈরশাসনের সময় দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ধ্বংস করা হয়েছে :  ড্যাব মহাসচিব Logo বিনিয়োগকারী নয়, পুঁজিবাজারে অস্থিরতার নেপথ্যে প্লেয়ার ও রেগুলেটররা : অর্থ উপদেষ্টা Logo ঢাকায় বসে কোনো পরিকল্পনা করবে না: ফাওজুল কবির Logo মেঘনায় অবৈধ বালু উত্তোলন, বাল্কহেডসহ আটক ৯ Logo বান্দরবানে মাশরুম চাষ সম্প্রসারণ ও উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে কর্মশালা

অতিবৃষ্টি ও ভারতের ঢলে সীমান্তবর্তী ৫০ গ্রাম প্লাবিত

গণমুক্তি ডিজিটাল ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৯:০৫:১৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৪ ৫৬ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

 

ভারীবর্ষণ আর ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে ময়মনসিংহের সীমান্তবর্তী ৫০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লক্ষাধিক মানুষ। হালুয়াঘাট এবং ধোবাউড়া উপজেলায় বিদ্যুৎ সংযোগ এবং মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ থাকায় না প্রকৃত তথ্য মিলছে না। আজ শনিবার (৫ সেপ্টেম্বর) এ তথ্য জানান, জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ পুনর্বাসন বিভাগের কর্মকর্তা মো. সানোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া উপজেলার বিদ্যালয়গুলোকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে নারী শিশুসহ সাত শতাধিক মানুষ উঠেছে। তাদের শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায় নাই।

গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে চারটি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এতে করে দর্শা, মেনংছড়া, বোরারঘাট ও সেওলা নদীর তীরবর্তী এলাকা প্লাবিত হয়। রাতে বিভিন্ন স্থানে বাঁধ ভেঙে প্রবল বেগে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে। এতে ভূবনকুড়া ইউনিয়নের মহিষলেটি, ধোপাজুড়া, কড়ইতলী, জুগলী ইউনিয়নের গামারীতলা, জিগাতলা, নয়াপাড়া, ছাতুগাও, কৈচাপুর ইউনিয়নের নলুয়া, জয়রামকুড়া এলাকাসহ গাজীরভিটা বোরাঘাট নদীর পানি বেড়ে সূর্যপুর, সামিয়ানাপাড়া হাজনিকান্দক, আনচিংগি, বোয়ালমারাসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়।

অপর দিকে ভূবনকুড়া ইউনিয়নের দর্শা, সেওলা ও মেনংছড়া এবং গাজিরভিটা ইউনিয়নের বোরারঘাট নদীর তীরবর্তী বাঁধে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। ভাঙা অংশ দিয়ে পানি প্রবেশ করে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এছাড়া ভোগাই নদীর বিভিন্ন অংশে বাঁধ উপচে ও পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। এতে হালুয়াঘাট পৌরশহর, সদর ইউনিয়নসহ হালুয়াঘাট বাজারের বিভিন্ন অংশে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।

হালুয়াঘাট উপজেলার গাজিরভিটা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান বলেন, তার এলাকার মহাজনিকান্দক, আনচিংগি, বোয়ালমারা এলাকায় পানি বেশি। তবে সকালে পাহাড়ি ঢলে সীমান্তে সড়কের ওপরে তিন ফুট পানি ছিল। এলাকার পুকুরের মাছ সব চলে গেছে। আজ বেলা ১১টার দিকে পানি কমা শুরু করলে আবার বৃষ্টি হওয়ায় পানি বাড়ছে।

একই উপজেলার ভূবনকুড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুরুজ মিয়া জানান, গতকাল থেকে বৃষ্টি হচ্ছে। ফলে নদীগুলোতে পানি বাড়ছে। গতকাল দুপুরের দিকে শেওয়াল ও মেনেং নদীর দুটি অংশের পাড় ভেঙে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে। ঘরের ভেতরে পানি না ঢুকলেও বাড়ির উঠানে পানি প্রবেশ করে। এতে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে।

জেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, ১৫ হাজার ৪৩৮ হেক্টর ধানের জমি প্লাবিত হয়েছে। এরমধ্যে পুরোপুরি ডুবে গেছে ৯ হাজার ৭৮ হেক্টর জমি, আংশিক ডুবেছে ৬ হাজার ৩৬০ হেক্টর এবং সবজি আংশিক প্লাবিত হয়েছে ১৫৮ হেক্টর। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।

ধোবাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত শারমিন বলেন, উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত আছে। বৃষ্টি বাড়লে পানি আরও বাড়তে পারে। উপজেলায় মোট ৭টি ইউনিয়নের কিছু কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া দুটি ইউনিয়ন পুরোপুরি প্লাবিত হয়েছে। আনুমানিক ১৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি।

৭ ইউনিয়নে ১৫ হাজার মানুষ বসবাস করে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওইটা আনুমানিক বলছি। কারণ, অনেক এলাকায় এখনো কোনো খোঁজখবর নিতে পারিনি। সেসব এলাকার জনপ্রতিনিধিরা নৌকার অভাবে সব এলাকায় পৌছাতে পারেনি। এসব এলাকায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় মোবাইলে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই, সঠিক তথ্য এখনো আমরা পাইনি। সঠিক তথ্য পেতে সময় লাগবে। বন্যাদুর্গতদের খাবারের ব্যবস্থা করার জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশনা দেয়া আছে।

হালুয়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এরশাদুল আহমেদ বলেন, পানি কিছুটা কমে গিয়েছিল। পরে আজ আবারও প্রায় টানা দুই ঘণ্টা বৃষ্টি হওয়ায় পানি বেড়ে গেছে। উপজেলায় ৪টি ইউনিয়ন পুরোপুরি প্লাবিত। নারী-শিশুসহ প্রায় ৭ শতাধিক লোক আশ্রয় নিয়েছে। এছাড়া শতাধিক গরু-ছাগলও আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন বলেন, মৎস্য চাষিদের কি পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার সঠিক তথ্য এখনো আমাদের জানা নেই। উপজেলা মৎস্য অফিসারদের ক্ষয়ক্ষতির হিসাব করে পাঠানোর জন্য বলা হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

অতিবৃষ্টি ও ভারতের ঢলে সীমান্তবর্তী ৫০ গ্রাম প্লাবিত

আপডেট সময় : ০৯:০৫:১৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৪

 

ভারীবর্ষণ আর ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে ময়মনসিংহের সীমান্তবর্তী ৫০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লক্ষাধিক মানুষ। হালুয়াঘাট এবং ধোবাউড়া উপজেলায় বিদ্যুৎ সংযোগ এবং মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ থাকায় না প্রকৃত তথ্য মিলছে না। আজ শনিবার (৫ সেপ্টেম্বর) এ তথ্য জানান, জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ পুনর্বাসন বিভাগের কর্মকর্তা মো. সানোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া উপজেলার বিদ্যালয়গুলোকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে নারী শিশুসহ সাত শতাধিক মানুষ উঠেছে। তাদের শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায় নাই।

গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে চারটি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এতে করে দর্শা, মেনংছড়া, বোরারঘাট ও সেওলা নদীর তীরবর্তী এলাকা প্লাবিত হয়। রাতে বিভিন্ন স্থানে বাঁধ ভেঙে প্রবল বেগে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে। এতে ভূবনকুড়া ইউনিয়নের মহিষলেটি, ধোপাজুড়া, কড়ইতলী, জুগলী ইউনিয়নের গামারীতলা, জিগাতলা, নয়াপাড়া, ছাতুগাও, কৈচাপুর ইউনিয়নের নলুয়া, জয়রামকুড়া এলাকাসহ গাজীরভিটা বোরাঘাট নদীর পানি বেড়ে সূর্যপুর, সামিয়ানাপাড়া হাজনিকান্দক, আনচিংগি, বোয়ালমারাসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়।

অপর দিকে ভূবনকুড়া ইউনিয়নের দর্শা, সেওলা ও মেনংছড়া এবং গাজিরভিটা ইউনিয়নের বোরারঘাট নদীর তীরবর্তী বাঁধে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। ভাঙা অংশ দিয়ে পানি প্রবেশ করে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এছাড়া ভোগাই নদীর বিভিন্ন অংশে বাঁধ উপচে ও পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। এতে হালুয়াঘাট পৌরশহর, সদর ইউনিয়নসহ হালুয়াঘাট বাজারের বিভিন্ন অংশে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।

হালুয়াঘাট উপজেলার গাজিরভিটা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান বলেন, তার এলাকার মহাজনিকান্দক, আনচিংগি, বোয়ালমারা এলাকায় পানি বেশি। তবে সকালে পাহাড়ি ঢলে সীমান্তে সড়কের ওপরে তিন ফুট পানি ছিল। এলাকার পুকুরের মাছ সব চলে গেছে। আজ বেলা ১১টার দিকে পানি কমা শুরু করলে আবার বৃষ্টি হওয়ায় পানি বাড়ছে।

একই উপজেলার ভূবনকুড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুরুজ মিয়া জানান, গতকাল থেকে বৃষ্টি হচ্ছে। ফলে নদীগুলোতে পানি বাড়ছে। গতকাল দুপুরের দিকে শেওয়াল ও মেনেং নদীর দুটি অংশের পাড় ভেঙে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে। ঘরের ভেতরে পানি না ঢুকলেও বাড়ির উঠানে পানি প্রবেশ করে। এতে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে।

জেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, ১৫ হাজার ৪৩৮ হেক্টর ধানের জমি প্লাবিত হয়েছে। এরমধ্যে পুরোপুরি ডুবে গেছে ৯ হাজার ৭৮ হেক্টর জমি, আংশিক ডুবেছে ৬ হাজার ৩৬০ হেক্টর এবং সবজি আংশিক প্লাবিত হয়েছে ১৫৮ হেক্টর। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।

ধোবাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত শারমিন বলেন, উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত আছে। বৃষ্টি বাড়লে পানি আরও বাড়তে পারে। উপজেলায় মোট ৭টি ইউনিয়নের কিছু কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া দুটি ইউনিয়ন পুরোপুরি প্লাবিত হয়েছে। আনুমানিক ১৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি।

৭ ইউনিয়নে ১৫ হাজার মানুষ বসবাস করে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওইটা আনুমানিক বলছি। কারণ, অনেক এলাকায় এখনো কোনো খোঁজখবর নিতে পারিনি। সেসব এলাকার জনপ্রতিনিধিরা নৌকার অভাবে সব এলাকায় পৌছাতে পারেনি। এসব এলাকায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় মোবাইলে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই, সঠিক তথ্য এখনো আমরা পাইনি। সঠিক তথ্য পেতে সময় লাগবে। বন্যাদুর্গতদের খাবারের ব্যবস্থা করার জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশনা দেয়া আছে।

হালুয়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এরশাদুল আহমেদ বলেন, পানি কিছুটা কমে গিয়েছিল। পরে আজ আবারও প্রায় টানা দুই ঘণ্টা বৃষ্টি হওয়ায় পানি বেড়ে গেছে। উপজেলায় ৪টি ইউনিয়ন পুরোপুরি প্লাবিত। নারী-শিশুসহ প্রায় ৭ শতাধিক লোক আশ্রয় নিয়েছে। এছাড়া শতাধিক গরু-ছাগলও আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন বলেন, মৎস্য চাষিদের কি পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার সঠিক তথ্য এখনো আমাদের জানা নেই। উপজেলা মৎস্য অফিসারদের ক্ষয়ক্ষতির হিসাব করে পাঠানোর জন্য বলা হয়েছে।