পশ্চিমতীরে এক হাজার অবৈধ বসতি নির্মাণ করবে ইসরায়েল

- আপডেট সময় : ০২:৪৫:৪৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ ১০৮ বার পড়া হয়েছে
ফিলিস্তিন ভুখন্ডের অধিকৃত পশ্চিমতীরে প্রায় এক হাজার অতিরিক্ত ইহুদি বসতি নির্মাণ করতে যাচ্ছে ইসরায়েল। এরইমধ্যে তারা দরপত্রও ডেকেছে সেখানে। হামাসের সঙ্গে চলমান যুদ্ধবিরতি চুক্তির মাঝেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। স্থানীয় সময় গতকাল সোমবার এক বিবৃতিতে এমন তথ্য জানিয়েছে পিস নাউ নামের অবৈধ বসতিস্থাপনবিরোধী একটি সংস্থা। শান্তিবাদী এই সংগঠনটির তথ্যমতে, ইসরায়েলের এই পরিকল্পনাতে অঞ্চলটিতে তাদের অবৈধ বসতি ৪০% বাড়বে। নতুন করে ৯৭৪টি আবাসন ইউনিট স্থাপনের ফলে ফিলিস্তিনি শহর বেথেলহামের উন্নয়নে আরও বাধা সৃষ্টি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই বসতিস্থাপন পরিকল্পনার পর্যবেক্ষণ শাখার প্রধান হাগিত ওফরান বলেন, নির্মাণ সংক্রান্ত চুক্তিটি অনুমোদন শেষে কাজ শুরু হবে। এতে অন্তত আরও এক বছর সময় লাগতে পারে।
১৯৬৭ সালে তৃতীয় আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে পশ্চিমতীর, গাজা উপত্যকা ও পূর্ব জেরুসালেম দখল করে নেয় ইসরায়েল। ফিলিস্তিনিরা তাদের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রের জন্য এই তিন অঞ্চলের অধিকার ফিরে পেতে চায়। এই বসতিগুলোকে তারা শান্তির পথে বড় বাধা হিসেবে গণ্য করে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথম মেয়াদে ক্ষমতায় থাকাকালীন এই অবৈধ বসতি স্থাপনে নিরঙ্কুশ সমর্থন দিয়েছেন। বাইডেন প্রশাসনের সময়েও বসতিস্থাপন অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। দ্বিতীয় মেয়াদে শুধু ইসরায়েলকে সমর্থনই নয় বরং কয়েক ধাপ এগিয়ে নিজেই গাজা দখল করতে চেয়েছেন ট্রাম্প।
প্রসঙ্গত, ইসরায়েল এরইমধ্যে পশ্চিমতীরে শতাধিক নতুন বসতি স্থাপন করেছে। পাহারের চূড়ার সামরিক ঘাঁটি থেকে শুরু করে অত্যাধুনিক বসতি স্থাপনে কিছুই বাদ রাখেনি তারা। পশ্চিমতীরে প্রায় ৩০ লাখ ফিলিস্তিনির বসতি রয়েছে। তৃতীয় আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর এখানে ইহুদিরা বাস করতে শুর করে। বর্তমানে ৫ লাখের বেশি অবৈধ ইহুদি বাস করছে অঞ্চলটিতে। এই অবৈধ অধিবাসীরা ইসরায়েলের নাগরিক সুবিধা ভোগ করে। অন্যদিকে, ফিলিস্তিনিরা পশ্চিমাদের সমর্থিত ইসরায়েলের সামরিক শাসনের অধীনে রয়েছে।
মানবাধিকার সংস্থাগুলো ইসরায়েলের এই আচরণকে বৈষম্যমূলক দাবি করলেও তা মানছে না ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এই পরিকল্পনা সফল হলে দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক যে সমাধানের কথা বলা হচ্ছে; তা কখনোই বাস্তবায়ন হবে না বলে মনে করছে পিস নাউ। এমনকি চলমান যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাতিল হওয়ার আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে। এজন্য বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে দায়ী করে সংস্থাটি। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর আকস্মিকভাবে হামলা চালিয়ে এক হাজার ২০০ ইসরাইলিকে হত্যা করে হামাস। এ সময়ে বহু বিদেশি শ্রমিকসহ ২৫০ ইসরাইলি নাগরিক ও সেনাসদস্যকে তারা অপহরণ করে নিয়ে যায়।
এর জবাবে গেল পনেরো মাস ধরে গাজায় নির্বিচারে সামরিক হামলা চালায় ইসরায়েল। এতে ৪৭ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হন, যাদের বেশিরভাগ নারী ও শিশু। মিসর, সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যস্থতায় ও যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে দুই পক্ষের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি সই হয়, যা কার্যকর হয় গত ১৯ জানুয়ারি। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে স্থানীয় সময় গত সোমবার এক বিবৃতিতে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত আর কোনো ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে না বলে জানায় হামাসের সামরিক শাখা কাশেম ব্রিগেডের এক মুখপাত্র। পরবর্তীতে কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতায় বন্দিবিনিময় কার্যকর হয়। হামাসের এই কার্যক্রমে ক্ষিপ্ত হয়ে সব ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি না দিলে গাজায় “নরকের দরজা খুলে দেওয়া হবে” এমন হুমকি দেয় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। স্থানীয় সময় গত রোববার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সঙ্গে দেওয়া এক যৌথ বিবৃতিতে এ হুমকি দেন তিনি।