ঢাকা ০১:৩৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫

জয়পুরহাটে আমন ক্ষেতে কীটনাশকের পরিবর্তে জনপ্রিয় হচ্ছে পার্চিং পদ্ধতি

এম.এ.জলিল রানা, জয়পুরহাট
  • আপডেট সময় : ১৫ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

জয়পুরহাটে আমন ক্ষেতে কীটনাশকের পরিবর্তে জনপ্রিয় হচ্ছে পার্চিং পদ্ধতি। জেলায় রোপা আমন ধান ক্ষেতে পোকা-মাকড় দমনে কীটনাশকের পরিবর্তে এখন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে পার্চিং পদ্ধতি। ধান ফসলের মাঠে বাঁশের কঞ্চি,গাছের ডাল, খুঁটি ও ধইঞ্চার ডাল আড়ানি করে পোঁতা হয় যাতে করে পাখি বসতে পারে। সেগুলোর ওপর বিভিন্ন প্রজাতির পাখি বসে ধান ফসলের ক্ষতিকারক পোকামাকড় খেয়ে ফেলে। পোকার আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষার এই পদ্ধতিকেই বলা হয় পার্চিং পদ্ধতি ।
পার্চিং এ পদ্ধতি ধান ফসলের পোকা দমনের জন্য বলতে গেলে প্রায় একরকম ব্যয়হীন এবং পরিবেশবান্ধব। এই পদ্ধতিতে ফসল উৎপাদন খরচ ও কীটনাশকের ব্যবহার কমে যাওয়ায় এটি দিন দিন এ জেলার কৃষকদের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। তাই এখন অনেক কৃষক রোপা আমন ধান ক্ষেতে কীটনাশক পরিহার করে পোকা দমনে সহজ ও লাভজনক পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।
পার্চিং আই পদ্ধতি সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে। ডেড পার্চিং ও লাইভ পার্চিং। মরা ডালপালা পুঁতে দিলে তা হবে ডেড পার্চিং আর ধান ক্ষেতে মাঝে মাঝে ধইঞ্চার গাছ থাকা বা ডাল পুঁতে দিলে তা হবে লাইভ পার্চিং।
কৃষকরা তাদের রোপা আমন ধান ফসলের ক্ষেতকে ক্ষতিকারক পোকা থেকে রক্ষার জন্য বাঁশের আগা, বাঁশের কঞ্চি, গাছের ডাল এবং জীবন্ত ধইঞ্চার ডাল পুঁতে বিভিন্ন পোকামাকড় থেকে ফসল রক্ষা করছেন। এতে করে এক বিঘা জমিতে তারা ৬-৮টি বাঁশের আগা, কঞ্চি, ডাল ও ধইঞ্চার ডাল পুঁতেছেন।
এসব ব্যবহারে শালিক, বুলবুলি, ফিঙেসহ বিভিন্ন প্রজাতির পোকাখাদক পাখি ক্ষেতের পার্চিংয়ের ওপরে বসে। সেখান থেকে উড়ে উড়ে গিয়ে ক্ষতিকারক পোকা-মাকড় ও পোকার ডিম খেয়ে ফেলে। ফলে কীটনাশক ছাড়াই পোকার আক্রমণ থেকে ধানগাছগুলো রক্ষা পাচ্ছে। এ ছাড়া পরিবেশের সৌন্দর্যের পাশাপাশি ধান উৎপাদন বেড়ে যাচ্ছে কয়েকগুণ।
জেলার সদর উপজেলার হিচমী এলাকার রফিকুর ইসলাম,মনোয়ার হোসেন, কড়ই কাদিরপুর গ্রামের লাবু মিয়া, ধারকী এলাকার দেলোয়ার হোসেন, কোমরগ্রামের আতোয়ার হোসেন সহ অনেক কৃষক জানান, এবার তাদের জমিতে রোপা আমন ধান ক্ষেতগুলো সবুজ ও সতেজ আছে। তারা পুরো ক্ষেতে পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন। প্রতি বিঘা আমন ক্ষেতে ৫টি গাছের ছোট ডাল, বাঁশের কঞ্চি এবং ৩টি জীবন্ত ধইঞ্চার ডাল পুঁতে দিয়েছেন। ফিঙ্গে, শালিক ও বুলবুলি ওই ডালে বসে খেতের ক্ষতিকর পোকা ধরে ধরে খাচ্ছে। এতে তাদের জমিতে ভালো কাজ হচ্ছে।
এই পদ্ধতির ফলে ফসল উৎপাদনের খরচ কম হচ্ছে এবং কীটনাশকের ব্যবহার অনেক কমে গেছে। এতে তারা খুব উপকার পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন,একই উপজেলার বটতলী গ্রামের কৃষক এমদাদূল হক।
পোকা-মাকড় দমনে শুধু কীটনাশকে ভরসা করায় উৎপাদন খরচ অনেকটাই বেশি হয়। এখন পার্চিং পদ্ধতিতে কৃষকদের খরচ কিছুটা হলেও কমছে। আর এ পদ্ধতি বালাইনাশকের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে একদিকে যেমন পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখছে তেমনি অন্যদিকে জমিতে জৈব সার হিসেবে পাখির বিষ্ঠা পড়ে জমির উর্বরতা বাড়ছে বলেও জানিয়েছেন,জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ সাদিকুল ইসলাম।
উল্লেখ্য,জয়পুরহাট জেলায় চলতি রোপা আমন এ মৌসুমে ৭২ হাজার ১৬৫ হেক্টর জমিতে রোপা আমন চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে জেলায় কৃষকরা প্রায় ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে এই পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহার করে সুফল পাচ্ছেন বলেও জানিয়েছেন জেরা কৃষি ।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

জয়পুরহাটে আমন ক্ষেতে কীটনাশকের পরিবর্তে জনপ্রিয় হচ্ছে পার্চিং পদ্ধতি

আপডেট সময় :

জয়পুরহাটে আমন ক্ষেতে কীটনাশকের পরিবর্তে জনপ্রিয় হচ্ছে পার্চিং পদ্ধতি। জেলায় রোপা আমন ধান ক্ষেতে পোকা-মাকড় দমনে কীটনাশকের পরিবর্তে এখন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে পার্চিং পদ্ধতি। ধান ফসলের মাঠে বাঁশের কঞ্চি,গাছের ডাল, খুঁটি ও ধইঞ্চার ডাল আড়ানি করে পোঁতা হয় যাতে করে পাখি বসতে পারে। সেগুলোর ওপর বিভিন্ন প্রজাতির পাখি বসে ধান ফসলের ক্ষতিকারক পোকামাকড় খেয়ে ফেলে। পোকার আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষার এই পদ্ধতিকেই বলা হয় পার্চিং পদ্ধতি ।
পার্চিং এ পদ্ধতি ধান ফসলের পোকা দমনের জন্য বলতে গেলে প্রায় একরকম ব্যয়হীন এবং পরিবেশবান্ধব। এই পদ্ধতিতে ফসল উৎপাদন খরচ ও কীটনাশকের ব্যবহার কমে যাওয়ায় এটি দিন দিন এ জেলার কৃষকদের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। তাই এখন অনেক কৃষক রোপা আমন ধান ক্ষেতে কীটনাশক পরিহার করে পোকা দমনে সহজ ও লাভজনক পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন।
পার্চিং আই পদ্ধতি সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে। ডেড পার্চিং ও লাইভ পার্চিং। মরা ডালপালা পুঁতে দিলে তা হবে ডেড পার্চিং আর ধান ক্ষেতে মাঝে মাঝে ধইঞ্চার গাছ থাকা বা ডাল পুঁতে দিলে তা হবে লাইভ পার্চিং।
কৃষকরা তাদের রোপা আমন ধান ফসলের ক্ষেতকে ক্ষতিকারক পোকা থেকে রক্ষার জন্য বাঁশের আগা, বাঁশের কঞ্চি, গাছের ডাল এবং জীবন্ত ধইঞ্চার ডাল পুঁতে বিভিন্ন পোকামাকড় থেকে ফসল রক্ষা করছেন। এতে করে এক বিঘা জমিতে তারা ৬-৮টি বাঁশের আগা, কঞ্চি, ডাল ও ধইঞ্চার ডাল পুঁতেছেন।
এসব ব্যবহারে শালিক, বুলবুলি, ফিঙেসহ বিভিন্ন প্রজাতির পোকাখাদক পাখি ক্ষেতের পার্চিংয়ের ওপরে বসে। সেখান থেকে উড়ে উড়ে গিয়ে ক্ষতিকারক পোকা-মাকড় ও পোকার ডিম খেয়ে ফেলে। ফলে কীটনাশক ছাড়াই পোকার আক্রমণ থেকে ধানগাছগুলো রক্ষা পাচ্ছে। এ ছাড়া পরিবেশের সৌন্দর্যের পাশাপাশি ধান উৎপাদন বেড়ে যাচ্ছে কয়েকগুণ।
জেলার সদর উপজেলার হিচমী এলাকার রফিকুর ইসলাম,মনোয়ার হোসেন, কড়ই কাদিরপুর গ্রামের লাবু মিয়া, ধারকী এলাকার দেলোয়ার হোসেন, কোমরগ্রামের আতোয়ার হোসেন সহ অনেক কৃষক জানান, এবার তাদের জমিতে রোপা আমন ধান ক্ষেতগুলো সবুজ ও সতেজ আছে। তারা পুরো ক্ষেতে পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন। প্রতি বিঘা আমন ক্ষেতে ৫টি গাছের ছোট ডাল, বাঁশের কঞ্চি এবং ৩টি জীবন্ত ধইঞ্চার ডাল পুঁতে দিয়েছেন। ফিঙ্গে, শালিক ও বুলবুলি ওই ডালে বসে খেতের ক্ষতিকর পোকা ধরে ধরে খাচ্ছে। এতে তাদের জমিতে ভালো কাজ হচ্ছে।
এই পদ্ধতির ফলে ফসল উৎপাদনের খরচ কম হচ্ছে এবং কীটনাশকের ব্যবহার অনেক কমে গেছে। এতে তারা খুব উপকার পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন,একই উপজেলার বটতলী গ্রামের কৃষক এমদাদূল হক।
পোকা-মাকড় দমনে শুধু কীটনাশকে ভরসা করায় উৎপাদন খরচ অনেকটাই বেশি হয়। এখন পার্চিং পদ্ধতিতে কৃষকদের খরচ কিছুটা হলেও কমছে। আর এ পদ্ধতি বালাইনাশকের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে একদিকে যেমন পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখছে তেমনি অন্যদিকে জমিতে জৈব সার হিসেবে পাখির বিষ্ঠা পড়ে জমির উর্বরতা বাড়ছে বলেও জানিয়েছেন,জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ সাদিকুল ইসলাম।
উল্লেখ্য,জয়পুরহাট জেলায় চলতি রোপা আমন এ মৌসুমে ৭২ হাজার ১৬৫ হেক্টর জমিতে রোপা আমন চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে জেলায় কৃষকরা প্রায় ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে এই পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহার করে সুফল পাচ্ছেন বলেও জানিয়েছেন জেরা কৃষি ।