ঢাকা ০৯:৪৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

দাগনভূঞায় চলছে অনুনোমোদিত কয়েল উৎপাদন

শাখাওয়াত হোসেন টিপু, দাগনভূঞা
  • আপডেট সময় : ০৪:০০:৩৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ ৩৪৩ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

দাগনভূঞার বিভিন্ন জায়গায় গড়ে উঠেছে অনুনোমোদিত কয়েল উৎপাদন ফ্যাক্টরি। মাত্র পাঁচ মাস আগেই বিভিন্ন অভিযোগে দাগনভূঞা উপজেলার জায়লস্কর ইউনিয়নের মোল্লাঘাটা বাজারে অবস্থিত কয়েল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স রূপালী কেমিক্যালসকে উপজেলা প্রশাসন ও বিএসটিআই এর সমন্বয়ে একটি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ত্রিশ হাজার টাকা জরিমানা করেছিলেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) মেহরাজ শারবীন। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, কারখানাটি মেয়াদোত্তীর্ণ ট্রেড লাইসেন্স ও ভ্যাট লাইসেন্স, ভূয়া পিএইচপি নম্বর, ফর্মুলেশন, হোলসেল, ইমপোর্ট, এডভারটাইজমেন্ট, ফায়ার লাইসেন্স, শ্রম ও কর্মসংস্থান এর রেজিস্ট্রেশনবিহীন, বিএসটিআই এর লগো ব্যবহার করে অবৈধভাবে চলছে ডেঙ্গু হাই পাওয়ার, সততা, সাদ, হর্স নিমপাতা ও হর্স পাওয়ার নামে অবৈধ ও বিষাক্ত কয়েলের উৎপাদন করে আসছে। নীতিমালা অনুযায়ী মশা মারার জন্য নয় বরং মশা তাড়াতে কয়েল উৎপাদন ও ব্যবহারের কথা। আর এই সুযোগটাই কাজে লাগিয়েছে অবৈধ কয়েল প্রস্তুতকারকরা।

উচ্চমাত্রার রাসায়নিক প্রয়োগের কারণে নিমিষে মশা মরে যাওয়ায় অসচেতন ক্রেতা ওই কয়েল ব্যবহার করছেন। আর বেশি লাভের আশায় খুচরা বিক্রেতারাও এসব কয়েল দোকানে রাখছেন। মশার কয়েলে এগ্রিকালচারাল পেসটিসাইড-এপি (কৃষিকাজে ব্যবহৃত কীটনাশক) উচ্চমাত্রায় রয়েছে। এই কীটনাশক মানব স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। মশার কয়েলে পাবলিক হেলথ পেসটিসাইড (পিএইচপি) বা মানবস্বাস্থ্যের জন্য সহনীয় কীটনাশক ব্যবহার করার কথা।’ রাসায়নিক পণ্য তৈরিতে বিএসটিআই থেকে অনুমোদন পাওয়ার আগে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংরক্ষণ শাখা এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিষ্ঠান রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) থেকে অনুমোদন পেতে হয়। আবুল কালাম নামে এক ক্রেতা জানান, দোকানে গিয়ে কম দামের কয়েল চাইলে দোকানী কয়েলগুলো ধরিয়ে দেয় ভালো খারাপ এত কিছু বুঝি না। মোল্লাঘাটা ও আশপাশের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে আসা অনুমোদনহীন এই কয়েল পরিবেশ ও মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এবং কোনো মাননিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানের অন মোদন না থাকলেও বিক্রেতারা অতি মুনাফার লোভে বিক্রি করছে। এর বিরূপ প্রভাব পরিবেশ ও মানবদেহে কী পরিমাণ পড়তে পারে এসব নিয়েও তাদের কোনো ধারণা নেই। কয়েকজন দোকানি জানান, দেশের প্রচলিত কয়েকটি মশার কয়েল বাজারে ব্যাপক জনপ্রিয় হলেও এসব কয়েলের দাম বেশি হওয়ায় ক্রে তারা কিনতে চায় না। তাই অনেকটা বাধ্য হয়ে কোম্পানির কয়েল বিক্রি করতে হয় তাদের। এতে তাদের লাভও বেশি। দোকানিরা জানায়, অপ্রচলিত কয়েলের গায়ে থাকা দামে বিক্রি করে তারা প্রচলিত কয়েলের চেয়ে বেশি কমিশন পায়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কারখানায় কাজ করা শ্রমিকদের সাথে কথা বললে তারা জানান, শরীরের জন্য ক্ষতিকর জেনেও টাকার জন্যই ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছি।

আমাদের অনেকেরই হাত ও ত্বক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে এরমধ্যে অনেকে ফুসফুসজনিত জটিলতায় ভুগছে বলে জানায় তারা। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, তাদের ফ্যাক্টরিতে ব্যবহৃত কীটনাশক এর জন্য তাদের অনুমোদন এর প্রয়োজন কিন্তু ওই ফ্যাক্টরি কোন অনুমোদন নেয়নি। বিএসটিআই কুমিল্লা কার্যালয়ের ফিল্ড অফিসার (সিএম) কাজী মোঃ শাহান জানান, তারা এখনো কীটনাশক এর ব্যবহার এর অনুমতি নেয়নি। সেটি না নিলে বিএসটিআইয়ে আবেদন করা যায় না। লোগোর বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন যে তারা অবৈধ ও ভূয়া ট্রেডমার্ক ও বিএসটিআই এর নম্বর ব্যবহার করছে। অভিযোগগুলো সম্পর্কে জানতে চাইলে কারখানাটির পরিচালক মো: খোকন জানান, ইতিমধ্যে আমাদের কাছে একটি লাইসেন্স আছে। আরো দুটি লাইসেন্স এ মাসে হাতে পাবো। আর বাকি কোন কাগজপত্র লাগলে সেগুলোও আমরা করবো। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মেহরাজ শারবীন জানান, কিছুদিন পূর্বেই আমরা ওই ফ্যাক্টরিকে জরিমানা করেছিলাম। তারা স্থান পরিবর্তন করে আবার উৎপাদন করছে বিষয়টি অবগত ছিলাম না। খুব দ্রুতই বিএসটিআইয়ের সমন্বয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

দাগনভূঞায় চলছে অনুনোমোদিত কয়েল উৎপাদন

আপডেট সময় : ০৪:০০:৩৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

দাগনভূঞার বিভিন্ন জায়গায় গড়ে উঠেছে অনুনোমোদিত কয়েল উৎপাদন ফ্যাক্টরি। মাত্র পাঁচ মাস আগেই বিভিন্ন অভিযোগে দাগনভূঞা উপজেলার জায়লস্কর ইউনিয়নের মোল্লাঘাটা বাজারে অবস্থিত কয়েল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স রূপালী কেমিক্যালসকে উপজেলা প্রশাসন ও বিএসটিআই এর সমন্বয়ে একটি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ত্রিশ হাজার টাকা জরিমানা করেছিলেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) মেহরাজ শারবীন। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, কারখানাটি মেয়াদোত্তীর্ণ ট্রেড লাইসেন্স ও ভ্যাট লাইসেন্স, ভূয়া পিএইচপি নম্বর, ফর্মুলেশন, হোলসেল, ইমপোর্ট, এডভারটাইজমেন্ট, ফায়ার লাইসেন্স, শ্রম ও কর্মসংস্থান এর রেজিস্ট্রেশনবিহীন, বিএসটিআই এর লগো ব্যবহার করে অবৈধভাবে চলছে ডেঙ্গু হাই পাওয়ার, সততা, সাদ, হর্স নিমপাতা ও হর্স পাওয়ার নামে অবৈধ ও বিষাক্ত কয়েলের উৎপাদন করে আসছে। নীতিমালা অনুযায়ী মশা মারার জন্য নয় বরং মশা তাড়াতে কয়েল উৎপাদন ও ব্যবহারের কথা। আর এই সুযোগটাই কাজে লাগিয়েছে অবৈধ কয়েল প্রস্তুতকারকরা।

উচ্চমাত্রার রাসায়নিক প্রয়োগের কারণে নিমিষে মশা মরে যাওয়ায় অসচেতন ক্রেতা ওই কয়েল ব্যবহার করছেন। আর বেশি লাভের আশায় খুচরা বিক্রেতারাও এসব কয়েল দোকানে রাখছেন। মশার কয়েলে এগ্রিকালচারাল পেসটিসাইড-এপি (কৃষিকাজে ব্যবহৃত কীটনাশক) উচ্চমাত্রায় রয়েছে। এই কীটনাশক মানব স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। মশার কয়েলে পাবলিক হেলথ পেসটিসাইড (পিএইচপি) বা মানবস্বাস্থ্যের জন্য সহনীয় কীটনাশক ব্যবহার করার কথা।’ রাসায়নিক পণ্য তৈরিতে বিএসটিআই থেকে অনুমোদন পাওয়ার আগে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংরক্ষণ শাখা এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিষ্ঠান রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) থেকে অনুমোদন পেতে হয়। আবুল কালাম নামে এক ক্রেতা জানান, দোকানে গিয়ে কম দামের কয়েল চাইলে দোকানী কয়েলগুলো ধরিয়ে দেয় ভালো খারাপ এত কিছু বুঝি না। মোল্লাঘাটা ও আশপাশের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে আসা অনুমোদনহীন এই কয়েল পরিবেশ ও মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এবং কোনো মাননিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানের অন মোদন না থাকলেও বিক্রেতারা অতি মুনাফার লোভে বিক্রি করছে। এর বিরূপ প্রভাব পরিবেশ ও মানবদেহে কী পরিমাণ পড়তে পারে এসব নিয়েও তাদের কোনো ধারণা নেই। কয়েকজন দোকানি জানান, দেশের প্রচলিত কয়েকটি মশার কয়েল বাজারে ব্যাপক জনপ্রিয় হলেও এসব কয়েলের দাম বেশি হওয়ায় ক্রে তারা কিনতে চায় না। তাই অনেকটা বাধ্য হয়ে কোম্পানির কয়েল বিক্রি করতে হয় তাদের। এতে তাদের লাভও বেশি। দোকানিরা জানায়, অপ্রচলিত কয়েলের গায়ে থাকা দামে বিক্রি করে তারা প্রচলিত কয়েলের চেয়ে বেশি কমিশন পায়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কারখানায় কাজ করা শ্রমিকদের সাথে কথা বললে তারা জানান, শরীরের জন্য ক্ষতিকর জেনেও টাকার জন্যই ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছি।

আমাদের অনেকেরই হাত ও ত্বক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে এরমধ্যে অনেকে ফুসফুসজনিত জটিলতায় ভুগছে বলে জানায় তারা। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, তাদের ফ্যাক্টরিতে ব্যবহৃত কীটনাশক এর জন্য তাদের অনুমোদন এর প্রয়োজন কিন্তু ওই ফ্যাক্টরি কোন অনুমোদন নেয়নি। বিএসটিআই কুমিল্লা কার্যালয়ের ফিল্ড অফিসার (সিএম) কাজী মোঃ শাহান জানান, তারা এখনো কীটনাশক এর ব্যবহার এর অনুমতি নেয়নি। সেটি না নিলে বিএসটিআইয়ে আবেদন করা যায় না। লোগোর বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন যে তারা অবৈধ ও ভূয়া ট্রেডমার্ক ও বিএসটিআই এর নম্বর ব্যবহার করছে। অভিযোগগুলো সম্পর্কে জানতে চাইলে কারখানাটির পরিচালক মো: খোকন জানান, ইতিমধ্যে আমাদের কাছে একটি লাইসেন্স আছে। আরো দুটি লাইসেন্স এ মাসে হাতে পাবো। আর বাকি কোন কাগজপত্র লাগলে সেগুলোও আমরা করবো। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মেহরাজ শারবীন জানান, কিছুদিন পূর্বেই আমরা ওই ফ্যাক্টরিকে জরিমানা করেছিলাম। তারা স্থান পরিবর্তন করে আবার উৎপাদন করছে বিষয়টি অবগত ছিলাম না। খুব দ্রুতই বিএসটিআইয়ের সমন্বয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।