ঢাকা ০১:৫৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ঢাকায় বিজিবি-বিএসএফ সম্মেলন কাল থেকে

পুশইন, সীমান্ত হত্যা গুরুত্ব পাবে বৈঠকে

হালিম মোহাম্মদ
  • আপডেট সময় : ১৬৪ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও সীমান্তে পুশইন ও গুলিতে বাংলাদেশিদের হত্যা বন্ধে আলোচনায় বসতে যাচ্ছেন বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীবিজিবি এবং বিএসএফ। দুই দেশের দুই বাহিনীর প্রধানদের সমন্বয়ে প্রতিনিধি দলের মধ্যে এই সমঝোতা সম্মেলন। কাল সোমবার থেকে চার দিনব্যাপী ঢাকার পিলখানায় বিজিবি সদর দপ্তরে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।
ফ্যাসিষ্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দুই দেশের মধ্যে সৃষ্টি হওয়া এক ধরনের টানাপোড়েন অবসান হতে পারে। পাশাপাশি পুশইন ও সীমান্তে হত্যা নিয়ে জটিলতার মধ্যে দিয়ে সীমান্ত সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই সম্মেলনে প্রাধান্য পাচ্ছে সীমান্ত হত্যা বন্ধ এবং পুশইনের পাশাপাশি চোরাচালানী মাদক পাচার বন্ধ করা। এসব জটিলতা কেটে যেতে পারে বলে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
বিজিবি সূত্রে জানা যায়, পুশইনের বাইরেও সীমান্তে নিরস্ত্র নাগরিকদের ওপর গুলি চালানো, হত্যা, আহত বা মারধরের ঘটনা শূন্যে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে আলোচনা হবে। এ ছাড়া সীমান্তের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় যৌথ টহল বৃদ্ধি, সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে কোনো স্থাপনা বা কাঁটাতারের বেড়া না দেওয়া, অস্ত্র ও মাদকের চোরাচালান এবং মানব পাচার প্রতিরোধ, আন্তর্জাতিক সীমানা আইন লঙ্ঘন ঠেকাতে দুই দেশের সীমান্তবর্তী জনসাধারণের মাঝে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম এবং দুই দেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সম্ভাব্য অবস্থান এবং তাদের কর্মকা-ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভারত সীমান্ত দিয়ে লোকজনকে বাংলাদেশে পুশইন (ঠেলে দেওয়া) এবং বিএসএফের মারণাস্ত্র ব্যবহার এবং মানুষ হত্যা বন্ধের বিষয়টি এবারের সীমান্ত সম্মেলনে তুলনামূলক বেশি গুরুত্ব পাবে। এতে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী এবং ভারতের পক্ষে তাদের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) মহাপরিচালক দলজিৎ সিং চৌধুরী। যদিও প্রতিবছরই দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মহাপরিচালক (ডিজি) পর্যায়ের সম্মেলন হয়ে থাকে, তবে এবারের বৈঠকটি নানা দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
বিজিবি সদর দপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা জানান, গত ৭ মে থেকে ৩ জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশের ২২টি জেলার সীমান্ত এলাকা দিয়ে ১ হাজার ৮৮০ জনকে ভারত থেকে পুশইন করা হয়েছে। এর পরের পরিসংখ্যান এখনো হালনাগাদ (আপডেট) করা হয়নি। তবে গত মে মাস থেকেই মূলত হঠাৎ করে সীমান্ত এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে পুশইনের ঘটনা বেড়ে যায়। এই বিষয়ে একাধিকবার কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায় প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি বিজিবি-বিএসএফের পতাকা বৈঠকও হয়েছে। এই সমস্যা বা জটিলতা কাটানোর লক্ষ্যে প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
কূটনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের সঙ্গে আলাপকালে তারা বলেছেন, সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে একের পর এক ‘পুশইন’-এর ঘটনায় অস্বস্তিকর পরিবেশ-পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পাশাপাশি ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর গুলিতে নানা অভিযোগে সীমান্তে মাঝেমধ্যেই ঘটে থাকে বাংলাদেশিদের হত্যা ও আহতের ঘটনাও। আন্তর্জাতিক আইনবহির্ভূত এসব কর্মকান্ডে প্রতিবেশী এই দুই দেশের মধ্যে কিছুটা বৈরী সম্পর্কও প্রকাশ পাচ্ছে। এ অবস্থায় দুই দেশের সীমান্ত সুরক্ষা, শান্তি-স্থিতিশীলতার স্বার্থেই আলোচনার মাধ্যমে স্থায়ী একটি সমাধানে আসা জরুরি।
জানা যায়, গত ৭ মে থেকে ৩ জুলাই পর্যন্ত পাঁচটি জেলার সীমান্ত দিয়ে সবচেয়ে বেশি পুশইন ঘটে। সেগুলো হচ্ছে মৌলভীবাজারে ৫০২ জন, সিলেটে ২৫০ জন, খাগড়াছড়ি দিয়ে ১৬০, লালমনিরহাটে ১২৮ জন এবং সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে ১১০ জন। এসব পুশইন নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ভারতকে কয়েক দফা কূটনৈতিক চিঠি পাঠানো হলেও আশানুরূপ ফলাফল পাওয়া যায়নি বলেও জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা জানান, সীমান্তে পুশব্যাক বা পুশইন আসলে একটা পদ্ধতি। ধরা পড়া ব্যক্তিদের অন্য দেশের সীমান্তে ঠেলে দেওয়া হয়ে থাকে, যাকে পুশইন বা পুশব্যাক বলা হয়ে থাকে। তবে এই প্রক্রিয়ার কোনো আইনি স্বীকৃতি নেই। এটি আন্তর্জাতিক অভিবাসন ও মানবাধিকার আইন অনুযায়ী বিতর্কিত।
গত বছর ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে ১৭ থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি চার দিনব্যাপী ৫৫তম সীমান্ত সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকীর নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল এবং বিএসএফের মহাপরিচালক দলজিৎ সিং চৌধুরীর নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের ভারতীয় প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করেছিল।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

ঢাকায় বিজিবি-বিএসএফ সম্মেলন কাল থেকে

পুশইন, সীমান্ত হত্যা গুরুত্ব পাবে বৈঠকে

আপডেট সময় :

প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও সীমান্তে পুশইন ও গুলিতে বাংলাদেশিদের হত্যা বন্ধে আলোচনায় বসতে যাচ্ছেন বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীবিজিবি এবং বিএসএফ। দুই দেশের দুই বাহিনীর প্রধানদের সমন্বয়ে প্রতিনিধি দলের মধ্যে এই সমঝোতা সম্মেলন। কাল সোমবার থেকে চার দিনব্যাপী ঢাকার পিলখানায় বিজিবি সদর দপ্তরে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।
ফ্যাসিষ্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দুই দেশের মধ্যে সৃষ্টি হওয়া এক ধরনের টানাপোড়েন অবসান হতে পারে। পাশাপাশি পুশইন ও সীমান্তে হত্যা নিয়ে জটিলতার মধ্যে দিয়ে সীমান্ত সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই সম্মেলনে প্রাধান্য পাচ্ছে সীমান্ত হত্যা বন্ধ এবং পুশইনের পাশাপাশি চোরাচালানী মাদক পাচার বন্ধ করা। এসব জটিলতা কেটে যেতে পারে বলে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
বিজিবি সূত্রে জানা যায়, পুশইনের বাইরেও সীমান্তে নিরস্ত্র নাগরিকদের ওপর গুলি চালানো, হত্যা, আহত বা মারধরের ঘটনা শূন্যে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে আলোচনা হবে। এ ছাড়া সীমান্তের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় যৌথ টহল বৃদ্ধি, সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে কোনো স্থাপনা বা কাঁটাতারের বেড়া না দেওয়া, অস্ত্র ও মাদকের চোরাচালান এবং মানব পাচার প্রতিরোধ, আন্তর্জাতিক সীমানা আইন লঙ্ঘন ঠেকাতে দুই দেশের সীমান্তবর্তী জনসাধারণের মাঝে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম এবং দুই দেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সম্ভাব্য অবস্থান এবং তাদের কর্মকা-ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভারত সীমান্ত দিয়ে লোকজনকে বাংলাদেশে পুশইন (ঠেলে দেওয়া) এবং বিএসএফের মারণাস্ত্র ব্যবহার এবং মানুষ হত্যা বন্ধের বিষয়টি এবারের সীমান্ত সম্মেলনে তুলনামূলক বেশি গুরুত্ব পাবে। এতে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী এবং ভারতের পক্ষে তাদের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) মহাপরিচালক দলজিৎ সিং চৌধুরী। যদিও প্রতিবছরই দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মহাপরিচালক (ডিজি) পর্যায়ের সম্মেলন হয়ে থাকে, তবে এবারের বৈঠকটি নানা দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
বিজিবি সদর দপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা জানান, গত ৭ মে থেকে ৩ জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশের ২২টি জেলার সীমান্ত এলাকা দিয়ে ১ হাজার ৮৮০ জনকে ভারত থেকে পুশইন করা হয়েছে। এর পরের পরিসংখ্যান এখনো হালনাগাদ (আপডেট) করা হয়নি। তবে গত মে মাস থেকেই মূলত হঠাৎ করে সীমান্ত এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে পুশইনের ঘটনা বেড়ে যায়। এই বিষয়ে একাধিকবার কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায় প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি বিজিবি-বিএসএফের পতাকা বৈঠকও হয়েছে। এই সমস্যা বা জটিলতা কাটানোর লক্ষ্যে প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
কূটনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের সঙ্গে আলাপকালে তারা বলেছেন, সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে একের পর এক ‘পুশইন’-এর ঘটনায় অস্বস্তিকর পরিবেশ-পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পাশাপাশি ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর গুলিতে নানা অভিযোগে সীমান্তে মাঝেমধ্যেই ঘটে থাকে বাংলাদেশিদের হত্যা ও আহতের ঘটনাও। আন্তর্জাতিক আইনবহির্ভূত এসব কর্মকান্ডে প্রতিবেশী এই দুই দেশের মধ্যে কিছুটা বৈরী সম্পর্কও প্রকাশ পাচ্ছে। এ অবস্থায় দুই দেশের সীমান্ত সুরক্ষা, শান্তি-স্থিতিশীলতার স্বার্থেই আলোচনার মাধ্যমে স্থায়ী একটি সমাধানে আসা জরুরি।
জানা যায়, গত ৭ মে থেকে ৩ জুলাই পর্যন্ত পাঁচটি জেলার সীমান্ত দিয়ে সবচেয়ে বেশি পুশইন ঘটে। সেগুলো হচ্ছে মৌলভীবাজারে ৫০২ জন, সিলেটে ২৫০ জন, খাগড়াছড়ি দিয়ে ১৬০, লালমনিরহাটে ১২৮ জন এবং সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে ১১০ জন। এসব পুশইন নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ভারতকে কয়েক দফা কূটনৈতিক চিঠি পাঠানো হলেও আশানুরূপ ফলাফল পাওয়া যায়নি বলেও জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা জানান, সীমান্তে পুশব্যাক বা পুশইন আসলে একটা পদ্ধতি। ধরা পড়া ব্যক্তিদের অন্য দেশের সীমান্তে ঠেলে দেওয়া হয়ে থাকে, যাকে পুশইন বা পুশব্যাক বলা হয়ে থাকে। তবে এই প্রক্রিয়ার কোনো আইনি স্বীকৃতি নেই। এটি আন্তর্জাতিক অভিবাসন ও মানবাধিকার আইন অনুযায়ী বিতর্কিত।
গত বছর ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে ১৭ থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি চার দিনব্যাপী ৫৫তম সীমান্ত সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকীর নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল এবং বিএসএফের মহাপরিচালক দলজিৎ সিং চৌধুরীর নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের ভারতীয় প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করেছিল।