নওগাঁয় মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারে উন্নতমানের রেনুতে উপকৃত মাছ চাষীরা
- আপডেট সময় : ১৮ বার পড়া হয়েছে
নওগাঁয় সরকারি মৎস্য বীজ উৎপাদন খামার থেকে উন্নত মানের রেনু সরবরাহ করায় মাছ চাষীদের কাছে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তবে চাহিদা থাকলেও পর্যাপ্ত পরিমাণ রেনু উৎপাদন হচ্ছে না। চাষীদের বাড়তি দামে বেসরকারি খামার থেকে কিনতে হচ্ছে। উপকরণ ও জনবল বাড়ানো গেলে রাজস্ব আয়ের পাশাপাশি জেলায় মাছ চাষীরা চাহিদা মতো রেনু পেয়ে উপকৃত এবং লাভবান হবেন।
কৃষিতে সমৃদ্ধ উত্তরের জেলা নওগাঁ। পাশাপাশি মৎস্যখাতেও এগিয়ে এ জেলা। সরকারি মৎস্য বীজ উৎপাদন খামার থেকে উন্নত মানের রেনু সরবরাহ করায় সুবিধা পাচ্ছে মাছ চাষীরা। তবে উন্নত মানের রেনু সরবরাহ নিশ্চিত করার মাধ্যমে, এটি দেশের সামগ্রিক মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে। পাশাপাশি প্রোটিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসেবে কাজ করবে এমন প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।
মৎস্য বীজ উৎপাদন খামার সূত্রে জানা যায়- ২০২৫-২৬ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২০০ কেজি রেনু। যা থেকে রাজস্ব আয় হবে ৭ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এছাড়া বিগত অর্থবছর গুলোতে আয় হয়েছে সন্তোষজনক। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১৩৭ কেজি রেনু থেকে রাজস্ব আয় ৭ লাখ ৯ হাজার টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১২২ কেজি রেনু থেকে রাজস্ব আয় ৬ লাখ ৮৫ হাজার ৫০০ টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১২০ কেজি রেনু থেকে রাজস্ব আয় ৬ লাখ ৫২ হাজার ৫০০ টাকা। এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে ৭৭ কেজি রেনু থেকে রাজস্ব আয় ৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা।
নওগাঁ শহরের আরজি-নওগাঁয় অবস্থিত সরকারি মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারের আয়তন প্রায় ১১ একর। যেখানে সাড়ে ৪ একর জায়গায় রয়েছে ১০ টি পুকুর। এসব পুকুরে কার্প জাতীয় মা মাছ- রুই, মৃগেল, কাতলা, কালবাউস ও পাঙ্গাসসহ অন্য মাছ চাষ করা হয়। যা থেকে উন্নত মানের রেনু উৎপাদন করে চাষীদের কাছে সরবরাহ করা হয়। এ খামার থেকে বছরে ৫ মাস রেনু উৎপাদন হলেও চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। সরকারি খামারে রেনু উৎপাদন কম হওয়ায় বেসরকারি খামারের রেনু দিয়ে চাহিদা পুরণ করে মাছ চাষীরা। জেলায় ৩১ টি বেসরকারি মৎস্যবীজ (হ্যাচারি) উৎপাদন খামার রয়েছে। যা থেকে বছরে প্রায় ১৩ মেট্রিক টন কার্প জাতীয় রেনু উৎপাদন হয়। জেলার চাহিদা মিটিয়ে পাশের জেলায় সরবরাহ করা হয়।
মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারগুলো মৎস্য চাষ, সরবরাহ এবং জনসাধারণের জন্য অনেকভাবে উপকারী। এই খামারগুলো উন্নত মানের পোনা সরবরাহ করে মৎস্য চাষীদের উপকৃত করে, যা মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
মাছ চাষীরা জানান- সরকারি খামারে তুলনামুলক রেনুর দাম কম ও মানে ভাল। তবে এ খামার থেকে চাহিদামতো রেনু না পাওয়ায় মাছ চাষীদের ভরসা বেসরকারি খামার। প্রতিকেজিতে অন্তত ৫০০-৯০০ টাকা বেশি দামে বেসরকারি খামার থেকে কার্প জাতীয় রেনু কিনতে হয়। তবে সরকারি খামারের রেনু থেকে গুনগত মানসম্পন্ন মাছ উৎপাদন হওয়ায় লাভবান চাষীরা।
সদর উপজেলার চকআবরশ গ্রামের মাছ চাষী মীর বকস বলেন- সরকারি খামারের রেনু উন্নত মানের। এ রেনু থেকে মাছ চাষ করলে মাছের স্বাস্থ্য ও বৃদ্ধি বেশি হয়। এতে দাম ভাল পাওয়া যায় এবং লাভবান হওয়া যায়।
দুবলহাটি গ্রামের আজিম উদ্দিন বলেন- সরকারি খামার থেকে কম দামে গুনগত মানসম্পন্ন ভালমানের রেনু পাওয়া যায়। এ কারণে চাষীদের কাছে চাহিদাও বেশি থাকে। তাবে চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম হয়। যদি বেশি পরিমাণ উৎপাদন হতো তাহলে মাছচাষীদের জন্য সুবিধা হতো। সরকারি খামার থেকে চাহিদা মতো রেনু না পাওয়ায় বাইরের বেসরকারি খামার থেকে বেশি দামে রেনু কিনতে হয়।
হ্যাচারি টেকনিশিয়ান ইমরান হোসেন বলেন- এ খামারে খামার ব্যবস্থাপকসহ পদসংখ্যা রয়েছে ৫ জন। এরমধ্যে পাম্প অপারেটর ও অফিস সহায়কের পদ শূন্য রয়েছে দীর্ঘদিন থেকে। জনবল কম থাকায় উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে। জনবল ও উপকরণ বাড়ানো গেলে আরো বেশি পরিমাণ রেনু উৎপাদন হবে এবং রাজস্ব বেশি আয় হতো।
মৎস্য বীজ উৎপাদন খামার ব্যবস্থাপক কৃষিবিদ মো: আব্দুল মান্নান বলেন- আমাদের প্রধান উদ্যেশ্য গুণগত মানসম্পন্ন রেনু ও পোনা উৎপাদন করা। পাশাপাশি চাষীদের উদ্বৃদ্ধ করা এবং ভাল মানের পোনা সরবরাহ করা। এছাড়াও চাষীদের প্রশিক্ষণ প্রদানসহ চাষকৃত পুকুর পরিদর্শন করা হয়। এজন্য যে মাছের বৃদ্ধি কেমন হয়েছে পুকুর পরিদর্শন করলে সেবিষয়ে ধারণা পাওয়া যায়। তবে খামারে গবেষণা করে নতুন জাত সরবরাহ করা হলে চাষীরা আরো উপকৃত হবে।
তিনি বলেন- জেলায় বেশকিছু বেসরকারি মাছের খামার (হ্যাচিং) গড়ে উঠেছে।যা আমাদের বিভাগ থেকে তদারকি করা হয়। সরকারি এবং বেসরকারি হ্যাচারি মিলে মৎস্য সম্পদ উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারছি বলে মনে করা হচ্ছে।
নওগাঁ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ ফেরদৌস আলী বলেন- মা-বাবা মাছ যদি ভাল হয় তা থেকে উৎপাদিত রেনু ভাল হবে। পদ্মা ও যমুনা সহ বিভিন্ন উৎস থেকে ভাল মানের মা মাছ সংগ্রহ করে রেনু উৎপাদন করা হয়। সরকারি খামার থেকে মাছ চাষীদের রেনু কেনার জন্য উদ্বৃদ্ধ করা হয়। এতে ভাল রেনু পেয়ে চাষীরা লাভবান ও উপকৃত হবেন।




















