নদী কনভেনশনে স্বাক্ষর না করায় উজানের দেশের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা যাচ্ছে না
- আপডেট সময় : ০২:৩০:২০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১২৪ বার পড়া হয়েছে
আন্তর্জাতিক নদী কনভেনশনে স্বাক্ষর না করার কারণে উজানের যেসব দেশ পানি দিচ্ছে না, তাদের বিরুদ্ধে জাতিসংঘে অভিযোগ করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর গ্রিন রোডের পানি ভবনে আয়োজিত এক সেমিনারে তিনি এ মন্তব্য করেন।
‘অভিন্ন নদীতে বাংলাদেশের ন্যায্য অধিকার’ শীর্ষক এই সেমিনারের আয়োজন করে বিশ্ব নদী দিবস ২০২৪ উদযাপন পরিষদ।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ১৯৯৭ সালে এই কনভেনশন হলেও ২০১৪ সালে ৩৬টি রাষ্ট্রের স্বাক্ষরের মাধ্যমে তা আইনে পরিণত হয়। কিন্তু তারপর উজানের কোনো দেশ স্বাক্ষর করেনি। এ কনভেনশনে ন্যায্যতা ও সমতার কথা বলা আছে, সেজন্য উজানের দেশ আগ্রহী না।
১৯৯৭ সালের কনভেনশন হলেও ২৭ বছর বাংলাদেশ অনুস্বাক্ষর করেনি। কেন করেনি, তা অনুসন্ধান করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখানে এতদিনে যেহেতু বাংলাদেশ স্বাক্ষর করেনি, তার নিশ্চয়ই লিখিত কিছু কারণ আছে। কেন আপত্তি উত্থাপন করা হয়েছে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে সেই কারণগুলো আসছে। সেই পদ্ধতিটা আমরা পর্যালোচনা করে দেখব।
তিনি বলেন, আমরা যখন ভাটির দেশ হিসেবে কথা বলছি, আমাদের উজানে শুধু ভারত নয়, নেপাল ও চায়না এই কনভেনশনে স্বাক্ষর করেনি। মেকং রিভার কমিশনেও স্বাক্ষর করেনি চীন। ফলে একটি ভাটির দেশ হিসেবে আমরা যখন স্বাক্ষর করব, তাৎক্ষণিকভাবে আমাদের পক্ষের ইতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরব এবং এর উপর ভিত্তি করে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমাদের অধিকারের কথাগুলো বলতে পারব। যেহেতু এটা একটি জাতিসংঘের কনভেনশন, আমরা যদি অনুস্বাক্ষর করি তাহলে জাতিসংঘকেও আমাদের কথাগুলো বলতে পারি।
প্রায় সময় একটি দাবি ওঠে আন্তর্জাতিক আদালতে যায় না কেন? এর জবাব হলো, আন্তর্জাতিক আদালতে কোনো একটা রাষ্ট্র এককভাবে যেতে পারে না। দুইটা রাষ্টকে পক্ষ হতে হয়। ইউরোপের দেশ যেতে পারে। কারণ, তাদের দেশে একটি পলিটিক্যাল ইন্টারভেনশন আছে। আমাদের দেশে নদী প্রবাহ একটি প্রাণসত্তা শুধু নয়, নদী রাজনৈতিক, নদী অর্থনৈতিক বিষয়। নদী শুধু একটি নদী নয়। নদীকে একটি জীবন্ত সত্তা হিসেবে দেখব। কিন্তু নদী নেগোশিয়েশনে উপমহাদেশে সেভাবে বিষয়টি দেখা হয়নি, উল্লেখ করেন পানিসম্পদ উপদেষ্টা।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, বলা হয় পাকিস্তান ও ভারতে মধ্যে জলরাশি ভাগাভাগি রাজনৈতিক কারণে আটকে গেছে। ফলে নদীকে আমরা একটি জীবন্ত সত্তা হিসাবে এগিয়ে নেব, সেই বাস্তবতা নেই। এ জন্য নদী নিয়ে আলোচনা করব, তার চেয়ে ভারতের সঙ্গে কী হবে সেই প্রশ্নটা করা হয়। নদী বাঁচবে বলে আমাকে যতটা প্রশ্ন করা হয়, তার চেয়ে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের কী হবে, সেই প্রশ্ন বেশি করা হয়।
নেগোশিয়েশনের দুর্বলতায় উজানের দেশগুলোর কাছ থেকে পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করার পথে প্রতিবন্ধকতা উল্লেখ করেন এই পরিবেশবিদ। তিনি বলেন, প্রথমত, জয়েন্ট রিভার কমিশন গঠন করা হয়, সেখানে সবাই প্রকৌশলী। সেখানে অন্য পেশাজীবীদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। নদী যে শুধু প্রকৌশলের বিষয় নয়, এ কারণে নেগোশিয়েশন প্রক্রিয়াতে প্রতিফলিত হয়নি। দ্বিতীয়ত হলো, আমরা নিজেরা বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে আলোচনা করি, আমরা নদী পাড়ের কথা শুনি না।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, নদীর পানি ভাগাভাগি অনেক বেশি রাজনৈতিকভাবে করা হয়। পানি ভাগাভাগির চুক্তি প্রায় হয়ে গেছে, চুক্তি স্বাক্ষর করতে যাওয়া হয়েছে, এ সময় বলা হলো স্বাক্ষর করা হবে না। পানি ভাগাভাগিতে দুই দেশের স্বার্থ নিয়ে খুব সূক্ষ্মভাবে ব্যালেন্স করতে হবে।
তিনি বলেন, কিছু ক্ষেত্রে রাজনীতি টেনের আনার প্রয়োজন নেই। যেমন বন্যার পানি বাংলাদেশে কখন প্রবেশ করবে, কী মাত্রায় প্রবেশ করবে, বৃষ্টিপাতের মাত্রা কী, বাংলাদেশে কতটুকু প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা আছে—এগুলোর তথ্য নিতান্তই মানবিক কারণে শেয়ার করতে হবে। সেখান থেকে আমরা ভারতের সঙ্গে নেগোসিয়শেন শুরু করতে চাই। সকল অভিন্ন জলরাশির ওপর বিভিন্ন কাঠামো করা হলে সেটা শুধু ভারত না বা শুধু চীন না। নেপালও নদীর উপরে কোনো কাঠামো করলে আমাদের জানতে হবে। না জানালে আমাদের পানি ব্যবস্থাপনা ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বিশ্ব নদী দিবস উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক মিহির বিশ্বাস। সঞ্চালনা করেন বাপার সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রিভার অ্যান্ড ডেলটা রিসার্চ সেন্টারের (আরডিআরসি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ। আরও বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম, অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম ইন বাংলাদেশের (এএলআরডি) নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা প্রমুখ।