ঢাকা ০২:১৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৫

অস্তিত্ব রক্ষায় হালদার উৎসস্থল সংরক্ষণের দাবি

জেলা পরিষদের প্রতিনিধি দলের পরিদর্শন

মোঃ শহীদুল ইসলাম, মানিকছড়ি, খাগড়াছড়ি
  • আপডেট সময় : ৩৩ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননক্ষেত্র হালদা নদীর উৎসস্থল বা উৎপত্তিস্থল সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছেন খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের প্রতিনিধি দল, উৎসমুখের স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও এলাকাবাসী। গত রে‍াববার খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য সাথোয়াইপ্রু চৌধুরীসহ একটি প্রতিনিধি দল হালদা নদীর উৎপত্তিস্থল খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলার পাতাছড়া ইউনিয়নের দূর্গম ছোট বেলছড়ি এলাকার হাসুকপাড়া পরিদর্শন করেন। এসময় স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও এলাকাবাসী উপস্থিত ছিলেন।
পরিদর্শনকালে সাথোয়াইপ্রু চৌধুরী বলেন, হালদা নদী দেশের মূল্যবান সম্পদ। দেশের ১৩শ নদীর মধ্যে হালদা নদীকে প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননক্ষেত্র হিসেবে আলাদাভাবে মূল্যায়ন করে মৎস্য হেরিটেজ ঘোষণা করছে সরকার। তাই এই নদীর উৎপত্তিস্থলটির সুরক্ষা ও সংরক্ষণ খুবই জরুরী। এই জায়গাটি অরক্ষিত থাকায় পাহাড়ের পাদদেশ থেকে নেমে আসা বর্ষার পানিপ্রবায়ের প্রাকৃতিক গতি মানব সৃষ্ট বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। পানিপ্রবাহের সরু নালা বা ছড়া কেটে জমিতে রূপান্তরিত করে চাষাবাদ করা হচ্ছে। তাছাড়া উৎসস্থলে নির্ধারিত ভাবে চিহ্নিত না থাকায় স্থানীয়রাও এর গুরুত্ব বুঝতে পারছে না। তাই দ্রুত হালদার উৎপত্তিস্থলটি সুরক্ষা ও সংরক্ষণ করা গেলে এর অস্তিত্ব রক্ষা পাবে’।
স্থানীয় খবিন্দ্র ত্রিপুরা বলেন,’ অনেক আগে একবার একটি সাইনবোর্ড স্থাপন করা হয়েছিল। বর্ষার মৌসমে এটি ভেঙ্গে পড়ে যায়। এরপর আর কিছু স্থাপন করা হয়নি’। এসময় হালদার উৎপত্তিস্থল সংরক্ষণের দাবি জানান তিনি।
স্থানীয় মৌজা প্রধান মংসানু মারমা বলেন, ‘শুনেছি হালদা প্রকল্প ও মৎস্য অফিস এই জায়গাটি সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে। এরপর আর দৃশ্যমান কিছুই চোখে পড়েনি। তবে দোশের গুরুত্বপূর্ণ এই নদীর উৎসস্থল সংরক্ষণ প্রয়োজন’।
স্থানীয় সাংবাদিক ও উৎসমুখ সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি নিজাম উদ্দিন লাভলু বলেন, হালদা উৎসস্থল সংরক্ষণ ও সুরক্ষার খুবই জরুরী। উৎসমুখ সংরক্ষণে ইতিমধ্যে হালদা নদীর প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননক্ষেত্র উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তর বরাবর নানা পরিকল্পনা তালিকা করে পাঠানো হয়েছে। আশা করি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে’।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির কোঅর্ডিনেটর প্রফেসর ড. মো. মনজুরুল কিবরীয়া বলেন, ‘হালদার উৎপত্তিস্থল সংরক্ষণে ইতিমধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। হালদা নদীর প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননক্ষেত্র উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্প তা বাস্তবায়ন করবে। মৎস্য হেরিটেজ বাস্তবায়ন তদারকি কমিটি’র ১৫তম সভায় এই সংক্রান্ত আলোচনা করা হয়। হালদার উৎপত্তিস্থল রক্ষায় পদক্ষেপ গ্রহণের পরিকল্পনা রয়েছে’।
জানা গেছে, হালদা নদী উৎপত্তিস্থল থেকে মানিকছড়ি, ফটিকছড়ি, হাটহাজারী ও রাউজান হয়ে কর্ণফুলী নদীতে গিয়ে মিলিত হয়। ২০২০ সালের ২১ ডিসেম্বর মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রনালয় হালদা নদীকে মৎস্য হেরিটেজ ঘোষণা করে। এরপর দীর্ঘ ৪ বছর পর গেলো বছর হালদা উৎসস্থল সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হলেও তা আর আলোর মুখ দেখেনি। ফলে বর্তমানে হালদার উৎস মুখটি প্রায় নিশ্চিহ্ন।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

অস্তিত্ব রক্ষায় হালদার উৎসস্থল সংরক্ষণের দাবি

জেলা পরিষদের প্রতিনিধি দলের পরিদর্শন

আপডেট সময় :

দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননক্ষেত্র হালদা নদীর উৎসস্থল বা উৎপত্তিস্থল সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছেন খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের প্রতিনিধি দল, উৎসমুখের স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও এলাকাবাসী। গত রে‍াববার খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য সাথোয়াইপ্রু চৌধুরীসহ একটি প্রতিনিধি দল হালদা নদীর উৎপত্তিস্থল খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলার পাতাছড়া ইউনিয়নের দূর্গম ছোট বেলছড়ি এলাকার হাসুকপাড়া পরিদর্শন করেন। এসময় স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও এলাকাবাসী উপস্থিত ছিলেন।
পরিদর্শনকালে সাথোয়াইপ্রু চৌধুরী বলেন, হালদা নদী দেশের মূল্যবান সম্পদ। দেশের ১৩শ নদীর মধ্যে হালদা নদীকে প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননক্ষেত্র হিসেবে আলাদাভাবে মূল্যায়ন করে মৎস্য হেরিটেজ ঘোষণা করছে সরকার। তাই এই নদীর উৎপত্তিস্থলটির সুরক্ষা ও সংরক্ষণ খুবই জরুরী। এই জায়গাটি অরক্ষিত থাকায় পাহাড়ের পাদদেশ থেকে নেমে আসা বর্ষার পানিপ্রবায়ের প্রাকৃতিক গতি মানব সৃষ্ট বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। পানিপ্রবাহের সরু নালা বা ছড়া কেটে জমিতে রূপান্তরিত করে চাষাবাদ করা হচ্ছে। তাছাড়া উৎসস্থলে নির্ধারিত ভাবে চিহ্নিত না থাকায় স্থানীয়রাও এর গুরুত্ব বুঝতে পারছে না। তাই দ্রুত হালদার উৎপত্তিস্থলটি সুরক্ষা ও সংরক্ষণ করা গেলে এর অস্তিত্ব রক্ষা পাবে’।
স্থানীয় খবিন্দ্র ত্রিপুরা বলেন,’ অনেক আগে একবার একটি সাইনবোর্ড স্থাপন করা হয়েছিল। বর্ষার মৌসমে এটি ভেঙ্গে পড়ে যায়। এরপর আর কিছু স্থাপন করা হয়নি’। এসময় হালদার উৎপত্তিস্থল সংরক্ষণের দাবি জানান তিনি।
স্থানীয় মৌজা প্রধান মংসানু মারমা বলেন, ‘শুনেছি হালদা প্রকল্প ও মৎস্য অফিস এই জায়গাটি সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে। এরপর আর দৃশ্যমান কিছুই চোখে পড়েনি। তবে দোশের গুরুত্বপূর্ণ এই নদীর উৎসস্থল সংরক্ষণ প্রয়োজন’।
স্থানীয় সাংবাদিক ও উৎসমুখ সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি নিজাম উদ্দিন লাভলু বলেন, হালদা উৎসস্থল সংরক্ষণ ও সুরক্ষার খুবই জরুরী। উৎসমুখ সংরক্ষণে ইতিমধ্যে হালদা নদীর প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননক্ষেত্র উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তর বরাবর নানা পরিকল্পনা তালিকা করে পাঠানো হয়েছে। আশা করি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে’।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির কোঅর্ডিনেটর প্রফেসর ড. মো. মনজুরুল কিবরীয়া বলেন, ‘হালদার উৎপত্তিস্থল সংরক্ষণে ইতিমধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। হালদা নদীর প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননক্ষেত্র উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্প তা বাস্তবায়ন করবে। মৎস্য হেরিটেজ বাস্তবায়ন তদারকি কমিটি’র ১৫তম সভায় এই সংক্রান্ত আলোচনা করা হয়। হালদার উৎপত্তিস্থল রক্ষায় পদক্ষেপ গ্রহণের পরিকল্পনা রয়েছে’।
জানা গেছে, হালদা নদী উৎপত্তিস্থল থেকে মানিকছড়ি, ফটিকছড়ি, হাটহাজারী ও রাউজান হয়ে কর্ণফুলী নদীতে গিয়ে মিলিত হয়। ২০২০ সালের ২১ ডিসেম্বর মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রনালয় হালদা নদীকে মৎস্য হেরিটেজ ঘোষণা করে। এরপর দীর্ঘ ৪ বছর পর গেলো বছর হালদা উৎসস্থল সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হলেও তা আর আলোর মুখ দেখেনি। ফলে বর্তমানে হালদার উৎস মুখটি প্রায় নিশ্চিহ্ন।