ঢাকা ০৯:০৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৪

পুরানো ঘটনার জেরে খাগড়াছড়িতে শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যায় অনিদিষ্টকালের ১৪৪ ধারা জারি

গণমুক্তি রিপোর্ট
  • আপডেট সময় : ০৬:৫৯:১৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ অক্টোবর ২০২৪ ৪৬ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

 

সবুজ অরণ্যের লোকালয়ে প্রকাশ্যে এমন অমানবিক ঘটনা আগে খুব একটা কমই ঘটেছে। পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর দ্বন্দ্বের কারণে মাঝে মধ্যে সংঘর্ষের খবর আসলেও তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পিছিয়ে হত্যার ঘটনা পাহাড়কে অশান্ত করেনি। যেমনটি ঘটেছিলো প্রায় ২০ দিন আগে এই খাগড়াছড়িতেই। প্রথম বাঙালি এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করে পাহাড়িরা। এই হত্যাকান্ডের জেরে বাঙালি পাহাড়িদের মধ্যে সংঘর্ষে তিন পাহাড়ি যুবকের মৃত্যু ঘটে। সেই ঘটনার জের কাটতে না কাটতেই মঙ্গলবার খাগড়াছড়ি সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষক আবুল হাসনাত মুহম্মদ সোহেল রানাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলায় বিকাল ৩টা থেকে অনিদিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করে জেলা প্রশাসন।

জানা গেছে, বেশ কয়েক বছর আগে সোহেল রানার বিরুদ্ধে এক পাহাড়ি ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে মামলা হয়। ছাত্রী আদালতে গিয়ে পাহাড়ি একটি সংগঠনের চাপে মামলা করেছে মর্মে সাক্ষ্য দিলে সোহেল রানা খালাস পান এবং চাকরিতে পুনরায় যোগ দেন। সোহেল রানা চাকরিতে যোগ দেওয়ার পর থেকে পাহাড়ি ছাত্ররা তার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির নানা অভিযোগ এনে প্রত্যাহার দাবি করে আসছিল।

খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান, মঙ্গলবার দুপুরে খাগড়াছড়ি সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে একজন শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এরপর অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সদরে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন রয়েছে। শহরে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের সিভিল কন্সট্রাকশন অ্যান্ড সেফটি বিভাগের ইন্সট্রাকটর ছিলেন সোহেল রানা।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ধর্ষণের অভিযোগ এনে দুপুরে স্কুলের মধ্যেই কয়েকজন শিক্ষার্থী একটি কক্ষে সোহেল রানাকে পিটিয়ে হত্যা করে। এ ঘটনার পর জেলা শহরের পাহাড়ি ও বাঙালি সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এর জের ধরে শহরের চেঙ্গী স্কয়ার, মহাজনপাড়ায় দুইপক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। পরে পুলিশ, সেনাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলায় বিকাল ৩টা থেকে অনিদিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করে জেলা প্রশাসন।

ছাত্র-জনতা এক দফা দাবির প্রেক্ষিতে হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। দেম ছেড়ে পালিয়ে ভারতে গিয়ে আশ্রয় হাসিনা। মূলত এর পর থেকে বিভিন্ন দাবি নিয়ে মাঠে নামে বিভিন্ন সংগঠন। পাহাড়ীসহ সম্প্রদায়িক অস্থিরতার গোড়ায় পানি ঢালা হয়। ষড়যন্ত্রকারীরা পাহাড়, হিন্দু এবং পোশাক কারখানা ঘিরে নানা রকমের ষড়যন্ত্র চালিয়ে যেতে থাকে বলেও সন্দেহ পোষণ করেন সংশ্লিষ্টরা। হঠাৎ করে শান্তিপ্রিয় পোশাক শ্রমিকরা মারমুখো আচরণের পেছনে ইন্ধনদাতাদের খুঁজে বের করার তাগিদ আসে বোদ্ধা মহল থেকে।

পোশাক কারখানা ঘিরে গুজব রটানো হচ্ছে একথা এবং গুজব রটিয়ে সোমবার আশুলিয়ায় শ্রমিক অসন্তোষের সৃষ্টি করা হয়েছে বলে দাবি করেন শ্রম উপদেষ্টা। সোমবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক সভাশেষে সাংবাদিকদের একথা জানান শ্রম উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূইয়া।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, অধ্যক্ষের রুমে ১০-১৫ জন পাহাড়ি কিশোর-যুবক শিক্ষক সোহেল রানাকে এলোপাতাড়ি মারতে থাকে। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় পুলিশ তাকে উদ্ধার করে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুজন চন্দ্র রায় বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

পুরানো ঘটনার জেরে খাগড়াছড়িতে শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যায় অনিদিষ্টকালের ১৪৪ ধারা জারি

আপডেট সময় : ০৬:৫৯:১৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ অক্টোবর ২০২৪

 

সবুজ অরণ্যের লোকালয়ে প্রকাশ্যে এমন অমানবিক ঘটনা আগে খুব একটা কমই ঘটেছে। পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর দ্বন্দ্বের কারণে মাঝে মধ্যে সংঘর্ষের খবর আসলেও তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পিছিয়ে হত্যার ঘটনা পাহাড়কে অশান্ত করেনি। যেমনটি ঘটেছিলো প্রায় ২০ দিন আগে এই খাগড়াছড়িতেই। প্রথম বাঙালি এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করে পাহাড়িরা। এই হত্যাকান্ডের জেরে বাঙালি পাহাড়িদের মধ্যে সংঘর্ষে তিন পাহাড়ি যুবকের মৃত্যু ঘটে। সেই ঘটনার জের কাটতে না কাটতেই মঙ্গলবার খাগড়াছড়ি সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষক আবুল হাসনাত মুহম্মদ সোহেল রানাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলায় বিকাল ৩টা থেকে অনিদিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করে জেলা প্রশাসন।

জানা গেছে, বেশ কয়েক বছর আগে সোহেল রানার বিরুদ্ধে এক পাহাড়ি ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে মামলা হয়। ছাত্রী আদালতে গিয়ে পাহাড়ি একটি সংগঠনের চাপে মামলা করেছে মর্মে সাক্ষ্য দিলে সোহেল রানা খালাস পান এবং চাকরিতে পুনরায় যোগ দেন। সোহেল রানা চাকরিতে যোগ দেওয়ার পর থেকে পাহাড়ি ছাত্ররা তার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির নানা অভিযোগ এনে প্রত্যাহার দাবি করে আসছিল।

খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান, মঙ্গলবার দুপুরে খাগড়াছড়ি সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে একজন শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এরপর অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সদরে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন রয়েছে। শহরে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের সিভিল কন্সট্রাকশন অ্যান্ড সেফটি বিভাগের ইন্সট্রাকটর ছিলেন সোহেল রানা।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ধর্ষণের অভিযোগ এনে দুপুরে স্কুলের মধ্যেই কয়েকজন শিক্ষার্থী একটি কক্ষে সোহেল রানাকে পিটিয়ে হত্যা করে। এ ঘটনার পর জেলা শহরের পাহাড়ি ও বাঙালি সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এর জের ধরে শহরের চেঙ্গী স্কয়ার, মহাজনপাড়ায় দুইপক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। পরে পুলিশ, সেনাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলায় বিকাল ৩টা থেকে অনিদিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করে জেলা প্রশাসন।

ছাত্র-জনতা এক দফা দাবির প্রেক্ষিতে হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। দেম ছেড়ে পালিয়ে ভারতে গিয়ে আশ্রয় হাসিনা। মূলত এর পর থেকে বিভিন্ন দাবি নিয়ে মাঠে নামে বিভিন্ন সংগঠন। পাহাড়ীসহ সম্প্রদায়িক অস্থিরতার গোড়ায় পানি ঢালা হয়। ষড়যন্ত্রকারীরা পাহাড়, হিন্দু এবং পোশাক কারখানা ঘিরে নানা রকমের ষড়যন্ত্র চালিয়ে যেতে থাকে বলেও সন্দেহ পোষণ করেন সংশ্লিষ্টরা। হঠাৎ করে শান্তিপ্রিয় পোশাক শ্রমিকরা মারমুখো আচরণের পেছনে ইন্ধনদাতাদের খুঁজে বের করার তাগিদ আসে বোদ্ধা মহল থেকে।

পোশাক কারখানা ঘিরে গুজব রটানো হচ্ছে একথা এবং গুজব রটিয়ে সোমবার আশুলিয়ায় শ্রমিক অসন্তোষের সৃষ্টি করা হয়েছে বলে দাবি করেন শ্রম উপদেষ্টা। সোমবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক সভাশেষে সাংবাদিকদের একথা জানান শ্রম উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূইয়া।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, অধ্যক্ষের রুমে ১০-১৫ জন পাহাড়ি কিশোর-যুবক শিক্ষক সোহেল রানাকে এলোপাতাড়ি মারতে থাকে। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় পুলিশ তাকে উদ্ধার করে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুজন চন্দ্র রায় বিষয়টি নিশ্চিত করেন।