ঢাকা ০১:০০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫

অর্থ বরাদ্দের দুই মাসেও সরকারি ঢেউটিন আসেনি উপজেলায়

অনুপ সিংহ, সোনাইমুড়ী (নোয়াখালী)
  • আপডেট সময় : ০৪:০১:২৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫ ১৭ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি
 
দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ দেওয়া তিন লাখ টাকার ঢেউটিনের হদিস মিলছেনা নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলা পরিষদে। নির্ধারিত সময়ের চেয়ে অতিরিক্ত দুই মাস অতিবাহিত হলেও এখনো ত্রাণ সহায়তার ঢেউ টিনের দেখা নেই উপজেলায়।
গত ২০ ফেব্রুয়ারী নোয়াখালী জেলা প্রশাসকের ত্রাণ ও পূনর্বাসন শাখা থেকে তিন লাখ টাকা উপ-বরাদ্দ দেওয়া হয় সোনাইমুড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে। সেই সাথে ফেব্রুয়ারীর ২৮ তারিখের ভেতরে ঢেউটিন ক্রয়কার্য সম্পন্নের নির্দেশনা দেওয়া হয়। তবে নির্ধারিত সময়ের প্রায় দুই মাস পার হলেও চলতি বছরের এপ্রিলের ২১ তারিখেও ঢেউটিনের দেখা মেলেনি সোনাইমুড়ী উপজেলায়।
প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার দাবি কাগজে কলমে বরাদ্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নামে থাকলেও ঢেউটিন ক্রয় করছেন নোয়াখালী জেলা প্রশাসক। তবে বিষয়টি অস্বীকার করছেন জেলা ত্রাণ ও পূনর্বাসন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান।
দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান সাক্ষরিত এক স্বারকে দেখা যায়, গত ফেব্রুয়ারীর ১৩ তারিখে ঢেউটিন ক্রয়ের জন্য অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। নদীভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পুনর্বাসন, অগ্নিকান্ডসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত এবং আগাম কালবৈশাখী ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত দুঃস্থ ও অসহায়  পরিবারকে মানবিক সহায়তার লক্ষ্যে এই বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। দেশের ৮ টি বিভাগের ৬৪ জেলার ৪৯৫ টি উপজেলার প্রতিটিতে তিন লক্ষ টাকা করে মোট ১৪ কোটি ৮৫ লাখ টাকা ঢেউটিন ক্রয়ের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আর নোয়াখালীর নয় উপজেলায় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২৭ লাখ টাকা।
ওই স্বারকেও ফেব্রুয়ারীর ২৮ তারিখের মধ্যে ঢেউটিন ক্রয়ের কার্যক্রম সম্পন্ন করার কথা বলা হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ক্রয়কার্য সম্পন্ন না হলে কালবৈশাখী ঝড়সহ বিভিন্ন দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় পরিবারের মধ্যে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনায় ব্যাঘাত সৃষ্টি হবে বলেও উল্লেখ করা হয়।
এছাড়া গত মার্চের ১৮ তারিখ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের এক চিঠিতে চলতি এপ্রিলের ৩ তারিখের মধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ঢেউটিন ক্রয়ের প্রমাণকসহ প্রতিবেদন চেয়েছে। এতকিছুর পরেও এখনো হদিস মিলছেনা ক্ষতিগ্রস্ত দুঃস্থ ও অসহায় পরিবারের মানবিক সহায়তা ঢেউ টিনের।
এদিকে বৈশাখের শুরু থেকেই প্রকৃতির তান্ডব শুরু হয়েছে। বৈশাখী ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দুঃস্থ-অসহায় মানুষের দুর্বল বসতঘর। তাছাড়া সোনাইমুড়ীর আমিশাপাড়ায় গত বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) রাত ১টার দিকে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায় আমিশাপাড়া বাজারের আটটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। মানবেতর জীবনযাপন করছে আগুনে ভস্মীভূত হয়ে যাওয়া ব্যবসায়ীদের পরিবারের সদস্যরা। তবে এখন পর্যন্ত তারা কোনধরনের সরকারি সহায়তা পায়নি।
সোনাইমুড়ী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ মেশকাতুর রহমান মুঠোফোনে জানান, সরকারি ভাবে ঢেউটিনের একটি নিদ্রিষ্ট মাপ ও মান ঠিক করে দেওয়া হয়। এজন্য আবুল খায়ের কোম্পানির সাথে চুক্তি করে নোয়াখালী জেলা প্রশাসক সরাসরি টিন ক্রয় করছেন। তবে সরকারের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে টিন ক্রয় হয়নি কেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সরকার এমন সময় বেধে দেয় আবার সময় বাড়ায় এটা তারা চাপে রাখার জন্য করে। এটা কোন সমস্যা নয়। টেন্ডার ও ক্রয় আদেশের নিয়ম মানতে গেলে দেরি হয়। এবিষয়ে জানতে তিনি জেলা ত্রাণ ও পূনর্বাসন কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করতে বলেন।
এবিষয়ে জেলা ত্রাণ ও পূনর্বাসন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাসুদুর রহমানের সাথে কথা হয় প্রতিবেদকের। প্রথমে তিনি জানান, টিন ক্রয়ের জন্য নোয়াখালী জেলা প্রশাসক আবুল খায়ের কম্পানিকে টেন্ডার দিয়েছে। ২৭ লাখ টাকার টিনের জন্য ওপেন টেন্ডার হয়েছে কি না এমন প্রশ্নে তিনি মত পাল্টে বলেন, তিন লাখ টাকার টিনের জন্য টেন্ডার হয়না। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের কাছে টিনের টাকা দিয়ে দেওয়া হয়েছে তারা স্ব স্ব ডিলারের মাধ্যমে টিন ক্রয় করছেন। ডিলাদের নাম জানতে চাইলে তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন।
সোনাইমুড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসরিন আকতারের সাথে মুঠোফোন যোগাযোগ করা হলে তিনি টিন ক্রয়ের জন্য তিন লাখ টাকার বরাদ্দের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। টিন জেলা থেকে আসবে বলে জানান। তবে নির্ধারিত সময়ের দুই মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো কেন ঢেউটিন উপজেলা পরিষদে আসেনি এমন প্রশ্ন তিনি এড়িয়ে যান। এবিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করতে বলেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

অর্থ বরাদ্দের দুই মাসেও সরকারি ঢেউটিন আসেনি উপজেলায়

আপডেট সময় : ০৪:০১:২৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫
 
দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ দেওয়া তিন লাখ টাকার ঢেউটিনের হদিস মিলছেনা নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলা পরিষদে। নির্ধারিত সময়ের চেয়ে অতিরিক্ত দুই মাস অতিবাহিত হলেও এখনো ত্রাণ সহায়তার ঢেউ টিনের দেখা নেই উপজেলায়।
গত ২০ ফেব্রুয়ারী নোয়াখালী জেলা প্রশাসকের ত্রাণ ও পূনর্বাসন শাখা থেকে তিন লাখ টাকা উপ-বরাদ্দ দেওয়া হয় সোনাইমুড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে। সেই সাথে ফেব্রুয়ারীর ২৮ তারিখের ভেতরে ঢেউটিন ক্রয়কার্য সম্পন্নের নির্দেশনা দেওয়া হয়। তবে নির্ধারিত সময়ের প্রায় দুই মাস পার হলেও চলতি বছরের এপ্রিলের ২১ তারিখেও ঢেউটিনের দেখা মেলেনি সোনাইমুড়ী উপজেলায়।
প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার দাবি কাগজে কলমে বরাদ্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নামে থাকলেও ঢেউটিন ক্রয় করছেন নোয়াখালী জেলা প্রশাসক। তবে বিষয়টি অস্বীকার করছেন জেলা ত্রাণ ও পূনর্বাসন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান।
দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান সাক্ষরিত এক স্বারকে দেখা যায়, গত ফেব্রুয়ারীর ১৩ তারিখে ঢেউটিন ক্রয়ের জন্য অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। নদীভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পুনর্বাসন, অগ্নিকান্ডসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত এবং আগাম কালবৈশাখী ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত দুঃস্থ ও অসহায়  পরিবারকে মানবিক সহায়তার লক্ষ্যে এই বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। দেশের ৮ টি বিভাগের ৬৪ জেলার ৪৯৫ টি উপজেলার প্রতিটিতে তিন লক্ষ টাকা করে মোট ১৪ কোটি ৮৫ লাখ টাকা ঢেউটিন ক্রয়ের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আর নোয়াখালীর নয় উপজেলায় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২৭ লাখ টাকা।
ওই স্বারকেও ফেব্রুয়ারীর ২৮ তারিখের মধ্যে ঢেউটিন ক্রয়ের কার্যক্রম সম্পন্ন করার কথা বলা হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ক্রয়কার্য সম্পন্ন না হলে কালবৈশাখী ঝড়সহ বিভিন্ন দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় পরিবারের মধ্যে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনায় ব্যাঘাত সৃষ্টি হবে বলেও উল্লেখ করা হয়।
এছাড়া গত মার্চের ১৮ তারিখ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের এক চিঠিতে চলতি এপ্রিলের ৩ তারিখের মধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ঢেউটিন ক্রয়ের প্রমাণকসহ প্রতিবেদন চেয়েছে। এতকিছুর পরেও এখনো হদিস মিলছেনা ক্ষতিগ্রস্ত দুঃস্থ ও অসহায় পরিবারের মানবিক সহায়তা ঢেউ টিনের।
এদিকে বৈশাখের শুরু থেকেই প্রকৃতির তান্ডব শুরু হয়েছে। বৈশাখী ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দুঃস্থ-অসহায় মানুষের দুর্বল বসতঘর। তাছাড়া সোনাইমুড়ীর আমিশাপাড়ায় গত বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) রাত ১টার দিকে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায় আমিশাপাড়া বাজারের আটটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। মানবেতর জীবনযাপন করছে আগুনে ভস্মীভূত হয়ে যাওয়া ব্যবসায়ীদের পরিবারের সদস্যরা। তবে এখন পর্যন্ত তারা কোনধরনের সরকারি সহায়তা পায়নি।
সোনাইমুড়ী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ মেশকাতুর রহমান মুঠোফোনে জানান, সরকারি ভাবে ঢেউটিনের একটি নিদ্রিষ্ট মাপ ও মান ঠিক করে দেওয়া হয়। এজন্য আবুল খায়ের কোম্পানির সাথে চুক্তি করে নোয়াখালী জেলা প্রশাসক সরাসরি টিন ক্রয় করছেন। তবে সরকারের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে টিন ক্রয় হয়নি কেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সরকার এমন সময় বেধে দেয় আবার সময় বাড়ায় এটা তারা চাপে রাখার জন্য করে। এটা কোন সমস্যা নয়। টেন্ডার ও ক্রয় আদেশের নিয়ম মানতে গেলে দেরি হয়। এবিষয়ে জানতে তিনি জেলা ত্রাণ ও পূনর্বাসন কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করতে বলেন।
এবিষয়ে জেলা ত্রাণ ও পূনর্বাসন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাসুদুর রহমানের সাথে কথা হয় প্রতিবেদকের। প্রথমে তিনি জানান, টিন ক্রয়ের জন্য নোয়াখালী জেলা প্রশাসক আবুল খায়ের কম্পানিকে টেন্ডার দিয়েছে। ২৭ লাখ টাকার টিনের জন্য ওপেন টেন্ডার হয়েছে কি না এমন প্রশ্নে তিনি মত পাল্টে বলেন, তিন লাখ টাকার টিনের জন্য টেন্ডার হয়না। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের কাছে টিনের টাকা দিয়ে দেওয়া হয়েছে তারা স্ব স্ব ডিলারের মাধ্যমে টিন ক্রয় করছেন। ডিলাদের নাম জানতে চাইলে তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন।
সোনাইমুড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসরিন আকতারের সাথে মুঠোফোন যোগাযোগ করা হলে তিনি টিন ক্রয়ের জন্য তিন লাখ টাকার বরাদ্দের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। টিন জেলা থেকে আসবে বলে জানান। তবে নির্ধারিত সময়ের দুই মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো কেন ঢেউটিন উপজেলা পরিষদে আসেনি এমন প্রশ্ন তিনি এড়িয়ে যান। এবিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করতে বলেন।