এবার ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দানবাক্সে দানের পরিমাণ ১২ কোটির বেশি

- আপডেট সময় : ৪৬ বার পড়া হয়েছে
কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দানবাক্সগুলো খোলা হয়। গতকাল শনিবার ৪ মাস ১৮ দিন পর পাগলা মসজিদের নিচতলায় রক্ষিত ১৩ টি দানবাক্স খুলে ৩২টি বস্তায় টাকা ভর্তি করে প্রথমে মসজিদ কমপ্লেক্সের দোতলায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেখানে মেঝেতে বস্তা ঢেলে শুরু হয় টাকা বাছাই ও গণনার কাজ। সিন্দুক খোলার সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক ও পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফৌজিয়া খান ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী। তাছাড়াও টাকা গণনার সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যবৃন্দ ও মসজিদ পরিচালনা কমিটির কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। রাত পৌণে আটটার দিকে টাকা গণনাশেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের নিকট প্রাপ্ত টাকার পরিমাণ ঘোষণা করা হয়। এবার প্রাপ্ত টাকার পরিমাণ হলো ১২ কোটি ৯ লাখ ৩৭ হাজার ২২০ টাকা, যা অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। গত ১২ এপ্রিল দানবাক্স খুলে পাওয়া গিয়েছিল ৯ কোটি ১৭ লক্ষ ৮০ হাজার ৬৮৭ টাকা।
জেলা প্রশাসক জানান, আজকের জমার হিসাব ছাড়াই ব্যাংকের হিসাবে ৯১ কোটি টাকা জমা হয়েছে। তাছাড়াও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে গত শুক্রবার পর্যন্ত পাওয়া গেছে ৫ লাখ ৩০ হাজার টাকা। তিনি জানান, মসজিদ ও ইসলামি কমপ্লেক্সের খরচ চালিয়ে দানের টাকা ব্যাংকে জমা রাখা হয়। তাছাড়াও জেলার বিভিন্ন মসজিদ, মাদরাসা ও এতিমখানায় অনুদান দেওয়ার পাশাপাশি অসহায় এবং জটিল রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের আর্থিক সহায়তা করা হয়। জেলা প্রশাসক জানান, মসজিদের নিজস্ব পাঁচ একর জায়গা রয়েছে। মসজিদের নামে আরও জায়গা ক্রয় করা হবে। এখানে একটি দশ তলা মাল্টিপারপাস মসজিদ কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হবে। এর জন্য বুয়েটের একটি বিশেষজ্ঞ দলকে ডিজাইন করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
পাগলা মসজিদসূত্রে জানা যায়, টাকা বাছাই ও গণনার কাজে পাগলা মসজিদ সংলগ্ন নূরুল কোরআন হাফিজিয়া মাদরাসা ও আল জামিয়াতুল ইমদাদিয়া মাদরাসার শিক্ষার্থী ও শিক্ষক, পাগলা মসজিদের সকল স্টাফ এবং রূপালী ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ টাকা বাছাই ও গণনার কাজে অংশগ্রহণ করেন। গণনাশেষে ওইদিনই রূপালী ব্যাংকে মসজিদের নামে খোলা হিসাবে সমস্ত টাকা জমা দেওয়া হয়। প্রতিবারের মতো এবারেও টাকার সঙ্গে পাওয়া গেছে সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশ্যে লেখা অনেক চিঠি। রোগ ভালো হওয়ার, মনের মানুষকে কাছে পাওয়ার, বিদেশ গমনের সুযোগ লাভ ইত্যাদি আকুতি জানিয়ে এসব চিঠি লেখা হয়েছে।
উল্লেখ্য, শহরের পশ্চিমপ্রান্তে হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে গড়ে উঠেছে দুই শতাধিক বছরের প্রাচীন ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদ। এই মসজিদকে ঘিরে রয়েছে অনেক জনশ্রুতি। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অসংখ্য ধর্মপ্রাণ মুসলমান এই মসজিদে দান ও মানত করতে আসেন। শুধু টাকা-পয়সা নয়, তারা সোনা-রূপার অলংকার ছাড়াও বিদেশি মুদ্রাও দান করে থাকেন। তাছাড়া প্রতিদিনই লোকজন গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি প্রভৃতিও নিয়ে আসেন। ওইগুলো বিক্রি করে পরে মসজিদের ফান্ডে জমা দেওয়া হয়।