ঢাকা ০৯:২১ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৪ অগাস্ট ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo পটুয়াখালী জেলা বিজেপির আহবায়ক শাওন ও সদস্য সচিব রুমী Logo জকসু নির্বাচনসহ ২ দাবিতে জবি শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচি Logo নওগাঁয় বর্ণাঢ্য আয়োজনে সপ্তাহব্যাপী বৃক্ষ মেলা শুরু Logo বছরের সাত মাস পানি বন্ধী বিদ্যালয় তিন যুগ ধরে নৌকায় যাতায়াত শিক্ষক-শিক্ষার্থীর Logo ঝিনাইগাতীতে সামান্য বৃষ্টিতেই প্রধান রাস্তায় হাঁটুপানি, দুর্ভোগে পথচারীরা Logo ভান্ডারিয়ায় খাল থেকে যুবকের হাত-পা বাঁধা মরদেহ উদ্ধার,পায়ে বাঁধা ছিল ইট Logo রক্তস্নাত মাগুরার ৪ আগস্ট: যেদিন কলমে রক্ত জমেছিল, চোখে জমেছিল মৃত্যুর আলপনা Logo জয়পুরহাটে গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূতি উপলক্ষে প্রতিবন্ধী মেলা Logo প্রতিবছর নদী ভাঙ্গনে কমছে জমি, গৃহহীন হচ্ছেন হাজারো পরিবার Logo নাটোরে নাহার ফুড প্রোডাক্টস এর পক্ষ থেকে ন্যায্য বাজার মূল্যের বিনিময় পণ্য বিক্রয়

গোলাপগঞ্জে এক শোকাবহ দিন আজ

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গোলাপগঞ্জের ৭ শহীদের প্রথম শাহাদাৎবার্ষিকী

মো. বদরুল আলম, গোলাপগঞ্জ (সিলেট)
  • আপডেট সময় : ৮ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

আজ ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গোলাপগঞ্জের ৭ শহীদের প্রথম শাহাদাৎ বার্ষিকী।
গোলাপগঞ্জবাসীর এক শোকাবহ দিন।২০২৪ এর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনার পতনের মাত্র ১ দিন আগে গোলাপগঞ্জে পুলিশ-বিজিবি ও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী বাহিনীর গুলিতে এক দিনে নিহত হয়েছেন গোলাপগঞ্জের ৬ জন। আজও নিহতের পরিবারে কান্না থামেনি। প্রতিটি পরিবারে সন্তান হারা বেদনা আর আহাজারিতে চোখের জলে ভেসে যায়। আজ ৪ আগস্ট হওয়ায় নিহতদের পরিবারের জন্য আরো বেদনাদায়ক হয়ে উঠেছে।
গোলাপগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে মোট ৭ জন শহীদ হলেও গোলাপগঞ্জে পুলিশ-বিজিবি ও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাস বাহিনীর গুলিতে ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট নিহত হন ৬ জন ও ৫ আগস্ট সিলেট শহরের ক্বীন ব্রীজ সংলগ্ন আলী আমজদ ঘড়ির পাশে পুলিশের গুলিতে নিহত হন ১ জনসহ গোলাপগঞ্জের ৭ জন প্রাণ হারান।
নিহতরা হলেন- উপজেলার নিশ্চিন্ত গ্রামের তৈয়ব আলীর ছেলে মোঃ নাজমুল ইসলাম, বারকোট গ্রামের মৃত মকবুল আলীর ছেলে তাজ উদ্দিন, শিলঘাট গ্রামের মোঃ কয়ছর আহমদের ছেলে সানি আহমদ, রায়গড় গ্রামের ছুরাই মিয়ার ছেলে জয় আহমদ, ঘোষগাঁও গ্রামের মবারক আলীর ছেলে গৌছ উদ্দিন, দত্তরাইল গ্রামের আলা উদ্দিনের ছেলে মিনহাজ আহমদ ও ঢাকাদক্ষিণ রায়গড় গ্রামের মোঃ রফিক উদ্দিনের ছেলে মোঃ পাবেল আহমদ কামরুল। কোটা আন্দোলনে জুন মাসে রাস্তায় নামেন শিক্ষার্থীরা। জোরদার হয় আন্দোলন। এরই মধ্যে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পলাতক স্বৈরাচার শেখ হাসিনার একটি বক্তব্যকে কেন্দ্র করে বদলে যায় দৃশ্যপট।
কোটা সংস্কারের দাবিতে জুলাই ২০২৪ থেকে সমগ্র দেশে দফায় দফায় বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলন শক্তিশালী হয়ে উঠে। সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে রাজপথ কাপিয়ে তুলেন শিক্ষার্থীরা। পরবর্তীতে কোটা সংস্কারসহ বিভিন্ন দাবির পরিবর্তে চলে আসে এক দফা দাবি। ফ্যাসিস্ট ও স্বৈরাচার সরকার শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবি।
১ জুলাই থেকে কোটা সংস্কার থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রূপ নেয়। জুলাই থেকে ৫ আগস্ট ২০২৪ পর্যন্ত হাজার হাজার ছাত্র জনতা পুলিশ ও আওয়ামী লীগের দোসরদের হামলায় আহত হন। নিহত হন সহস্রাধীক ছাত্র-জনতা। রাজপথে রক্তের বন্যায় ভেসে যাচ্ছে তবুও আন্দোলন থামাননি ছাত্র জনতা। ৪ আগস্ট সমগ্র দেশে ছাত্র-জনতার আন্দোলন তীব্র হয়ে উঠে। সমগ্র দেশ অচল হয়ে পড়ে। প্রতিটি জেলা উপজেলায় আন্দোলনে যার যাকিছু আছে তাহা নিয়ে রাজপথে প্রতিরোধ করতে থাকেন। পুলিশ-বিজিবি ও আওয়ামী লীগের দোসররা আন্দোলন প্রতিহত করতে গুলি ছুড়তে শুরু করে দেশের বিভিন্ন স্থানে অনেক ছাত্র-জনতা মারা যান।
ছাত্রজনতার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সমগ্র দেশের ন্যায় গোলাপগঞ্জের ছাত্র-জনতা বসে থাকেননি। একদিকে উপজেলা প্রশাসন ১৪৪ ধারার মাধ্যমে কারফিউ জারি করেন। অন্যদিকে গোলাপগঞ্জের ছাত্র-জনতা ১৪৪ ধারা কারফিউ ভঙ্গ করে সমগ্র দেশের ন্যায় গোলাপগঞ্জের ছাত্র-জনতা ৪ আগস্ট সকাল থেকে উপজেলা সদর, ঢাকাদক্ষিণ বাজার, ভাদেশ্বরসহ বড়বড় বাজারে আন্দোলনের জন্য অবস্থান নেয় তারা। ৪ আগস্ট সকাল অনুমান ৯ ঘটিকার দিকে উপজেলার ঢাকাদক্ষিণ বাজারে বিজিবি’র একটি টহল টিম নোহা নিয়ে টহল দেয়ার সময় ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে বাঁধা দেয়। উত্তপ্ত হয়ে উঠেন ছাত্র-জনতা। হামলা চালায় বিজিবি’র ব্যবহৃত নোহা গাড়িতে। আত্মরক্ষার্থে বিজিবি টিয়ারগ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এতে পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে হয়ে উঠে ঢাকাদক্ষিণ বাজার। পরে বিজিবি-পুলিশ আন্দোলনে রাবার বুলেটের পাশাপাশি স্প্রিং বুলেট নিক্ষেপ করতে থাকে। শতশত ছাত্র-জনতা আহত হতে থাকেন। এতে করে ছাত্রদের আন্দোলনে এলাকার মানুষজন ও অভিভাবকরা জড়িয়ে পড়ে পুলিশ-বিজিবি ও আওয়ামী লীগ ক্যাডারদের ধাওয়া করতে শুরু করেন। তীব্র হয়ে উঠে গোলাপগঞ্জের ঢাকাদক্ষিণ বাজারের ছাত্র-জনতার আন্দোলন। পাল্টা ধাওয়া ও গুলি ছুড়তে থাকে বিজিবি। এতে শতাধীক ছাত্র-জনতা আহত ও রক্তাক্ত অবস্থায় দেখে স্থানীয়রা এবং ছাত্র-জনতা ঘেরাও করে ফেলে ঢাকাদক্ষিণ বাজারে বিজিবি ও পুলিশদের। বিজিবি পালিয়ে গোলাপগঞ্জের দিকে আসার সময় মধ্যখানে বারকোট ও ধারাবহর এলাকায় গোলাপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সম্মুখে স্থানীয় জনতা রাস্তা ব্যারিকেট দিয়ে এলাকার মসজিদে মাইকিং করতে থাকলে স্থানীয়রা যে যা পেয়েছে তাহা নিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সম্মুখে সিলেট-ঢাকাদক্ষিণ সড়ক বন্ধ করে পুলিশ-বিজিবিকে ঘেরাও করে ফেলে। পরিস্থিতি ভয়াবহ দেখে ও আত্মরক্ষার্থে সরাসরি গুলি নিক্ষেপ করতে থাকে বিজিবি। এতে ঘটনা স্থলে নিহত হন তাজ উদ্দিন ও নাজমুল ইসলাম, সানি আহমদ। আহত হন জয় আহমদসহ প্রায় ১৫ থেকে ২০ জন। গুরুতর অবস্থায় জয় আহমদকে সিলেট বেসরকারি হাসপাতাল ইবনে সিনায় ভর্তি করার কিছুক্ষণ পরেই তিনি মারা যায়।
উপজেলার বারকোট এলাকায় ৩ জন ঘটনাস্থলে নিহত ও সিলেটে হাসপাতালে নেয়ার পর আরো ১ জন নিহত হওয়ার বিষয়টি চারদিকে চাউর হলে গোলাপগঞ্জ উপজেলা সদর আরো উত্তপ্ত হয়ে উঠে। ছাত্র জনতা গোলাপগঞ্জের সরকারি মোহাম্মদ চৌধুরী একাডেমির সামন থেকে বিজিবি ও পুলিশকে আক্রমণ করতে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে আসে ছাত্র জনতা। অপর দিকে ধারাবহর ও বারকোট এলাকা থেকে বিজিবিদের ধাওয়া শুরু করতে থাকেন। বিজিবি-পুলিশ গুলি ছুড়ে ছুড়ে আত্মরক্ষার্থে গোলাপগঞ্জ উপজেলা পরিষদে আশ্রয় নেন। সেখানে প্রায় ৩ ঘন্টা অবরোধ করে রাখার পর সেনাবাহিনী ও পুলিশের সহায়তায় বিজিবি ও অবরুদ্ধ পুলিশদের উপজেলা পরিষদ থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয়। এক পর্যায়ে ছাত্র-জনতা গোলাপগঞ্জ মডেল থানা ঘেরাওসহ মিছিল শুরু করে। উক্ত মিছিল ও থানা ঘেরাও করার বিষয়টি ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নতাকর্মীরা ছাত্র-জনতার উপর ফের হামলা ও গুলি ছুড়তে থাকে। এ সময় তাদের ছুড়া গুলিতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন গৌছ উদ্দিন ও মিনহাজ আহমদ। পরিস্থিতি সামাল দিতে বিজিবি-পুলিশ ও সেনাবাহিনী আরো কঠোর হয়ে উঠে ছাত্র-জনতার উপর। পরিস্থিতি অবনতি দেখে ছাত্র জনতা দিকবিদিক ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে। এসময় অনেকেই গুলিতে আহত হন। আহতদের গোলাপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও সিলেট শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা প্রদান করা হয়।
আজ সেই শোকাবহ ৪ আগস্ট পুলিশ-বিজিবি ও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের নিক্ষেপ করা গুলিতে গোলাপগঞ্জবাসী ৬ তাজা তরুণ ও যুবকদেরকে হারিয়েছেন। ৬টি পরিবারের সন্তান হারানো, বাবা হারানো, স্বামী হারানো, ভাই হারানোর শোকাবহ দিন। আজ গোলাপগঞ্জের জন্য একটি কালো অধ্যায়।নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে গোলাপগঞ্জ মডেল থানা ও সিলেটে কোর্টে একাধিক মামলা করা হলেও এখনো কোনো মামলার ফাইনাল চার্জশিট বা বিচার কার্যক্রম শুরু হয়নি।যদিও ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের প্রসিকিউটররা দুইবার গোলাপগঞ্জে এসে তদন্ত করে গিয়েছেন।আজকের দিনে গোলাপগঞ্জবাসীর দাবি হত্যাকাণ্ডের পিছনে যারাই রয়েছে তাদেরকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে শহীদদের স্মৃতি চির জাগরণ করার।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

গোলাপগঞ্জে এক শোকাবহ দিন আজ

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গোলাপগঞ্জের ৭ শহীদের প্রথম শাহাদাৎবার্ষিকী

আপডেট সময় :

আজ ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গোলাপগঞ্জের ৭ শহীদের প্রথম শাহাদাৎ বার্ষিকী।
গোলাপগঞ্জবাসীর এক শোকাবহ দিন।২০২৪ এর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনার পতনের মাত্র ১ দিন আগে গোলাপগঞ্জে পুলিশ-বিজিবি ও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী বাহিনীর গুলিতে এক দিনে নিহত হয়েছেন গোলাপগঞ্জের ৬ জন। আজও নিহতের পরিবারে কান্না থামেনি। প্রতিটি পরিবারে সন্তান হারা বেদনা আর আহাজারিতে চোখের জলে ভেসে যায়। আজ ৪ আগস্ট হওয়ায় নিহতদের পরিবারের জন্য আরো বেদনাদায়ক হয়ে উঠেছে।
গোলাপগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে মোট ৭ জন শহীদ হলেও গোলাপগঞ্জে পুলিশ-বিজিবি ও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাস বাহিনীর গুলিতে ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট নিহত হন ৬ জন ও ৫ আগস্ট সিলেট শহরের ক্বীন ব্রীজ সংলগ্ন আলী আমজদ ঘড়ির পাশে পুলিশের গুলিতে নিহত হন ১ জনসহ গোলাপগঞ্জের ৭ জন প্রাণ হারান।
নিহতরা হলেন- উপজেলার নিশ্চিন্ত গ্রামের তৈয়ব আলীর ছেলে মোঃ নাজমুল ইসলাম, বারকোট গ্রামের মৃত মকবুল আলীর ছেলে তাজ উদ্দিন, শিলঘাট গ্রামের মোঃ কয়ছর আহমদের ছেলে সানি আহমদ, রায়গড় গ্রামের ছুরাই মিয়ার ছেলে জয় আহমদ, ঘোষগাঁও গ্রামের মবারক আলীর ছেলে গৌছ উদ্দিন, দত্তরাইল গ্রামের আলা উদ্দিনের ছেলে মিনহাজ আহমদ ও ঢাকাদক্ষিণ রায়গড় গ্রামের মোঃ রফিক উদ্দিনের ছেলে মোঃ পাবেল আহমদ কামরুল। কোটা আন্দোলনে জুন মাসে রাস্তায় নামেন শিক্ষার্থীরা। জোরদার হয় আন্দোলন। এরই মধ্যে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পলাতক স্বৈরাচার শেখ হাসিনার একটি বক্তব্যকে কেন্দ্র করে বদলে যায় দৃশ্যপট।
কোটা সংস্কারের দাবিতে জুলাই ২০২৪ থেকে সমগ্র দেশে দফায় দফায় বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলন শক্তিশালী হয়ে উঠে। সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে রাজপথ কাপিয়ে তুলেন শিক্ষার্থীরা। পরবর্তীতে কোটা সংস্কারসহ বিভিন্ন দাবির পরিবর্তে চলে আসে এক দফা দাবি। ফ্যাসিস্ট ও স্বৈরাচার সরকার শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবি।
১ জুলাই থেকে কোটা সংস্কার থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রূপ নেয়। জুলাই থেকে ৫ আগস্ট ২০২৪ পর্যন্ত হাজার হাজার ছাত্র জনতা পুলিশ ও আওয়ামী লীগের দোসরদের হামলায় আহত হন। নিহত হন সহস্রাধীক ছাত্র-জনতা। রাজপথে রক্তের বন্যায় ভেসে যাচ্ছে তবুও আন্দোলন থামাননি ছাত্র জনতা। ৪ আগস্ট সমগ্র দেশে ছাত্র-জনতার আন্দোলন তীব্র হয়ে উঠে। সমগ্র দেশ অচল হয়ে পড়ে। প্রতিটি জেলা উপজেলায় আন্দোলনে যার যাকিছু আছে তাহা নিয়ে রাজপথে প্রতিরোধ করতে থাকেন। পুলিশ-বিজিবি ও আওয়ামী লীগের দোসররা আন্দোলন প্রতিহত করতে গুলি ছুড়তে শুরু করে দেশের বিভিন্ন স্থানে অনেক ছাত্র-জনতা মারা যান।
ছাত্রজনতার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সমগ্র দেশের ন্যায় গোলাপগঞ্জের ছাত্র-জনতা বসে থাকেননি। একদিকে উপজেলা প্রশাসন ১৪৪ ধারার মাধ্যমে কারফিউ জারি করেন। অন্যদিকে গোলাপগঞ্জের ছাত্র-জনতা ১৪৪ ধারা কারফিউ ভঙ্গ করে সমগ্র দেশের ন্যায় গোলাপগঞ্জের ছাত্র-জনতা ৪ আগস্ট সকাল থেকে উপজেলা সদর, ঢাকাদক্ষিণ বাজার, ভাদেশ্বরসহ বড়বড় বাজারে আন্দোলনের জন্য অবস্থান নেয় তারা। ৪ আগস্ট সকাল অনুমান ৯ ঘটিকার দিকে উপজেলার ঢাকাদক্ষিণ বাজারে বিজিবি’র একটি টহল টিম নোহা নিয়ে টহল দেয়ার সময় ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে বাঁধা দেয়। উত্তপ্ত হয়ে উঠেন ছাত্র-জনতা। হামলা চালায় বিজিবি’র ব্যবহৃত নোহা গাড়িতে। আত্মরক্ষার্থে বিজিবি টিয়ারগ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এতে পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে হয়ে উঠে ঢাকাদক্ষিণ বাজার। পরে বিজিবি-পুলিশ আন্দোলনে রাবার বুলেটের পাশাপাশি স্প্রিং বুলেট নিক্ষেপ করতে থাকে। শতশত ছাত্র-জনতা আহত হতে থাকেন। এতে করে ছাত্রদের আন্দোলনে এলাকার মানুষজন ও অভিভাবকরা জড়িয়ে পড়ে পুলিশ-বিজিবি ও আওয়ামী লীগ ক্যাডারদের ধাওয়া করতে শুরু করেন। তীব্র হয়ে উঠে গোলাপগঞ্জের ঢাকাদক্ষিণ বাজারের ছাত্র-জনতার আন্দোলন। পাল্টা ধাওয়া ও গুলি ছুড়তে থাকে বিজিবি। এতে শতাধীক ছাত্র-জনতা আহত ও রক্তাক্ত অবস্থায় দেখে স্থানীয়রা এবং ছাত্র-জনতা ঘেরাও করে ফেলে ঢাকাদক্ষিণ বাজারে বিজিবি ও পুলিশদের। বিজিবি পালিয়ে গোলাপগঞ্জের দিকে আসার সময় মধ্যখানে বারকোট ও ধারাবহর এলাকায় গোলাপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সম্মুখে স্থানীয় জনতা রাস্তা ব্যারিকেট দিয়ে এলাকার মসজিদে মাইকিং করতে থাকলে স্থানীয়রা যে যা পেয়েছে তাহা নিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সম্মুখে সিলেট-ঢাকাদক্ষিণ সড়ক বন্ধ করে পুলিশ-বিজিবিকে ঘেরাও করে ফেলে। পরিস্থিতি ভয়াবহ দেখে ও আত্মরক্ষার্থে সরাসরি গুলি নিক্ষেপ করতে থাকে বিজিবি। এতে ঘটনা স্থলে নিহত হন তাজ উদ্দিন ও নাজমুল ইসলাম, সানি আহমদ। আহত হন জয় আহমদসহ প্রায় ১৫ থেকে ২০ জন। গুরুতর অবস্থায় জয় আহমদকে সিলেট বেসরকারি হাসপাতাল ইবনে সিনায় ভর্তি করার কিছুক্ষণ পরেই তিনি মারা যায়।
উপজেলার বারকোট এলাকায় ৩ জন ঘটনাস্থলে নিহত ও সিলেটে হাসপাতালে নেয়ার পর আরো ১ জন নিহত হওয়ার বিষয়টি চারদিকে চাউর হলে গোলাপগঞ্জ উপজেলা সদর আরো উত্তপ্ত হয়ে উঠে। ছাত্র জনতা গোলাপগঞ্জের সরকারি মোহাম্মদ চৌধুরী একাডেমির সামন থেকে বিজিবি ও পুলিশকে আক্রমণ করতে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে আসে ছাত্র জনতা। অপর দিকে ধারাবহর ও বারকোট এলাকা থেকে বিজিবিদের ধাওয়া শুরু করতে থাকেন। বিজিবি-পুলিশ গুলি ছুড়ে ছুড়ে আত্মরক্ষার্থে গোলাপগঞ্জ উপজেলা পরিষদে আশ্রয় নেন। সেখানে প্রায় ৩ ঘন্টা অবরোধ করে রাখার পর সেনাবাহিনী ও পুলিশের সহায়তায় বিজিবি ও অবরুদ্ধ পুলিশদের উপজেলা পরিষদ থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয়। এক পর্যায়ে ছাত্র-জনতা গোলাপগঞ্জ মডেল থানা ঘেরাওসহ মিছিল শুরু করে। উক্ত মিছিল ও থানা ঘেরাও করার বিষয়টি ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নতাকর্মীরা ছাত্র-জনতার উপর ফের হামলা ও গুলি ছুড়তে থাকে। এ সময় তাদের ছুড়া গুলিতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন গৌছ উদ্দিন ও মিনহাজ আহমদ। পরিস্থিতি সামাল দিতে বিজিবি-পুলিশ ও সেনাবাহিনী আরো কঠোর হয়ে উঠে ছাত্র-জনতার উপর। পরিস্থিতি অবনতি দেখে ছাত্র জনতা দিকবিদিক ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে। এসময় অনেকেই গুলিতে আহত হন। আহতদের গোলাপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও সিলেট শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা প্রদান করা হয়।
আজ সেই শোকাবহ ৪ আগস্ট পুলিশ-বিজিবি ও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের নিক্ষেপ করা গুলিতে গোলাপগঞ্জবাসী ৬ তাজা তরুণ ও যুবকদেরকে হারিয়েছেন। ৬টি পরিবারের সন্তান হারানো, বাবা হারানো, স্বামী হারানো, ভাই হারানোর শোকাবহ দিন। আজ গোলাপগঞ্জের জন্য একটি কালো অধ্যায়।নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে গোলাপগঞ্জ মডেল থানা ও সিলেটে কোর্টে একাধিক মামলা করা হলেও এখনো কোনো মামলার ফাইনাল চার্জশিট বা বিচার কার্যক্রম শুরু হয়নি।যদিও ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের প্রসিকিউটররা দুইবার গোলাপগঞ্জে এসে তদন্ত করে গিয়েছেন।আজকের দিনে গোলাপগঞ্জবাসীর দাবি হত্যাকাণ্ডের পিছনে যারাই রয়েছে তাদেরকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে শহীদদের স্মৃতি চির জাগরণ করার।