যানজট নিরসনে ডিসি এসপিকে স্মারকলিপি দিল মানবাধিকার কমিশন
কুমিল্লায় তীব্র যানজটে নাকাল নগরবাসী

- আপডেট সময় : ১৮ বার পড়া হয়েছে
হকারদের দখলে ফুটপাত,অনিয়ন্ত্রিত যানবাহন, অপর্যাপ্ত ট্রাফিক পুলিশ,যত্রতত্র পার্কিংসহ নানান অনিয়মের কারনে কুমিল্লা নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে যানজট লেগেই থাকে। ব্যাংক এবং ট্যাংকের নগরী এখন যানজটের নগরীতে পরিণত। তীব্র যানযটে নাকাল নগরবাসী।
যানজটের অভিশাপ থেকে নগরবাসীকে মুক্ত করতে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক,পুলিশ সুপার ও কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসককে স্মারক লিপি দিয়েছে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন কুমিল্লা মহানগরী।
গতকাল রোববার সকালে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও সিটি কর্পোরেশন প্রশাসককে স্মারক লিপি ও যানজট নিরসনে কার্যকরী ভুমিকা রাখার আহবান জানান বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন কুমিল্লা মহানগর সভাপতি ও কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি অধ্যক্ষ এএইচ এম তারিকুল ইসলাম লিটন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সহ-সভাপতি আইআর আশিক আহমেদ তুহিন, সাধারন সম্পাদক গুলজার হোসেন,সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল হান্নান ও জসিমউদদীন।
বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন কুমিল্লা মহানগর শাখা তাদের স্মারক লিপিতে যানযটের কারন ও নিরসনের উপায় উল্লেখ করে অবিলম্বে যানজট নিরসনে কার্যকরী ভুমিকা রাখার অনুরোধ জানান।
স্মারক লিপিতে উল্লেখিত মানবাধিকার কমিশন কুমিল্লা মহানগর এর বক্তব্য হল- কুমিল্লা শহরের প্রধান প্রধান সড়ক ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহে তীব্র যানজট বর্তমানে ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। এর ফলে সাধারণ জনগণ, ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থী ও রোগীসহ সর্বস্তরের মানুষ চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। ব্যবসা-বাণিজ্য ও জরুরি সেবা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। পাশাপাশি প্রতিনিয়ত মানুষ মানসিক অস্বস্তি, সময় ও অর্থের অপচয় এবং নিত্যদিনের দুর্ভোগের সম্মুখীন হচ্ছেন।
অপরদিকে, মিশুক, ইজিবাইক অটোরিকশা ও থ্রি-হুইলার (সিএনজি) চালকরা ট্রাফিক আইন কিংবা নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা না করে বেপরোয়া গতিতে যানবাহন চালাচ্ছেন। ফলত প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে, দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে এবং শহরজুড়ে এক অনিয়ন্ত্রিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে।
যানজট সৃষ্টি এবং চালকদের বেপরোয়া চলাচলের পেছনে রয়েছে একাধিক কারণ, এসব সমস্যার দ্রুত সমাধান না হলে পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটবে।
যানজট সৃষ্টির পেছনে কিছু প্রধান কারণ চিহ্নিত করে মানবাধিকার কমিশন। ১. কুমিল্লা শহরের সর্বত্র অনুমোদনহীন ও সড়কের সক্ষমতার তুলনায় অতিরিক্ত সংখ্যক মিশুক, অটোরিকশা, সিএনজি চলাচল করছে যা যানজট সৃষ্টির অন্যতম প্রধান কারণ।২. শহরের প্রধান সড়কগুলো অপ্রশস্ত হওয়া সত্ত্বেও বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং সরকারি-বেসরকারি সংস্থার নিজস্ব বৃহৎ আকারের বাসগুলো শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পরিবহনের উদ্দেশ্যে প্রতিদিন নিয়মবহির্ভূতভাবে চলাচল করছে, যার ফলে যানজট পরিস্থিতি আরও তীব্র হচ্ছে।৩. শহরের বিভিন্ন স্থানে ফুটপাত দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ ও ভ্যানে ভ্রাম্যমাণ ব্যবসা পরিচালনার কারণে পথচারীরা ফুটপাত ব্যবহার করতে না পেরে সড়কের উপর চলাচল করতে বাধ্য হয়। এর ফলে যানবাহন চলাচলে বাধা সৃষ্টি হয়, রাস্তা সংকুচিত হয়ে মারাত্মক যানজটের সৃষ্টি হয়। ৪. সড়কের উপর অবৈধভাবে গাড়ি পার্কিং যা যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। ৫. শহরের প্রধান সড়কগুলোর সংলগ্ন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যেমন মুন হসপিটাল, কুমিল্লা টাওয়ার, ওয়াই ডব্লিউ স্কুল, মাতুভান্ডার সহ হাসপাতাল, হোটেল, মার্কেট এ ধরনের প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক মানুষের সমাগম ঘটে। কিন্তু পর্যাপ্ত জায়গা, পার্কিং সুবিধা এবং সুষ্ঠু ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার অভাবে এসব প্রতিষ্ঠানের সামনে প্রায়ই কৃত্রিম যানজটের সৃষ্টি হয়।”৬. মিশুক, অটোরিকশা ও সিএনজি চালকদের ট্রাফিক আইন ও নিয়ম কানন না মেনে বেপরোয়া ভাবে যানবাহন চলাচল করার কারণে শহর জুড়ে এক অনিয়ন্ত্রিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে।৭. যানজট নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় জনবল ও পর্যাপ্ত ট্রাফিক পুলিশের ঘাটতিও যানজট সৃষ্টির অন্যতম কারণ।
৮. মানসম্মত ও নিরাপদ গণপরিবহনের অভাবে সাধারণ জনগণ বাধ্য হয়ে ধীরগতির যানবাহন উপর নির্ভর করছে, ফলস্বরূপ যানজট সৃষ্টি হচ্ছে।
৯. কুমিল্লা শহরের অভ্যন্তরে যথেষ্ট ওয়ানওয়ে সড়ক ও বিকল্প পথের ব্যবস্থা না থাকায় যানজটের তীব্রতা আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
উপরোক্ত সমস্যাগুলো থেকে উত্তরণের জন্য নিম্নোক্ত পদক্ষেপসমূহ গ্রহণ করা একান্ত জরুরি বলে মনে করে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন।
১. অনুমোদন ছাড়া কোন যানবাহন চলাচল না করতে দেওয়া এবং যানবাহনের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা। ২. বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, ও সরকারি-বেসরকারি সংস্থার নিজস্ব বাস শহরের প্রধান সড়কে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা।৩. ফুটপাত দখলমুক্ত করে অবৈধ স্থাপনা ও ভ্রাম্যমাণ দোকান উচ্ছেদ করা। ৪. সড়কের উপর অবৈধভাবে গাড়ি পার্কিং প্রতিরোধে কঠোর আইন প্রয়োগ। ৫. শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কের পাশে অবস্থিত জনবহুল প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্তৃপক্ষরা তাদের নিজ দায়িত্বে প্রতিষ্ঠানের সামনে যানবাহন ও জনসমাগম নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করা।৬. সকল ধরনের যানবাহন চালকদের ট্রাফিক আইন ও নিয়মকানুন মেনে চলতে বাধ্য করা এবং প্রয়োজনে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন এলাকায় চালকদের জন্য স্বল্পমেয়াদি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা।৭. যানজট নিয়ন্ত্রণে পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগ এবং ট্রাফিক পুলিশের সংখ্যা বৃদ্ধি করা।
৮. যানজট নিয়ন্ত্রণে মানসম্মত ও নিরাপদ গণপরিবহন বা নগরপরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা।
৯. যানবাহন চলাচল সহজ করতে কিছু কিছু সড়ক নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ওয়ানওয়ে হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
১০. প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা ও বাস্তবমুখী পদক্ষেপ, আধুনিক ট্রাফিক ব্যবস্থা চালু, কঠোর আইন প্রয়োগ এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা।
যদি দ্রুত সময়ের মধ্যে পরিকল্পিত পদক্ষেপ গ্রহণ না করা হয়, তবে কুমিল্লা শহরের যানজট পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নেবে। অতএব, কুমিল্লা শহরবাসীর দুর্ভোগ লাঘবে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে আপনার সুদৃষ্টি ও হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
স্মারক লিপি প্রদানকালে মানবাধিকার কমিশনকে আস্বস্ত করে জেলা প্রশাসক আমিরুল কায়সার বলেন- আমরা ইতিমধ্যে পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। অল্পকিছুদিনের মধ্যেই কার্যকরীতা দেখতে পাবেন। এই শহরকে সুন্দর ও যানজটমুক্ত রাখতে সকলের সচেতনতা ও সহযোগিতা জরুরি।