ঢাকা ০২:২৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo কোন পথে দেশ! Logo পাইকগাছায় সাবেক প্যানেল মেয়র জোনাকি সমিতির অর্থ আত্মসাৎকারী কবিতা রানী দাশের বিরুদ্ধে সাংবাদিক সম্মেলন Logo চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক ৬ লেনে উন্নীত  করণের দাবিতে রামুতে মানববন্ধন ও সমাবেশ Logo গৌরীপুর উপজেলা ও পৌর বিএনপির নতুন কমিটি গঠন Logo কেশবপুরে প্রান্তিক জনগোষ্টির জীবনমান উন্নয়নে সেমিনার অনুষ্ঠিত Logo নওগাঁয় জমি আত্মসাতের চেষ্টার প্রতিবাদে প্রতিবন্ধী চাচার সংবাদ সম্মেলন Logo পলাশবাড়ীতে কাজী জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন Logo মিতরা ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয় থেকে  ১৭২ জনের মাঝে ভিজিডি চাল বিতরণ Logo সরিষাবাড়ীতে পাট উৎপাদনকারী চাষীদের প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত  Logo ধামরাইয়ে স্কুলছাত্রীকে অপহরের পর ৭ দিন আটকিয়ে গণ ধর্ষণ,  গ্রেফতার-৪

তিন নদীর বাঁধ ভেঙ্গে ফেণীর ২৮ গ্রাম প্লাবিত

গণমুক্তি ডিজিটাল ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০১:১৬:১৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩ অগাস্ট ২০২৪ ২০৮ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

 

ভারী বর্ষণ আর ভারতের ত্রিপুরা থেকে নেমে আসা পানিতে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনীয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের নয়টি স্থানে ভেঙ্গে গেছে। তাতে ফেণীর ২৮টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে পড়েছে। রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, ফসলি জমি ও মাছের ঘের পানিতে ভেসে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজারো মানুষ।

শনিবার (৩ আগস্ট) সকাল নাগাদ নদীর পানি বিপৎসীমার ১৫০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

জানা গেছে, শুক্রবার রাত ১২টার দিকে উপজেলার পশ্চিম অলকার মাস্টারবাড়ি সংলগ্ন মুহুরী নদীর বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকতে শুরু করে। রাত ১০টার দিকে মির্জানগর ইউনিয়নের দক্ষিণ কাউতলি কাশিনগর ও চম্পকনগর এলাকায় বাঁধের দুইটি অংশে ভাঙনের সৃষ্টি হয়।

এর আগে বেলা ১১টার দিকে উপজেলার চিথলিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ শালধর জহির চেয়ারম্যানের বাড়ি সংলগ্ন মুহুরী নদীর বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকতে শুরু করে। পরে দক্ষিণ শালধর এলাকায় বাঁধের আরও একটি অংশে ভাঙনের দেখা দিয়েছে। এতে মালিপাথর, দক্ষিণ শালধর, নিলক্ষ্মী এবং পাগলিরকুল এলাকা প্লাবিত হয়েছে। গত মাসেও বাঁধের একইস্থানে স্থানে ভাঙনের দেখা দিয়েছিল।

দুপুরের দিকে বক্সমাহমুদ ইউনিয়নে কহুয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের টেটেশ্বর এলাকায় একটি ও সাতকুচিয়া এলাকায় দুইটি স্থানে ভাঙনের সৃষ্টি হয়। এতে সাতকুচিয়া, বাঘমারা, টেটেশ্বর, চারিগ্রাম, অনন্তপুর, বাউরপাথর, বাউরখুমা, কোলাপাড়া, বেড়াবাড়িয়া, দুবলাচাদ ও উত্তর গুথুমা এলাকার শতশত পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন।

বিকেলের দিকে উপজেলার মির্জানগর ইউনিয়নের পশ্চিম মির্জানগর এলাকার সিলোনিয়া নদীর বাঁধে ভাঙনের শুরু হয়। এতে কালীকৃষ্ণনগর, পশ্চিম মির্জানগর, গদানগর, উত্তর মনিপুর, দক্ষিণ মনিপুর, ছয়ঘরিয়া, দক্ষিণ কাউতলি, কাশিনগর, চম্পকনগর, দাশপাড়া ও সত্যনগর এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

পরশুরাম উপজেলার মির্জানগর ইউনিয়নের সদস্য বাসিন্দারা বলছেন, তারা ১৯৯৮, ২০০৪ ও ২০১৮ সালের বন্যা দেখেছেন। কখনো বাড়িতে পানি ওঠেনি। এবারই প্রথম তাদের বাড়িতে পানি উঠল। পুরো এলাকার পরিস্থিতি ভয়াবহ। নদীর পানি না কমলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।

চিথলিয়া ইউনিয়নের শালধর এলাকার কৃষক আবুল হাসেম বলেন, গতমাসে বন্যায় বোরো ধানের বীজতলা পানিতে তলিয়ে যায়। নতুন করে আবার বীজতলা তৈরি করে কয়েক দিন আগেই রোপণ করেছি। ফের নদীর বাঁধ ভেঙে এখন জমি পানিতে তলিয়ে গেছে।

ক্ষোভ প্রকাশ করে চিথলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফেলতির কারণে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে বারবার লোকালয় প্লাবিত হচ্ছে। একমাস আগে ভেঙে যাওয়া বাঁধ সংস্কারে গড়িমসির কারণে আবারও একই স্থানে ভাঙনের দেখা দিয়েছে। ভাঙন স্থান দিয়ে পানি ঢুকে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।

মির্জানগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান ভুট্টু বলেন, পশ্চিম মির্জানগর এলাকায় সিলোনিয়া নদীর বাঁধ ভেঙে প্রায় এক হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ১০০ পরিবারের জন্য শুকনো খাবার দিয়েছেন।

নদীর পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছে ফুলগাজী বাজারও। এ ব্যাপারে ফুলগাজী সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সেলিম বলেন, ভারী বৃষ্টিপাতে মুহুরী নদীর পানি বেড়ে গেছে। ইতোমধ্যে ফুলগাজী পানি প্রবেশ করে মাছ, মাংস ও সবজির বাজারসহ আশপাশের সড়ক পানিতে ডুবে গেছে।

ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (অ. দা.) মো. আবুল কাশেম বলেন, এর আগে কখনো এতো পানি দেখা যায়নি। গত দুইদিনের ভারি বর্ষণ ও উজানের পানিতে মুহুরী ও কহুয়া নদীর পানি বিপৎসীমার ২৬০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকটি স্থানে ভাঙনের তথ্য পেয়েছি। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে বাঁধের আরও কয়েকটি অংশে ভাঙনের শঙ্কা রয়েছে বলে জানান এ কর্মকর্তা।

শুক্রবার বিকেলে মুহুরী-কহুয়া-সিলোনিয়া নদীর বাঁধের ভাঙা অংশ পরিদর্শন করেছেন ফেনী-১ আসনের সংসদ সদস্য আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম। এ সময় দ্রুত টেকসই বাঁধ নির্মাণের কথা জানান তিনি।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

তিন নদীর বাঁধ ভেঙ্গে ফেণীর ২৮ গ্রাম প্লাবিত

আপডেট সময় : ০১:১৬:১৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩ অগাস্ট ২০২৪

 

ভারী বর্ষণ আর ভারতের ত্রিপুরা থেকে নেমে আসা পানিতে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনীয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের নয়টি স্থানে ভেঙ্গে গেছে। তাতে ফেণীর ২৮টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে পড়েছে। রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, ফসলি জমি ও মাছের ঘের পানিতে ভেসে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজারো মানুষ।

শনিবার (৩ আগস্ট) সকাল নাগাদ নদীর পানি বিপৎসীমার ১৫০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

জানা গেছে, শুক্রবার রাত ১২টার দিকে উপজেলার পশ্চিম অলকার মাস্টারবাড়ি সংলগ্ন মুহুরী নদীর বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকতে শুরু করে। রাত ১০টার দিকে মির্জানগর ইউনিয়নের দক্ষিণ কাউতলি কাশিনগর ও চম্পকনগর এলাকায় বাঁধের দুইটি অংশে ভাঙনের সৃষ্টি হয়।

এর আগে বেলা ১১টার দিকে উপজেলার চিথলিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ শালধর জহির চেয়ারম্যানের বাড়ি সংলগ্ন মুহুরী নদীর বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকতে শুরু করে। পরে দক্ষিণ শালধর এলাকায় বাঁধের আরও একটি অংশে ভাঙনের দেখা দিয়েছে। এতে মালিপাথর, দক্ষিণ শালধর, নিলক্ষ্মী এবং পাগলিরকুল এলাকা প্লাবিত হয়েছে। গত মাসেও বাঁধের একইস্থানে স্থানে ভাঙনের দেখা দিয়েছিল।

দুপুরের দিকে বক্সমাহমুদ ইউনিয়নে কহুয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের টেটেশ্বর এলাকায় একটি ও সাতকুচিয়া এলাকায় দুইটি স্থানে ভাঙনের সৃষ্টি হয়। এতে সাতকুচিয়া, বাঘমারা, টেটেশ্বর, চারিগ্রাম, অনন্তপুর, বাউরপাথর, বাউরখুমা, কোলাপাড়া, বেড়াবাড়িয়া, দুবলাচাদ ও উত্তর গুথুমা এলাকার শতশত পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন।

বিকেলের দিকে উপজেলার মির্জানগর ইউনিয়নের পশ্চিম মির্জানগর এলাকার সিলোনিয়া নদীর বাঁধে ভাঙনের শুরু হয়। এতে কালীকৃষ্ণনগর, পশ্চিম মির্জানগর, গদানগর, উত্তর মনিপুর, দক্ষিণ মনিপুর, ছয়ঘরিয়া, দক্ষিণ কাউতলি, কাশিনগর, চম্পকনগর, দাশপাড়া ও সত্যনগর এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

পরশুরাম উপজেলার মির্জানগর ইউনিয়নের সদস্য বাসিন্দারা বলছেন, তারা ১৯৯৮, ২০০৪ ও ২০১৮ সালের বন্যা দেখেছেন। কখনো বাড়িতে পানি ওঠেনি। এবারই প্রথম তাদের বাড়িতে পানি উঠল। পুরো এলাকার পরিস্থিতি ভয়াবহ। নদীর পানি না কমলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।

চিথলিয়া ইউনিয়নের শালধর এলাকার কৃষক আবুল হাসেম বলেন, গতমাসে বন্যায় বোরো ধানের বীজতলা পানিতে তলিয়ে যায়। নতুন করে আবার বীজতলা তৈরি করে কয়েক দিন আগেই রোপণ করেছি। ফের নদীর বাঁধ ভেঙে এখন জমি পানিতে তলিয়ে গেছে।

ক্ষোভ প্রকাশ করে চিথলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফেলতির কারণে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে বারবার লোকালয় প্লাবিত হচ্ছে। একমাস আগে ভেঙে যাওয়া বাঁধ সংস্কারে গড়িমসির কারণে আবারও একই স্থানে ভাঙনের দেখা দিয়েছে। ভাঙন স্থান দিয়ে পানি ঢুকে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।

মির্জানগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান ভুট্টু বলেন, পশ্চিম মির্জানগর এলাকায় সিলোনিয়া নদীর বাঁধ ভেঙে প্রায় এক হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ১০০ পরিবারের জন্য শুকনো খাবার দিয়েছেন।

নদীর পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছে ফুলগাজী বাজারও। এ ব্যাপারে ফুলগাজী সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সেলিম বলেন, ভারী বৃষ্টিপাতে মুহুরী নদীর পানি বেড়ে গেছে। ইতোমধ্যে ফুলগাজী পানি প্রবেশ করে মাছ, মাংস ও সবজির বাজারসহ আশপাশের সড়ক পানিতে ডুবে গেছে।

ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (অ. দা.) মো. আবুল কাশেম বলেন, এর আগে কখনো এতো পানি দেখা যায়নি। গত দুইদিনের ভারি বর্ষণ ও উজানের পানিতে মুহুরী ও কহুয়া নদীর পানি বিপৎসীমার ২৬০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকটি স্থানে ভাঙনের তথ্য পেয়েছি। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে বাঁধের আরও কয়েকটি অংশে ভাঙনের শঙ্কা রয়েছে বলে জানান এ কর্মকর্তা।

শুক্রবার বিকেলে মুহুরী-কহুয়া-সিলোনিয়া নদীর বাঁধের ভাঙা অংশ পরিদর্শন করেছেন ফেনী-১ আসনের সংসদ সদস্য আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম। এ সময় দ্রুত টেকসই বাঁধ নির্মাণের কথা জানান তিনি।