ঢাকা ১২:৪১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

অপহরণ ও গুমের অভিযোগে রাজশাহী রেঞ্জ ডিআইজির বিরুদ্ধে মামলা

গণমুক্তি ডিজিটাল ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ১০:৫২:৪৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৩৬ বার পড়া হয়েছে

আনিসুর রহমান

দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

 

যশোর শহরের শংকরপুরে সাইদুল ইসলাম সাঈদ নামে এক যুবককে অপহরণ ও গুমের অভিযোগে সাবেক পুলিশ সুপার ও বর্তমানে রাজশাহী রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) আনিসুর রহমানসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়েছে।

রোববার (১ সেপ্টেম্বর) অপহৃত সাঈদের বাবা কাজী তৌহিদুল ইসলাম ওরফে খোকন কাজী বাদী হয়ে এ মামলা করেন। সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট গোলাম কিবরিয়া অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গ্রহণ করে ৭ দিনের মধ্যে আদালতকে অবহিত করার আদেশ দিয়েছেন কোতোয়ালি থানার ওসিকে। বাদীর আইনজীবী আমিনুর রহমান এ তথ্য জানান।

 

আসামিদের মধ্যে রয়েছেন, যশোরের সাবেক পুলিশ সুপার ও রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি আনিসুর রহমান, এসআই এইচএম শহিদুল ইসলাম, এসআই আমির হোসেন, এএসআই হাসানুর রহমান, এসআই রাজন গাজী, এএসআই সেলিম মুন্সি, এএসআই বিপ্লব হোসেন, এএসআই সেলিম আহম্মেদ, টিএসআই রফিক, কনস্টেবল আরিফুজ্জামন, হাবিবুর রহমান, আবু বক্কার, ড্রাইভার মিজান শেখ, মাহমুদুর রহমান, টোকন হোসেন।

যশোর পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর গোলাম মোস্তফা, শহরের শংকরপুরের সাদেক দারোগার মোড় এলাকার মৃত রোস্তম আলীর ছেলে নুর ইসলাম নুরু, মৃত খলিল মিয়ার ছেলে আনিস, মুরগির ফার্ম এলাকার মৃত বাবলুর ছেলে অর্ক, রায়পাড়ার মৃত কাওছার আলীর ছেলে হাসমত, হোসেন আলীর ছেলে মাসুম ও গোলপাতা মসজিদ এলাকার মোহাম্মদ আলীর ছেলে খালেদুর রহমান চুন্নু।

মামলার অভিযোগে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ৫ এপ্রিল সকালে সাঈদ ও তার বন্ধু শাওন যশোর পৌরপার্কে বেড়াতে যান। তৎকালীন পুলিশ সুপার এ সংবাদ পেয়ে তার নির্দেশে অপর পুলিশ কর্মকর্তা ও কনস্টেবলরা সাঈদ ও শাওনকে গ্রেফতার করেন।

সাঈদ ও শাওনের গ্রেফতার হওয়ার সংবাদ জানতে পেরে খোকন কাজী ও তার স্ত্রী দ্রুত পৌরপার্কের গেটে এসে দেখেন তাদের পুলিশ গাড়িতে ওঠাচ্ছে। সাঈদকে গ্রেফতারের বিষয়টি এসআই এইচএম শহিদুল ইসলামসহ অন্যদের কাছে জানতে চাইলে তারা থানায় এসে কথা বলতে বলেন।

 

তাৎক্ষণিক থানায় গেলে কর্তব্যরত পুলিশ সাঈদের মা ও বাবাকে থানায় ঢুকতে দেয়নি। থানার গেটে অবস্থানকালে সাঈদের মা ও বাবার কাছে ২ লাখ টাকা দাবি করে ছেড়ে দেওয়ার আশ্বাস দেন এসআই এইচএম শহিদুল ইসলাম ও এসআই আমির হোসেন। অন্যথায় তাদের দুজনকে মেরে মরদেহ গুমের হুমকি দেন।

কিন্তু ৭ এপ্রিল সাঈদের মা হিরা খাতুন পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারেন ছেলে সাঈদ ও তার বন্ধু শাওন পুলিশ হেফাজত থেকে পালিয়ে গেছে। পত্রিকার এ সংবাদের সত্যতা জানতে থানায় গেলে সাঈদের মা হিরার সঙ্গে খারপ ব্যবহার করে তাড়িয়ে দেয় পুলিশ।

অপহৃত সাঈদের মা সংবাদ সম্মেলন করে ছেলেকে ফিরে পেতে প্রশাসনসহ সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। অপহৃত সাঈদের মা ও বাবার ধারণা পুলিশের দাবিকৃত ২ লাখ টাকা না দেওয়ায় সাঈদকে হত্যা করে মরদেহ গুম করে দিয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় অপহৃত সাঈদের মা পুলিশ সুপারসহ পুলিশের ১৬ জনকে আসামি করে আদালতে মামলা করেন।

মামলার অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, অপহৃত সাঈদকে ফিরিয়ে দিতে তৎকালীন কাউন্সিলর ও তার সহযোগীরা হিরা খাতুনের কাছে ১০ লাখ টাকা দাবি করেন। হিরা খাতুনের কাছ থেকে তারা ১০ লাখ টাকা গ্রহণ করে ছেলেকে ফিরিয়ে না দিয়ে উল্টো মামলা প্রত্যাহারের জন্য চাপ দেন।

হিরা খাতুন মামলা প্রত্যাহারে রাজি না হওয়ায় তাকে এসপি অফিসে নিয়ে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে হত্যার হুমকি দিয়ে মামলা প্রত্যাহার করতে বাধ্য করা হয়। পরবর্তীতে হিরা খাতুন বৈদ্যুতিক শকে অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন। সেই থেকে আজ অবধি অপহৃত সাঈদ আর ফিরে আসেননি। আসামিরা প্রভাবশালী হওয়ায় পরবর্তীতে মামলা করার সাহস হয়নি। বর্তমানে পরিবেশ অনুকূলে আসায় তিনি আদালতে এ মামলা করেছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

অপহরণ ও গুমের অভিযোগে রাজশাহী রেঞ্জ ডিআইজির বিরুদ্ধে মামলা

আপডেট সময় : ১০:৫২:৪৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

 

যশোর শহরের শংকরপুরে সাইদুল ইসলাম সাঈদ নামে এক যুবককে অপহরণ ও গুমের অভিযোগে সাবেক পুলিশ সুপার ও বর্তমানে রাজশাহী রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) আনিসুর রহমানসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়েছে।

রোববার (১ সেপ্টেম্বর) অপহৃত সাঈদের বাবা কাজী তৌহিদুল ইসলাম ওরফে খোকন কাজী বাদী হয়ে এ মামলা করেন। সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট গোলাম কিবরিয়া অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গ্রহণ করে ৭ দিনের মধ্যে আদালতকে অবহিত করার আদেশ দিয়েছেন কোতোয়ালি থানার ওসিকে। বাদীর আইনজীবী আমিনুর রহমান এ তথ্য জানান।

 

আসামিদের মধ্যে রয়েছেন, যশোরের সাবেক পুলিশ সুপার ও রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি আনিসুর রহমান, এসআই এইচএম শহিদুল ইসলাম, এসআই আমির হোসেন, এএসআই হাসানুর রহমান, এসআই রাজন গাজী, এএসআই সেলিম মুন্সি, এএসআই বিপ্লব হোসেন, এএসআই সেলিম আহম্মেদ, টিএসআই রফিক, কনস্টেবল আরিফুজ্জামন, হাবিবুর রহমান, আবু বক্কার, ড্রাইভার মিজান শেখ, মাহমুদুর রহমান, টোকন হোসেন।

যশোর পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর গোলাম মোস্তফা, শহরের শংকরপুরের সাদেক দারোগার মোড় এলাকার মৃত রোস্তম আলীর ছেলে নুর ইসলাম নুরু, মৃত খলিল মিয়ার ছেলে আনিস, মুরগির ফার্ম এলাকার মৃত বাবলুর ছেলে অর্ক, রায়পাড়ার মৃত কাওছার আলীর ছেলে হাসমত, হোসেন আলীর ছেলে মাসুম ও গোলপাতা মসজিদ এলাকার মোহাম্মদ আলীর ছেলে খালেদুর রহমান চুন্নু।

মামলার অভিযোগে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ৫ এপ্রিল সকালে সাঈদ ও তার বন্ধু শাওন যশোর পৌরপার্কে বেড়াতে যান। তৎকালীন পুলিশ সুপার এ সংবাদ পেয়ে তার নির্দেশে অপর পুলিশ কর্মকর্তা ও কনস্টেবলরা সাঈদ ও শাওনকে গ্রেফতার করেন।

সাঈদ ও শাওনের গ্রেফতার হওয়ার সংবাদ জানতে পেরে খোকন কাজী ও তার স্ত্রী দ্রুত পৌরপার্কের গেটে এসে দেখেন তাদের পুলিশ গাড়িতে ওঠাচ্ছে। সাঈদকে গ্রেফতারের বিষয়টি এসআই এইচএম শহিদুল ইসলামসহ অন্যদের কাছে জানতে চাইলে তারা থানায় এসে কথা বলতে বলেন।

 

তাৎক্ষণিক থানায় গেলে কর্তব্যরত পুলিশ সাঈদের মা ও বাবাকে থানায় ঢুকতে দেয়নি। থানার গেটে অবস্থানকালে সাঈদের মা ও বাবার কাছে ২ লাখ টাকা দাবি করে ছেড়ে দেওয়ার আশ্বাস দেন এসআই এইচএম শহিদুল ইসলাম ও এসআই আমির হোসেন। অন্যথায় তাদের দুজনকে মেরে মরদেহ গুমের হুমকি দেন।

কিন্তু ৭ এপ্রিল সাঈদের মা হিরা খাতুন পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারেন ছেলে সাঈদ ও তার বন্ধু শাওন পুলিশ হেফাজত থেকে পালিয়ে গেছে। পত্রিকার এ সংবাদের সত্যতা জানতে থানায় গেলে সাঈদের মা হিরার সঙ্গে খারপ ব্যবহার করে তাড়িয়ে দেয় পুলিশ।

অপহৃত সাঈদের মা সংবাদ সম্মেলন করে ছেলেকে ফিরে পেতে প্রশাসনসহ সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। অপহৃত সাঈদের মা ও বাবার ধারণা পুলিশের দাবিকৃত ২ লাখ টাকা না দেওয়ায় সাঈদকে হত্যা করে মরদেহ গুম করে দিয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় অপহৃত সাঈদের মা পুলিশ সুপারসহ পুলিশের ১৬ জনকে আসামি করে আদালতে মামলা করেন।

মামলার অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, অপহৃত সাঈদকে ফিরিয়ে দিতে তৎকালীন কাউন্সিলর ও তার সহযোগীরা হিরা খাতুনের কাছে ১০ লাখ টাকা দাবি করেন। হিরা খাতুনের কাছ থেকে তারা ১০ লাখ টাকা গ্রহণ করে ছেলেকে ফিরিয়ে না দিয়ে উল্টো মামলা প্রত্যাহারের জন্য চাপ দেন।

হিরা খাতুন মামলা প্রত্যাহারে রাজি না হওয়ায় তাকে এসপি অফিসে নিয়ে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে হত্যার হুমকি দিয়ে মামলা প্রত্যাহার করতে বাধ্য করা হয়। পরবর্তীতে হিরা খাতুন বৈদ্যুতিক শকে অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন। সেই থেকে আজ অবধি অপহৃত সাঈদ আর ফিরে আসেননি। আসামিরা প্রভাবশালী হওয়ায় পরবর্তীতে মামলা করার সাহস হয়নি। বর্তমানে পরিবেশ অনুকূলে আসায় তিনি আদালতে এ মামলা করেছেন।