ইসরায়েলে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, প্রতিশোধের হুমকি তেল আবিবের
- আপডেট সময় : ০৭:৫৮:২৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২ অক্টোবর ২০২৪ ৭৬ বার পড়া হয়েছে
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কাঁপলো ইসরায়েল
ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মুখে ইসরায়েলি নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা জরুরি বাংকারে আশ্রয় নিয়েছে। ইসরায়েলি একটি সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। সিএনএন জানিয়েছে, এক ঘণ্টায় তেল আবিব, জেরুজালেম ও হাইফা লক্ষ্য করে ১২টির বেশি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। এ হামলার পর ইসরায়েলি নাগরিকদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যের মরুপ্রান্তরে সাম্প্রতিক সময়ে সমরশক্তি প্রদর্শন করা ইসরায়েলের তেলআবিব, জেরুজালেমসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শহরে দুই দফায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে দেশটির প্রধান আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী ইসলামি প্রজাতান্ত্রিক ইরান।
ইরানকে এই হামলার ‘ফল ভোগ করতে হবে’ বলে ইসরায়েল জবাব দেওয়ার যে হুমকি দিয়েছে, তাতে মধ্যপ্রাচ্যে বড় যুদ্ধের শঙ্কা আরও গভীর হচ্ছে। এরই মধ্যে কূটনৈতিক পর্যায়ে বিশ্বজুড়ে এর প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছে।
কয়েকশ ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ইসরায়েলের বিভিন্ন অঞ্চল কেঁপে উঠেছে বলে খবর এলেও হতাহতের কোনো তথ্য দেয়নি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো, যাদের সর্বশেষ খবরে বলা হচ্ছে, রাতের মত আঘাত করা স্থগিত করেছে তেহরান।
দখলদার ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে ১৮০টির মতো ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান। মঙ্গলবার এ হামলা চালায় ইরান। হামলায় তাৎক্ষণিকভাবে হতাহতের কোনও খবর পাওয়া যায়নি বলে জানানো হয় বিবিসির খবরে।
হামাসের সাবেক প্রধান ইসমাইল হানিয়া, হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরুল্লাহ ও ইসলামিক বিপ্লবী গার্ডের কমান্ডারদের হত্যার প্রতিশোধ হিসেবে এই হামলা চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোর (আইআরজিসি)।
দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে ইসরায়েল সরকার। হামলার সময় লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। বন্ধ করে দেওয়া হয় দেশটির আকাশসীমা। বাংকারে আশ্রয় নেন ইসরায়েলের মন্ত্রিসভার সদস্যরা।
বিবিসি জানিয়েছে, ইরানের ছোড়া এসব মিসাইল আটকাতে আয়রন ডোমসহ অন্যান্য প্রতিরক্ষা ব্যবহার করেছে ইসরায়েল। কিন্তু তা সত্ত্বে অনেক মিসাইল সরাসরি আঘাত হেনেছে। আর মিসাইলের আঘাতে বিশাল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) সাধারণ ইসরায়েলিদের জানিয়েছে, তারা চাইলে এখন বোমা আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বের হয়ে আসতে পারবে। এখন নিরাপত্তার নিয়ে আর কোনও ঝুঁকি নেই।
এরপর আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বের হয়ে আসা শুরু করেন সাধারণ মানুষ। তারা মিসাইল হামলার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করা শুরু করেন।
গত সোমবার লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে স্থল অভিযান শুরু করে ইসরায়েল। পাশাপাশি ব্যাপক বিমান হামলাও চালায়। সেই হামলায় এক দিনেই লেবাননে ৯৫ জন নিহত হয়েছেন। লেবাননে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলার মধ্যে ইরান ইসরায়েলে এই হামলা চালিয়েছে।
এদিকে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সময় ইসরায়েলের বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরে সব ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। ইসরায়েলের বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দেশের আকাশসীমা বন্ধ রাখা হয়েছে এবং ফ্লাইটগুলো বিকল্প গন্তব্যে পুনর্নির্দেশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে জর্ডান ও ইরাকও সাময়িকভাবে তাদের আকাশসীমা বন্ধ ঘোষণা করেছে।
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদকরা জানিয়েছেন, জর্ডানের আকাশে বেশ কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করার দৃশ্য দেখা গেছে।
ইরানের এই হামলার পর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ইসরায়েলে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ব্যর্থ হয়েছে। এ সম তিনি প্রতিশোধ নেওয়ার অঙ্গীকার করেন।
নিরাপত্তা বৈঠকে নেতানিয়াহু বলেছেন, ইরান আজ রাতে একটি বড় ভুল করেছে এবং এর জন্য তাকে মাশুল দিতে হবে। ইরানের সরকার আমাদের আত্মরক্ষার সক্ষমতা এবং আমাদের শত্রুদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার সংকল্প বুঝতে পারে না।
ইসরায়েল এ হামলার জবাব দেওয়ার পরিকল্পনা করছে বলে জানিয়েছেন ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল দানিয়েল হাগারি। তিনি বলেন, এ হামলার জন্য পরিণতি ভোগ করতে হবে। এ নিয়ে আমাদের পরিকল্পনা আছে। আমরা যথাস্থানে ও যথাসময়ে হামলার সিদ্ধান্ত নেব।
হাগারি বলেন, আমরা অনেকগুলো ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করেছি। তবে মধ্য ও দক্ষিণ ইসরায়েলে আরও কিছু ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হেনেছে। এ পর্যায়ে আমরা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছি। আহতের কোনো তথ্য আমরা পাইনি।
তবে ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোর (আইআরজিসি) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ইসরায়েল এ হামলার জবাব দেওয়ার চেষ্টা করলে ‘ধ্বংসাত্মক হামলা’ চালিয়ে জবাব দেবে ইরান।
এর আগে শুক্রবার বৈরুতের উপকণ্ঠে ইসরায়েলের হামলায় নিহত হন লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরুল্লাহ। গত বছরের অক্টোবরে ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরুর পর থেকে ইসরায়েলের ভূখণ্ডে সীমিত পরিসরের হামলা চালিয়ে আসছিল ইরানের সমর্থনপুষ্ট সংগঠন হিজবুল্লাহ। ইসরায়েলও পাল্টা জবাব দিচ্ছিল। গত ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে লেবাননে হামলা জোরদার করে ইসরায়েল।