থেমে গেছে চলন্ত সিঁড়িগুলো
- আপডেট সময় : ২৮ বার পড়া হয়েছে
ঢাকা উত্তর সিটির ৮টি চলন্ত সিঁড়িযুক্ত ফুটওভার ব্রিজের বেশিরভাগই অকেজো। মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের উদ্যোগও নেই। বরং এগুলো হয়ে উঠেছে নগরবাসীর ভোগান্তির কারণ। বিশেষজ্ঞ বলছেন, ব্যক্তি স্বার্থ ছাড়া চলন্ত সিঁড়িযুক্ত ফুটওভার ব্রিজের প্রকল্প নেয়ার কোনো কারণ নেই। আর সিটি করপোরেশন বলছে, যন্ত্রাংশ চুরি হওয়ায় অচল হয়ে পড়েছে চলন্ত সিঁড়ি। সংশ্লিষ্ট সিটি কর্পোরেশন বলেছে, যন্ত্রাংশ চুরি ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ঢাকা উত্তরের ৮টি চলন্ত সিঁড়ি অকেজো হয়ে পড়েছে। এগুলোর কোনোটিই দেশে পাওয়া যায় না। শিগগিরই মেরামত শেষ করে নজরদারিতে আনসার নিয়োগ করা হবে বলে জানান তিনি।
জানা গেছে, একদিকে যখন রাজধানীর বেশিরভাগ ফুটওভার ব্রিজ হকারদের দখলে অন্যদিকে তখন চলন্ত সিঁড়িযুক্ত ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণেই যেন দায় শেষ কর্তৃপক্ষের। পরবর্তী সময়ে সেই ফুটওভার ব্রিজগুলোতে থাকে না কোনও তদারকি। পথচারীরা বলেন, যন্ত্রাংশ চুরি ও অযত্নে অবহেলায় বেশিরভাগ আধুনিক সিঁড়ি অচল অবস্থায় পড়ে আছে। এমনকি ব্রিজগুলোকেও নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয় না। এতে সেগুলোর মেয়াদ ফুরোনোর আগেই নষ্ট হয়ে গেছে। একেতো ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারে পথচারীদের অনীহা তার ওপর এমন দশার কারণে ব্যস্ত সড়ক দিয়েই মানুষের পারাপার চলে নিত্যদিন।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, রাস্তা পারাপারের জন্য রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে ফুটওভারব্রজি। পাশাপাশি বেশ কয়েকটি জায়গায় রয়েছে এস্কেলেটর বা চলন্ত সিঁড়িযুক্ত ফুটওভারব্রিজ। কিন্তু এসব চলন্ত সিঁড়ির বেশিরভাই এখন অচল। তাই নগরবাসীর সুবিধার বদলে এগুলো তাদের দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে তদারকির অভাব ও জনবল সংকটের কথা উল্লেখ করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান প্রকৌশলী দিচ্ছেন ভিন্ন ব্যাখ্যা।
দুই ডিসিসি সূত্র বলেছে, ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে ফার্মগেটে নির্মিত ফুটওভারব্রিজে লাগানো হয়েছিলো চলন্ত সিঁড়ি। উদ্বোধনের এক সপ্তাহের মধ্যেই কোনো ঘোষণা ছাড়াই প্রবেশমুখ বাঁশ দিয়ে আটকে দেয়া হয়। এর পর থেকে পরিত্যক্ত এই সিঁড়িতে জমছে আবর্জনা। শুধু এই ফুটওভারব্রিজ নয়, রাজধানীর আরও তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ফুটওভারব্রিজের অবস্থাও একই। বনানী, বিমানবন্দর বাসস্ট্যান্ড, ইসিবি চত্বরে ফুটওভারব্রিজের চলন্ত সিঁড়িগুলো অচল। এগুলো এখন মাদকাশক্ত ও অপরাধীদের নিরাপদ স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। গত ২০২৪ সালের মার্চ মাসে রাজধানীর ব্যস্ততম শাহবাগ সংলগ্ন পরিবাগ ফুটওভার ব্রীজে মানুষ খুনের মতো ঘটনাও ঘটেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, রাজধানীর বেশিরভাগ ফুটওভার ব্রিজ ভ্রাম্যমাণ দোকানিদের দখলে। কোথাও বা অচল পড়ে আছে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত চলন্ত সিঁড়ি। একেতো হকারদের দৌরাত্ম্য তার পর ফুটওভার ব্রিজের যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা। সিটির দায়িত্বপ্রাপ্তরা দায় চাপাচ্ছেন সিটি করপোরেশনেরই প্রশাসক এবং স্থানীর রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের ওপর। গলদ আছে পুরো সিস্টেমে।
শুধু তাই নয়, রাজধানীর ফার্মগেটের ফুটওভার ব্রিজ যেন কোলাহলমুখর একটা বাজার। কাঁচাবাজার বাদে সব ধরনের পণ্যের পসরা নিয়ে বসেছেন হকাররা। স্যান্ডেল থেকে শুরু করে কানের দুল সবই পাওয়া যায় এক ছাদের নিচে। তবে শুধু ফার্মগেট নয়, রাজধানীর বেশিরভাগ ফুটওভার ব্রিজের দশাই এ রকম। শুধু দখলই নয়, ফুটওভার ব্রিজগুলোর সিঁড়ি জুড়ে যেখানে সেখানে পড়ে আছে ময়লা-আবর্জনা। অনেক জায়গায় গড়ে উঠেছে অবাঞ্চিত ও ছিন্নমূল মানুষের আবাসস্থল। পথচারীরা বলেন, ফুটওভার ব্রিজগুলোর বেশিরভাগই এখন হকারদের দখলে। দেখে বোঝার উপায় নেই, এটি চলাচলের রাস্তা নাকি বাজার। অবৈধভাবে দোকান বসানোর কথা স্বীকার করে হকারদের দাবি, টাকা-পয়সা না থাকায় দোকান নেয়া সম্ভব না সবার পক্ষে। নির্দিষ্ট জায়গার অভাবে অনেকটা বাধ্য হয়েই ফুটওভার ব্রিজে দোকান নিয়ে বসতে হয়।
ডিএনসিসির প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মঈন উদ্দিন বলেন, হকাররা এলাকার স্থানীয় কিছু মানুষের ছত্রছায়ায় দোকান চালাচ্ছে। সিটি করপোরেশন কোনো বরাদ্দ দেয়নি। এটি সম্পূর্ণ অবৈধ। এটি বন্ধে উদ্যোগ সিটি করপোরেশনেরই নেয়ার কথা। তবে জনবল সংকটের অভাবে হচ্ছে না। এর উদ্যোগ আমাদেরকেই নিতে হবে।
অন্যদিকে কারিগরি ত্রুটি, ব্যবস্থাপনা ও পরিকল্পনার অভাবকে দায়ী করছেন দক্ষিণের দায়িত্বপ্রাপ্তরাও। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. মো. জিল্লুর রহমান বলেন, এটি বন্ধে প্রধান দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। এটিতে কোনো দ্বিমত নেই। সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি নাগরিকরাও বলছেন, বিকল্প ব্যবস্থা না করে ফুটওভার ব্রিজে হকার উচ্ছেদে সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে না।
ফুটওভারের বিষয়ে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামসুল হক বলেন, বাংলাদেশের পরিবেশে খোলা জায়গায় ব্যবহারের উপযোগী নয় এসব চলন্ত সিঁড়ি। বৃষ্টি, ধুলাবালি ও আর্দ্রতায় দ্রুত নষ্ট হচ্ছে যন্ত্রাংশ। এতে বেড়ে যাচ্ছে রক্ষণাবেক্ষণের ব্যয়। ব্যক্তি স্বার্থ ছাড়া এসব প্রকল্প নেয়ার কোনো কারণ দেখছি না।
সিটি করপোরেশন বলছে, চলন্ত সিঁড়ি সচল রাখতে মূল সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে নগরবাসীর সচেতনতার অভাব আর যন্ত্রাংশ চুরি। ২০২৫-২৬ অর্থ বছরে ফুটওভারব্রিজ নির্মাণখাতে ঢাকা উত্তর সিটির বরাদ্দ ১৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা। শিগগিরই চলন্ত সিঁড়িগুলো মেরামতের আশ্বাস দিয়েছেন ডিএনসিসির ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং সার্কেল নির্বাহী প্রকৌশলী নাঈম রায়হান খান। নগরবাসীর প্রত্যাশা কাগুজে প্রকল্প নয় বরং তাদের জন্য বাস্তবসম্মত প্রকল্প নেবে সিটি করপোরেশন। ফুটওভারব্রিজের চলন্ত সিঁড়ি অচল অবস্থায় থাকায় নাগরিকদের চলতে হচ্ছে পাশের সিঁড়ি দিয়েই। পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, প্রযুক্তির ছোঁয়া যদি টেকসই না হয় তবে তা পরিণত হয় কিছুদিনের সাময়িক প্রদর্শনীতে যার খেসারত দিতে হয় শেষ পর্যন্ত নগরবাসীকেই।






















