ঢাকা ০৭:০২ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

মহাসড়ক নয় মৃত্যুফাঁদ

স্টাফ রিপোর্টার
  • আপডেট সময় : ১২:০৮:০৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ ৩৬ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার মাদ্রাসাছাত্র ফাহিম। বয়স মাত্র ৭ বছর। একটি সড়ক দুর্ঘটনায় পরিবারের সদস্যদের মর্মান্তিক মৃত্যুতে ইয়াতিম হয়ে পড়ে সে। ভাইয়ের চিকিৎসার জন্য ঢাকায় যাওয়ার পথে মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় নিহত হন তার বাবা-মা, বড় ভাই ও খালাসহ পরিবারের চার সদস্য। সাভারে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে ফাহিমের পরিবারকে বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সটি দুটি বাস ধাক্কা দেয়। এতে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়। এ দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ১৫ জন। পরিবারের সদস্যদের মৃত্যুতে ফাহিমের জীবন কঠিন হয়ে পড়েছে। অনিশ্চয়তায় ঝুলে গেছে তার ভবিষ্যৎও। ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে আরেকটি ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে। সড়কের ধলেশ্বরী টোলপ্লাজায় দ্রুতগামী বাসের ধাক্কায় প্রাইভেটকারের একই পরিবারের পাঁচজন নিহত হয়েছেন। পরদিন বাসচালক নুরুন্নবীকে আটক করা হয়। তবে, তদন্তে জানা গেছে, ওই চালকের বৈধ লাইসেন্স এবং বাসটিরও ফিটনেসের ছাড়পত্র ছিল না। এই মর্মান্তিক ঘটনাগুলো- সড়ক দুর্ঘটনায় অগণিত হারানো প্রাণের একটি ক্ষুদ্র অংশমাত্র। দুই বছর আগে ফরিদপুরে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৭ বছর বয়সী ভাইকে হারানো ঢাকার বাসিন্দা নুরুল হুদা বলেন, “কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ ছাড়া এ ধরনের হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটতেই থাকবে। দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের ওপর দোষারোপ বন্ধ করতে হবে। সব অংশীজনকে আরও বেশি দায়িত্ব নিতে হবে। সর্বস্তরে সচেতনতা বৃদ্ধি ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করাও জরুরি।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বাংলাদেশে ৬,৯২৭টি সড়ক দুর্ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে। এসব দুর্ঘটনায় ৭,২৯৪ জন নিহত ও ১২,০১৯ জন আহত হয়েছেন। সংগঠিত দুর্ঘটনায় ৩৯.৮৫% মোটরসাইকেল, ২১.০৪% পথচারী এবং ১৩.৪৯% যানবাহন চালক বা তাদের সহকারী ছিলেন। শুধু ঢাকায় ৩৯৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৪৬ জন নিহত ও ৪৮২ জন আহত হয়েছেন। দুঃখজনকভাবে, ১৩টি দুর্ঘটনায় স্বামী- স্ত্রী এবং সন্তান একসঙ্গে মারা গেছেন। বছরজুড়ে দুর্ঘটনায় সকল সদস্যের মৃত্যুতে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে অন্তত চারটি পরিবার। সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা আরেকটি সংগঠন যাত্রী কল্যাণ সমিতি জানিয়েছে, ২০২৪ সালে সারাদেশে দুর্ঘটনায় ৮,৫৪৩ জন নিহত এবং ১২,৬০৮ জন আহত হয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা এখনও অস্পষ্ট। সরকারি পরিসংখ্যানগুলো প্রায়শই কেবল ঘটনাস্থলে মৃত্যুর সংখ্যাটি রেকর্ড করে। তবে পরে হাসপাতালে প্রাণহানিগুলোর হিসাব প্রায়শই বাদ পড়ে যায়। বিশ্বে ৩০ দিনের মধ্যে দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুগুলোর তথ্য রেকর্ড করা হয়। কিন্তু, বাংলাদেশে সেই ধরনের ব্যাপক তথ্য সংগ্রহের কোনো ব্যবস্থা নেই।

বুয়েটের অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এআরআই) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহবুব আলম তালুকদার বলেন, সড়কে নতুন যানবাহনের প্রচলন দুর্ঘটনার হার বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। আগে অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলের এতটা প্রচলন ছিল না। এটিকে গণপরিবহন হিসেবে বিবেচনা করা উচিত নয়- এখন যা ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে, যার ফলে দুর্ঘটনা বেড়েছে। তিনি আরও বলেন, অদক্ষ চালকের গাড়ি চালানো, ফিটনেসবিহীন যানবাহনগুলো রাস্তায় ব্যাপকভাবে চলাচল করছে। এর পাশাপাশি দুর্ঘটনা ঘটলেও কর্তৃপক্ষ প্রায়শই ঘুষের বিনিময়ে অপরাধীদের ছেড়ে দেয়। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহতদের ৮০% মাথায় আঘাত পেলেও হেলমেট ব্যবহারের হার বাড়েনি। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, বেশিরভাগ দুর্ঘটনার কারণগুলোর মধ্যে অতিরিক্তি গতি, বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো এবং পথচারীদের মধ্যে সচেতনতার অভাব দায়ী। তিনি গাড়ির গতিতে প্রযুক্তিগত মনিটরিং, চালকদের জন্য সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ এবং জনসচেতনতামূলক প্রচারণার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি আরও বলেন, পরিবহন শ্রমিকদের প্রতিকূল কর্মপরিবেশ, অনির্ধারিত মজুরি এবং দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করার ফলে তাদের শারীরিক ও মানসিক চাপ সৃষ্টি করে। এর ফলে তারা বেপরোয়া গাড়ি চালান। দুর্ঘটনা কমাতে তাদের পেশাগত অধিকার নিশ্চিত করা জরুরি। তিনি সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের কাঠামোগত সংস্কার ও প্রাতিষ্ঠানিক জবাবদিহিতার আহ্বান জানান।

শিক্ষার্থীদের ব্যাপক আন্দোলনের মুখে সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ প্রবর্তন করা হয়। আইনটি উদ্দেশ্য ছিল বেপরোয়া গাড়ি চালানোর কারণে প্রাণহানি ঘটটে অভিযুক্তের পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডসহ কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা। ২০১৯ সালে সরকার যখন আইনটি প্রয়োগ করার চেষ্টা করেছিল, তখন পরিবহন সমিতিগুলো ধর্মঘট শুরু করে। যার ফলে বেশ কয়েকটি মূল বিধান প্রয়োগ করা যায়নি। ফলে নিরাপদ সড়কের প্রতিশ্রুতি অপূর্ণ থেকে যায়। অধ্যাপক তালুকদার বলেন, কোনো আইন বাস্তবায়নের আগে এর সম্ভাব্যতা, কার্যকারিতা ও সম্ভাব্য প্রতিবন্ধকতা নিরূপণের জন্য শুনানি করা উচিত। কিন্তু ২০১৮ সালের পথ নিরাপত্তা আইনের কোনো সম্ভাব্যতা যাচাই না করায় তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। আইনে একাধিক বিধান থাকলেও একসঙ্গে সবগুলো প্রয়োগ করলে পরিবহন ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটতে পারে। তবে পর্যায়ক্রমে ও সুপরিকল্পিত বাস্তবায়ন পদ্ধতি প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, আরও ভাল আইনের প্রয়োগে প্রয়োজন। কারণ, অপরাধীরা প্রায়শই প্রভাব বা আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে শাস্তি থেকে রক্ষা পায়। তিনি সড়ক নিরাপত্তা শিক্ষাকে একাডেমিক পাঠ্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত করা এবং ট্রাফিক আইন সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জনসচেতনতামূলক প্রচারণা চালুর সুপারিশ করেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রকাশিত ২০২৩ সালের সড়ক নিরাপত্তা প্রতিবেদন বলা হয়েছে, বেশিরভাগ দেশে, পথচারীদের সুরক্ষার চেয়ে মোটরগাড়ি অগ্রাধিকার পায়। বাংলাদেশ ও ভুটানে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুলায়ে সেক বলেন, বাংলাদেশে শিশুদের মৃত্যুর চতুর্থ প্রধান কারণ হলো সড়ক দুর্ঘটনা। তিনি জোর দিয়ে বলেন, সড়ক -৭ এর পাতায় দেখুন
নিরাপত্তা একটি গুরুতর বিষয়। কারণ, দুর্ঘটনা কেবল জীবনই ধ্বংস করে না, বরং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও মানব উন্নয়নকেও বাধাগ্রস্ত করে। ফাহিমসহ অসংখ্য মানুষের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা বাংলাদেশে ব্যাপক সড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থার জরুরি প্রয়োজনীয়তার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। আইনের কঠোর প্রয়োগ, পদ্ধতিগত সংস্কার এবং ব্যাপক জনসচেতনতা ছাড়া প্রতিরোধযোগ্য সড়ক দুর্ঘটনাগুলো ঘটতেই থাকবে। আর এসব দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ঘটবে এবং পরিবারগুলোকে তছনছ করে দেবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

মহাসড়ক নয় মৃত্যুফাঁদ

আপডেট সময় : ১২:০৮:০৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার মাদ্রাসাছাত্র ফাহিম। বয়স মাত্র ৭ বছর। একটি সড়ক দুর্ঘটনায় পরিবারের সদস্যদের মর্মান্তিক মৃত্যুতে ইয়াতিম হয়ে পড়ে সে। ভাইয়ের চিকিৎসার জন্য ঢাকায় যাওয়ার পথে মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় নিহত হন তার বাবা-মা, বড় ভাই ও খালাসহ পরিবারের চার সদস্য। সাভারে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে ফাহিমের পরিবারকে বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সটি দুটি বাস ধাক্কা দেয়। এতে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়। এ দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ১৫ জন। পরিবারের সদস্যদের মৃত্যুতে ফাহিমের জীবন কঠিন হয়ে পড়েছে। অনিশ্চয়তায় ঝুলে গেছে তার ভবিষ্যৎও। ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে আরেকটি ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে। সড়কের ধলেশ্বরী টোলপ্লাজায় দ্রুতগামী বাসের ধাক্কায় প্রাইভেটকারের একই পরিবারের পাঁচজন নিহত হয়েছেন। পরদিন বাসচালক নুরুন্নবীকে আটক করা হয়। তবে, তদন্তে জানা গেছে, ওই চালকের বৈধ লাইসেন্স এবং বাসটিরও ফিটনেসের ছাড়পত্র ছিল না। এই মর্মান্তিক ঘটনাগুলো- সড়ক দুর্ঘটনায় অগণিত হারানো প্রাণের একটি ক্ষুদ্র অংশমাত্র। দুই বছর আগে ফরিদপুরে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৭ বছর বয়সী ভাইকে হারানো ঢাকার বাসিন্দা নুরুল হুদা বলেন, “কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ ছাড়া এ ধরনের হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটতেই থাকবে। দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের ওপর দোষারোপ বন্ধ করতে হবে। সব অংশীজনকে আরও বেশি দায়িত্ব নিতে হবে। সর্বস্তরে সচেতনতা বৃদ্ধি ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করাও জরুরি।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বাংলাদেশে ৬,৯২৭টি সড়ক দুর্ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে। এসব দুর্ঘটনায় ৭,২৯৪ জন নিহত ও ১২,০১৯ জন আহত হয়েছেন। সংগঠিত দুর্ঘটনায় ৩৯.৮৫% মোটরসাইকেল, ২১.০৪% পথচারী এবং ১৩.৪৯% যানবাহন চালক বা তাদের সহকারী ছিলেন। শুধু ঢাকায় ৩৯৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৪৬ জন নিহত ও ৪৮২ জন আহত হয়েছেন। দুঃখজনকভাবে, ১৩টি দুর্ঘটনায় স্বামী- স্ত্রী এবং সন্তান একসঙ্গে মারা গেছেন। বছরজুড়ে দুর্ঘটনায় সকল সদস্যের মৃত্যুতে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে অন্তত চারটি পরিবার। সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা আরেকটি সংগঠন যাত্রী কল্যাণ সমিতি জানিয়েছে, ২০২৪ সালে সারাদেশে দুর্ঘটনায় ৮,৫৪৩ জন নিহত এবং ১২,৬০৮ জন আহত হয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা এখনও অস্পষ্ট। সরকারি পরিসংখ্যানগুলো প্রায়শই কেবল ঘটনাস্থলে মৃত্যুর সংখ্যাটি রেকর্ড করে। তবে পরে হাসপাতালে প্রাণহানিগুলোর হিসাব প্রায়শই বাদ পড়ে যায়। বিশ্বে ৩০ দিনের মধ্যে দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুগুলোর তথ্য রেকর্ড করা হয়। কিন্তু, বাংলাদেশে সেই ধরনের ব্যাপক তথ্য সংগ্রহের কোনো ব্যবস্থা নেই।

বুয়েটের অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এআরআই) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহবুব আলম তালুকদার বলেন, সড়কে নতুন যানবাহনের প্রচলন দুর্ঘটনার হার বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। আগে অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলের এতটা প্রচলন ছিল না। এটিকে গণপরিবহন হিসেবে বিবেচনা করা উচিত নয়- এখন যা ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে, যার ফলে দুর্ঘটনা বেড়েছে। তিনি আরও বলেন, অদক্ষ চালকের গাড়ি চালানো, ফিটনেসবিহীন যানবাহনগুলো রাস্তায় ব্যাপকভাবে চলাচল করছে। এর পাশাপাশি দুর্ঘটনা ঘটলেও কর্তৃপক্ষ প্রায়শই ঘুষের বিনিময়ে অপরাধীদের ছেড়ে দেয়। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহতদের ৮০% মাথায় আঘাত পেলেও হেলমেট ব্যবহারের হার বাড়েনি। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, বেশিরভাগ দুর্ঘটনার কারণগুলোর মধ্যে অতিরিক্তি গতি, বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো এবং পথচারীদের মধ্যে সচেতনতার অভাব দায়ী। তিনি গাড়ির গতিতে প্রযুক্তিগত মনিটরিং, চালকদের জন্য সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ এবং জনসচেতনতামূলক প্রচারণার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি আরও বলেন, পরিবহন শ্রমিকদের প্রতিকূল কর্মপরিবেশ, অনির্ধারিত মজুরি এবং দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করার ফলে তাদের শারীরিক ও মানসিক চাপ সৃষ্টি করে। এর ফলে তারা বেপরোয়া গাড়ি চালান। দুর্ঘটনা কমাতে তাদের পেশাগত অধিকার নিশ্চিত করা জরুরি। তিনি সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের কাঠামোগত সংস্কার ও প্রাতিষ্ঠানিক জবাবদিহিতার আহ্বান জানান।

শিক্ষার্থীদের ব্যাপক আন্দোলনের মুখে সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ প্রবর্তন করা হয়। আইনটি উদ্দেশ্য ছিল বেপরোয়া গাড়ি চালানোর কারণে প্রাণহানি ঘটটে অভিযুক্তের পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডসহ কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা। ২০১৯ সালে সরকার যখন আইনটি প্রয়োগ করার চেষ্টা করেছিল, তখন পরিবহন সমিতিগুলো ধর্মঘট শুরু করে। যার ফলে বেশ কয়েকটি মূল বিধান প্রয়োগ করা যায়নি। ফলে নিরাপদ সড়কের প্রতিশ্রুতি অপূর্ণ থেকে যায়। অধ্যাপক তালুকদার বলেন, কোনো আইন বাস্তবায়নের আগে এর সম্ভাব্যতা, কার্যকারিতা ও সম্ভাব্য প্রতিবন্ধকতা নিরূপণের জন্য শুনানি করা উচিত। কিন্তু ২০১৮ সালের পথ নিরাপত্তা আইনের কোনো সম্ভাব্যতা যাচাই না করায় তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। আইনে একাধিক বিধান থাকলেও একসঙ্গে সবগুলো প্রয়োগ করলে পরিবহন ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটতে পারে। তবে পর্যায়ক্রমে ও সুপরিকল্পিত বাস্তবায়ন পদ্ধতি প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, আরও ভাল আইনের প্রয়োগে প্রয়োজন। কারণ, অপরাধীরা প্রায়শই প্রভাব বা আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে শাস্তি থেকে রক্ষা পায়। তিনি সড়ক নিরাপত্তা শিক্ষাকে একাডেমিক পাঠ্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত করা এবং ট্রাফিক আইন সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জনসচেতনতামূলক প্রচারণা চালুর সুপারিশ করেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রকাশিত ২০২৩ সালের সড়ক নিরাপত্তা প্রতিবেদন বলা হয়েছে, বেশিরভাগ দেশে, পথচারীদের সুরক্ষার চেয়ে মোটরগাড়ি অগ্রাধিকার পায়। বাংলাদেশ ও ভুটানে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুলায়ে সেক বলেন, বাংলাদেশে শিশুদের মৃত্যুর চতুর্থ প্রধান কারণ হলো সড়ক দুর্ঘটনা। তিনি জোর দিয়ে বলেন, সড়ক -৭ এর পাতায় দেখুন
নিরাপত্তা একটি গুরুতর বিষয়। কারণ, দুর্ঘটনা কেবল জীবনই ধ্বংস করে না, বরং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও মানব উন্নয়নকেও বাধাগ্রস্ত করে। ফাহিমসহ অসংখ্য মানুষের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা বাংলাদেশে ব্যাপক সড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থার জরুরি প্রয়োজনীয়তার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। আইনের কঠোর প্রয়োগ, পদ্ধতিগত সংস্কার এবং ব্যাপক জনসচেতনতা ছাড়া প্রতিরোধযোগ্য সড়ক দুর্ঘটনাগুলো ঘটতেই থাকবে। আর এসব দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ঘটবে এবং পরিবারগুলোকে তছনছ করে দেবে।