চোরাগোপ্তা হামলা শুরু!

- আপডেট সময় : ১১৮ বার পড়া হয়েছে
ফ্যাসিষ্টদের চোরাগোপ্তা হামলা শুরু হয়েছে। গতকাল রাজধানীর কাফরুলে একটি যাত্রীবাহী বাসে ভাংচুর গুলি বর্ষন এবং যাত্রীদের মারধরের পর নামিয়ে দিয়ে বাসটিতে অগ্নি সংযোগ করা হয়েছে। এরপর থেকে নড়েচড়ে বসে মাঠ পর্যায়ের গোয়েন্দারা। তারা আশঙ্কা করছে নাশকতা ও চোরা গোপ্তা হামলার। ইতোমধ্যে রাজধানীসহ সারাদেশে গোপন বৈঠকের পাশাপাশি আকষ্মিক বিক্ষোভ মিছিল বের করছে রাজপথে। এবিষয়ে পুলিশ সদর দফতরে পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একাধিক বৈঠকের পর রাজধানীসহ সারাদেশে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। তারপরও গোয়েন্দাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে গতকাল সকালে ব্যস্ততম রাজধানীর কাফরুল এলাকার সেনপাড়ায় আলিফ পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস ভাংচুর অগ্নিসংযোগ, গুলি বর্ষন এবং চালক হেলপার ও যাত্রীদের ব্যাপক মারধর করা হয়েছে। আহত যাত্রীদের তখ্য মতে, সেনপাড়া বিআরটিএর অদুরে ৬/৭ জন যুবক আকস্মিক এ নাশকতা ঘটিয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। এছাড়া ফ্যাসিষ্টরা সুযোগ পেলেই রাজধানীসহ সারাদেশের নিরব এবং নির্ঝন এলাকায় গোপন বৈঠক করছে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন যত ঘনিয়ে আসছে ফ্যাসিষ্টদের অপকর্মের সংখ্যা আরো বেড়েছে। এ সকল নাশকতা এবং অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতে যৌথবাহিনী ও আইন শৃংখলা বাহিনী সারাদেশে অভিযান চালিয়ে ফ্যাসিষ্ট হাসিনার মন্ত্রী সভার একাধিক মন্ত্রী এমপি, ব্যবসায়ী ও আওয়ামীলীগ এবং অঙ্গ সংগঠনের অসংখ্য নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হয়েছে। এতকিছুর পরও আওয়ামীলীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের ব্যানারে ফ্যাসিষ্ট হাসিনার দোসনরা মিছিল ও গোপন বৈঠক চালিয়ে যাচ্ছে।
জানা গেছে, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের ঢাকায় ‘গোপন বৈঠক’ এবং এর সঙ্গে সেনা কর্মকর্তার জড়িত থাকার অভিযোগের খবর দেশজুড়ে নানা আলোচনার জন্ম দিয়েছে। ‘গোপন বৈঠক’ ঘিরে কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগ, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগসহ অন্য সহযোগী সংগঠনগুলোর ২২ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এছাড়া ওই বৈঠক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ ওঠা মেজর পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তাকে হেফাজতে নিয়েছে সেনাবাহিনী। তার বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইনে বিচার চলমান রয়েছে। তারা অনলাইন ও অফলাইনে সংঘবদ্ধ প্রচারণার মাধ্যমে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করতে পারে। পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) কর্মকর্তারা এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন। এ খবরে রাজধানীজুড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ঢাকা মহানগর পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুতি নিয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) জানিয়েছে, আবাসিক হোটেল, মেস এবং নেতাকর্মীদের ফ্ল্যাটে অভিযান চলছে।
শুধু তাই নয়, ফ্যাসিষ্টদের চোরাগোপ্তা হামলার শঙ্কায় গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হয়েছে রাজধানীসহ সারাদেশের হোটেল-রিসোর্ট মেস-বস্তি-কারখানা হাসপাতাল ক্লিনিক। এছাড়া নাশকতা চলতে পারে এমন প্রাইভেট ক্লিনিক ও হাসপাতাল এবং বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে চিরুনি অভিযান চলছে। আগামী বছর ফেব্রুয়ারী মাসে জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত পুরো সময় জুড়ে চলমান থাকবে এ অভিযান।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, আগামী এক সপ্তাহ আবাসিক হোটেলে চিরুরি অভিযান চলবে। ঢাকার বাইরে থেকে কেউ হোটেলে অবস্থান করলে পরিচয়পত্র দেখে সুনির্দিষ্ট কারণ না জানাতে পারলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি নতুন কোনো ভাড়াটিয়ার পূর্ণ পরিচয় এবং নাগরিকত্বের নিশ্চয়তা থাকতে হবে।
অন্যদিকে বিদেশে লোক পাঠানোর নাম করে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা সংলগ্ন একটি কনভেনশন হল ভাড়া নেয় এক ব্যক্তি। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সেখানে অভিযান চালানো হয়। ভাটারা থানায় পুলিশের দায়ের করা ওই মামলায় উঠে আসে সেনাবাহিনীর একজন মেজরের জড়িত থাকার বিষয়টি। এরপরই সারাদেশে ‘বিশেষ সতর্কতা’ জারি করা হয়েছে।
আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত আদালত গঠন করা হয়েছে। অভিযুক্ত মেজর পদের ওই সেনা কর্মকর্তাকে গত ১৭ জুলাই তার বাসা থেকে হেফাজতে নেওয়ার কথাও জানায় সেনাবাহিনী। এছাড়া ওই কর্মকর্তার কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার বিষয়ে জানতে আরও একটি তদন্ত আদালত গঠন করা হয়েছে বলে জানায় আইএসপিআর। আইএসপিআর বলছে, তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে ওই সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর প্রচলিত আইন ও বিধি অনুযায়ী যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে ডিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, বসুন্ধরা এলাকায় কে বি কনভেনশন হলে একটি বৈঠক নিয়ে আমাদের কাছে তথ্য ছিল। কনভেনশন হলটি ভাড়া নেন একজন। সে সময় তিনি বিদেশে লোক পাঠানোর নাম করে একটা প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করেছিলেন। সেখানে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে লোকজনকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, যার পরিপ্রেক্ষিতে ভাটারা থানায় একটি মামলা করা হয়।
তিনি আরও বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে এরই মধ্যে ২২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমরা বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করে দেখছি। এ ঘটনার অন্য কোনো দিক আছে কি না, এর প্রকৃত রহস্য কী এবং কারা কারা এর পেছনে দায়ী, সেগুলো শিগগির উন্মোচন করা হবে।
ভাটারা থানায় পুলিশের করা মামলায় বলা হয়, সম্প্রতি বসুন্ধরা সংলগ্ন কে বি কনভেনশন সেন্টারে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ গোপন বৈঠকের আয়োজন করে। দিনভর বৈঠকে ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ ও অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীরা মিলে অংশ নেন ৩০০ থেকে ৪০০ জন। সেখানে তারা সরকারবিরোধী স্লোগান ও দেয়া হচ্ছিল। ওই মামলার এজাহারে বলা হয়, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ পেলে সারাদেশ থেকে ঢাকায় লোক জড়ো করা, শাহবাগ মোড় দখল করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করা, মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে শেখ হাসিনার দেশে ফেরা নিশ্চিত করার মতো পরিকল্পনা করা হয় সেখানে।
ওই বৈঠক এবং আসন্ন নির্বাচন ঘিরে সামাজিক মাধ্যমে নানা হুমকির বিষয়ে ডিসি তালেবুর রহমান বলেন, আমরা গত একটা বছরে বিভিন্ন সময় দেখেছি, নানা সময়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিনষ্ট করার জন্য অনেকেই পরিকল্পিতভাবে কার্যক্রম করেছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা সজাগ রয়েছি।
ঢাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিনষ্ট করার জন্য কিছু লোক বিভিন্ন অপচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে দাবি করে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রয়েছে এবং রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের অনেক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এঅভিযান চলমান রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের কাছে যে গোয়েন্দা তথ্য আছে, সেগুলো যাচাই-বাছাই করে কারও বিরুদ্ধে যদি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকে, কোনো রকম আইনশৃঙ্খলা বিনষ্ট করার চেষ্টায় জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া যায়, সেক্ষেত্রে আমরা গ্রেফতার করছি। একটা বিষয় স্পষ্ট, কাউকে ঢালাওভাবে বা কাউকে হয়রানিমূলক গ্রেফতারের কোনো অবকাশ নেই। তবে আমরা কোনো তথ্য উড়িয়ে দিচ্ছি না। গোয়েন্দা নজরদারি আরও বাড়ানো হয়েছে। আগাম তথ্য সংগ্রহে গোয়েন্দারা সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।
ডিএমপির দেয়া তথ্য মতে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডিএমপির ৫০টি থানা এলাকায় ৪৮৯টি টহল টিম এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ৬৬টি চেকপোস্ট পরিচালিত হচ্ছে। বিভিন্ন অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে ২৫৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এসময় ২০টি মোবাইল, ৬টি মোটরসাইকেল, একটি প্রাইভেট কারসহ বিভিন্ন প্রকার মাদক জব্দ করা হয়েছে।
এবিষয়ে রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম জানান, আইন শৃংখলা রক্ষায় পুলিশের প্রতিটি টিম, প্রতিটি থানা কাজ করছে। আবাসিক হোটেল, মেস ক্লিনিক, হাসপাতাল রিসোর্ট এবং নেতাকর্মীদের ফ্ল্যাটে অভিযান চলছে। এছাড়া নাশকতা চলতে পারে এমন বস্তি এলাকায়ও নজরদারি চলছে এবং সাঁড়াশি অভিযান চলছে। এ অভিযান চলমান থাকবে।
এব্যাপারে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের যুগ্ম কমিশনার নাসিরুল ইসলাম বলেন, আমরা কোনো তথ্য উড়িয়ে দিচ্ছি না। গোয়েন্দা নজরদারি আরও বাড়ানো হয়েছে। আগাম তথ্য সংগ্রহে আমরা সক্রিয়ভাবে কাজ করছি। এবিষয়ে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক উইং কমান্ডার ইন্তেখাব চৌধুরী জানান, আগস্ট ঘিরে যেকোনো নাশকতা ঠেকাতে র্যাব তৎপর রয়েছে। ঢাকায় অতিরিক্ত চেকপোস্ট ও পেট্রলিং বাড়ানো হয়েছে।