কালীগঞ্জে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের মাঠ দিবস পালিত
- আপডেট সময় : ৮৮ বার পড়া হয়েছে
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে টেকসই কৃষির পথে এগিয়ে যেতে মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে অনুষ্ঠিত হলো টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের মাঠ দিবস। উপজেলার বড় ঘিঘাটি গ্রামে আয়োজিত এই ব্যতিক্রমী প্রদর্শনীতে কৃষকদের আগ্রহ ছিল চোখে পড়ার মতো।
অনুষ্ঠানের মূল লক্ষ্য ছিল- আদা চাষে আধুনিক ও লাভজনক কৌশল প্রদর্শনের মাধ্যমে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা। বস্তা আদা-২ জাতের বীজ দিয়ে যে চাষাবাদ শুরু হয়েছিল, এখন সেটিই সম্ভাবনার নতুন দ্বার খুলে দিয়েছে বলে মনে করছেন কৃষি কর্মকর্তারা। গতকাল রবিবার (৬ জুলাই) সকালে আয়োজিত মাঠ দিবসের প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের গবেষণা অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ আবু জুবায়ের হোসেন বাবলু।বিশেষ অতিথি ছিলেন টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের পরিচালক ও কৃষিবিদ মো. রবিউল ইসলাম।সভাপতিত্ব করেন ঝিনাইদহ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ষষ্ঠী চন্দ্র রায়।
প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন, “বর্তমানে কৃষি শুধু পেট ভরার উপায় নয়-এটি দেশের অর্থনীতি, কর্মসংস্থান ও পরিবেশ রক্ষার অন্যতম স্তম্ভ। আমরা চাই আমাদের কৃষকরা বিজ্ঞানভিত্তিক, পরিবেশবান্ধব ও লাভজনক চাষাবাদে সম্পৃক্ত হোক।”
প্রদর্শনী প্লটের বৈশিষ্ট্য প্রদর্শনী প্লটে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার করে মাত্র দুই বস্তা আদা বীজ দিয়ে সফলভাবে চাষ করা হয়েছে। জমি প্রস্তুত, জৈব সার ব্যবহার, রোগবালাই নিয়ন্ত্রণ, পানি সাশ্রয়ী সেচ ব্যবস্থা এবং পরিচর্যার প্রতিটি ধাপে অনুসরণ করা হয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতি। এই উদ্যোগ স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি করেছে।কৃষকদের অভিমত ও আগ্রহ মাঠ দিবসে অংশ নেওয়া কৃষক নূর ইসলাম বলেন,“আমরা এতদিন ভাবতাম আদা চাষে খরচ বেশি, ঝুঁকিও বেশি। কিন্তু এখানে এসে দেখলাম, দুই বস্তা বীজ দিয়েও ভালো ফলন সম্ভব। এখন আমরাও এমন চাষ করতে আগ্রহী।”আরেক কৃষক মফিজ মিয়া জানান,“এ ধরনের মাঠ দিবস হলে আমাদের শেখার সুযোগ হয়। অফিসে গিয়ে অনেক কথা বুঝি না, মাঠে এসে হাতে-কলমে দেখলে সহজেই শেখা যায়।” কৃষি কর্মকর্তাদের পরিকল্পনা ও প্রতিশ্রুতি কৃষিবিদ রবিউল ইসলাম বলেন,“সামান্য উদ্যোগ থেকেই বড় সফলতা সম্ভব-এই প্লট তার প্রমাণ। কৃষকদের পাশে থেকে আরও প্রশিক্ষণ ও সহায়তা দিয়ে এমন প্রদর্শনী পুরো উপজেলায় ছড়িয়ে দেওয়া হবে।”উপ-পরিচালক ষষ্ঠী চন্দ্র রায় বলেন,“এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্যই হলো কৃষকদের চাহিদা অনুযায়ী প্রযুক্তি সরবরাহ করা এবং মাঠেই প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের সক্ষম করে তোলা।”
এই মাঠ দিবসে অংশ নেন আশেপাশের ইউনিয়ন থেকে আগত শতাধিক কৃষক ও কৃষাণী।তাঁরা প্রদর্শনী প্লট ঘুরে দেখেন এবং কৃষি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে পরামর্শ গ্রহণ করেন।অনেকে জানান, আগামি মৌসুমেই তারা এই ধরনের আদা চাষ শুরু করবেন।
এই মাঠ দিবসটি শুধু একটি কৃষি প্রদর্শনী নয়, বরং স্থানীয় কৃষকদের আত্মবিশ্বাস ফেরানোর একটি প্রয়াস। কম খরচে, বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতিতে উচ্চমূল্য ফসল উৎপাদনের এই পরিকল্পনা যদি সফল হয়, তবে ভবিষ্যতে কালীগঞ্জসহ গোটা যশোর অঞ্চলে আদা চাষে এক নতুন বিপ্লব ঘটবে বলে আশা করা হচ্ছে।



















