জনশক্তি রপ্তানির সুযোগ হারাচ্ছে বাংলাদেশ

- আপডেট সময় : ৩৯৮ বার পড়া হয়েছে
এমপ্লয়মেন্ট পারমিট সিস্টেমের (ইপিএস) আওতায় বর্তমানে দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য কোটা বরাদ্দ সাড়ে ১১ হাজার। ২০০৮ সাল থেকে এ প্রক্রিয়ায় দেশটিতে শ্রমিক পাঠানো হচ্ছে। এর মধ্যে কেটে গেছে দেড় যুগ। অথচ এখনো কোটা পূরণে ব্যর্থ হচ্ছে বাংলাদেশ। যে কারণে পর্যাপ্ত জনশক্তি রপ্তানির সুযোগ হাত ছাড়া হচ্ছে। জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য বলছে, ইপিএস প্রোগ্রামের অধীনে বাংলাদেশ থেকে ২০২২ সালে সর্বোচ্চ সংখ্যক কর্মী দক্ষিণ কোরিয়ায় কাজ করতে গেছেন। ওই বছর দেশটিতে ৫ হাজার ৯১০ জন অভিবাসী শ্রমিক হিসেবে গেছেন। পরের বছর দেশটিতে কর্মসংস্থান হয়েছে ৪ হাজার ৯৯৬ জনের।
এদিকে, আগামী ২৬ আগস্ট সিউলে চতুর্থ ফরেন অফিস কনসালটেশনে বসছে বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়া। সেখানে আলোচনার টেবিলে থাকবে ইপিএসের আওতায় কর্মী পাঠানোর বিষয়টি। ঢাকাও এ বিষয়ে গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করবে। বিশেষ করে কোটা বরাদ্দের পরও সুযোগ কাজে লাগাতে না পারার বিষয়টি অবহিত করে এর প্রধান সমস্যা কোরিয়ান ভাষা শেখার সীমাবদ্ধতা কাটাতে দেশটির সহযোগিতা চাওয়া হবে।
সরকারের দায়িত্বশীল এক কূটনীতিক বলেন, ২৬ আগস্ট সিউলে ফরেন অফিস কনসালটেশন হবে। সেখানে সম্পর্কের সার্বিক বিষয়ে আলোচনা হবে। আলোচ্যসূচিতে রাখা হয়েছে ইপিএসের অধীনে কর্মী পাঠানোর বিষয়টি। বর্তমানে এর অধীনে কোরিয়ায় বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য কোটা বরাদ্দ সাড়ে ১১ হাজার। আমরা কোটা পূরণ করতে পারি না। ভাষাগত সমস্যা এর মূল অন্তরায়। কোরিয়ানরা যে লেভেলের দক্ষতা চাইছে সে অনুযায়ী আমরা পাঠাতে পারছি না। আমরা দিনে দিনে কীভাবে কোটা পূরণের দিকে যেতে পারি, তা নিয়ে কোরিয়ার সহযোগিতা চাইব।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আসন্ন ফরেন অফিস কনসালটেশনে ঢাকার পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব ও পশ্চিম) মো. নজরুল ইসলাম। অন্যদিকে দক্ষিণ কোরিয়ার পক্ষে থাকবেন দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রথম উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী পার্ক ইউনজু। কনসালটেশনে ইপিএসের অধীনে কর্মী প্রেরণ ছাড়াও রাজনৈতিক সহযোগিতা, বাণিজ্য-বিনিয়োগ এবং ব্যবসা বৃদ্ধি, ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট (ইডিসিএফ), এয়ার সার্ভিস অ্যাগ্রিমেন্ট, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, এনার্জি, কৃষি ও কোরিয়ান কোম্পানিগুলোর বাংলাদেশে বিনিয়োগ গুরুত্ব পাবে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ২০০৭ সালে বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে প্রথম দ্বিপক্ষীয় চুক্তি সই হয়। এরপর ২০০৮ সালে কোরিয়ার ইপিএসের অধীনে কর্মী পাঠানো শুরু হয়। বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেড (বোয়েসেল) এককভাবে কোরিয়ার শিল্প, নির্মাণ ও কৃষি খাতে কর্মী পাঠানোর কাজ করছে।
বিএমইটির তথ্য বলছে, ইপিএস প্রোগ্রামের অধীনে কোরিয়াতে ২০০৮ সালে ১ হাজার ৫২১ জন, ২০০৯ সালে ১ হাজার ৪৭৪ জন, ২০১০ সালে ২ হাজার ৬৯৯ জন, ২০১১ সালে ২ হাজার ২১ জন, ২০১২ সালে ১ হাজার ৪৪৭ জন, ২০১৩ সালে ২ হাজার ১২১ জন, ২০১৪ সালে ১ হাজার ৭৪৮ জন, ২০১৫ সালে ২ হাজার ৩৫৯ জন, ২০১৬ সালে ১ হাজার ৯৮০ জন, ২০১৭ সালে ১ হাজার ৮২৯ জন, ২০১৮ সালে ২ হাজার ২৮৭ জন, ২০১৯ সালে ১ হাজার ৬৪৭ জন, ২০২০ সালে ২০৮ জন, ২০২১ সালে ১০৮ জন, ২০২২ সালে ৯ হাজার ৯১০ জন, ২০২৩ সালে ৪ হাজার ৯৯৬ জন, ২০২৪ সালে ৩ হাজার ৩৮ জন ও চলতি বছর (২০২৫) মে পর্যন্ত ৮৪০ জন কর্মীর কোরিয়ায় কর্মসংস্থান হয়েছে।
পরিসংখ্যান বলছে, গত ১৮ বছরের মধ্যে ইপিএসের অধীনে কোরিয়াতে ২০২২ সালে সর্বোচ্চ সংখ্যক কর্মীর কর্মসংস্থান হয়েছে। ওই বছর দেশটিতে ৫ হাজার ৯১০ জন অভিবাসী শ্রমিক হিসেবে গেছেন। আর কোরিয়াতে সবচেয়ে কম কর্মী গেছে ২০২০ ও ২১ সালে। করোনা মহামারির ওই দুই বছরে যথাক্রমে ২০৮ ও ১০৮ জন কর্মী পাঠানো সম্ভব হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ইপিএস বাংলাদেশ, চীন, নেপাল, পাকিস্তানসহ ১৬টি দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় শ্রম চুক্তির (বিএলএ) মাধ্যমে কোরিয়াতে বিদেশি শ্রমিক নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া। এর আওতায় প্রতিটি দেশের জন্য অভিবাসী কর্মী নিয়োগে মূলত কোটার ব্যবস্থা করা হয়, যার মাধ্যমে বছরে নির্দিষ্ট সংখ্যক শ্রমিক কাজ করার সুযোগ পান। ঢাকা-সিউল রুটে বর্তমানে চার্টার্ড ফ্লাইট চলাচল করলেও নিয়মিত ফ্লাইট নেই। মূলত বিদ্যমান এয়ার সার্ভিস অ্যাগ্রিমেন্টে এ ব্যবস্থা না থাকায় চাহিদা থাকা সত্ত্বেও নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনা করা যাচ্ছে না।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বিগত সরকারের শেষ সময়ে বিদ্যমান এয়ার সার্ভিস অ্যাগ্রিমেন্ট সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ওই সময় দক্ষিণ কোরিয়া সংশোধিত এয়ার সার্ভিস অ্যাগ্রিমেন্টের কপি বাংলাদেশে পাঠায়। বর্তমানে উভয়পক্ষ এ সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষর নিয়ে আলোচনা অব্যাহত রেখেছে। চুক্তিটি সই হলে ঢাকা-সিউলের মধ্যে সরাসরি বিমান যোগাযোগ চালু করা সম্ভব হবে।
এক কূটনীতিক বলেন, ঢাকা-সিউল রুটে সরাসরি কোনো ফ্লাইট নেই। ফরেন অফিস কনসালটেশনে এয়ার সার্ভিস অ্যাগ্রিমেন্ট নিয়ে আলোচনা হবে। সামগ্রিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়াতে কমপ্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ অ্যাগ্রিমেন্ট (সেপা) নিয়ে আলোচনা শুরু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়া। আগামী ২৩-২৫ আগস্ট সিউলে এ আলোচনা হবে।
এ বিষয়ে এক কূটনীতিক বলেন, এ চুক্তি হলে দুই দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়বে। বাংলাদেশ বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে ফ্রি ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে।