তিস্তায় অবৈধ পাথর উত্তোলন কারী চক্রের দৌরাত্ম
- আপডেট সময় : ৩৮ বার পড়া হয়েছে
কোনক্রমেই থামানো যাচ্ছে না তিস্তা হতে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন। সক্রিয় সঙ্ঘবদ্ধ চক্রটি প্রশাসনের আদেশ নিষেধ উপেক্ষা করেই অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনের কার্যক্রম ধুম ধামের সাথে চালিয়ে যাচ্ছেন। উপজেলা প্রশাসনের মোবাইল কোর্ট বা পুলিশের বাধা কোনাটাই তাদের দমায়ে রাখতে পারছে না। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একাধিকবার মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে পাথর,মেশিন জব্দ, নৌকা ভাঙচুর সহ আর্থিক জরিমানা করলেও সামান্যটুকু প্রভাব পড়েনি চক্রটির অবৈধ কর্মকান্ড বন্ধে । বরং তারা আরো বেশী বেপরোয়া হয়ে অনেকটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে ধরে নিয়ে তিস্তা নদী হতে অবৈধ পাথর উত্তলোন মাত্রা বাড়িয়ে দিয়ে অব্যাহত রেখেছে।
দৈনিক গনমুক্তি পএিকায় তিস্তা নদীত পাথর উত্তোলনের একাধিক সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ করা হলে উপজেলা প্রশাসন কয়েক দফায় অভিযান পরিচালনা করে অবৈধ পাথর উত্তোলন বন্ধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করলেও সুফল হচ্ছে না চক্রটির ক্ষমতার দৌড়াত্ব্য।
নীলফামারীর ডিমলায় তিস্তা নদীতে পাথর উত্তোলনের কারণে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। ক্ষতির শিকার হচ্ছে তিস্তা পাড়ের নদীভাঙ্গা সর্ববস্ব হারা বাসিন্দারা । স্থানীয়রা বলছেন, একটি প্রভাবশালী চক্র অবৈধভাবে নদী থেকে পাথর তুলে বিক্রি করে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের টাকা।নির্বিচারে বালু-পাথর উত্তোলনের ফলে নদীভাঙন সহ বর্ষাকালে আকস্মিক বন্যা এবং ফসলি জমি, ঘরবাড়ি নদী গর্ভে চলে যাছে প্রতিনিয়ত ।
একাধিক সূত্র থেকে জানা যায়,দীর্ঘদিন যাবত একটি প্রভাবশালী মহল তিস্তা নদী ও সংলগ্ন এলাকায় মহাধুমধামের সাথে বালু ও পাথর উত্তোলনের কাজ পরিচালনা করে আসছে ।
পাথর উত্তোলনের কারণে উপজেলার ৭ ইউনিয়নের ১৫ টি এলাকায় ব্যাপক ভাঙ্গন দেখা দেয়ায় ভাঙ্গন রোধে ইতিমধ্যে জরুরী ভাবে ভাঙ্গন রোধের কাজ শেষ করেছে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ।
ঘটনানা স্থানে গিয়ে দেখা গেছে, তিস্তা নদীর দুই পাড়ের গ্রামগুলো নদীভাঙনের কবলে পড়ে সর্বস্বান্ত হয়েছে । ভাঙন এলাকায় শ্যলো ইঞ্জিন চালিত নৌকায় লোহার তৈরি যন্ত্র দিয়ে নদীর তলদেশে গভীর গর্ত করে পাথর উত্তোলন করছে এলাকার একাধিক প্রভাবশালী চক্রের ছত্রছায়ায় শ্রমিকরা । তিস্তা ব্যারাজের আশপাশ, তিস্তা বাজার, তেলির বাজার , চরখড়িবাড়ি, বাইশপুকুর, কালিগঞ্জ, ভেন্ডাবাড়িসহ বিভিন্ন এলাকায় পাথর উত্তোলনে প্রায় ১৫ টি প্রভাবশালী চক্র জড়িত রয়েছে । তবে চক্রটির এই অবৈধ কার্যক্রম বন্ধে ও নিরুৎসাহী করতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে কয়েক দফায় অভিযান পরিচালনা করে নৌকা ও শ্যালো মেশিন ভাঙচুর , বালু পাথর উত্তোলনের যন্ত্রাংশ জব্দ এবং মোটা অংকের টাকা জরিমান করা হয়েছে।
একাধিক সূত্র জানান, নৌকা চলন্ত অবস্থায় শ্যালো ইঞ্জিনচালিত পাখা দিয়ে নদীর তলদেশের বালু সরিয়ে পাথর তুলে নদীর ওপরীভাগে নিয়ে আসা হয় । এভাবেই নদীর বিভিন্ন স্থানে শতাধিক সক্রিয় টিম পাথর উত্তোলন করছে। উত্তোলিত পাথর ৪০-৫০ টাকা সিএফটি দরে স্থানীয় সিন্ডিকেটটি ক্রয় করে জমজমাট ব্যবসা করছে ।
ক্রয়কৃত পাথর ১২০-১৫০ টাকা দরে বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন সিন্ডিকেটগুলো । পরবর্তীতে তারা পাথর ব্যবসায়ী ও ঠিকাদারের কাছে বেশী দামে বিক্রি করছেন মর্মে জানান পাথর শ্রমিকরা ।
নদী তীরবর্তী বাসিন্দারা বলছেন, অবৈধভাবে পাথর-বালু উত্তোলণ করে অনেকেই কোটিপতি হয়েছেন। কিন্তু আমরা নি:স্ব সর্বস্বান্ত হয়েছি । আমাদের বসতভিটা ও আবাদি জমি বিলীন হয়েছে নদীগর্ভে। তা ছাড়া পাথর পরিবহনের ট্রাক্টর থেকে পানি পড়ার কারণে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাধ ও স্থানীয় সড়কের বেহাল অবস্থা হয়ে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে ।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরীর দায় সারা কথা । নদীর বালু, পাথরের উত্তোলনের বিষয়ে তার নাকি দায় নেই। তিনি সকল দায় দায়িত্ব উপজেলা প্রশাসনের উপর চাপিয়ে দেন।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের শাখা কর্মকর্তা প্রকৌশলী মোঃ হাসেম আলী জানান, তিস্তার ভাঙ্গন রোধে সম্প্রতি ৪টি ঝুঁকিপূর্ণ ভাঙ্গন পয়েন্টে দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে জরুরী কাজ করা হয়েছে । পয়েন্ট গুলো হল,পূর্ব ছাতনাই,ছোটখাতা,বাইশপুকুর ও ভেন্ডাবাড়ী।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরানুজ্জামান বলেন, নদী বা মাটির তলদেশ থেকে পাথর উত্তোলনে আইনগতভাবে বাঁধা আছে। প্রতিনিয়ত অভিযান চালিয়ে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে বেশ কয়েকটি পয়েন্টে পাথর ও অবৈধ কাজে ব্যবহৃত উপকরণ ও যন্ত্রাংশ জব্দ করা হয়েছে এবং কয়েকদিন আগে তিস্তা নদীতে ইঞ্জিন চালিত নৌকায় মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলনের সময় যৌথ অভিযান পরিচালনা করে ১৩ টি নৌকা ধ্বংস করা হয়।
সর্বশেষ মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুপুর থেকে দিনব্যাপী অভিযান পরিচালনা করে অবৈধ পাথর চক্রের বিরুদ্ধে জোরালো অবস্থান নিয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ ইমরানুজ্জামান এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ রওশন কবির। এ সময় উপস্থত থেকে সার্বিক সহযোগিতা করেন ডিমলা থানা পুলিশের একটি দল এবং টেপাখড়িবাড়ি ইউ,পি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম শাহীন। অবৈধভাবে পাথর ও বালু উত্তোলন বন্ধে এ অভিযানে চারটি পাথর ভাঙার যন্ত্র (মেশিন) ও প্রায় ৮ হাজার সেফটি ঘনফুট পাথর জব্দ সহ দুই পাথর ব্যবসায়ীকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
তবে,এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তিস্তা নদী হতে অবৈধ পাথর উত্তোলন অব্যাহত রয়েছে । থেমে নেই অবৈধ পাথর উত্তোলন। সর্বদাই সক্রিয় রয়েছে পাথর উত্তোলনকারী সঙ্গবদ্ধ চক্রটি। এত অভিযানের পরেও প্রভাব পড়ছে না চক্রটির উপর। কাজে আসছে না প্রশাসনের বিধি-নিষেধ। চক্রটি প্রশাসনকে চ্যালেঞ্জ করে এধরনের অবৈধ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। সর্বোপরি ডিমলা উপজেলা প্রশাসনের আইন প্রয়োগ পাথর উত্তোলন বন্ধু হবে নাকি তিস্তায় অবৈধ পাথর উত্তোলন কারী চক্রের দৌরাত্ন্যে অবৈধ পাথর উত্তোলন অব্যাহত থাকবে ।





















