ঢাকা ০৪:২৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

জাতিসংঘে আসন্ন অধিবেশনে রেজ্যুলেশন চাইতে বাংলাদেশকে চিঠি

গণমুক্তি ডিজিটাল ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৩:৩১:৪১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৪ ১৩৩ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

 

সম্প্রতি বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া গুরুতর নির্যাতনের সুষ্ঠু তদন্ত ও জবাবদিহিতার জন্য জাতিসংঘে আসন্ন অধিবেশনে রেজ্যুলেশন চাইতে বাংলাদেশকে চিঠি দিয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ সরকারের অন্যান্য কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো চিঠিটি সোমবার (২৬ আগস্ট) প্রকাশ করা হয়েছে।

চিঠিতে স্বাধীন ও স্বতন্ত্র ব্যবস্থা গড়ে তুলতে বাংলাদেশকে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের কাছে রেজ্যুলেশন চাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে মানবাধিকার সংস্থা-হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।

চিঠিতে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দফতরের (ওএইচসিএইচআর) মাধ্যমে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও প্রতিবেদন তৈরির সমন্বিত ব্যবস্থার অনুমোদন দিতে বলা হয়। পরিষদকে নিয়মিত পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করতেও বলা হয়। জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের অধিবেশন আগামী ৯ সেপ্টেম্বর শুরু হচ্ছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১৫ বছরের প্রশাসনে জোরপূর্বক গুম, নির্যাতন এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে একটি স্বাধীন অভ্যন্তরীণ তদন্ত ব্যবস্থা গঠন জন্য অন্তর্র্বতী সরকারেরও ওএইচসিএইচআর এবং সংশ্লিষ্ট জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞদের সাথে কাজ করা উচিত।

অভ্যন্তরীণ এই তদন্ত ব্যবস্থার স্বাধীনতা ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রাখতে একে জাতিসংঘের সমর্থন ও তত্ত্বাবধানে কাজ করা উচিত বলে মনে করেন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের জাতিসংঘ জেনেভার উপ-পরিচালক লুসি ম্যাককারনান।

তিনি বলেছেন, গণবিক্ষোভের মাধ্যমে শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর, বাংলাদেশের অন্তর্র্বতী সরকারের দায়িত্ব অনেক। তাই সরকারের উচিত সাম্প্রতিক অবমাননার বিষয়ে স্বাধীন অভ্যন্তরীণ তদন্তের জন্য জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের সমর্থন চাওয়া।

অন্তর্র্বতী সরকারকে জরুরিভাবে নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর বেসামরিক তদারকি, কুখ্যাত র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-র‌্যাব বিলুপ্ত, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ডের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ সংস্কার ও অবমাননাকর আইন সংশোধনে জোর দেওয়া উচিত বলেও মনে করেন লুসি ম্যাককারনান।

গত ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্টের মধ্যে অন্তত ৪৪০ জন নিহত ও হাজার হাজার আহত হয়েছে যার জন্য আইন প্রয়োগকারীদের অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ ও শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ সমর্থিত ছাত্রলীগের কর্মীদের দায়ী করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। সহিংসতার এই ঘটনাগুলো জাতিসংঘের নেতৃত্বে তদন্তের আহ্বান জানানো হয়েছে চিঠিতে।

এছাড়া হাসিনা সরকারের পতনের পর পুলিশ কর্মবিরতিতে গিয়েছিল, হিন্দু এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে সহিংসতার ঝুঁকিতে পড়েছিল। বর্তমানে পুলিশ কাজে ফিরেছে। তবে পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি।

অবশ্য ইউনূস প্রশাসন সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছে, সহিংসতা প্রশমিত করার জন্য কাজ করেছে এবং বিক্ষোভ দমন করতে অপ্রয়োজনীয় ও অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগের জন্য দায়ীদের তদন্ত ও বিচার করতে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এছাড়া আটক রাজনৈতিক বন্দীদের দ্রুত মুক্তি দিয়েছে, গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদে যুক্ত হতে যাচ্ছে এবং শেখ হাসিনার শাসনামলে সংঘটিত জোরপূর্বক গুমের ৭০০ টিরও বেশি মামলা তদন্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

তাই বিভক্ত রাজনৈতিক পরিবেশের মধ্যে ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতার প্রতি তার অঙ্গীকারগুলি কার্যকরভাবে অনুসরণ করতে অন্তর্র্বতী সরকারকে জুলাই ও আগস্টের সহিংস ঘটনা এবং এর মূল কারণগুলো জবাবদিহির আওতায় আনতে তথ্য-প্রমাণ যাচাই, সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বিশ্লেষণের জন্য এবং বিশ্বাসযোগ্য ও স্বাধীন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে সহযোগিতার জন্য ব্যাপকভাবে স্বীকৃত একটি স্বাধীন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার আহ্বান জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

জাতিসংঘে আসন্ন অধিবেশনে রেজ্যুলেশন চাইতে বাংলাদেশকে চিঠি

আপডেট সময় : ০৩:৩১:৪১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৪

 

সম্প্রতি বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া গুরুতর নির্যাতনের সুষ্ঠু তদন্ত ও জবাবদিহিতার জন্য জাতিসংঘে আসন্ন অধিবেশনে রেজ্যুলেশন চাইতে বাংলাদেশকে চিঠি দিয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ সরকারের অন্যান্য কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো চিঠিটি সোমবার (২৬ আগস্ট) প্রকাশ করা হয়েছে।

চিঠিতে স্বাধীন ও স্বতন্ত্র ব্যবস্থা গড়ে তুলতে বাংলাদেশকে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের কাছে রেজ্যুলেশন চাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে মানবাধিকার সংস্থা-হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।

চিঠিতে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দফতরের (ওএইচসিএইচআর) মাধ্যমে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও প্রতিবেদন তৈরির সমন্বিত ব্যবস্থার অনুমোদন দিতে বলা হয়। পরিষদকে নিয়মিত পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করতেও বলা হয়। জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের অধিবেশন আগামী ৯ সেপ্টেম্বর শুরু হচ্ছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১৫ বছরের প্রশাসনে জোরপূর্বক গুম, নির্যাতন এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে একটি স্বাধীন অভ্যন্তরীণ তদন্ত ব্যবস্থা গঠন জন্য অন্তর্র্বতী সরকারেরও ওএইচসিএইচআর এবং সংশ্লিষ্ট জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞদের সাথে কাজ করা উচিত।

অভ্যন্তরীণ এই তদন্ত ব্যবস্থার স্বাধীনতা ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রাখতে একে জাতিসংঘের সমর্থন ও তত্ত্বাবধানে কাজ করা উচিত বলে মনে করেন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের জাতিসংঘ জেনেভার উপ-পরিচালক লুসি ম্যাককারনান।

তিনি বলেছেন, গণবিক্ষোভের মাধ্যমে শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর, বাংলাদেশের অন্তর্র্বতী সরকারের দায়িত্ব অনেক। তাই সরকারের উচিত সাম্প্রতিক অবমাননার বিষয়ে স্বাধীন অভ্যন্তরীণ তদন্তের জন্য জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের সমর্থন চাওয়া।

অন্তর্র্বতী সরকারকে জরুরিভাবে নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর বেসামরিক তদারকি, কুখ্যাত র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-র‌্যাব বিলুপ্ত, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ডের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ সংস্কার ও অবমাননাকর আইন সংশোধনে জোর দেওয়া উচিত বলেও মনে করেন লুসি ম্যাককারনান।

গত ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্টের মধ্যে অন্তত ৪৪০ জন নিহত ও হাজার হাজার আহত হয়েছে যার জন্য আইন প্রয়োগকারীদের অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ ও শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ সমর্থিত ছাত্রলীগের কর্মীদের দায়ী করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। সহিংসতার এই ঘটনাগুলো জাতিসংঘের নেতৃত্বে তদন্তের আহ্বান জানানো হয়েছে চিঠিতে।

এছাড়া হাসিনা সরকারের পতনের পর পুলিশ কর্মবিরতিতে গিয়েছিল, হিন্দু এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে সহিংসতার ঝুঁকিতে পড়েছিল। বর্তমানে পুলিশ কাজে ফিরেছে। তবে পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি।

অবশ্য ইউনূস প্রশাসন সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছে, সহিংসতা প্রশমিত করার জন্য কাজ করেছে এবং বিক্ষোভ দমন করতে অপ্রয়োজনীয় ও অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগের জন্য দায়ীদের তদন্ত ও বিচার করতে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এছাড়া আটক রাজনৈতিক বন্দীদের দ্রুত মুক্তি দিয়েছে, গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদে যুক্ত হতে যাচ্ছে এবং শেখ হাসিনার শাসনামলে সংঘটিত জোরপূর্বক গুমের ৭০০ টিরও বেশি মামলা তদন্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

তাই বিভক্ত রাজনৈতিক পরিবেশের মধ্যে ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতার প্রতি তার অঙ্গীকারগুলি কার্যকরভাবে অনুসরণ করতে অন্তর্র্বতী সরকারকে জুলাই ও আগস্টের সহিংস ঘটনা এবং এর মূল কারণগুলো জবাবদিহির আওতায় আনতে তথ্য-প্রমাণ যাচাই, সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বিশ্লেষণের জন্য এবং বিশ্বাসযোগ্য ও স্বাধীন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে সহযোগিতার জন্য ব্যাপকভাবে স্বীকৃত একটি স্বাধীন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার আহ্বান জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।