বান্দরবানে ইট সংকটে উন্নয়ন ব্যাহত, পুরনো ইটভাটাগুলো চালুর দাবি

- আপডেট সময় : ২৭ বার পড়া হয়েছে
বান্দরবানে ইটভাটা বন্ধের সরকারি সিদ্ধান্তে সীমান্ত সড়ক নির্মাণসহ সরকারি-বেসরকারি অবকাঠামোগত উন্নয়ন কার্যক্রমে মারাত্মক স্থবিরতা নেমে এসেছে। ইটের অভাবে স্থানীয়ভাবে সবধরনের উন্নয়ন কর্মকান্ড প্রায় থমকে গেছে। ফলে একদিকে বিনিয়োগে ভাটা পড়েছে, অন্যদিকে শ্রমজীবী মানুষের কর্মসংস্থান কমে যাওয়ায় হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে ছিনতাই, চুরি-ডাকাতিসহ অপরাধমূলক কর্মকান্ড।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, জেলার চাহিদা মেটাতে সদর উপজেলায় ১১টি এবং রোয়াংছড়ি, রুমা, থানচিসহ বিভিন্ন উপজেলায় আরও প্রায় ৬০টি ইটভাটা গড়ে উঠেছিল। কিন্তু গত ৫ আগস্ট সরকারের পটপরিবর্তনের পর অন্তবর্তীকালীন সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ঘোষণা দেন অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করে সারাদেশে পরিবেশবান্ধব ব্লক ইট চালু করতে হবে। পাশাপাশি পার্বত্য জেলায় কোনোভাবেই ইটভাটা চালু রাখা হবে না। তবে এখনো বিকল্প ব্যবস্থা গড়ে না ওঠায় জেলায় হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পে বড় ধরনের সংকট তৈরি হয়েছে।
স্থানীয় উন্নয়ন কাজের ঠিকাদাররা অভিযোগ করে বলেন, পরিবেশ রক্ষার নামে এমন সিদ্ধান্ত নতুন বিপর্যয় ডেকে আনবে। হুমায়ুন রেজা সেলিমসহ কয়েকজন ঠিকাদার জানান, নতুন ইটভাটা স্থাপন বন্ধ রেখে পুরনোগুলো শর্তসাপেক্ষে চালু রাখলে সমাধান মিলতে পারে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য কেএসমং বলেন, উন্নয়নের স্বার্থেই ইটের প্র্রয়োজন। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) অর্থায়নে তিন পার্বত্য জেলায় ১৩শ কোটি টাকার গ্রামীণ জনপদের উন্নয়ন কর্মকান্ড চলমান রয়েছে। বান্দরবানে ইটভাটা বন্ধ থাকার কারণে উন্নয়ন কার্যক্রমে ইটের সংকটে উন্নয়ন কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ইটভাটা বন্ধ থাকার অজুহাতে দুর্গম এলাকার ঝিড়ি-ঝর্নার পাথর উত্তোলন করে সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। ফলে বিপর্যয়ের মুখে পরছে জীববৈচিত্র। শুষ্কমৌসুমে বিশুদ্ধ পানির তীব্রসংকটে পড়ছে পাহাড়ের মানুষ। অন্যদিকে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে শত শত ইটভাটা চলতে পারলে বান্দরবানেও শর্তসাপেক্ষে পুরনো ভাটা চালু রাখা উচিত।
বান্দরবান জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. জাবেদ রেজা বলেন, নতুন পুরনো ইটভাটা বুঝি না, বান্দরবান জেলায় উন্নয়ন কর্মকান্ড চালু রাখার স্বার্থে পরিবেশ বান্ধব ইটভাটা চালু করা দরকার। সারা দেশে যেভাবে ইটভাটাগুলো চালু আছে সেভাবেই বান্দরবানেও উন্নয়ন অবকাঠামো নির্মাণের স্বার্থে ইটভাগুলো চালু করা দরকার।
বান্দরবান ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস, মোহাম্মদ ইসলাম ও রাজেস্বর দাশ (বিপ্লব) বলেন, নিয়মমাফিক ভ্যাট-ট্যাক্স দেওয়ার পরও তাদের শত কোটি টাকার বিনিয়োগ মুখ থুবড়ে পড়েছে। শ্রমিকরাও কর্মহীন হয়ে পড়েছে। তারা বলেন, দ্রুত সমাধান না হলে আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবেন তারা।
এদিকে, শ্রমিকদের কর্মসংস্থান ও উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের স্বার্থে ইটভাটা কার্যক্রম চালুর দাবিতে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক থানজামা লুসাই ইতোমধ্যে গত ১৩ জুলাই পার্বত্য উপদেষ্টা বরাবর লিখিতপত্র পাঠিয়েছেন।
এ বিষয়ে বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শামীম আরা রিনি বলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জেলায় কোনো ইটভাটা চলবে না। ইতোমধ্যে ফাইতং ইউনিয়নে ছয়টি ভাটা ভেঙে ফেলা হয়েছে। আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।