হাতছাড়া হয়ে গেলে বাংলাদেশের আর কোনো ভবিষ্যৎ থাকবে না

অন্তর্বর্তী সরকারের একমাসপূর্তিতে রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় কালে বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ চুপচাপ বসে থাকবে না। তারা চুপচাপ শুয়ে শুয়ে স্বপ্নের মধ্যে আনন্দ সহকারে লুটপাট করে যাচ্ছিল। তাদের স্বপ্ন শিক্ষার্থীরা ভেঙে দিয়েছে। তারা কী এখন চুপচাপ বসে থাকবে? মোটেও না। খুব চেষ্টা করবে, তোমাদের দুঃস্বপ্নের মধ্যে লুকিয়ে দেওয়ার জন্য। তারা চেষ্টার ত্রুটি করবে না। যেটা শুরু করছো, সেই কাজ সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত এখান থেকে বেরিয়ে যেও না।

বাংলাদেশ যেন পৃথিবীর সম্মানিত রাষ্ট্রে পরিণত হয়, শিক্ষার্থীদের সেই সুযোগ কাজে লাগানোর কথাও বলেন ড. ইউনূস। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের দেখছি আর ভাবছি, কী একটা স্বপ্ন আমাদের সামনে, জাতির সামনে তোমরা নিয়ে এসেছ।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের জন্ম থেকে এই সুযোগ আর আসেনি। যে সুযোগ তোমরা আমাদের হাতে তুলে দিয়েছ, এটা যেন হাতছাড়া না হয়। এই সুযোগ হাত ছাড়া হলে বাংলাদেশ আর রাষ্ট্র থাকবে না। এটা শুধু রাষ্ট্র না, পৃথিবীর সম্মানিত রাষ্ট্রে যেন পরিণত হয়।

এ সময় আন্দোলনে শহীদদের স্মরণ করে ড. ইউনূস বলেন, যারা শহীদ হয়েছে আজকে তারা আমাদের সঙ্গে বসতে পারতো। কিন্তু সেই সুযোগ তাদের দেওয়া হয়নি। হাসপাতালে আহতদের দেখার জন্য যাই, তাদের দিকে তাকাতে কষ্ট হয়। একজন তরুণকে যখন দেখতে যাই তখন সে জিজ্ঞেস করে স্যার, ক্রিকেট খেলব কীভাবে? ক্রিকেট খেলার কথা তার মাথা থেকে সরছে না। যতবার দেখি মনে প্রশ্ন জাগে, এটাই আমরা বাংলাদেশ বানিয়েছি? কালকে একটা হাসপাতালে গেলাম, আবার সেই দৃশ্য। তরুণ প্রাণ, অনেকের মাথার খুলি উড়ে গেছে। অনেকের শরীরে গুলি রয়ে গেছে। বেঁচে আছে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, যতবার শুনি, যতবার দেখি, আবার নতুন করে প্রতিজ্ঞা করতে হয়, যে স্বপ্নের জন্য তারা প্রাণ দিয়েছে, সেই স্বপ্নকে আমরা বাস্তবায়ন করবো। এটা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে ড. ইউনূস বলেন, বাংলাদেশ জন্মের পর থেকে রাষ্ট্র গঠনের এমন সুযোগ আর আসেনি বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আমরা কি এই বাংলাদেশ চেয়েছিলাম প্রশ্ন রেখে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এত তাজা প্রাণ ঝরে গেল। যে স্বপ্নের জন্য তারা প্রাণ দিয়েছে। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করবই। আমাদের যোগ্যতা-ক্ষমতা না থাকতে পারে, কিন্তু শহীদদের স্বপ্ন পূরণ করতেই হবে।

ছাত্রদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, যে কাজ তোমরা শুরু করেছ, সেটি চালিয়ে যেতে হবে। না হলে সর্বনাশ হবে। তারা আবার অশান্তি সৃষ্টির জন্য, জাতিকে দুঃস্বপ্নের মধ্যে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টার ত্রুটি রাখবে না।

ড. ইউনূস বলেন, তোমাদের চিন্তা সঠিক ও স্বচ্ছ। তোমাদের চিন্তায় অনড় থাক। যে যত পরামর্শ দিক, এটা থেকে বেরিয়ে আসার পরামর্শ গ্রহণ করো না।

তিনি বলেন, শুধু রাষ্ট্র নয়, পৃথিবীর সম্মানিত রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। এমনভাবে দেশ গড়তে হবে, যাতে পৃথিবীর মানুষ জানতে চাইবে: কী মন্ত্রে এই অনন্য দেশ হলো। এই মন্ত্র শিথিল হয়ে গেলে, আমাদের কপালে দুঃখ আছে। সেই দুঃখ যাতে আমাদের দেখতে না হয়।

আন্দোলনের সময় কী করে ছাত্র-জনতার ওপর নির্যাতন চালিয়েছে তারা (আওয়ামী লীগ সরকার), সেগুলো দেশের মানুষকে জানাতে হবে বলেও ছাত্রদের পরামর্শ দেন তিনি।