ঢাকা ০৪:৪৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

নির্বিঘ্ন প্রজননে ‘মা ইলিশ রক্ষা’

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৩:৫২:৩৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৪২ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

 

ইলিশের প্রজনন শেষে ১ নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত অভয়শ্রমগুলোতে মেহেন্দী জালসহ বিভিন্ন রকমের ক্ষতিকর জাল দিয়ে যাতে ইলিশের পোনা নিধন করতে না পারে, সেজন্য কম্বিং অপারেশন পরিচালনা করে ইলিস সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্প। পরবর্তীতে ১ মার্চ থেকে ৩০ এপিল পর্যন্ত জাটকা সংরক্ষণে মৎস্য কর্মকর্তা, নৌ-পুলিশ, কোস্টগার্ড সমন্বয়ে নদীতে রাত-দিন অভিযান পরিচালনা করা হবে

 

আমিনুল হক ভূইয়া

মিঠা পানির সুস্বাদু ইলিশের অভয়াশ্রম বাংলাদেশ। জাতীয় মাছ ইলিশ হচ্ছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক সম্পদ। মা ইলিশ সংরক্ষরণ এবং অক্টোবর মাসে পূর্ণিমা তিথি ও অমবস্যা ঘিরে ইলিশের প্রজনন নির্বিঘ্ন করতে ২২ দিনের নিষিধাজ্ঞা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মূলত ইলিশের বংশ বিস্তারে এই সময়টিই হচ্ছে সূত্রপাত। পরবর্তীতে ২৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত জাটকা সংরক্ষণ রূপালী সম্পদের ভান্ডার পরিপূর্ণ করে। তাতে সাধারণ মানুষের পাতে থাকে সুস্বাদু ইলিশ। মা ইলিশ রক্ষা ও জাটকা সংরক্ষণে কয়েকটি ধাপে মাঠ পর্যায়ে কাজ করে থাকেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন মৎস্য অধিদপ্তরের ‘ইলিস সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্প’। মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযানকালে আইন লঙ্ঘনকারীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অক্টোবর মাসে ইলিশের প্রজনন শেষে ১ নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত অভয়শ্রমগুলোতে মেহেন্দী জালসহ বিভিন্ন রকমের ক্ষতিকর জাল দিয়ে যাতে ইলিশের পোনা নিধন করতে না পারে, সেজন্য কম্বিং অপারেশন পরিচালনা করে ইলিস সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্প। পরবর্তীতে ১ মার্চ থেকে ৩০ এপিল পর্যন্ত জাটকা সংরক্ষণে মৎস্য কর্মকর্তা, নৌ-পুলিশ, কোস্টগার্ড সমন্বয়ে নদীতে রাত-দিন অভিযান পরিচালনা করা হবে। গবেষকরা জানান, ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে তুলনামূলক ছোট আকারের আরও একটি প্রজনন মৌসুম রয়েছে। এসময় যেহেতু নদী ঘিরে মৎস্য অধিদপ্তরের ব্যাপক তৎপরতা থাকে, তাতে ইলিশের পোনা বেড়ে ওঠার সুযোগ পায়। মা ইলিশ রক্ষা ও জাটকা সংরক্ষণে বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, লক্ষীপুর ও শরীয়তপুরে ৬টি অভয়াশ্রম ঘিরে মাইকিং, মাছ ঘাট, জেলে ও সাধারণ মানুষদের নিয়ে জনসচেতনতামূলক কর্মসূচির পাশাপাশি প্রচারপত্র ও পোস্টার বিলি করা হয়ে থাকে। ৬টি জেলার ২৪টি উপজেলায় ব্যাপক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে ইলিশ ও জাটকা রক্ষায় কাজ করে থাকে মৎস্য অধিদপ্তর। জাতীয় পর্যায়ে অর্থনৈতিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে ইলিশের। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি আসে ইলিশ থেকে। মোট মৎস্য উৎপাদনের ১২ শতাংশই হচ্ছে ইলিশ।

জাতীয় ট্রাক্সফোর্স কমিটির বৈঠক

ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রধান প্রজনন মৌসুমে ইলিশ আহরণ বন্ধের সময় নির্ধারণ এবং মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান-২০২৪ বাস্তবায়নে ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত জাতীয় ট্রাক্সফোর্স কমিটির বৈঠক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে রোববার বেলা ১১টায় অনুষ্ঠিত হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন অন্তর্বর্তী সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।

জেলেদের সহায়তা

ইলিশের সহনশীল উৎপাদন অব্যাহত রাখতে মা ইলিশ রক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মা ইলিশ রক্ষায় ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। ২২দিনের নিষেধাজ্ঞাকালীন সাড়ে ৫ লাখ জেলেকে ২৫ কেজি করে চাল সহায়তা দেওয়া হয়ে থাকে। অপর দিকে জাটকা সংরক্ষণে নিষেধাজ্ঞাকালীন (ফেব্রুয়ারি থেকে মে) চার মাস প্রায় সাড়ে ৩ লাখ জেলেকে জনপ্রতি ৪০ কেজি করে চাল সহায়তা দেওয়া হয়।

প্রকল্প থেকে সহায়তা

ইলিস সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের পরিচালক মোল্লা এমদাদুল্যাহ বলেন, ইলিশ মূলত সারা বছর কমবেশি ডিম ছাড়লেও অক্টোবর হচ্ছে ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম। এই সময়েই প্রায় ৮০ শতাংশ ইলিশ ডিম ছাড়ে। ইলিশ মাছ প্রজননের ক্ষেত্রে চন্দ্রনির্ভর আবর্তন অনুসরণ করা হয়। প্রতিবছর আশ্বিন মাসের প্রথম উদিত চাঁদের পূর্ণিমার আগের চার দিন, পরের ১৭ দিন এবং পূর্ণিমার দিনসহ মোট ২২ দিন নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকে। নিষেধাজ্ঞাকালীন দেশজুড়ে ইলিশ আহরণ, পরিবহন, মজুদ, বাজারজাতকরণ, ক্রয়-বিক্রয় ও বিপণন নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয়। মোল্লা এমদাদুল্যাহ বলেন, দেশে ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধিতে সর্বসাধারণ বিশেষ করে জেলে, মৎস্যজীবী সম্প্রদায় ও ইলিশের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যবসায়ী, আড়তদার, বরফকল মালিক, বোট মালিক, দাদনদার, ভোক্তাসহ সবাইকে নিয়ে সচেতন ও উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচি পরিচালনা করা হয়। একই সঙ্গে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে বিষয়টিকে সামাজিক আন্দোলনে রূপ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়ে থাকে। আর এ প্রচারের কাজটি সর্বাধিক করে থাকে মন্ত্রণালয়ের অধীন মৎস্য অধিদপ্তর। জাটকা রক্ষায় ইলিশের ৬টি অভয়াশ্রমের মধ্যে ৪৩২ কিলোমিটার আয়তনের পাঁচটিতে মার্চ-এপ্রিল মাছ ধরা বন্ধ।

বিকল্প কর্মসংস্থান

ইলিস সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্প ৩১ হাজার ৭০০ জেলে পরিবারকে বিকল্প কর্মসংস্থানের আওতায় আনা হয়েছে। এর মধ্যে ১৭ হাজার ৩০০ জেলে পরিবারকে চাহিদার ভিত্তিতে বিকল্প কর্মস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে বগনা বাছুর প্রদান করা হয়। এসব জেলে পরিবারকে বাছুর লালন-পালনে প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়।

৬টি অভয়াশ্রম

৬টি অভয়াশ্রম হচ্ছে, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর ও শরীয়তপুর। বাংলাদেশে ইলিশের প্রজনন ক্ষেত্রের চারটি পয়েন্ট চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রায় ৭ হাজার বর্গকিলোমিটার উপকূলীয় এলাকাজুড়ে চারটি পয়েন্ট হচ্ছে, মিরসরাই, চট্টগ্রামের মায়ানি, তজুমদ্দিন ও ভোলার পশ্চিমে সৈয়দ আওলিয়া, কুতুবদিয়া ও কক্সবাজারের উত্তর কুতুবদিয়া এবং পটুয়াখালীর কলাপাড়া ও লতাচাপালী পয়েন্ট ছাড়াও নদ-নদীতে এই নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকে। এসময় আইন অমান্যকারীকে কমপক্ষে এক বছর থেকে সর্বোচ্চ দুই বছর সশ্রম কারাদন্ড অথবা ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত করার বিধান রয়েছে। বর্তমানে ইলিশ ধরায় সরাসরি দেশের প্রায় ৬ লাখ জেলে নিয়োজিত।

প্রায় ২৫-৩০ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা

বাংলাদেশের উপকূল অঞ্চলের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ২৫-৩০ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা ইলিশের ওপর নির্ভরশীল। ইলিশ শুধু জাতীয় মাছ ও সম্পদ নয়। বহু মানুষের জীবন-জীবিকা ইলিশের ওপর নির্ভর করে। উপকূলীয় মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের প্রায় পাঁচ লাখ লোক ইলিশ আহরণে সরাসরি জড়িত। পাশাপাশি ২০ থেকে ২৫ লাখ লোক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ইলিশ পরিবহন, বিক্রয়, জাল ও নৌকা তৈরি, বরফ উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, রপ্তানি ইত্যাদির সঙ্গে জড়িত। ইলিশ মাছের চাহিদা রয়েছে পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই। জাতীয় মাছ ইলিশের মোট উৎপাদনের ৮০ শতাংশই বাংলাদেশে উৎপাদিত হয়ে থাকে। নিজেদের স্বার্থেই সম্ভাবনার ইলিশকে রক্ষা করতে হবে। ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই ৬৫ দিনের জন্য বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকে। তাতে সমুদ্রে ইলিশের পাশাপাশি অন্যান্য সামুদ্রিক প্রজাতির মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, প্রশাসন ও বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ইলিশ ব্যবস্থাপনা কৌশল মাঠ পর্যায়ে সঠিকভাবে বাস্তবায়নে দেশব্যাপী ইলিশের বিস্তৃতি ও উৎপাদন বাড়ছে। প্রকল্প পরিচালক বলেন, একটি ইলিশ একসঙ্গে কমপক্ষে ২ লাখ ও সর্বোচ্চ ১৮ লাখ ডিম ছাড়ে। এসব ডিমের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ ফুটে রেণু ইলিশ হয়। এর সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ শেষ পর্যন্ত টিকে থাকে, যা পরবর্তী সময়ে ইলিশে রূপান্তরিত হয়।

 

 

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

নির্বিঘ্ন প্রজননে ‘মা ইলিশ রক্ষা’

আপডেট সময় : ০৩:৫২:৩৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

 

ইলিশের প্রজনন শেষে ১ নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত অভয়শ্রমগুলোতে মেহেন্দী জালসহ বিভিন্ন রকমের ক্ষতিকর জাল দিয়ে যাতে ইলিশের পোনা নিধন করতে না পারে, সেজন্য কম্বিং অপারেশন পরিচালনা করে ইলিস সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্প। পরবর্তীতে ১ মার্চ থেকে ৩০ এপিল পর্যন্ত জাটকা সংরক্ষণে মৎস্য কর্মকর্তা, নৌ-পুলিশ, কোস্টগার্ড সমন্বয়ে নদীতে রাত-দিন অভিযান পরিচালনা করা হবে

 

আমিনুল হক ভূইয়া

মিঠা পানির সুস্বাদু ইলিশের অভয়াশ্রম বাংলাদেশ। জাতীয় মাছ ইলিশ হচ্ছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক সম্পদ। মা ইলিশ সংরক্ষরণ এবং অক্টোবর মাসে পূর্ণিমা তিথি ও অমবস্যা ঘিরে ইলিশের প্রজনন নির্বিঘ্ন করতে ২২ দিনের নিষিধাজ্ঞা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মূলত ইলিশের বংশ বিস্তারে এই সময়টিই হচ্ছে সূত্রপাত। পরবর্তীতে ২৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত জাটকা সংরক্ষণ রূপালী সম্পদের ভান্ডার পরিপূর্ণ করে। তাতে সাধারণ মানুষের পাতে থাকে সুস্বাদু ইলিশ। মা ইলিশ রক্ষা ও জাটকা সংরক্ষণে কয়েকটি ধাপে মাঠ পর্যায়ে কাজ করে থাকেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন মৎস্য অধিদপ্তরের ‘ইলিস সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্প’। মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযানকালে আইন লঙ্ঘনকারীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অক্টোবর মাসে ইলিশের প্রজনন শেষে ১ নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত অভয়শ্রমগুলোতে মেহেন্দী জালসহ বিভিন্ন রকমের ক্ষতিকর জাল দিয়ে যাতে ইলিশের পোনা নিধন করতে না পারে, সেজন্য কম্বিং অপারেশন পরিচালনা করে ইলিস সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্প। পরবর্তীতে ১ মার্চ থেকে ৩০ এপিল পর্যন্ত জাটকা সংরক্ষণে মৎস্য কর্মকর্তা, নৌ-পুলিশ, কোস্টগার্ড সমন্বয়ে নদীতে রাত-দিন অভিযান পরিচালনা করা হবে। গবেষকরা জানান, ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে তুলনামূলক ছোট আকারের আরও একটি প্রজনন মৌসুম রয়েছে। এসময় যেহেতু নদী ঘিরে মৎস্য অধিদপ্তরের ব্যাপক তৎপরতা থাকে, তাতে ইলিশের পোনা বেড়ে ওঠার সুযোগ পায়। মা ইলিশ রক্ষা ও জাটকা সংরক্ষণে বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, লক্ষীপুর ও শরীয়তপুরে ৬টি অভয়াশ্রম ঘিরে মাইকিং, মাছ ঘাট, জেলে ও সাধারণ মানুষদের নিয়ে জনসচেতনতামূলক কর্মসূচির পাশাপাশি প্রচারপত্র ও পোস্টার বিলি করা হয়ে থাকে। ৬টি জেলার ২৪টি উপজেলায় ব্যাপক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে ইলিশ ও জাটকা রক্ষায় কাজ করে থাকে মৎস্য অধিদপ্তর। জাতীয় পর্যায়ে অর্থনৈতিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে ইলিশের। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি আসে ইলিশ থেকে। মোট মৎস্য উৎপাদনের ১২ শতাংশই হচ্ছে ইলিশ।

জাতীয় ট্রাক্সফোর্স কমিটির বৈঠক

ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রধান প্রজনন মৌসুমে ইলিশ আহরণ বন্ধের সময় নির্ধারণ এবং মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান-২০২৪ বাস্তবায়নে ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত জাতীয় ট্রাক্সফোর্স কমিটির বৈঠক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে রোববার বেলা ১১টায় অনুষ্ঠিত হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন অন্তর্বর্তী সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।

জেলেদের সহায়তা

ইলিশের সহনশীল উৎপাদন অব্যাহত রাখতে মা ইলিশ রক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মা ইলিশ রক্ষায় ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। ২২দিনের নিষেধাজ্ঞাকালীন সাড়ে ৫ লাখ জেলেকে ২৫ কেজি করে চাল সহায়তা দেওয়া হয়ে থাকে। অপর দিকে জাটকা সংরক্ষণে নিষেধাজ্ঞাকালীন (ফেব্রুয়ারি থেকে মে) চার মাস প্রায় সাড়ে ৩ লাখ জেলেকে জনপ্রতি ৪০ কেজি করে চাল সহায়তা দেওয়া হয়।

প্রকল্প থেকে সহায়তা

ইলিস সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের পরিচালক মোল্লা এমদাদুল্যাহ বলেন, ইলিশ মূলত সারা বছর কমবেশি ডিম ছাড়লেও অক্টোবর হচ্ছে ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম। এই সময়েই প্রায় ৮০ শতাংশ ইলিশ ডিম ছাড়ে। ইলিশ মাছ প্রজননের ক্ষেত্রে চন্দ্রনির্ভর আবর্তন অনুসরণ করা হয়। প্রতিবছর আশ্বিন মাসের প্রথম উদিত চাঁদের পূর্ণিমার আগের চার দিন, পরের ১৭ দিন এবং পূর্ণিমার দিনসহ মোট ২২ দিন নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকে। নিষেধাজ্ঞাকালীন দেশজুড়ে ইলিশ আহরণ, পরিবহন, মজুদ, বাজারজাতকরণ, ক্রয়-বিক্রয় ও বিপণন নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয়। মোল্লা এমদাদুল্যাহ বলেন, দেশে ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধিতে সর্বসাধারণ বিশেষ করে জেলে, মৎস্যজীবী সম্প্রদায় ও ইলিশের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যবসায়ী, আড়তদার, বরফকল মালিক, বোট মালিক, দাদনদার, ভোক্তাসহ সবাইকে নিয়ে সচেতন ও উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচি পরিচালনা করা হয়। একই সঙ্গে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে বিষয়টিকে সামাজিক আন্দোলনে রূপ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়ে থাকে। আর এ প্রচারের কাজটি সর্বাধিক করে থাকে মন্ত্রণালয়ের অধীন মৎস্য অধিদপ্তর। জাটকা রক্ষায় ইলিশের ৬টি অভয়াশ্রমের মধ্যে ৪৩২ কিলোমিটার আয়তনের পাঁচটিতে মার্চ-এপ্রিল মাছ ধরা বন্ধ।

বিকল্প কর্মসংস্থান

ইলিস সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্প ৩১ হাজার ৭০০ জেলে পরিবারকে বিকল্প কর্মসংস্থানের আওতায় আনা হয়েছে। এর মধ্যে ১৭ হাজার ৩০০ জেলে পরিবারকে চাহিদার ভিত্তিতে বিকল্প কর্মস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে বগনা বাছুর প্রদান করা হয়। এসব জেলে পরিবারকে বাছুর লালন-পালনে প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়।

৬টি অভয়াশ্রম

৬টি অভয়াশ্রম হচ্ছে, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর ও শরীয়তপুর। বাংলাদেশে ইলিশের প্রজনন ক্ষেত্রের চারটি পয়েন্ট চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রায় ৭ হাজার বর্গকিলোমিটার উপকূলীয় এলাকাজুড়ে চারটি পয়েন্ট হচ্ছে, মিরসরাই, চট্টগ্রামের মায়ানি, তজুমদ্দিন ও ভোলার পশ্চিমে সৈয়দ আওলিয়া, কুতুবদিয়া ও কক্সবাজারের উত্তর কুতুবদিয়া এবং পটুয়াখালীর কলাপাড়া ও লতাচাপালী পয়েন্ট ছাড়াও নদ-নদীতে এই নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকে। এসময় আইন অমান্যকারীকে কমপক্ষে এক বছর থেকে সর্বোচ্চ দুই বছর সশ্রম কারাদন্ড অথবা ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত করার বিধান রয়েছে। বর্তমানে ইলিশ ধরায় সরাসরি দেশের প্রায় ৬ লাখ জেলে নিয়োজিত।

প্রায় ২৫-৩০ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা

বাংলাদেশের উপকূল অঞ্চলের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ২৫-৩০ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা ইলিশের ওপর নির্ভরশীল। ইলিশ শুধু জাতীয় মাছ ও সম্পদ নয়। বহু মানুষের জীবন-জীবিকা ইলিশের ওপর নির্ভর করে। উপকূলীয় মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের প্রায় পাঁচ লাখ লোক ইলিশ আহরণে সরাসরি জড়িত। পাশাপাশি ২০ থেকে ২৫ লাখ লোক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ইলিশ পরিবহন, বিক্রয়, জাল ও নৌকা তৈরি, বরফ উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, রপ্তানি ইত্যাদির সঙ্গে জড়িত। ইলিশ মাছের চাহিদা রয়েছে পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই। জাতীয় মাছ ইলিশের মোট উৎপাদনের ৮০ শতাংশই বাংলাদেশে উৎপাদিত হয়ে থাকে। নিজেদের স্বার্থেই সম্ভাবনার ইলিশকে রক্ষা করতে হবে। ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই ৬৫ দিনের জন্য বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকে। তাতে সমুদ্রে ইলিশের পাশাপাশি অন্যান্য সামুদ্রিক প্রজাতির মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, প্রশাসন ও বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ইলিশ ব্যবস্থাপনা কৌশল মাঠ পর্যায়ে সঠিকভাবে বাস্তবায়নে দেশব্যাপী ইলিশের বিস্তৃতি ও উৎপাদন বাড়ছে। প্রকল্প পরিচালক বলেন, একটি ইলিশ একসঙ্গে কমপক্ষে ২ লাখ ও সর্বোচ্চ ১৮ লাখ ডিম ছাড়ে। এসব ডিমের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ ফুটে রেণু ইলিশ হয়। এর সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ শেষ পর্যন্ত টিকে থাকে, যা পরবর্তী সময়ে ইলিশে রূপান্তরিত হয়।