ঢাকা ০৮:৪৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

ইলিশ নিয়ে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০১:০০:২১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪ ১০৩ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

 

সংঘবদ্ধ হামলায় মৎস্য কর্মকর্তা, নৌপুলিশ ও স্পিডবোট চালক-সহকারী আহত

 

আমিনুল হক ভূইয়া

বাংলাদেশের জাতীয় মাছ ইলিশ নিয়ে রীতিমত দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র মাথা চাড়া দিয়ে ওঠেছে। মা ইলিশ রক্ষায় যখন ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা চলছে, তখন মেঘনা-পদ্মা এবং সাগরে বাংলাদেশের জলসীমায় অবৈধভাবে ইলিশ শিকারে নামছে দেশি-বিদেশি জেলেরা। অবৈক্ষাবে মা ইলিশ শিকার রুখতে অভিযানকালে নৌপুলিশের ওপর হামলা চালায় জেলেরা। মেঘনায় অবৈধ ইলিশ শিকারে আসা জেলে নামধারীরা রীতিমত ডাকাতের মতো সাজসরঞ্জাম নিয়ে নৌপুলিশ ও মৎস্য অধিদপ্তরের স্পিড বোট চালক, ট্রলার চালক ও নৌপুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা চালিয়ে প্রায় ১০জনকে আহত করে।

ইলিশের ৮০ শতাংশই বাংলাদেশে উৎপাদন হয়ে থাকে। গত অর্থ বছরে ইলিশ উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ছিলো ৫ লাখ ৭০ হাজার মেট্রিক টন। ইলিশের উৎপাদন ধরে রাখতে এবং বিগত বছরের লক্ষমাত্রার চেয়ে আরও অধিক পরিমাণ ইলিশের উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষে অব্যাহতভাবে কাজ করে চলেছে মৎস্য অধিদপ্তরের ‘ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্প’। এরই ধারাবাহিকতায় চলতি বছর মা ইলিশ সংরক্ষণে গত ১৩ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর ২২দিন ইলিশ শিকার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পদ্মা-মেঘনা ছাড়াও সাগরে বাংলাদেশের জলসীমায় ইলিশ শিকার প্রতিরোধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর, নৌপুলিশ, কোস্ট গার্ড ও নৌবাহিনী। নদীতে রাত দিন প্রহরা দিচ্ছে মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা।

এমন পরিস্থিতিতে পদ্মা-মেঘনায় ইলিশ শিকারে নামছে একটি সংঘবদ্ধ দুর্বৃত্ত গোষ্ঠীর জেলেরা। তাদের নৌকায় চাপাতি, ইট-পাথরের টুকরা, লাঠিসোঠা ইত্যাদি দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র! অবৈধভাবে ইলিশ শিকারে বাঁধা দিতে গেলেই নৌ-পুলিশ ও মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা, স্পিড বোট ও ট্রলার চালকদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালাচ্ছে। যা ঘটে গেলো গেল বৃহস্পতিবার রাতে মতলব উত্তর উপজেলার আমিরাবাদ এলাকায়। অবৈধ ইলিশ শিকার প্রতিরোধে অভিযান চালায় নৌ-পুলিশ ও মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তা। এসময় হামলা চালায় সংঘবদ্ধ জেলেদের হামলায় অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে। এই ঘটনায় উপজেলা মৎস্য অফিসের সহকারী মোহাম্মদ আতিকুর রহমান অজ্ঞাত ৮০-৯০ জনকে আসামি করে মতলব উত্তর থানায় মামলা করেছেন। মতলব থানার ওসি রবিউল হক শুক্রবার সন্ধ্যা রাতে এ তথ্য জানান।

গত ১৩ অক্টোবর থেকে মা ইলিশ রক্ষায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পদ্মা-মেঘনা এবং সাগরে অবৈধভাবে ইলিশ শিকারকালে অভিযান চালিয়ে প্রায় দুইশ’র মতো বাংলাদেশি ও ভারতীয় জেলেকে আটক করে। এসময় ট্রলার, জাল ও নৌকা জব্দ করে নৌ-পুলিশ, কোস্ট গার্ড ও নৌবাহিনী। এর মধ্যে ভারতের ৭৯ রয়েছে। ভ্রম্যমান আদালতের মাধ্যমে আটককৃত বাংলাদেশি শতাধিক জেলেকে বিভিন্ন মেয়েদের সাজা দেওয়া হয়েছে। জব্দ করা হচ্ছে জাল ও নৌকা। আটককৃত অধিকাংশ জেলে অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় তাদেরকে মুচলেকা দিয়ে সতর্ক করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

মতলবে সংঘবদ্ধ জেলেদের হামলায় আহতদের মধ্যে রয়েছেন, উপজেলা মৎস্য অফিসের মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, মোশারফ হোসেন, মোহনপুর নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির সদস্য ইমরান হোসেন, মো. রাসেল, কামাল হোসেন, জসিম উদ্দিন, স্পিডবোট চালক রনি মিয়া, নৌকার মাঝি আলী আকবর, মাঝির সহকারী আবদুল ছাত্তার এবং মো. কাউছার। আহতরা সবাই মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন। এ ঘটনায় মোহনপুর নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. কামরুজ্জামান সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ২২ দিনের মা ইলিশ রক্ষার নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার রাতে মৎস্য বিভাগকে সঙ্গে নিয়ে অভিযান পরিচালনা করা হয়।

এ সময় মেঘনা নদীর আমিরাবাদ এলাকায় পৌঁছালে প্রায় শতাধিক জেলে জড়ো হয়। তারা অতর্কিতভাবে বাঁশ ও লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালায়। ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। তাতে ঘটনাস্থলে অন্তত ১০ জন গুরুতর আহত হন। নৌ-পুলিশ ও মৎস্য বিভাগের সদস্যদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম হয়। মোহনপুর নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আরও জানান, এই ঘটনায় উপজেলা মৎস্য অফিসের সহকারী মোহাম্মদ আতিকুর রহমান থানায় মামলা করেছেন। অজ্ঞাত আসামি হওয়ায় আমরা কাউকে এখনও আটক করতে পারিনি। হামলার সঙ্গে জড়িত জেলেদের শনাক্ত করতে মাঠে নেমেছে পুলিশ।

এ প্রসঙ্গে জানার মতলব উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিজয় কুমার দাস বলেন, বৃহস্পতিবার পদ্মায় শতাধিক জেলে অবৈধভাবে ইলিশ শিকারে নামে। এ সময় টহলে থাকা মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা এবং নৌপুলিশ দ্রুত তাদের প্রতিহত করতে গেলে সংঘদ্ধভাবে হামলা চালায়। তাদের মৎস্য অধিদপ্তরের বেশ কয়েকজন আহত হয়। এ নিয়ে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারে মাঠে নেমেছে পুলিশ। আহতরা হচ্ছেন, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা কার্যালয়ের সহকারী মোহাম্মদ আতিকুর রহমান ও মোশারফ হোসেন, স্পিডবোটের চালক রনি মিয়া, নৌকার মাঝি আলী আকবর, মাঝির সহকারী আবদুল ছাত্তার ও মো. কাউছার, মোহনপুর নৌ পুলিশ ফাঁড়ির সদস্য ইমরান হোসেন, মো. রাসেল, কামাল হোসেন ও জসিম উদ্দিন। বিজয় কুমার দাস বলেন, ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা শুরুর পর থেকে প্রত্যেক জেলেকে ২৫ কেজি করে ভিজিএফের চাল দেওয়া হয়।

মতলব উত্তর থানার ওসি রবিউল হক বলছেন, মেঘনা নদীতে মা ইলিশ রক্ষা অভিযানে নৌ-পুলিশ ও মৎস্য বিভাগ সদস্যদের ওপর হামলা চালানোর ঘটনায় অজ্ঞাত ৮০-৯০ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। মূলত মতলব উত্তর থানায় মামলা হলেও এটার সম্পূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে মোহনপুর নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ওপর। তারা আসামিদের শনাক্ত করে আটক করবে।

৭৯ ভারতীয় জেলে ও ৫ ট্রলার আটক

বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের জলসীমায় অবৈধভাবে মাছ শিকারের দায়ে প্রথক অভিযান চালিয়ে ৫টি মাছ ধরার ট্রলার ও ৭৯জন ভারতীয় জেলেকে আটক করে নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ড। এর মধ্যে মোংলার সমুদ্র বন্দরের অদূরে সাগরে বাংলাদেশের জলসীমায় অবৈধভাবে ইলিশ শিকারের সময় ৩টি ফিশিং ট্রলারসহ ৪৮ ভারতীয় জেলেকে আটক বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড ও নৌবাহিনী। অপর দিকে কুয়াটার অদূরে সাগরে বাংলাদেশ জলসীমা থেকে ৩১জন ভারতীয় জেলে ও ২টি ট্রলার আটক করে নৌবাহিনী।

বাংলাদেশে এখন ইলিশের ভর প্রজনন মৌসম চলছে। এ কারণে ১৩ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন ইলিশ শিকার, বাজারজাত, পরিবহন, মজুত নিষিদ্ধ। অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে এবারে নদ-নদী ও সাগরে সার্বক্ষণিক মৎস্য অধিদপ্তর, নৌ পুলিশ, কোস্ট গার্ড ও নৌবাহিনী দায়িত্ব পালন করে চলেছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ইলিশ নিয়ে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র

আপডেট সময় : ০১:০০:২১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪

 

সংঘবদ্ধ হামলায় মৎস্য কর্মকর্তা, নৌপুলিশ ও স্পিডবোট চালক-সহকারী আহত

 

আমিনুল হক ভূইয়া

বাংলাদেশের জাতীয় মাছ ইলিশ নিয়ে রীতিমত দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র মাথা চাড়া দিয়ে ওঠেছে। মা ইলিশ রক্ষায় যখন ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা চলছে, তখন মেঘনা-পদ্মা এবং সাগরে বাংলাদেশের জলসীমায় অবৈধভাবে ইলিশ শিকারে নামছে দেশি-বিদেশি জেলেরা। অবৈক্ষাবে মা ইলিশ শিকার রুখতে অভিযানকালে নৌপুলিশের ওপর হামলা চালায় জেলেরা। মেঘনায় অবৈধ ইলিশ শিকারে আসা জেলে নামধারীরা রীতিমত ডাকাতের মতো সাজসরঞ্জাম নিয়ে নৌপুলিশ ও মৎস্য অধিদপ্তরের স্পিড বোট চালক, ট্রলার চালক ও নৌপুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা চালিয়ে প্রায় ১০জনকে আহত করে।

ইলিশের ৮০ শতাংশই বাংলাদেশে উৎপাদন হয়ে থাকে। গত অর্থ বছরে ইলিশ উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ছিলো ৫ লাখ ৭০ হাজার মেট্রিক টন। ইলিশের উৎপাদন ধরে রাখতে এবং বিগত বছরের লক্ষমাত্রার চেয়ে আরও অধিক পরিমাণ ইলিশের উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষে অব্যাহতভাবে কাজ করে চলেছে মৎস্য অধিদপ্তরের ‘ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্প’। এরই ধারাবাহিকতায় চলতি বছর মা ইলিশ সংরক্ষণে গত ১৩ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর ২২দিন ইলিশ শিকার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পদ্মা-মেঘনা ছাড়াও সাগরে বাংলাদেশের জলসীমায় ইলিশ শিকার প্রতিরোধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর, নৌপুলিশ, কোস্ট গার্ড ও নৌবাহিনী। নদীতে রাত দিন প্রহরা দিচ্ছে মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা।

এমন পরিস্থিতিতে পদ্মা-মেঘনায় ইলিশ শিকারে নামছে একটি সংঘবদ্ধ দুর্বৃত্ত গোষ্ঠীর জেলেরা। তাদের নৌকায় চাপাতি, ইট-পাথরের টুকরা, লাঠিসোঠা ইত্যাদি দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র! অবৈধভাবে ইলিশ শিকারে বাঁধা দিতে গেলেই নৌ-পুলিশ ও মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা, স্পিড বোট ও ট্রলার চালকদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালাচ্ছে। যা ঘটে গেলো গেল বৃহস্পতিবার রাতে মতলব উত্তর উপজেলার আমিরাবাদ এলাকায়। অবৈধ ইলিশ শিকার প্রতিরোধে অভিযান চালায় নৌ-পুলিশ ও মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তা। এসময় হামলা চালায় সংঘবদ্ধ জেলেদের হামলায় অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে। এই ঘটনায় উপজেলা মৎস্য অফিসের সহকারী মোহাম্মদ আতিকুর রহমান অজ্ঞাত ৮০-৯০ জনকে আসামি করে মতলব উত্তর থানায় মামলা করেছেন। মতলব থানার ওসি রবিউল হক শুক্রবার সন্ধ্যা রাতে এ তথ্য জানান।

গত ১৩ অক্টোবর থেকে মা ইলিশ রক্ষায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পদ্মা-মেঘনা এবং সাগরে অবৈধভাবে ইলিশ শিকারকালে অভিযান চালিয়ে প্রায় দুইশ’র মতো বাংলাদেশি ও ভারতীয় জেলেকে আটক করে। এসময় ট্রলার, জাল ও নৌকা জব্দ করে নৌ-পুলিশ, কোস্ট গার্ড ও নৌবাহিনী। এর মধ্যে ভারতের ৭৯ রয়েছে। ভ্রম্যমান আদালতের মাধ্যমে আটককৃত বাংলাদেশি শতাধিক জেলেকে বিভিন্ন মেয়েদের সাজা দেওয়া হয়েছে। জব্দ করা হচ্ছে জাল ও নৌকা। আটককৃত অধিকাংশ জেলে অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় তাদেরকে মুচলেকা দিয়ে সতর্ক করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

মতলবে সংঘবদ্ধ জেলেদের হামলায় আহতদের মধ্যে রয়েছেন, উপজেলা মৎস্য অফিসের মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, মোশারফ হোসেন, মোহনপুর নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির সদস্য ইমরান হোসেন, মো. রাসেল, কামাল হোসেন, জসিম উদ্দিন, স্পিডবোট চালক রনি মিয়া, নৌকার মাঝি আলী আকবর, মাঝির সহকারী আবদুল ছাত্তার এবং মো. কাউছার। আহতরা সবাই মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন। এ ঘটনায় মোহনপুর নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. কামরুজ্জামান সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ২২ দিনের মা ইলিশ রক্ষার নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার রাতে মৎস্য বিভাগকে সঙ্গে নিয়ে অভিযান পরিচালনা করা হয়।

এ সময় মেঘনা নদীর আমিরাবাদ এলাকায় পৌঁছালে প্রায় শতাধিক জেলে জড়ো হয়। তারা অতর্কিতভাবে বাঁশ ও লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালায়। ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। তাতে ঘটনাস্থলে অন্তত ১০ জন গুরুতর আহত হন। নৌ-পুলিশ ও মৎস্য বিভাগের সদস্যদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম হয়। মোহনপুর নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আরও জানান, এই ঘটনায় উপজেলা মৎস্য অফিসের সহকারী মোহাম্মদ আতিকুর রহমান থানায় মামলা করেছেন। অজ্ঞাত আসামি হওয়ায় আমরা কাউকে এখনও আটক করতে পারিনি। হামলার সঙ্গে জড়িত জেলেদের শনাক্ত করতে মাঠে নেমেছে পুলিশ।

এ প্রসঙ্গে জানার মতলব উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিজয় কুমার দাস বলেন, বৃহস্পতিবার পদ্মায় শতাধিক জেলে অবৈধভাবে ইলিশ শিকারে নামে। এ সময় টহলে থাকা মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা এবং নৌপুলিশ দ্রুত তাদের প্রতিহত করতে গেলে সংঘদ্ধভাবে হামলা চালায়। তাদের মৎস্য অধিদপ্তরের বেশ কয়েকজন আহত হয়। এ নিয়ে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারে মাঠে নেমেছে পুলিশ। আহতরা হচ্ছেন, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা কার্যালয়ের সহকারী মোহাম্মদ আতিকুর রহমান ও মোশারফ হোসেন, স্পিডবোটের চালক রনি মিয়া, নৌকার মাঝি আলী আকবর, মাঝির সহকারী আবদুল ছাত্তার ও মো. কাউছার, মোহনপুর নৌ পুলিশ ফাঁড়ির সদস্য ইমরান হোসেন, মো. রাসেল, কামাল হোসেন ও জসিম উদ্দিন। বিজয় কুমার দাস বলেন, ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা শুরুর পর থেকে প্রত্যেক জেলেকে ২৫ কেজি করে ভিজিএফের চাল দেওয়া হয়।

মতলব উত্তর থানার ওসি রবিউল হক বলছেন, মেঘনা নদীতে মা ইলিশ রক্ষা অভিযানে নৌ-পুলিশ ও মৎস্য বিভাগ সদস্যদের ওপর হামলা চালানোর ঘটনায় অজ্ঞাত ৮০-৯০ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। মূলত মতলব উত্তর থানায় মামলা হলেও এটার সম্পূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে মোহনপুর নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ওপর। তারা আসামিদের শনাক্ত করে আটক করবে।

৭৯ ভারতীয় জেলে ও ৫ ট্রলার আটক

বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের জলসীমায় অবৈধভাবে মাছ শিকারের দায়ে প্রথক অভিযান চালিয়ে ৫টি মাছ ধরার ট্রলার ও ৭৯জন ভারতীয় জেলেকে আটক করে নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ড। এর মধ্যে মোংলার সমুদ্র বন্দরের অদূরে সাগরে বাংলাদেশের জলসীমায় অবৈধভাবে ইলিশ শিকারের সময় ৩টি ফিশিং ট্রলারসহ ৪৮ ভারতীয় জেলেকে আটক বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড ও নৌবাহিনী। অপর দিকে কুয়াটার অদূরে সাগরে বাংলাদেশ জলসীমা থেকে ৩১জন ভারতীয় জেলে ও ২টি ট্রলার আটক করে নৌবাহিনী।

বাংলাদেশে এখন ইলিশের ভর প্রজনন মৌসম চলছে। এ কারণে ১৩ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন ইলিশ শিকার, বাজারজাত, পরিবহন, মজুত নিষিদ্ধ। অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে এবারে নদ-নদী ও সাগরে সার্বক্ষণিক মৎস্য অধিদপ্তর, নৌ পুলিশ, কোস্ট গার্ড ও নৌবাহিনী দায়িত্ব পালন করে চলেছে।