ঢাকা ০৪:২১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

পোশাক শিল্পের জীবন্ত ক্ষত বহন করছে যে ভবনটি

গণমুক্তি ডিজিটাল ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ১১:৩৫:০০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ৫৪ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

 

সাভারের আশুলিয়ার ইয়ারপুর ইউনিয়নের নিশ্চিন্তপুরে পোড়া দাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ভবনটি। বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের জীবন্ত ক্ষত বহন করছে এই ভবনটি।

২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর। ১১৬৩ জন শ্রমিকের মধ্যে ৯৮৪ জন শ্রমিক ভবনটির বিভিন্ন ফ্লোরে কর্মরত। এর মধ্যে অধিকাংশ নারী। এক যুগ আগে তোবা গ্রুপের তাজরীন ফ্যাশনে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। আগুনে পুড়ে ১১৩ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় আরও ৪ জন।

মরদেহ শনাক্ত হওয়ায় ৫৮ জনকে পরিবার ও স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। অন্যদের মরদেহ শনাক্ত না হওয়ায় তাদের জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয়।
পুড়ে যাওয়া তাজরীন ফ্যাশনের সেই ভবনটি পোড়া দাগ নিয়ে ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে। সেই দিনের বিভীষিকাময় ক্ষত চিহ্ন নিয়ে ভবনটির আশেপাশেই বসবাস করছেন আহত শ্রমিকরা। তারা ক্ষতিপূরণ বা পুনর্বাসনের প্রহর গুনছেন। মানবেতর জীবনযাপন করছেন প্রায় দুই শতাধিক শ্রমিক।

দিনটি এলেই দুঃসহ স্মৃতি ভেসে উঠে তাজরীন অগ্নিকান্ডে বেঁচে ফেরা আহতদের মানসপটে। তাদের নাকে এখনও ভেসে বেড়ায় পোড়া লাশের গন্ধ। ভয়াবহ আগুনের কথা ভেবে এখনও আঁতকে ওঠেন ভুক্তভোগীরা।

ঘটনার ১২ বছর অতিবাহিত হলেও নিশ্চিন্তপুরের সেই ভবনটি দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু একসময়ের কর্মঠ শ্রমিকরা এখন আর সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছেন না। শারীরিক যন্ত্রণা, সংসারের অনটনের পাশাপাশি দোষীদের শাস্তি না পাওয়ার আক্ষেপে দিন কাটছে তাদের।

তাজরীন ফ্যাশনের তিন তলা থেকে লাফিয়ে পড়ে নানা ধরনের শারিরীক সমস্যা নিয়ে দিনাতিপাত করছেন রেহেনা বেগম। জানালেন, তাজরীনের তিন তলায় স্যাম্পলে কাজ করতাম। আগুন লাগা দেখে আমি জানালা দিয়ে লাফ দিয়েছি, নাকি আমাকে কেউ ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে আমার মনে পড়ে না।

আমি তিনতলা থেকে পড়ে গিয়ে আমার মেরুদন্ডের হাড় ভেঙে যায়। আমার ঘারের হাড় ফেটে যায়। আমার বোন, বোনের স্বামী, আমার ভাগিনাসহ পরিবারের ৪ সদস্য তাজরীনের আগুনে অঙ্গার হয়েছে। শুধু আমি বেঁচে আছি।

আমাকে আইএলও থেকে শুধু ৪ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনো সুচিকিৎসা পাইনি। যে টাকা সহায়তা পেয়েছিলাম সেই টাকা দিয়ে চিকিৎসা করিয়েছি। এছাড়া একটি জমি বিক্রি করেও চিকিৎসা করেছি। এখনও আমি অক্ষম। কোনো কাজ করতে পারি না।

আমার সন্তানের লেখাপড়া করাতে পারি না, ভাল খাবার দিতে পারি না। অগ্নিকান্ডের সাথে জড়িতদের শাস্তি হলেও অন্তত স্বস্তি পেতাম। কিন্তু ঘটনার ১২ বছর অতিবাহিত হলেও এখনও কারও শাস্তি হলো না। আমরা সুচিকিৎসা ও পুনর্বাসন চাই। আমরা ভিক্ষা চাই না।

আহত শ্রমিক নাজমা আক্তার বলেন, আমাদের বিগত সরকার নানা সময়ে পুনর্বাসন ও সুচিকিৎসার আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু তা বাস্তবায়ন হয়নি। এবারে শ্রম উপদেষ্টা আমাদের ডেকে নিয়ে আশ্বাস দিয়েছেন। খুব দ্রুত আমাদের জন্য কিছু একটা করা হবে বলে জানানো হয়েছে। আহত শ্রমিকদের দ্রুত পুনর্বাসন ও সুচিকিৎসার দাবি জানান।

এ বিষয়ে বিপ্লবী গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি অরবিন্দু বেপারী বিন্দু সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশের পোশাক খাতের একটি বিভীষিকাময় দিন ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর। এই দিনে আগুনে পুড়ে অঙ্গার হয়েছেন ১১৭ জন। আহত হয়েছেন অন্তত দুই শতাধিক শ্রমিক। তাদের কোনো ধরনের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি। যা দিয়েছে তা বিভিন্ন সংগঠন থেকে সহযোগিতা মাত্র। সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয় নি।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

পোশাক শিল্পের জীবন্ত ক্ষত বহন করছে যে ভবনটি

আপডেট সময় : ১১:৩৫:০০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪

 

সাভারের আশুলিয়ার ইয়ারপুর ইউনিয়নের নিশ্চিন্তপুরে পোড়া দাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ভবনটি। বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের জীবন্ত ক্ষত বহন করছে এই ভবনটি।

২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর। ১১৬৩ জন শ্রমিকের মধ্যে ৯৮৪ জন শ্রমিক ভবনটির বিভিন্ন ফ্লোরে কর্মরত। এর মধ্যে অধিকাংশ নারী। এক যুগ আগে তোবা গ্রুপের তাজরীন ফ্যাশনে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। আগুনে পুড়ে ১১৩ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় আরও ৪ জন।

মরদেহ শনাক্ত হওয়ায় ৫৮ জনকে পরিবার ও স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। অন্যদের মরদেহ শনাক্ত না হওয়ায় তাদের জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয়।
পুড়ে যাওয়া তাজরীন ফ্যাশনের সেই ভবনটি পোড়া দাগ নিয়ে ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে। সেই দিনের বিভীষিকাময় ক্ষত চিহ্ন নিয়ে ভবনটির আশেপাশেই বসবাস করছেন আহত শ্রমিকরা। তারা ক্ষতিপূরণ বা পুনর্বাসনের প্রহর গুনছেন। মানবেতর জীবনযাপন করছেন প্রায় দুই শতাধিক শ্রমিক।

দিনটি এলেই দুঃসহ স্মৃতি ভেসে উঠে তাজরীন অগ্নিকান্ডে বেঁচে ফেরা আহতদের মানসপটে। তাদের নাকে এখনও ভেসে বেড়ায় পোড়া লাশের গন্ধ। ভয়াবহ আগুনের কথা ভেবে এখনও আঁতকে ওঠেন ভুক্তভোগীরা।

ঘটনার ১২ বছর অতিবাহিত হলেও নিশ্চিন্তপুরের সেই ভবনটি দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু একসময়ের কর্মঠ শ্রমিকরা এখন আর সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছেন না। শারীরিক যন্ত্রণা, সংসারের অনটনের পাশাপাশি দোষীদের শাস্তি না পাওয়ার আক্ষেপে দিন কাটছে তাদের।

তাজরীন ফ্যাশনের তিন তলা থেকে লাফিয়ে পড়ে নানা ধরনের শারিরীক সমস্যা নিয়ে দিনাতিপাত করছেন রেহেনা বেগম। জানালেন, তাজরীনের তিন তলায় স্যাম্পলে কাজ করতাম। আগুন লাগা দেখে আমি জানালা দিয়ে লাফ দিয়েছি, নাকি আমাকে কেউ ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে আমার মনে পড়ে না।

আমি তিনতলা থেকে পড়ে গিয়ে আমার মেরুদন্ডের হাড় ভেঙে যায়। আমার ঘারের হাড় ফেটে যায়। আমার বোন, বোনের স্বামী, আমার ভাগিনাসহ পরিবারের ৪ সদস্য তাজরীনের আগুনে অঙ্গার হয়েছে। শুধু আমি বেঁচে আছি।

আমাকে আইএলও থেকে শুধু ৪ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনো সুচিকিৎসা পাইনি। যে টাকা সহায়তা পেয়েছিলাম সেই টাকা দিয়ে চিকিৎসা করিয়েছি। এছাড়া একটি জমি বিক্রি করেও চিকিৎসা করেছি। এখনও আমি অক্ষম। কোনো কাজ করতে পারি না।

আমার সন্তানের লেখাপড়া করাতে পারি না, ভাল খাবার দিতে পারি না। অগ্নিকান্ডের সাথে জড়িতদের শাস্তি হলেও অন্তত স্বস্তি পেতাম। কিন্তু ঘটনার ১২ বছর অতিবাহিত হলেও এখনও কারও শাস্তি হলো না। আমরা সুচিকিৎসা ও পুনর্বাসন চাই। আমরা ভিক্ষা চাই না।

আহত শ্রমিক নাজমা আক্তার বলেন, আমাদের বিগত সরকার নানা সময়ে পুনর্বাসন ও সুচিকিৎসার আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু তা বাস্তবায়ন হয়নি। এবারে শ্রম উপদেষ্টা আমাদের ডেকে নিয়ে আশ্বাস দিয়েছেন। খুব দ্রুত আমাদের জন্য কিছু একটা করা হবে বলে জানানো হয়েছে। আহত শ্রমিকদের দ্রুত পুনর্বাসন ও সুচিকিৎসার দাবি জানান।

এ বিষয়ে বিপ্লবী গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি অরবিন্দু বেপারী বিন্দু সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশের পোশাক খাতের একটি বিভীষিকাময় দিন ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর। এই দিনে আগুনে পুড়ে অঙ্গার হয়েছেন ১১৭ জন। আহত হয়েছেন অন্তত দুই শতাধিক শ্রমিক। তাদের কোনো ধরনের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি। যা দিয়েছে তা বিভিন্ন সংগঠন থেকে সহযোগিতা মাত্র। সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয় নি।