ভান্ডারিয়ায় এলজিইডির ১৭ প্রকল্পে সীমাহীন দুর্নীতি অর্থ লোপাট, সড়কের বেহাল দশা সংস্কারের নেই কোন উদ্যোগ
- আপডেট সময় : ৬২ বার পড়া হয়েছে
পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়ায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এর দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে ১৭টি প্রকল্পের প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার কাজ না করে লোপাট করা হয়েছে । প্রকল্পে অন্তর্ভূক্ত সড়কগুলোর এখন বেহাল দশা। গত ১৭ এপ্রিল পিরোজপুর দুদক এর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. আমিনুল ইসলাম এঘটনায় জড়িত ২৭ জনকে অভিযুক্ত করে পৃথক ৮টি মামলা দায়ের করেছে।
জেলার ভাণ্ডারিয়া উপজেলায় এলজিইডি প্রকল্প হতে সবচেয়ে বেশী অর্থ লোপাট হয়েছে পিরোজপুর দুনীতি দমন কমিশন সুত্রে এ তথ্য জানা গেছে। উন্নয়ন প্রকল্পগুলো যথাযথ কাজ না হওয়ায় সড়ক গুলো যেন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। সূত্রে জানাগেছে, বিগত সরকারের আমলে বিভিন্ন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ভান্ডারিয়া উপজেলার ধাওয়া, ইকড়ি, নদমুলা, ভিটাবাড়ীয়া, গৌরিপুর ও তেলিখালী ইউনিয়ানের সকল রাস্তার পাকা, আধপাকা, আধাকাচা ও এসব রাস্তার কালভার্ট নির্মান না করে খানা খন্দ তৈরী করে রাখে।
এলজিইডির দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও জেলা হিসাব রক্ষণ অফিসের যোগসাজোসে সবগুলো প্রকল্পের টাকা আগাম তুলে নেওয়া হয়েছে। ফলে সড়ক উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন হয়নি। ইউনিয়নবাসীরা জেলা ও উপজেলা শহরে আসতে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। প্রকল্পের এসব বেহাল সড়ক দিয়ে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল এবং কলেজগামী শিক্ষার্থীরা মাইলের পর মাইল হেটে বর্ষাসহ প্রাকৃতিক দূর্যোগের মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হাজির হয়। খানাখন্দর রাস্তাদিয়ে প্রতিদিন মুর্মুষ রোগীসহ স্বাস্থ্য সেবা নিতে আসা মানুষের পদে পদে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন । বেহাল দশার কারনে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর টহল কাজে বিঘ্ন ঘটে।
দুনীতিগ্রস্থ প্রকল্পের মধ্যে উল্লেখ্য প্রকল্প হচ্ছে, ঘুর্নিঝড় আস্ফান প্রকল্প, অনুর্ধ ১০০মিটার ব্রীজ নির্মান প্রকল্প, দেশের দক্ষিণ অঞ্চলের আয়রন ব্রীজ, পুনর্বাসন প্রকল্প, গুরুত্বপূর্ণ পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প, পিরোজপুর জেলার পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প, উপজেলা শহর (নন-মিউনিসিপিলিটি) উন্নয়ন প্রকল্প, বরিশাল বিভাগের উপজেলা ও ইউনিয়ন সড়ক প্রশস্তকরন প্রকল্প উল্লেখ্য যোগ্য।
এদিকে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের সড়কগুলো বেহাল হয়ে পড়ে থাকায় অটো রিক্সা, ইজিবাইক, মাটরসাইকেল সহ সকল প্রকার গাড়ি চালকদের কাছে এ সড়ক গুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে।
এদিকে গত ১৭ এপ্রিল পিরোজপুরে দুদক এর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. আমিনুল ইসলাম ২৭ জনকে অভিযুক্ত কওে পৃথক ৮টি মামলা দায়ের করেন। দুর্নীতিতে অভিযুক্ত ৫ জনকে সম্প্রতি গ্রেফতার করা হয়েছে।
জেলা দুদক কার্যালয়ে উপ-পরিচালক মো. আমিনুল ইসলাম জানান, যাচাই বাছাই করে দেখাগেছে ১৭ টি প্রকল্পে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা লোপাটের চিত্র উঠে এসেছে। এর মধ্যে ৮টি প্রকল্পের ৪০০ স্কীমের পিরোজপুর এলজিএডির সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুস ছত্তার, উপ সহকারী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম এবং হিসাব রক্ষন কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক খান ইচ্ছেমত বিভিন্ন প্রকল্প তৈরী করে ১৭৩ কোটি টাকা জেলা হিসাব রক্ষন কর্মকর্তাদের যোগ সাজশে আত্মসাত করেছেন । এর সাথে পিরোজপুর-২ আসনের সাবেক সাংসদ মহিউদ্দিন মহারাজ, তার ভাই ভাণ্ডারিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মিরাজুল ইসলামসহ তাদের অন্য ভাই ও স্ত্রীরাও জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে।
দুদকের উপ-পরিচালক বলেন, বর্তমানে ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং তদন্ত চলা কালে আরও কারো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তাদেরকেও আসামী করা হবে। ৮টি মামলায়ই আসামী
আছেন পিরোজপুর এলজিএডির সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুস ছত্তার, উপ সহকারী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম এবং হিসাব রক্ষন কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক খান।
ভাণ্ডারিয়া উপজেলার চিংগুড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা কৃষক শহিদুল ইসলাম জানান, আমাদের গ্রামের রাস্তাটি একটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা । এ রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ, স্কুল কলেজ মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা যাতায়াত করে। কিন্তু সড়কের পরিস্থিতি এতই খারাপ যে মানুষের পায়ে হেটে চলাও চরম কষ্টের। নদমুলা গ্রামের অটোচালক হানিফ হাওলাদার বলেন,আমাদের এ অঞ্চলের প্রায় মানুষের উপার্জনের একমাত্র মাধ্যম হলো অটো রিক্সা এবং ভ্যান গাড়ি। সড়কের দুরবস্থার কারণে আমাদের সড়কে গাড়ি চালানো ভোগান্তির। প্রায় ৯ মাস এই গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটির দুই পাশে গর্ত করে ফেলে রাখা হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে গাড়ি চালানোর কোন উপায় নেই। আমরা এর দ্রুত এর প্রতিকার চাই।
স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন জানান,আমরা শুনেছি এই রাস্তার পুরো বরাদ্দেকৃত টাকা উত্তোলন করে প্রভাবশালী ঠিকাদার লাপাত্তা। এখন রাস্তা বেহাল হয়ে পড়ে আছে। হঠাৎ কোন স্থানে আগুন লাগলে অথবা কোন মানুষ গুরুতর অসুস্থ হলে রাস্তার এই খারাপ অবস্থা থাকায় ফায়ার সার্ভিস, এম্বুলেন্স যাতায়াত করা অসম্ভব। শিক্ষার্থীদের স্কুল কলেজ মাদ্রাসায় যাতায়াতে ব্যাপক দুর্ভোগের শিকার হতে হয়। তাই আমরা প্রশাসনের কাছে অতি দ্রুত রাস্তা সংস্কারের দাবি জানাচ্ছি।
এ ব্যাপারে ভান্ডারিয়া উপজেলা প্রকৌশলী মো. মোঃ ইমতিয়াজ হোসাইন রাসেল (অঃদঃ )বলেন, আমি নতুন এসেছি এটা এখন রাষ্ট্রিয় সিদ্ধান্ত ছাড়া আমাদের কিছুই করা নেই। কারণ এ প্রকল্পের ঠিকাদারের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। যা কিছু সিন্ধান্ত প্রধান প্রকৌশলী কাছ থেকে আসতে হবে।
















