ঢাকা ০৭:৫৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম ::

নওগাঁ সদর-৫ আসনে প্রার্থী ছাড়া বিএনপি

ধানের শীষে দুশ্চিন্তা, ঐক্যই হতে পারে একমাত্র পথ

কামরুল হাসান জীবন, নওগাঁ
  • আপডেট সময় : ১৫২ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

নওগাঁ-৫ (সদর) আসন—একটি পৌরসভা ও বারোটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ আসনটি একসময় ছিল বিএনপির অবিচল দুর্গ, ধানের শীষের গর্বের আসন। ১৯৯১ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত প্রয়াত সংসদ সদস্য শামসুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে এই আসনে টানা তিনবার জয় পেয়েছিল বিএনপি। কিন্তু অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত এই আসনে ধানের শীষ বিজয়ের মুখ দেখেনি। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে নওগাঁয় আবারও সংগঠিত হচ্ছে বিএনপি, মাঠে নামছে নেতাকর্মীরা, নতুন করে প্রাণ ফিরে পেয়েছে তৃণমূল। গণসংযোগ, লিফলেট বিতরণ, কর্মী সমাবেশ—সব মিলিয়ে সদর আসনে পুনরায় জীবন্ত হয়ে উঠেছে বিএনপির রাজনৈতিক তৎপরতা।
তবে কেন্দ্রীয় দলের ঘোষিত প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পরও নওগাঁর ছয়টি আসনের মধ্যে সদর আসনটি এখনো ফাঁকা রয়েছে। সারাদেশে ৩০০ আসনের মধ্যে ২৩৭টি আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণা করা হলেও নওগাঁ-৫ আসনে এখনো প্রার্থী চূড়ান্ত হয়নি। ফলে স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে গভীর দুশ্চিন্তা, হতাশা এবং অস্থিরতা। বিএনপি ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এই আসনে প্রার্থী না থাকায় অনেকে প্রশ্ন তুলছেন—ধানের শীষের দুর্গে এখন নেতৃত্ব দেবেন কে?
এই আসনে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আলহাজ্ব নাজমুল হক সনি, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম ধলু, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রহমান রিপন এবং তরুণ নেতা মাসুদ হাসান তুহিন। অভ্যন্তরীণ মতবিরোধ, সমন্বয়ের অভাব এবং স্থানীয় পর্যায়ের নেতৃত্ব দ্বন্দ্বের কারণে প্রার্থী নির্ধারণে বিলম্ব হচ্ছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। কেন্দ্রীয় হাইকমান্ড চাইছে, ঐক্য ও সমঝোতার মাধ্যমে এ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হোক, যাতে আগামী নির্বাচনে নওগাঁ সদর আসনে ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত হয়।
স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নওগাঁ সদর আসন ফাঁকা রাখলে বা শরিক দলের হাতে ছেড়ে দিলে বিএনপি দীর্ঘমেয়াদে বড় রাজনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়বে। এ আসনটি হারালে শুধু সদর নয়, গোটা জেলার সংগঠন দুর্বল হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামী ও শরিক দল এনসিপি ইতোমধ্যে মাঠে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। বিএনপি যদি দ্রুত প্রার্থী ঘোষণা না করে, তাহলে এই সুযোগে জামায়াত নিজস্ব অবস্থান শক্ত করার চেষ্টা করতে পারে। ফলে বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত নওগাঁ সদর আসন হাতছাড়া হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।
নওগাঁ বিএনপির শীর্ষ নেতারা বলছেন, সদর আসন বিএনপির হৃদয়ের জায়গা। এখানেই দলের সবচেয়ে বড় জনভিত্তি এবং কর্মীসমর্থন বিদ্যমান। তারা মনে করেন, সময় নষ্ট না করে দ্রুত ঐক্যবদ্ধভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারলে ধানের শীষ আবারও বিজয়ের মুকুট পরবে নওগাঁ সদর আসনে।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রহমান রিপন জানিয়েছেন, সদর আসন বিএনপির রাজনীতির প্রাণকেন্দ্র, এখান থেকেই জেলার সব রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়। ঐক্য থাকলে ধানের শীষের জয় ঠেকানো সম্ভব নয়।
সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম ধলুর মতে, এই আসন বিএনপির অস্তিত্বের প্রতীক; শরিক দলের কাছে ছেড়ে দেওয়া মানে দলের ভিত্তি দুর্বল করা।
সাবেক সভাপতি ও তিনবারের সফল মেয়র আলহাজ্ব নাজমুল হক সনি মনে করেন, সামান্য মতভেদ থাকলেও তা সাময়িক; বিএনপির ঐক্যই হবে বিজয়ের মূল চাবিকাঠি।
মনোনয়ন প্রত্যাশী তরুণ নেতা মাসুদ হাসান তুহিন বলেন, সদর আসনে বিএনপির বিশাল জনভিত্তি আছে, তাই সময়ই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
সভাপতি আবু বক্কর সিদ্দীক নান্নু বলেছেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তই হবে চূড়ান্ত। তবে এটি অনস্বীকার্য যে নওগাঁ সদর আসন বিএনপির রাজনীতির প্রাণকেন্দ্র, এই আসন হারানো মানে পুরো জেলায় রাজনৈতিক ভারসাম্য নষ্ট হওয়া।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অভিমত, নওগাঁ সদর আসন শুধু একটি আসন নয়, এটি বিএনপির অতীত গৌরব ও রাজনৈতিক অস্তিত্বের প্রতীক। তাই এ আসনে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রার্থী ঘোষণা করা ছাড়া দলের সামনে আর কোনো বিকল্প নেই। অন্যথায় এই ঐতিহাসিক ঘাঁটি হারালে জেলার রাজনীতিতে বিএনপি দীর্ঘদিন পিছিয়ে পড়বে।
নওগাঁ-৫ বিএনপির প্রাণ, আর সেই প্রাণ রক্ষায় এখন ঐক্যই একমাত্র চাবিকাঠি — এমনটাই বলছেন জেলা রাজনৈতিক মহল।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

নওগাঁ সদর-৫ আসনে প্রার্থী ছাড়া বিএনপি

ধানের শীষে দুশ্চিন্তা, ঐক্যই হতে পারে একমাত্র পথ

আপডেট সময় :

নওগাঁ-৫ (সদর) আসন—একটি পৌরসভা ও বারোটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ আসনটি একসময় ছিল বিএনপির অবিচল দুর্গ, ধানের শীষের গর্বের আসন। ১৯৯১ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত প্রয়াত সংসদ সদস্য শামসুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে এই আসনে টানা তিনবার জয় পেয়েছিল বিএনপি। কিন্তু অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত এই আসনে ধানের শীষ বিজয়ের মুখ দেখেনি। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে নওগাঁয় আবারও সংগঠিত হচ্ছে বিএনপি, মাঠে নামছে নেতাকর্মীরা, নতুন করে প্রাণ ফিরে পেয়েছে তৃণমূল। গণসংযোগ, লিফলেট বিতরণ, কর্মী সমাবেশ—সব মিলিয়ে সদর আসনে পুনরায় জীবন্ত হয়ে উঠেছে বিএনপির রাজনৈতিক তৎপরতা।
তবে কেন্দ্রীয় দলের ঘোষিত প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পরও নওগাঁর ছয়টি আসনের মধ্যে সদর আসনটি এখনো ফাঁকা রয়েছে। সারাদেশে ৩০০ আসনের মধ্যে ২৩৭টি আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণা করা হলেও নওগাঁ-৫ আসনে এখনো প্রার্থী চূড়ান্ত হয়নি। ফলে স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে গভীর দুশ্চিন্তা, হতাশা এবং অস্থিরতা। বিএনপি ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এই আসনে প্রার্থী না থাকায় অনেকে প্রশ্ন তুলছেন—ধানের শীষের দুর্গে এখন নেতৃত্ব দেবেন কে?
এই আসনে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আলহাজ্ব নাজমুল হক সনি, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম ধলু, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রহমান রিপন এবং তরুণ নেতা মাসুদ হাসান তুহিন। অভ্যন্তরীণ মতবিরোধ, সমন্বয়ের অভাব এবং স্থানীয় পর্যায়ের নেতৃত্ব দ্বন্দ্বের কারণে প্রার্থী নির্ধারণে বিলম্ব হচ্ছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। কেন্দ্রীয় হাইকমান্ড চাইছে, ঐক্য ও সমঝোতার মাধ্যমে এ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হোক, যাতে আগামী নির্বাচনে নওগাঁ সদর আসনে ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত হয়।
স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নওগাঁ সদর আসন ফাঁকা রাখলে বা শরিক দলের হাতে ছেড়ে দিলে বিএনপি দীর্ঘমেয়াদে বড় রাজনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়বে। এ আসনটি হারালে শুধু সদর নয়, গোটা জেলার সংগঠন দুর্বল হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামী ও শরিক দল এনসিপি ইতোমধ্যে মাঠে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। বিএনপি যদি দ্রুত প্রার্থী ঘোষণা না করে, তাহলে এই সুযোগে জামায়াত নিজস্ব অবস্থান শক্ত করার চেষ্টা করতে পারে। ফলে বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত নওগাঁ সদর আসন হাতছাড়া হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।
নওগাঁ বিএনপির শীর্ষ নেতারা বলছেন, সদর আসন বিএনপির হৃদয়ের জায়গা। এখানেই দলের সবচেয়ে বড় জনভিত্তি এবং কর্মীসমর্থন বিদ্যমান। তারা মনে করেন, সময় নষ্ট না করে দ্রুত ঐক্যবদ্ধভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারলে ধানের শীষ আবারও বিজয়ের মুকুট পরবে নওগাঁ সদর আসনে।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রহমান রিপন জানিয়েছেন, সদর আসন বিএনপির রাজনীতির প্রাণকেন্দ্র, এখান থেকেই জেলার সব রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়। ঐক্য থাকলে ধানের শীষের জয় ঠেকানো সম্ভব নয়।
সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম ধলুর মতে, এই আসন বিএনপির অস্তিত্বের প্রতীক; শরিক দলের কাছে ছেড়ে দেওয়া মানে দলের ভিত্তি দুর্বল করা।
সাবেক সভাপতি ও তিনবারের সফল মেয়র আলহাজ্ব নাজমুল হক সনি মনে করেন, সামান্য মতভেদ থাকলেও তা সাময়িক; বিএনপির ঐক্যই হবে বিজয়ের মূল চাবিকাঠি।
মনোনয়ন প্রত্যাশী তরুণ নেতা মাসুদ হাসান তুহিন বলেন, সদর আসনে বিএনপির বিশাল জনভিত্তি আছে, তাই সময়ই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
সভাপতি আবু বক্কর সিদ্দীক নান্নু বলেছেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তই হবে চূড়ান্ত। তবে এটি অনস্বীকার্য যে নওগাঁ সদর আসন বিএনপির রাজনীতির প্রাণকেন্দ্র, এই আসন হারানো মানে পুরো জেলায় রাজনৈতিক ভারসাম্য নষ্ট হওয়া।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অভিমত, নওগাঁ সদর আসন শুধু একটি আসন নয়, এটি বিএনপির অতীত গৌরব ও রাজনৈতিক অস্তিত্বের প্রতীক। তাই এ আসনে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রার্থী ঘোষণা করা ছাড়া দলের সামনে আর কোনো বিকল্প নেই। অন্যথায় এই ঐতিহাসিক ঘাঁটি হারালে জেলার রাজনীতিতে বিএনপি দীর্ঘদিন পিছিয়ে পড়বে।
নওগাঁ-৫ বিএনপির প্রাণ, আর সেই প্রাণ রক্ষায় এখন ঐক্যই একমাত্র চাবিকাঠি — এমনটাই বলছেন জেলা রাজনৈতিক মহল।