ঢাকা ০১:১৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৫

সর্বোচ্চ দানপ্রাপ্তির রেকর্ড

ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দানবাক্সে জমার পরিমাণ ৯ কোটি ছাড়িয়ে গেছে

কাঞ্চন সিকাদর, কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ১২৯ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

 

কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দানবাক্সগুলো শনিবার(১২ এপ্রিল) সকাল সাতটায় খোলা হয়। ৪ মাস ১২ দিন পর পাগলা মসজিদের নিচতলায় রক্ষিত ১০টি লোহার সিন্দুক ও একটি ট্রাঙ্ক খুলে ২৮টি বস্তায় টাকা ভর্তি করে প্রথমে দোতলায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরে মেঝেতে বস্তা ঢেলে শুরু হয় টাকা বাছাই ও গণনার কাজ। সিন্দুক খোলার সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক ও পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফৌজিয়া খান, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও দানবাক্স খোলা কমিটির আহ্বায়ক জেসমিন আক্তারসহ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যবৃন্দ ও মসজিদ পরিচালনা কমিটির কর্মকর্তাবৃন্দ। বিকাল পাঁচটার পর টাকা গণনাশেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের নিকট প্রাপ্ত টাকার পরিমাণ ঘোষণা করা হয়। এবার প্রাপ্ত টাকার পরিমাণ হলো ৯ কোটি ১৭ লাখ ৮০ হাজার ৬৮৭ টাকা, যা অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। সর্বশেষ গতবছরের ৩০ নভেম্বর দানবাক্স খুলে পাওয়া গিয়েছিল ৮ কোটি ২১ লক্ষ ৩৪ হাজার ৩১৪ টাকা।

জেলা প্রশাসক ফ্যেজিয়া খান জানান, গত শুক্রবার পর্যন্ত পাগলা মসজিদের নামে ব্যাংক হিসেবে জমা রয়েছে ৮০ কোটি ৭৫ লক্ষ ৭৩ হাজার ৫৭৬ টাকা। মসজিদ ও ইসলামি কমপ্লেক্সের খরচ চালিয়ে দানের টাকা ব্যাংকে জমা রাখা হয়। তাছাড়াও জেলার বিভিন্ন মসজিদ, মাদরাসা ও এতিমখানায় অনুদান দেওয়ার পাশাপাশি অসহায় এবং জটিল রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের আর্থিক সহায়তা করা হয়।

পাগলা মসজিদসূত্রে জানা যায়, টাকা বাছাই ও গণনার কাজে পাগলা মসজিদ সংলগ্ন নূরুল কোরআন হাফিজিয়া মাদরাসা ও আল জামিয়াতুল ইমদাদিয়া মাদরাসার প্রায় আড়াই শত শিক্ষার্থী ও শিক্ষক, পাগলা মসজিদের ৩৬ জন স্টাফ এবং রূপালী ব্যাংকের ৭০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী অংশগ্রহণ করেন। গণনাশেষে ওইদিনই রূপালী ব্যাংকে মসজিদের নামে খোলা হিসাবে সমস্ত টাকা জমা দেওয়া হয়। প্রতিবারের মতো এবারেও টাকার সঙ্গে পাওয়া গেছে সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশ্যে লেখা অনেক চিঠি। রোগ ভালো হওয়ার, মনের মানুষকে কাছে পাওয়ার ইত্যাদি আকুতি জানিয়ে এসব চিঠি লেখা হয়েছে।

মসজিদ কমিটিসূত্রে জানা গেছে, ছয়তলাবশিষ্ট দৃষ্টিনন্দন পাগলা মসজিদ ও ইসলামি কমপ্লেক্সে নির্মাণের জন্য একটি মেগা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে, যেখান একসঙ্গে অর্ধ লক্ষ মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন। একসঙ্গে পাঁচ হাজার নারীর আলাদাভাবে নামাজ আাদায়ের ব্যবস্থাও থাকবে। ইতিমধ্যে এ প্রকল্পের পরামর্শক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তারা যাচাই-বাছাই করে নকশা চূড়ান্ত করে দিলেই দরপত্র আহ্বান করা হবে। এতে প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৫ কোটি টাকা।
উল্লেখ্য, শহরের পশ্চিমপ্রান্তে হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে ৩ একর ৮৮ শতাংশ জমির ওপর গড়ে উঠেছে দুই শতাধিক বছরের প্রাচীন ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদ। এই মসজিদকে ঘিরে রয়েছে অনেক জনশ্রুতি। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অসংখ্য ধর্মপ্রাণ মুসলমান এই মসজিদে দান ও মানত করতে আসেন। শুধু টাকা-পয়সা নয়, তারা সোনা-রূপার অলংকার ছাড়াও বিদেশি মুদ্রাও দান করে থাকেন। তাছাড়া প্রতিদিনই লোকজন গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি প্রভৃতিও নিয়ে আসেন। ওইগুলো বিক্রি করে পরে মসজিদের ফান্ডে জমা দেওয়া হয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

সর্বোচ্চ দানপ্রাপ্তির রেকর্ড

ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দানবাক্সে জমার পরিমাণ ৯ কোটি ছাড়িয়ে গেছে

আপডেট সময় :

 

কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দানবাক্সগুলো শনিবার(১২ এপ্রিল) সকাল সাতটায় খোলা হয়। ৪ মাস ১২ দিন পর পাগলা মসজিদের নিচতলায় রক্ষিত ১০টি লোহার সিন্দুক ও একটি ট্রাঙ্ক খুলে ২৮টি বস্তায় টাকা ভর্তি করে প্রথমে দোতলায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরে মেঝেতে বস্তা ঢেলে শুরু হয় টাকা বাছাই ও গণনার কাজ। সিন্দুক খোলার সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক ও পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফৌজিয়া খান, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও দানবাক্স খোলা কমিটির আহ্বায়ক জেসমিন আক্তারসহ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যবৃন্দ ও মসজিদ পরিচালনা কমিটির কর্মকর্তাবৃন্দ। বিকাল পাঁচটার পর টাকা গণনাশেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের নিকট প্রাপ্ত টাকার পরিমাণ ঘোষণা করা হয়। এবার প্রাপ্ত টাকার পরিমাণ হলো ৯ কোটি ১৭ লাখ ৮০ হাজার ৬৮৭ টাকা, যা অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। সর্বশেষ গতবছরের ৩০ নভেম্বর দানবাক্স খুলে পাওয়া গিয়েছিল ৮ কোটি ২১ লক্ষ ৩৪ হাজার ৩১৪ টাকা।

জেলা প্রশাসক ফ্যেজিয়া খান জানান, গত শুক্রবার পর্যন্ত পাগলা মসজিদের নামে ব্যাংক হিসেবে জমা রয়েছে ৮০ কোটি ৭৫ লক্ষ ৭৩ হাজার ৫৭৬ টাকা। মসজিদ ও ইসলামি কমপ্লেক্সের খরচ চালিয়ে দানের টাকা ব্যাংকে জমা রাখা হয়। তাছাড়াও জেলার বিভিন্ন মসজিদ, মাদরাসা ও এতিমখানায় অনুদান দেওয়ার পাশাপাশি অসহায় এবং জটিল রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের আর্থিক সহায়তা করা হয়।

পাগলা মসজিদসূত্রে জানা যায়, টাকা বাছাই ও গণনার কাজে পাগলা মসজিদ সংলগ্ন নূরুল কোরআন হাফিজিয়া মাদরাসা ও আল জামিয়াতুল ইমদাদিয়া মাদরাসার প্রায় আড়াই শত শিক্ষার্থী ও শিক্ষক, পাগলা মসজিদের ৩৬ জন স্টাফ এবং রূপালী ব্যাংকের ৭০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী অংশগ্রহণ করেন। গণনাশেষে ওইদিনই রূপালী ব্যাংকে মসজিদের নামে খোলা হিসাবে সমস্ত টাকা জমা দেওয়া হয়। প্রতিবারের মতো এবারেও টাকার সঙ্গে পাওয়া গেছে সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশ্যে লেখা অনেক চিঠি। রোগ ভালো হওয়ার, মনের মানুষকে কাছে পাওয়ার ইত্যাদি আকুতি জানিয়ে এসব চিঠি লেখা হয়েছে।

মসজিদ কমিটিসূত্রে জানা গেছে, ছয়তলাবশিষ্ট দৃষ্টিনন্দন পাগলা মসজিদ ও ইসলামি কমপ্লেক্সে নির্মাণের জন্য একটি মেগা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে, যেখান একসঙ্গে অর্ধ লক্ষ মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন। একসঙ্গে পাঁচ হাজার নারীর আলাদাভাবে নামাজ আাদায়ের ব্যবস্থাও থাকবে। ইতিমধ্যে এ প্রকল্পের পরামর্শক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তারা যাচাই-বাছাই করে নকশা চূড়ান্ত করে দিলেই দরপত্র আহ্বান করা হবে। এতে প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৫ কোটি টাকা।
উল্লেখ্য, শহরের পশ্চিমপ্রান্তে হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে ৩ একর ৮৮ শতাংশ জমির ওপর গড়ে উঠেছে দুই শতাধিক বছরের প্রাচীন ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদ। এই মসজিদকে ঘিরে রয়েছে অনেক জনশ্রুতি। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অসংখ্য ধর্মপ্রাণ মুসলমান এই মসজিদে দান ও মানত করতে আসেন। শুধু টাকা-পয়সা নয়, তারা সোনা-রূপার অলংকার ছাড়াও বিদেশি মুদ্রাও দান করে থাকেন। তাছাড়া প্রতিদিনই লোকজন গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি প্রভৃতিও নিয়ে আসেন। ওইগুলো বিক্রি করে পরে মসজিদের ফান্ডে জমা দেওয়া হয়।