পাহাড়ে তুলা চাষীদের স্বচ্ছলতার গল্প
- আপডেট সময় : ০৮:১৬:৪১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ মার্চ ২০২৪ ২২৪ বার পড়া হয়েছে
পাহাড়ের ভাজে ভাজে তামাকের চাষ! সবুজ অরণ্যে বিষাক্ত চাষাবাদে জীবন ফেরানোর চেষ্টা করেছেন পাহাড়ি জনগোষ্ঠী। সময়ের পিঠ বেয়ে সেই দিন এখন প্রায় অতীত! এক সময় তামাকের উদ্ভট গন্ধে নিশ্বাষ নেওয়া দুষ্কার ছিলো। সেই পরিস্থিতি কাটিয়ে এখন তুলা চাষে ফিরেছেন তারা। তাতে মানুষিক প্রশান্তি ফিরে এসেছে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মধ্যে।
পার্বত্য জেলা বান্দরবানে তামাকের জমিতেই এখন চলছে তুলার চাষবাদ। পাহাড়ে জুম চাষের সঙ্গী হয়েছে তুলা। ভালো ফলনে চাষীদের জীবনে দেখা দিয়েছে স্বচ্ছলতা। তুলা উন্নয়ন বোর্ড বলছে, চলতি বছর বান্দরবানে ৫ হাজার ৮শত ৭৮ হেক্টর জমিতে তুলার চাষাবাদ হয়েছে। আর উৎপাদন পৌছাতে পারে ১৫২৮ মেট্টিক টনে। গবেষকদের মতে, উন্নত জাতের তুলা চাষে অনুকূল পরিবেশ এবং সঠিক পরিচর্যা করা সম্ভব হলে উৎপাদন বাড়বে কয়েকগুণ।
এক সময় বিষ তথা তামাক চাষে বান্দরবানের নাম ওঠে আসলেও এখন আর বিষের সঙ্গে বসবাস নেই এখানকার চাষীদের। সময় পাল্টেছে, সেই সঙ্গে চাষীদের মধ্যে বেড়েছে সচেতনতা। তাতে তামাক চাষে ধ্বস নেমেছে। সেই স্থান দখল করে নিয়েছে, অর্থকরী ফলস তুলা।
কৃষকদের আবাদ জেলার মেঘলা, চিম্বুক, চড়ুইপাড়া, লেমুঝিড়ি, বালাঘাটা জয় মোহন পাড়াসহ বিভিন্ন পাড়ায় চলছে এই তুলার আবাদ। বান্দরবানের ৭টি উপজেলার বিভিন্ন জমি থেকে এখন তুলা তোলা কাজ চলছে জোর কদমে। জুম চাষীরা দেশী তুলার পাশাপাশি হাইব্রিড তুলা চাষে ফলন বেশি পাওয়ায় লাভবান হচ্ছেন।
বান্দরবান সদরের চড়ুইপাড়া এলাকার তুলা চাষী মং সাচিং মারমা বলেন, এক সময়ে আমাদের অনেক জমি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতো, কিন্তু বর্তমানে তুলা উন্নয়ন বোর্ড, বান্দরবান জোন এর সহায়তার মাধ্যমে আমরা তুলা আবাদ করেছি এবং ভালো লাভবান হচ্ছি।
জেলা সদরের বালাঘাটা বাজারের তুলা চাষী অং হ্লা মং মারমা বলেন, এক সময়ে পাহাড়ের পাদদেশে আর নদীর পাড়ে তামাক চাষ করা হতো, তাতে লাভ কম হতো এবং শরীরের ক্ষতি হতো। এখন তুলা চাষে কম পরিশ্রমে তুলা চাষের পাশাপাশি সীম, টমোটোসহ কয়েক প্রকারের সবজি আবাদ করেও লাভবান হচ্ছেন তারা।
তুলা উন্নয়ন বোর্ড বান্দরবান জোনের তথ্য মতে, ২০২২-২৩ মৌসুমে বান্দরবানে ৫ হাজার ৫শত হেক্টর জমিতে তুলার আবাদ হয়েছিল আর যার বিপরীতে ১০৯২মেট্টিক টন তুলা উৎপাদন হয়েছিল। ২৩-২৪ মৌসুমে বান্দরবানে ৫ হাজার ৮ শত ৭৮ হেক্টর জমিতে তুলার আবাদ হয়েছে। তাতে ১,৫২৮মেট্টিক টন তুলা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বান্দরবান তুলা উন্নয়ন বোর্ড জোনের প্রধান কৃষিবিদ মো: আলমগীর হোসেন মৃধা বলেন, ২০২৩-২৪ মৌসুমে বান্দরবানে ১ হাজার ৫০জন চাষীকে তুলা উন্নয়ন বোর্ডর প্রশিক্ষণ দিয়েছে। তারা এখন তুলা উৎপাদন করছে। প্রশিক্ষনে চাষীদেরকে তুলা উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণের ওপর ব্যাপক ধারণা দেওয়া হচ্ছে। একসময় চাষীরা পাহাড়ে শুধু তামাক চাষ করে জীবনধারণ করলেও সময়ের সাথে সাথে এখন তুলা চাষে লাভ বেশি হওয়ায় অনেক চাষীই তুলা চাষ করছে।
তিনি আরও বলেন, বান্দরবানে তুলার উন্নয়নে চাষীদের প্রশিক্ষণ, সমাবেশসহ বিভিন্ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এখানে তুলা চাষে আগ্রহ বাড়ছে। বান্দরবানে প্রতিমণ বীজতুলার দাম এবার ৩,৮০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
পাহাড়ী তুলা গবেষণা কেন্দ্র,বান্দরবানের উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও অফিস প্রধান মংসানু মার্মা জানান, তুলার মান উন্নয়নে বান্দরবানের পাহাড়ী তুলা গবেষণা কেন্দ্রে বিভিন্ন জাতের তুলার গবেষণা চলমান রয়েছে। এই তুলা গবেষণা কেন্দ্রে বর্তমানে এইচসি ১,২,৩ এবং সিবি ১২,১৩,১৪,১৫ সিবি হাইব্রিড-১ এবং টার্কি থেকে ১২টি জাতের তুলার গবেষনা চলমান রয়েছে। সঠিকভাবে তুলা রোপন ও পরিচর্যা করা সম্ভব প্রচুর পরিমানে উৎপাদন হবে। তাতে পিছিয়ে পড়া পাহাড়ি জনগোষ্ঠী লাভবান হবেন।