ঢাকা ০৭:৪২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫

উন্নত চিকিৎসা নিতে লন্ডনের পথে খালেদা জিয়া

গণমুক্তি রিপোর্ট
  • আপডেট সময় : ০৯:৪৩:৫৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ জানুয়ারী ২০২৫ ৭০ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

 

উন্নত চিকিৎসা জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া লন্ডনে পথে ঢাকা ছেড়েছেন। কাতারের আমিরের পাঠানো বিশেষ বিমান রয়েল এয়ার অ্যাম্বুলেন্স এয়ারবাসে চড়ে লন্ডনের উদ্দেশ্যে মঙ্গলবার স্থানীয় সময় রাত ১০টায় ঢাকা ছাড়েন সাবেক প্রধানমন্ত্রী। অত্যাধুনিক সব চিকিৎসা সুবিধা সম্বলিত বিশেষায়িত দ্রুতগামী এয়ারবাসটি খালেদা জিয়াকে লন্ডনে পৌছে দিতে সোমবার সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে ঢাকায় পৌঁছে। ফ্রান্সের এয়ারবাস কোম্পানির তৈরি এই অত্যাধুনিক উড়োজাহাজ জরুরি পরিস্থিতিতে রোগীদের জন্য সর্বোত্তম চিকিৎসাসেবা দিতে সক্ষম। এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে কাতারের চারজন চিকিৎসক এবং প্যারামেডিক থাকবেন।

অর্ধযুগেরও বেশি সময় পর দেশের বাইরে যাচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ৭ বছর পর মা-ছেলের সঙ্গে এটিই হবে প্রথম সাক্ষাত। হিথ্রো বিমানবন্দরে মাকে স্বাগত জানানোর সময় তারেকের স্ত্রী জোবায়াইদা ছাড়াও লন্ডনের বিএনপি নেতা-কর্মীরা উপস্থিত থাকবেন। ঢাকা থেকে খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের ৬ সদস্য সফর সঙ্গী রয়েছেন। খালেদা জিয়ার সফর সঙ্গীদের মধ্যে রয়েছেন, ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্থানীয় কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, শাহাবুদ্দিন তালুকদার, এফ এম সিদ্দিক, নূরুদ্দিন আহমেদ, জাফর ইকবাল ও মোহাম্মদ আল মামুন।

খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এনামুল হক চৌধুরী, নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল এবং খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এ বি এম আবদুস সাত্তারসহ ব্যক্তিগত কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকছেন।


এর আগে মঙ্গলবার রাত আটটা নাগাদ গুলশানের বাসভবন থেকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা দেন খালেদা জিয়া। বাসভবন থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত রাস্তায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের ঢল নামে। হাজার হাজার নেতা-কর্মী রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন শ্লোগান দিয়ে প্রিয় নেত্রীকে বিদায় জানান। খালেদা জিয়ার রাত নয়টার দিকে বিমানবন্দরে পৌঁছান। উন্নত চিকিৎসার জন্য বিমানবন্দর থেকে রাত ১০টায় কাতারের আমিরের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে লন্ডনের উদ্দেশ্য যাত্রা করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।

বিমানবন্দরে দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা খালেদা জিয়াকে বিদায় জানান। দলের চেয়ারপাসনকে বিদায় জানাতে বিকেল থেকেই বিমানবন্দর সড়কের দুই পাশে অবস্থান নেন বিএনপির হাজারো নেতা-কর্মী। বিদায় জানানোর সময় জনদুর্ভোগ এড়াতে ঢাকা মহানগর বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের আগেই বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। তাতেও দুর্ভোগ পুরোপুরি এড়ানো যায়নি। বিএনপি নেতা-কর্মীদের সুশৃঙ্খলভাবে রাস্তার ফুটপাতে দাঁড়িয়ে খালেদা জিয়াকে বিদায় জানানোর জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু নেতা-কর্মীদের অনেকে রাস্তায় নেমে আসেন।

বিএনপি তরফে জানানো হয়, ঢাকা থেকে খালেদা জিয়া প্রথমে যাবেন যুক্তরাজ্যে। সেখানে তাকে লন্ডন ক্লিনিকে ভর্তি করা হবে। একানে কিছুদিন চিকিৎসার পর যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডে জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় হসপিটালে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নেওয়ার কথা রয়েছে। সাত বছর পর লন্ডনে খালেদা জিয়ার সঙ্গে বড় ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেখা হবে। লন্ডনে ছেলে বউ জুবাইদা রহমান ও নাতনি জায়মা জারনাজ রহমানও খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানাবেন।

তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন থেকে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসসহ নানা শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন। ২০১৮ সালে একটি দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হয়ে কারাগারে যাওয়ার পর তার অসুস্থতা বাড়ে। এর মধ্যে কয়েকবার তিনি জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণেও পড়েন। একাধিকবার তার মৃত্যুর গুজবও ছড়ায়। এমন পরিস্থিতিতে দল ও পরিবারের তরফে সরকারের কাছে তার বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়। সরকার তাতে সাড়া দেয়নি।

৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রপতির এক আদেশে খালেদা জিয়া মুক্তি পান। এরপর দুর্নীতির যে দুটি মামলায় তিনি কারাবন্দী হয়েছিলেন, সেগুলোর রায় বাতিল করে আদালত। ২০২৩ সালের অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় হসপিটালের তিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে খালেদা জিয়ার শরীরে রক্তনালিতে সফল অস্ত্রোপচার হয়।

খালেদা জিয়ার চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত খালেদা জিয়ার লিভার প্রতিস্থাপন খুব জরুরি হয়ে পড়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, লিভার প্রতিস্থাপনের পর পুরো চিকিৎসায় কয়েক মাস লেগে যেতে পারে। দলীয় সূত্রের খবর, চিকিৎসা শেষ হলে বিএনপির চেয়ারপারসন আবার লন্ডনে যাবেন। সেখান থেকে সৌদি আরবে পবিত্র ওমরাহ পালন করে তারপর দেশে ফিরতে পারেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

উন্নত চিকিৎসা নিতে লন্ডনের পথে খালেদা জিয়া

আপডেট সময় : ০৯:৪৩:৫৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ জানুয়ারী ২০২৫

 

উন্নত চিকিৎসা জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া লন্ডনে পথে ঢাকা ছেড়েছেন। কাতারের আমিরের পাঠানো বিশেষ বিমান রয়েল এয়ার অ্যাম্বুলেন্স এয়ারবাসে চড়ে লন্ডনের উদ্দেশ্যে মঙ্গলবার স্থানীয় সময় রাত ১০টায় ঢাকা ছাড়েন সাবেক প্রধানমন্ত্রী। অত্যাধুনিক সব চিকিৎসা সুবিধা সম্বলিত বিশেষায়িত দ্রুতগামী এয়ারবাসটি খালেদা জিয়াকে লন্ডনে পৌছে দিতে সোমবার সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে ঢাকায় পৌঁছে। ফ্রান্সের এয়ারবাস কোম্পানির তৈরি এই অত্যাধুনিক উড়োজাহাজ জরুরি পরিস্থিতিতে রোগীদের জন্য সর্বোত্তম চিকিৎসাসেবা দিতে সক্ষম। এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে কাতারের চারজন চিকিৎসক এবং প্যারামেডিক থাকবেন।

অর্ধযুগেরও বেশি সময় পর দেশের বাইরে যাচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ৭ বছর পর মা-ছেলের সঙ্গে এটিই হবে প্রথম সাক্ষাত। হিথ্রো বিমানবন্দরে মাকে স্বাগত জানানোর সময় তারেকের স্ত্রী জোবায়াইদা ছাড়াও লন্ডনের বিএনপি নেতা-কর্মীরা উপস্থিত থাকবেন। ঢাকা থেকে খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের ৬ সদস্য সফর সঙ্গী রয়েছেন। খালেদা জিয়ার সফর সঙ্গীদের মধ্যে রয়েছেন, ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্থানীয় কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, শাহাবুদ্দিন তালুকদার, এফ এম সিদ্দিক, নূরুদ্দিন আহমেদ, জাফর ইকবাল ও মোহাম্মদ আল মামুন।

খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এনামুল হক চৌধুরী, নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল এবং খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এ বি এম আবদুস সাত্তারসহ ব্যক্তিগত কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকছেন।


এর আগে মঙ্গলবার রাত আটটা নাগাদ গুলশানের বাসভবন থেকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা দেন খালেদা জিয়া। বাসভবন থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত রাস্তায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের ঢল নামে। হাজার হাজার নেতা-কর্মী রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন শ্লোগান দিয়ে প্রিয় নেত্রীকে বিদায় জানান। খালেদা জিয়ার রাত নয়টার দিকে বিমানবন্দরে পৌঁছান। উন্নত চিকিৎসার জন্য বিমানবন্দর থেকে রাত ১০টায় কাতারের আমিরের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে লন্ডনের উদ্দেশ্য যাত্রা করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।

বিমানবন্দরে দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা খালেদা জিয়াকে বিদায় জানান। দলের চেয়ারপাসনকে বিদায় জানাতে বিকেল থেকেই বিমানবন্দর সড়কের দুই পাশে অবস্থান নেন বিএনপির হাজারো নেতা-কর্মী। বিদায় জানানোর সময় জনদুর্ভোগ এড়াতে ঢাকা মহানগর বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের আগেই বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। তাতেও দুর্ভোগ পুরোপুরি এড়ানো যায়নি। বিএনপি নেতা-কর্মীদের সুশৃঙ্খলভাবে রাস্তার ফুটপাতে দাঁড়িয়ে খালেদা জিয়াকে বিদায় জানানোর জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু নেতা-কর্মীদের অনেকে রাস্তায় নেমে আসেন।

বিএনপি তরফে জানানো হয়, ঢাকা থেকে খালেদা জিয়া প্রথমে যাবেন যুক্তরাজ্যে। সেখানে তাকে লন্ডন ক্লিনিকে ভর্তি করা হবে। একানে কিছুদিন চিকিৎসার পর যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডে জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় হসপিটালে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নেওয়ার কথা রয়েছে। সাত বছর পর লন্ডনে খালেদা জিয়ার সঙ্গে বড় ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেখা হবে। লন্ডনে ছেলে বউ জুবাইদা রহমান ও নাতনি জায়মা জারনাজ রহমানও খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানাবেন।

তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন থেকে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসসহ নানা শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন। ২০১৮ সালে একটি দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হয়ে কারাগারে যাওয়ার পর তার অসুস্থতা বাড়ে। এর মধ্যে কয়েকবার তিনি জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণেও পড়েন। একাধিকবার তার মৃত্যুর গুজবও ছড়ায়। এমন পরিস্থিতিতে দল ও পরিবারের তরফে সরকারের কাছে তার বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়। সরকার তাতে সাড়া দেয়নি।

৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রপতির এক আদেশে খালেদা জিয়া মুক্তি পান। এরপর দুর্নীতির যে দুটি মামলায় তিনি কারাবন্দী হয়েছিলেন, সেগুলোর রায় বাতিল করে আদালত। ২০২৩ সালের অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় হসপিটালের তিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে খালেদা জিয়ার শরীরে রক্তনালিতে সফল অস্ত্রোপচার হয়।

খালেদা জিয়ার চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত খালেদা জিয়ার লিভার প্রতিস্থাপন খুব জরুরি হয়ে পড়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, লিভার প্রতিস্থাপনের পর পুরো চিকিৎসায় কয়েক মাস লেগে যেতে পারে। দলীয় সূত্রের খবর, চিকিৎসা শেষ হলে বিএনপির চেয়ারপারসন আবার লন্ডনে যাবেন। সেখান থেকে সৌদি আরবে পবিত্র ওমরাহ পালন করে তারপর দেশে ফিরতে পারেন।