পরিবহনের ট্রেডমার্ক চাঁদাবাজ খানের ৬ হাজার কোটি টাকার চাঁদা বাণিজ্য
- আপডেট সময় : ০৯:২২:০০ অপরাহ্ন, রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ৮৭ বার পড়া হয়েছে
‘বিগত ৪ বছরে ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি চাঁদাবাজি হয়েছে। সড়ক পরিবহনে সংগঠন পরিচালনা ব্যয় সংক্রান্ত নির্দেশিকা প্রণয়ন করে, এই চাঁদাবাজিকে বৈধতাও দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ সড়কে চাঁদাবাজিকে প্রাতিষ্ঠনিক রূপ দিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাজাহান খান, সড়কের পাশাপাশি গার্মেন্ট শ্রমিকদের সংগঠনের সমন্বয়ে ফেডারেশন এবং সেক্টর কর্পোরেশন-ব্যাংক পাড়ায়ও তার চাঁদাবাজির সংগঠনের বিস্তার করেন’
বিশেষ প্রতিনিধি
মন্ত্রী হবার পরও পরিবহন শ্রমিকের পরিচয় ত্যাগ করেননি। বরং চাঁদাবাজি, দলবাজি, দখলবাজি চালিয়েছেন সমানতালে। প্রথমত একজন শ্রমিক তারপর শ্রমিক নেতা শাহজাহান খান। পরিবহন সেক্টরের ট্রেডমার্ক চাঁদাবাজ। আশির দশকে ফুলবাড়িয়া, মহাখালি, সায়দাবাদ ও গাবতলী টার্মিনাল নির্মাণ করা হয়। সে সময় এসব টার্মিনাল থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে প্রতিটি যানবাহন থেকে ১০ টাকা করে আদায় হতো শাহজাহান খানের সংগঠনের নামে। সময়ের পিঠ বেয়ে চাঁদার পরিমাণ বাড়তে থাকে। এক সময়ের পরিবহন শ্রমিক ও নেতা শাহজাহান খান হাত বাড়ায় গার্মেন্টস সেক্টরে।
পরিবহন শ্রমিক নেতা থেকে শাজাহান খান হাত বাড়ান পোশাক শ্রমিক সংগঠনগুলোর দিকে। ২০১৩ সালে শাহাজান খানের নেতৃত্বে ৫২টি গার্মেন্টস শ্রমিক সংগঠন সমন্বয়ে গঠন করা হয় শ্রমিক ফেডারেশন।
অভিযোগ বর্তমানে আশুলিয়া ও গাজীপুরে পোশাক কারখানা ঘিরে যে ষড়যন্ত্র ও অরাকতা চলছে, তার পেছনেও শাহজাহান খানের গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের লোকজন জড়িত থাকতে পারে। তাছাড়া আওয়ামী পন্থী সুবিধাভোগী পোশাকখাতের কতিপয় উদ্যোগক্তাদেরও হাত থাকতে পারে।
শাহজাহান খানের মালিকাধীন সার্বিক পরিবহনের বাসের বহর : ছবি সংগ্রহ
শাজাহান খানের উত্থান
শাজাহান খানের উত্থান ১৯৭২ সালে জানুয়ারি মাসে মাদারীপুর জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি হন। সে বছরই বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক হন। এরপর ১৯৮০ সালে ফেডারেশনের যুগ্ম সম্পাদক ও ১৯৯৪ সালে কার্যকরী সভাপতি নির্বাচিত হন। সবগুলো সংগঠনের পদ দখলের অভিযোগও রয়েছে।
সড়কে চাঁদাবাজির ইজারাদার শাহজাহান খান
গত ৪ বছরে বাণিজ্যিক যানবাহন থেকে ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি চাঁদাবাজি হয়েছে। সড়ক পরিবহনে সংগঠন পরিচালনা ব্যয় সংক্রান্ত নির্দেশিকা প্রণয়ন করে এই চাঁদাবাজিকে বৈধতাও দেওয়া হয়েছে। সড়কে চাঁদাবাজিকে প্রাতিষ্ঠনিক রূপ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাজাহান খানের বিরুদ্ধে। ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত ২৪৯ শ্রমিক ইউনিয়নের মাধ্যমে চাঁদা তোলা হতো। এর একটি বড় অংশ নিয়মিত আসতো শাজাহান খানের পকেটে। ফেডারেশনের শীর্ষ নেতা হওয়ার সুবাদে পরিবহন মালিক সমিতির অপর প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে নিয়ে সড়ক থেকে কোটি কোটি টাকা চাঁদাবাজি করেছেন মি. খান।
পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের শীর্ষ নেতা হওয়ায় শাজাহান খানের জন্য সড়কে চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ সহজ হয়। পরিবহন শ্রমিক নেতা মোহাম্মদ হানিফ খোকন বলেন, শাজাহান খানের নির্দেশে পুরো পরিবহন খাত চলত। তার ইশারায় পরিবহন বন্ধ বা চালু থাকত। পরিবহন শ্রমিকদের উন্নয়নে কোনো অবদানই ছিল না তার। প্রতিদিন সড়ক থেকে ৫ কোটির বেশি টাকা তুলত তার ফেডারেশন। কিন্তু সেসব টাকা শ্রমিকদের কোনো কাজেই আসত না। শ্রমিক নেতার অভিযোগ, শাজাহান খান তার ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলীকে নিয়ে সারা দেশে পরিবহন খাতকে চাঁদাবাজির স্বর্গরাজ্য বানিয়েছেন।
ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির আহ্বায়ক সাইফুল আলম সংবাদমাধ্যমকে বলেন, বাস মালিকদের জিম্মি করে রাখতেন শাজাহান খান। তার জন্য সড়কে চাঁদাবাজি কোনোভাবেই ঠেকানো যেত না। তখনকার বাস মালিক নেতাদের সঙ্গে আঁতাত করে পরিবহন খাতকে নাজেহাল করেছেন তিনি। ফেডারেশনকে তার ইচ্ছেমতো ব্যবহার করেছেন। পরিবহন খাতে নৈরাজ্যের জন্য দায়ীদের মধ্যে শাজাহান খান অন্যতম বলে দাবি সাইফুল আলমের।
পরিবহন শ্রমিক নেতা থেকে শাজাহান খান হাত বাড়ান পোশাক শ্রমিক সংগঠনগুলোর দিকে। ২০১৩ সালে ৫২টি গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সমন্বয়ে গঠন করা হয় গার্মেন্টস শ্রমিক সমন্বয় পরিষদ। এরও প্রধান তিনি। গার্মেন্টসগুলো থেকেও তার নামে মোটা অংকের চাঁদা তোলা হতো।
সড়ক পরিবহন আইনের বিরোধিতা : ২০১৮ সালে ঢাকায় বাসচাপায় দুই কলেজ শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনায় নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনের সময় সড়ক পরিবহন শ্রমিক নেতা শাজাহান খান বিতর্কিত মন্তব্য করে সমালোচিত হন। ওই বছর সাজা কঠোর করে ও জরিমানার পরিমাণ বাড়িয়ে সড়ক পরিবহন আইন পাস হয়। তাকে রেখে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে কমিটি করা হয়, যা নিয়ে তখন ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে।
শ্রমিকদের সংগঠিত গুন্ডবাহিনী হিসাবে ব্যবহার
অভিযোগ রয়েছে, শাহজাহান খান পরিবহন শ্রমিকদের ‘আওয়ামী গুন্ডাবাহিনীতে পরিণত করে।’ তার নির্দেশের বাইরে কোন শ্রমিক অবস্থান নিলেই হতো নির্যাতনের শিকার। শাজাহান খান বাহিনীর কাছে বছরের পর বছর জিম্মি ছিলেন পরিবহন মালিকরা। বিগত সময়ে বিএনপি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিসহ অন্যান্য দাবিতে বৃহৎ পরিসরে আন্দোলনের ডাক দিলেই বন্ধ হয়ে গেছে সড়কের যান চলাচল। এর নেপথ্যেও ছিলেন এই শাজাহান খান। সড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কঠোর শাস্তির বিধান রেখে সড়ক পরিবহন আইন প্রণয়নের অন্যতম বাধাও ছিলেন তিনি।
নির্বাচনী হলফনামায় দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০০৮ সালে শাজাহান খানের বার্ষিক আয় ছিল ৬ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। ২০২৪ সালে তা বেড়ে হয়েছে ২ কোটি ২১ লাখ টাকা। এ সময়ে তার আয় বেড়েছে প্রায় ৩২ গুণ।
পরিবহন শ্রমিক নেতা মোহাম্মদ হানিফ খোকন বলেন, সড়ক পরিবহন আইনে রাস্তা থেকে চাঁদা তোলার কোনো বিধান নেই। এরপরও পরিবহন খাতে বেপরোয়া চাঁদাবাজির নেতৃত্বে ছিলেন শাজাহান খান। বিভিন্ন টার্মিনাল, উপজেলা পর্যায়ে চাঁদা তুলে পাঁচ ভাগের এক ভাগ বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের নামে গেছে। এই ফেডারেশনের সবকিছুই চলেছে শাজাহান খানের ইশারায়। ২০০৯ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত পরিবহন সেক্টরে ১২ হাজার কোটি টাকা চাঁদাবাজি করেছেন শাজাহান খানের লোকজন।
তিনি আরও বলেন, শাজাহান খান ও সহযোগীরা ক্ষমতার অপব্যবহার করে পরিবহনে চাঁদাবাজির স্বর্গরাজ্য গড়ে তুলেছিলেন। চাঁদাবাজির আয়ে পরিবার, পরিজন, আত্মীয়স্বজনের নামে তারা বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ ও সম্পদ করেছেন। বর্তমান অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে আমাদের আবেদন, অনতিবিলম্বে তদন্ত করে এসব অবৈধ সম্পত্তি জব্দ করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়া হোক।
খালেদার বাসার সামনে বালু বোঝাই ট্রাক
২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর মার্চ ফর ডেমোক্রেসি ডাক দেয় বিরোধী দল তথা বিএনপি। এই কর্মসূচি ঘোষণার পর থেকে বিরোধীদলীয় নেতার বাসার সামনে পুলিশি নিরাপত্তার সঙ্গে জলকামান ও বালুর বোঝাই ট্রাক দিয়ে অবরুদ্ধ করা হয়। তখন থেকেই বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা বাসার ভেতরে যেতে পারেনি। বালু বোঝাই ট্রাক দিয়ে খালেদা জিয়া বাসভবন অবরুদ্ধ করার নেপথ্যের কারিগর হিসাবেও শাহজাহান খানের নাম ওঠে আসে। অভিযোগ তার নির্দেশেই বালু বোঝাই ট্রাক বিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার বাস ভবন অবরুদ্ধ করা হয়।
বিরোধী আন্দোলন ঠেকাতে গণপরিবহন ধর্মঘট
বিগত সময়ে বিএনপি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিসহ অন্যান্য দাবিতে বৃহৎ পরিসরে আন্দোলনের ডাক দিলেই বন্ধ করে দেওয়া হতো যান চলাচল। শাহজাহান খানের নির্দেশেই ধর্মঘট পালন করতো পরিবহন শ্রমিক। বিরোধী দলের সমাবেশে লোকের সমাগম ঠেকাতে পরিকল্পিতভাবে শাহজাহান খান শ্রমিকদের ব্যবহার করে ধর্মঘট পালন করতেন। বিনিময়ে বাহবা পেতেন মেখ হাসিনার।
সড়ক পরিবহন আইনের বিরোধিতা
২০১৮ সালে ঢাকায় বাসচাপায় দুই কলেজ শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনায় নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনের সময় সড়ক পরিবহন শ্রমিক নেতা শাজাহান খান বিতর্কিত মন্তব্য করে সমালোচিত হন। শিক্ষার্থীরা রাজপথে আন্দোলনে নামে। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় সড়ক দুর্ঘটনার জেরে ছাত্র-জনতার নিরাপদ সড়কের দাবিতে করা আন্দোলনেরও সমালোচনা করেছেন শাজাহান খান।
সড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কঠোর শাস্তির বিধান রেখে সড়ক পরিবহন আইন প্রণয়নের অন্যতম বাধা ছিলেন তিনি। অভিযোগ রয়েছে, এই শ্রমিক নেতার ঘোর বিরোধিতার কারণে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে পারেনি আওয়ামী লীগ সরকার। ২০১১ সালের ১৮ আগস্ট নৌ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে তৎকালীন নৌমন্ত্রী শাজাহান খান বলেছিলেন, অশিক্ষিত চালকদেরও লাইসেন্স দেওয়া দরকার। কারণ তারা সিগন্যাল চেনে, গরু-ছাগল চেনে, মানুষ চেনে। সুতরাং তাদের লাইসেন্স দেওয়া যায়। তার এমন বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রচার হলে সর্বমহলে তীব্র সমালোচনা হয়।
চাঁদাবাজির খতিয়ান
সূত্রের খবর, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরপরই পরিবহন খাতে অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে শাজাহান খান। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত পরিবহন খাতে একচ্ছত্র প্রভাব ছিল তার। ২০০৯ সাল থেকে সড়কে বিক্ষিপ্ত আকারে নানা অঙ্কের চাঁদা তোলা হতো। করোনাকালে কিছু দিন গণপরিবহন চলাচল বন্ধ ছিল। পরে ২০২০ সালের ১ জুন থেকে গণপরিবহন চালুর সিদ্ধান্ত হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থানের কারণে ২০২০ সালের জুন, জুলাই ও আগস্ট এই ৩ মাস সড়কে তোলাবাজি বন্ধ খাকে। এ সময় চাঁদা তোলার নতুন ফন্দি আঁটা হয়। প্রণয়ন করা হয় সড়ক পরিবহন সংগঠন পরিচালনা ব্যয় বা সার্ভিস চার্জসংক্রান্ত নির্দেশিকা। এ নির্দেশিকা প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত ছিল বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি, সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন, বাস ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতি।
নির্দেশিকার ৪১টি ধারায় সড়কে চাঁদাবাজি প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি পায়। নির্দেশিকায় ঢাকা মহানগর এলাকা ও শহরতলিতে কে কোথায় চাঁদা তুলবে, আন্তঃজেলায় চলা যানবাহনে ঢাকার কোন স্পটে কারা চাঁদা তুলবে, তা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়নগুলোর চাঁদা তোলার বিষয়ে বিস্তারিত বলা হয়েছে নির্দেশিকায়। নির্দেশিকা অনুযায়ী প্রতিদিন একটি বাণিজ্যিক যানবাহন থেকে একবার ৫০ টাকা হারে চাঁদা তোলার কথা। কিন্তু বাস্তবে একদিনে ১৫ থেকে ২০ বারও চাঁদা দিতে হচ্ছে এসব যানবাহনকে।
বিআরটিএ সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত দেশে নিবন্ধিত বাণিজ্যিক যানবাহনের সংখ্যা ৮ লাখ ৫৭ হাজার ৭৫৩টি। এসব যানবাহন থেকে দিনে একবার করে ৫০ টাকা হারে চাঁদা তোলা হলেও এর পরিমাণ দাঁড়ায় ৪ কোটি ২৮ লাখ ৮৭ হাজার ৬৫০ টাকা। এ হিসাবে নির্দেশিকা প্রণয়নের পর ২০২০ সালের ১০ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৪ সালের ৩১ জুলাই পর্যন্ত শুধু বিআরটিএর নিবন্ধিত বাণিজ্যিক যানবাহন থেকে ৬ হাজার ৯৪ কোটি ৩৩ লাখ ৫০ হাজার ৬৫০ টাকা চাঁদা তোলা হয়েছে।
ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির আহ্বায়ক সাইফুল আলম বলেন, ২০০৯ সালের পর থেকে শাজাহান খানের নামে পরিবহন খাতে ব্যাপক চাঁদাবাজি শুরু হয়। টার্মিনালসহ বিভিন্ন স্থানে পরিবহনের লোকের বাইরে তার (শাজাহান খান) লোকেরা রাজনৈতিক প্রভাবে চাঁদাবাজি করেছেন।
সূত্র জানায়, ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে দেওয়া হলফনামা অনুযায়ী, শাজাহান খানের বার্ষিক আয় ছিল ৬ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে দেওয়া হলফনামায় তিনি আয় দেখিয়েছেন ২ কোটি ২১ লাখ টাকা। অর্থাৎ তার আয় বেড়ে প্রায় ৩২ গুণ হয়েছে। ২০০৮ সালে শাজাহান খানের অস্থাবর সম্পদ ছিল প্রায় ৫৭ লাখ টাকার। এখন তা দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৮৫ লাখ টাকায় (আসবাব, ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম ও বন্দুকের দাম বাদে)। অর্থাৎ তার অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে পাঁচগুণ। মাদারীপুর-২ আসন থেকে ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন শাজাহান খান। একই আসন থেকে তিনি পরের নির্বাচনগুলোতেও প্রার্থী হন।
শাজাহানের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সার্বিক কনস্ট্রাকশন, সার্বিক শিপিং লাইন চট্টগ্রাম, সার্বিক ফুড ভিলেজ (সার্বিক হোটেল) সবকিছুই তার পরিবারের সদস্যদের নামে। বিশেষ করে ঢাকা-মাদারীপুর রুটের সার্বিক পরিবহন কোম্পানিতে একক আধিপত্য তার। এ পরিবহনের ব্যানারে ২০০টির বেশি গাড়ি চলাচল করত। এ পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক করেছিলেন তার ছেলেকে।