পায়ে লিখে এমবিএ পাশ, প্রতিবন্ধী অদম্য আলীর সফলতার গল্প
- আপডেট সময় : ২৭ বার পড়া হয়েছে
আমি নিজে একজন দরিদ্র পরিবারের সন্তান। তার ওপর জন্ম থেকেই আমার দুটি হাত নেই। আমি সমাজের বোঝা হতে চাইনি। যেভাবেই হোক চেয়েছি লেখাপড়া শিখে স্বাবলম্বী হতে। প্রয়োজনে সমাজের উপকার করতে। এভাবেই কথাগুলো বলেছেন চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার বড়হাতিয়া ইউনিয়নের দূর্গম হরিদাঘোনা এলাকার মো. আলী। কারো সহায়তা ছাড়া পায়ে লিখে চট্টগ্রাম সিটি কলেজ থেকে এমবিএ পাশ করলেন সম্প্রতি। এখন তাঁর একমাত্র লক্ষ্য একটি চাকুরী পেয়ে তিনি যেন স্বাবলম্বী হতে পারেন। ইতোমধ্যে বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকুরীর আবেদন করেছেন।
আলীর সাথে আলাপকালে জানা যায় , প্রতিবন্ধী সন্তানের জন্মদানের কারনে তাঁর মাকেও শুনতে হয়েছে নানা কটু কথা। এ কারনে পরিবারের সকলেই নীরবে চোখের জল ফেলতেন। আলী জানান , আমার মা লেখাপড়া জানেন না । তবুও তিনি চেয়েছিলেন আমি যেন লেখাপড়াটা করি। মা বলতেন , বাবারে তোর হাত নেই তো কি হয়েছে পা তো আছে। মূলত মায়ের অনুপ্রেরণাই আমি স্বপ্ন পূরণের চেষ্ঠা করেছি এবং পা দিয়ে লেখার অনুশীলন শুরু করি। এতে প্রায় দুই বছরের চেষ্ঠায় বাংলা ও ইংরেজী অক্ষর লেখা রপ্ত করি। বর্তমানে আমি সাতকানিয়া সরকারী কলেজ থেকে বিবিএ (ব্যবস্থাপনা) এবং চট্টগ্রাম সিটি কলেজ থেকে এমবিএ পাশ করি। আলী বলেন , শিক্ষাকালীন সময়ে আমি সরকারীভাবে প্রতিবন্ধী ভাতা ও চিত্তরঞ্জন মেমোরিয়াল ট্রাষ্ট থেকে শিক্ষা বৃত্তি পেয়েছি যা এখনও চলমান।
আলীর মা সামশুন নাহার বলেন , ছেলেটি দুটি হাত ছাড়া জন্ম নেয়ার পর খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। প্রতিবেশীরা মনে করতো তাকে দিয়ে কিছুই হবেনা। আমি তাকে পা দিয়ে লেখা শেখাতে লাগলাম। যেহেতু হাত নেই কোন প্রাথমিক স্কুল তাকে ভর্তি নিচ্ছেনা। তবে উত্তর বড়হাতিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রধান শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর সহযোগিতায় স্কুলে ভর্তি করে তার শিক্ষাজীবন শুরু হয়।
চট্টগ্রাম সিটি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক এডিসন কান্তি দে বলেন , কারো সহযোগিতা ছাড়াই পায়ে লিখেই আলী বিবিএ ও এমবিএ পরীক্ষায় সাফল্যের সাথে কৃতকার্য হয়। প্রতিবন্ধী হলেও তার যথেষ্ঠ মনোবল ছিলো।
লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাইফুল ইসলাম জানান, আলী প্রতিবন্ধী হলেও তার যে প্রচেষ্ঠা সত্যিই প্রশংসনীয়। সরকারীভাবে চাকুরীর যদি কোন সুযোগ থাকে আলীর জন্য সর্বাত্নক সহযোগিতা করবো।















