অদক্ষ চালকের হাতে ঝুঁকিতে ভূমি কর্মকর্তাদের জীবন
- আপডেট সময় : ০৮:৪৭:৪৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১১ মার্চ ২০২৪ ৩১০ বার পড়া হয়েছে
অদক্ষ চালকদের হাতে ঝুঁকিতে ভূমি কর্মকর্তাদের জীবন। সম্প্রতি টাঙ্গাইলে উপজেলায় ৯জন গাড়ি চালককে নিয়োগ দেওয়া হয়। সরকারী নিয়ম কানুন মেনেই তাদের নিয়োগ দেন সংশ্লিষ্টরা। নিযোগকৃত এসব চালক সহকারী কমিশনার (ভূমি) গাড়ি চালক হিসাবে দায়িত্ব পালন করবেন। গাড়ি চালকদেও নিয়োগের পর জানা গেলো তারা অনিভিজ্ঞ! দায়িত্ব পাবার কয়েকদিনের মাথায় এসব চালদেও অধিকাংশই দূর্ঘটনার কবলে পড়ে। তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেও গাড়ি।
জেলা প্রশাসক কার্যালয় সূত্রের খবর, ৩ মার্চ ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মো. ওলিউজ্জামান এসিল্যান্ডদের জন্য ৯ জন চালক নিয়োগের জন্য অফিস আদেশ দেন। নিয়োগের পর সংশ্লিষ্ট উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ে যোগদানের আদেশ দেয়া হয়। অদক্ষ চালকদের তড়িঘরি করেই নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন এসিল্যান্ডদের অস্থায়ী নিয়োগপ্রাপ্ত গাড়ির চালকরা।
জানা যায়, ৩ মার্চ কর্মক্ষেত্রে যোগদানের পর ভূঞাপুর, নাগরপুর, দেলদুয়ার, বাসাইল, কালিহাতী ও ঘাটাইল উপজেলার এসিল্যান্ডের গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়ে। তাতে একাধিক ব্যক্তি মারাত্মক জখম হয় এবং গাড়ির লুকিং গ্লাস ও ব্যাক লাইট ভেঙ্গে যাবার পাশাপাশি গাড়ির বডি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এর মধ্যে নাগরপুরে এসিল্যান্ডের গাড়ি উপজেলার মাহমুদনগর এলাকার ফাজিল মাদরাসার পাশে একটি মোটরসাইকেলের সাথে সংঘর্ষ ঘটলে দুই আরোহী গুরুতর জখম হন। এসব দুর্ঘটনার পর থেকেই এসিল্যান্ডরা চালকদের প্রশিক্ষণের জন্য এক সপ্তাহের ছুটি দেন। আবার কোন কোন উপজেলার চালকরা এসিল্যান্ডের গাড়ি নিয়ে মাঠে পথে ট্রেনিং করছে অন্য চালকদের সহায়তায়। নতুন চালকদের অদক্ষতার কারণে মৃত্যু ঝুঁকিতে রয়েছেন কর্মকর্তারা। যে কোন সময় বড় ধরণের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ৭ মার্চ বাসাইল এসিল্যান্ডের গাড়ির নিয়ে নতুন চালক কোর্ট মাঠে ইউএনও’র গাড়ির চালকের সহায়তায় প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। প্রশিক্ষণ নিয়ে অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য ধনবাড়ি, নাগরপুর ও বাসাইলের চালকদের এক সপ্তাহের ছুটি দেয়া হয়।
নাগরপুর সহকারী কমিশনারের (ভূমি) গাড়ির চালক আলি জোবায়ের বলেন, যোগদানের পর দুইবার দুঘটনা ঘটেছিল। একবার গাড়ি ঢালু থেকে নামার সময় ব্যাক লাইট ক্ষতি হয় এবং মোটরসাইকেলের সাথে সংঘর্ষ ঘটে। এই চালক জানান, ম্যাজেস্ট্রেট বা কর্মকর্তাদের নিয়ে গাড়ি চালানোয় তারা অভ্যস্ত নন। নিয়োগের পর তাদেও প্রশিক্ষণের দরকার ছিল। কোন গাড়ি চালক চাকরীতে যোগদানের পর এমন বক্তব্য দিতে পারেনি কিনা সে নিয়ে কোন উত্তর মেলেনি।
এই গাড়ি চালকের বক্তব্য ২০২২ সালে টাঙ্গাইল কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি) থেকে চারমাসের কোর্স করেন তিনি। এরপর আর গাড়ি চালানো হয়ে ওঠেনি। তারপরও চলতি বছরে বিআরটিএ থেকে লাইট ড্রাইভিং লাইসেন্স পেয়েছেন তিনি।
বাসাইল এসিল্যান্ডের গাড়ির চালক হিসাবে নিয়োগ পাওয়া চালক বলেন, প্রতিষ্ঠানিকভাবে গাড়ি চালানোর প্রশিক্ষণের কোন সার্টিফিকেট নেই। গত বছর জেলা বিআরটিএতে পরীক্ষা দিয়ে লাইসেন্স পেয়েছি। যোগদানের পর বাসাইলের কোর্ট মাঠে এসিল্যান্ডের গাড়ি দিয়ে ইউএনও’র গাড়ি চালক প্রশিক্ষণ দিয়েছে।
ভূঞাপুর উপজেলা সহকারী কমিশনারের গাড়ির চালক সবুজ মিয়া জানান, সাদিকুল ইসলাম নামের এক চালককে ভাড়া করা হয়েছে গাড়ি চালানোর জন্য। সেই সাদিকুলই গত ৪ মার্চ হতে এসিল্যান্ডের গাড়ি চালাচ্ছেন।
ভাড়াটিয়া চালক সাদিকুল ইসলাম বলেন, নতুন নিয়োগ পাওয়া সবুজ মিয়া গাড়ি চালানোর অভিজ্ঞতা নেই। আমাকে দিয়ে গাড়ি চালানোর পাশাপাশি সবুজ মিয়াকেও প্রশিক্ষণ দিচ্ছি।
অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত সাবেক এসিল্যান্ডের চালকদের কেউ কেউ জানান, নতুন চালকরা যোগদানের পরই গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। তাদের মধ্যে চার উপজেলার চালকদের ছুটিতে পাঠানো হয়েছে।
অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত সাবেক গোপালপুর উপজেলা এসিল্যান্ডের চালক আসাদুজ্জামান বলেন, আমাদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু আমাদের স্থায়ী নিয়োগ না দিয়ে অদক্ষ চালকদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তারা যোগদানের পরই দুর্ঘটনা ঘটছে। আমাদের চাকরি স্থানীয়করণের জন্য উচ্চ আদালতে রিট করার পর উচ্চ আদালত হতে আমাদের চাকরি কেন আত্মীয়করণ করা হবে না মর্মে রুল জারির করেন। কিন্তু সেই উচ্চ আদালতের আদেশের রুল থাকার পরও তড়িঘরি করে নতুন করে গাড়ি ৯জন চালক নিয়োগ দেয়া হয়।
নাগরপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আব্দুল মালেক বলেন, গাড়ি দূর্ঘটনার তথ্য আপনাকে দিতে বাধ্য না। ভূঞাপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফাহিমা বিনতে আখতার বলেন, নতুন চালক তেমন দক্ষ না। গাড়ি একটু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া চালক রাস্তা ঘাটও তেমন চিনে না। তাই তার সাথে একজন চালককে রাখা হয়েছে।
বুয়েটের এক্সিডেন্ট রিসার্চ ইন্সটিটিউটের সহকারী অধ্যাপক কাজী মো. সাইফুল নেওয়াজ বলেন, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বিশেষ করে সরকারি গাড়ি চালকদের নিয়োগের ক্ষেত্রে চালকের অভিজ্ঞতা ও লাইসেন্স আছে কিনা বা পূর্বে যেখানে চাকরি করেছেন, সেখানে কেমন ছিলো। সরকারি চালকদের কাছ থেকে মানুষ আচরণ বা গাড়ি চালানোর ভাল প্রত্যাশা আশা করে। যোগদানের পরও তাকে আরো ভাল প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে এবং তারপর তাদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেয়া উচিত। নইলে চালক যাকে বহন করছে তিনি ঝুঁকি পড়বেন।
জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) মো. ওলিউজ্জামান বলেন, নিয়োগ শর্তাবলীতে অভিজ্ঞতার বিষয়টি ছিল না। তারপরও নিয়োগ পরীক্ষায় যারা উত্তীর্ণ হয়েছে শুধুমাত্র তাদেরকেই নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তবে নিয়োগকৃতরা অভিজ্ঞ নয়।