ঢাকা ০৯:১৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

মাগুরা জেলা বিএনপির ত্যাগী নেতারা আজ কোণঠাসা

এইচ.এন কামরুল ইসলাম, মাগুরা
  • আপডেট সময় : ১০ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

মাগুরার রাজনৈতিক অঙ্গনে এক সময় যেসব সাহসী নেতার নাম শুনলেই শাসক দল ভয়ে আঁতকে উঠত, আজ সেই ত্যাগী নেতাদের অবস্থান অনেকটাই কোণঠাসা। সাধারণ নেতাকর্মীদের মতে, এই মানুষগুলো না থাকলে আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনামলে মাগুরা জেলায় বিএনপির অস্তিত্বই হয়তো টিকিয়ে রাখা সম্ভব হতো না।
২০১৫ সাল থেকে ২০২৪ সালের ৫ই আগস্ট পর্যন্ত আন্দোলনের প্রতিটি ধাপে তারা ছিলেন মাগুরা জেলা বিএনপির প্রধান ভরসা। রাজপথে পুলিশের লাঠিচার্জ, মামলা, হুলিয়া কিংবা কারাগারের নির্যাতন সবই বুক পেতে সহ্য করেছেন। বারবার গ্রেপ্তার হয়েছেন, পরিবার পরিজনকে ফেলে রাজপথে থেকেছেন। কিন্তু আজ যখন রাজনৈতিক মাঠ কিছুটা উন্মুক্ত, তখন সুবিধাভোগী ও সুযোগসন্ধানীদের দাপটে এসব ত্যাগী নেতারা ক্রমেই অমূল্যায়িত হয়ে পড়ছেন। স্মরণীয় দুঃসময়ের মুখগুলো ২০১৮ সালের নির্বাচনে আন্দোলনের ডাক আসার সাথে সাথে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন সাবেক ছাত্রনেতা ও বর্তমান জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য গোলাম আজম মিয়া সাবু, যুগ্ন আহবায়ক পিকুল খান, ফরিদ খানসহ অসংখ্য নেতা-কর্মী।কারাগারের ভেতরে নির্মম নির্যাতন সহ্য করেছেন আলী আহমেদ। আন্দোলনের ফ্রন্টলাইনে ছিলেন আশরাজ্জামান শামীম, যুবদল সভাপতি এডভোকেট ওয়াসিকুর রহমান কল্লোল সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ আহমেদ, যুবদলের তনময়, সদর উপজেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মানিক হাসানুর রহমান হাসু, মিজানুর রহমান, আলমগীর হোসেন, আব্দুর রহিম, শহীদ মেহেদী হাসান রাব্বি, শফিকুল ইসলাম শফিক প্রমুখ।
এছাড়া পারনান্দুয়ালি ও ভাড়াশিয়া বড়নোতল গ্রামের ইবাদত হোসেন, ইমরান মোল্লা, করিমুল মুন্সি, আমিরুল ইসলাম, মারুফ, আলী হোসেন, রানা, কুতুব উদ্দিনসহ অসংখ্য নেতাকর্মী মাসের পর মাস মামলা-হামলার ভয়ে গ্রামছাড়া ছিলেন। শালিখার জাহাঙ্গীর হোসেন পুলিশের গুলিতে আহত হন, মহম্মদপুরের শাহীনুর রহমান লুকিয়ে থাকেন মাসের পর মাস।পরিবার ও নিঃশব্দ সংগ্রাম এই নেতাদের পরিবারগুলোও সমানতালে ভুগেছে। স্বামী বা পুত্র কারাগারে, স্ত্রী সন্তান নিয়ে রাস্তায় দৌড়াদৌড়ি সবই তাদের নিত্যদিনের বাস্তবতা। স্কুল-কলেজে সন্তানদের খরচ জোগাতে অনেক মা ধারদেনার বোঝা নিয়েছেন। সামাজিক চাপ, আর্থিক ক্ষতি, ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও এসব পরিবার দমে যায়নি।
কিন্তু আজ দুঃখজনকভাবে ছবির ওই পাঁচজন নেতাকে ঠুনকো অভিযোগে বহিষ্কার করা হয়েছে। যাদের ত্যাগে রাজপথে বিএনপির অস্তিত্ব টিকে ছিল, আজ তারাই অযাচিতভাবে অবহেলিত। রাজনৈতিক বিশ্লেষণ: মাগুরা থেকে জাতীয় প্রেক্ষাপট রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিএনপির সামনে সবচেয়ে বড় সংকট শুধু মাগুরায় নয়, সারাদেশেই এক ত্যাগী নেতৃত্বের অবমূল্যায়ন ও সুযোগসন্ধানীদের উত্থান।
ঢাকা থেকে গ্রাম পর্যায়ে দেখা যাচ্ছে, দুঃসময়ের যোদ্ধারা ধীরে ধীরে প্রান্তিক হয়ে যাচ্ছেন। এর ফাঁক গলে দলে প্রবেশ করছে ব্যবসায়ী, সুবিধাভোগী বা ক্ষমতার আশায় ঘুরতে থাকা লোকেরা। ফলে দল যখন আন্দোলনে থাকে, তখন মাটির নেতাকর্মীদের ত্যাগের ওপর ভর করে এগোয়; কিন্তু স্বস্তির সময় এলে মাঠের মানুষগুলো অন্ধকারে চলে যান।
জাতীয়ভাবে এ ধরণের প্রবণতা বিএনপির জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। কারণ অতীতে ২০১৩-১৪ কিংবা ২০১৮ সালের আন্দোলন দমাতে রাষ্ট্রযন্ত্র যতটা ভূমিকা রেখেছিল, তার চেয়েও বেশি কাজ করেছে মাঠের নেতাদের অনমনীয় সাহস। আগামী দিনে যদি আবার দুঃসময় আসে, অথচ এই নেতাদের অনেকে হতাশা থেকে দূরে সরে যান, তাহলে দলীয় আন্দোলন আর আগের মতো শক্তিশালী হবে না। একইসাথে আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের সাংগঠনিক বিস্তার ও রাষ্ট্রক্ষমতার দাপট মোকাবিলায় বিএনপির দরকার ছিল নিবেদিতপ্রাণ, ত্যাগী নেতৃত্ব। কিন্তু তাদের অবমূল্যায়নের ফলে সংগঠন দুর্বল হয়ে পড়ছে, যা শুধু মাগুরা নয় সারাদেশেই বিরোধী রাজনীতিকে সংকটে ঠেলে দিচ্ছে।
ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিএনপির সামনে এখন দুটি বড় দিকনির্দেশনা ১. ত্যাগী নেতাদের যথাযথ মূল্যায়ন: জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে যারা সত্যিকারের ত্যাগ দিয়ে আন্দোলন টিকিয়ে রেখেছেন, তাদের ফিরিয়ে এনে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কৌশলের সাথে যুক্ত করা। ২. দলের ভেতরের সুবিধাভোগীদের দাপট কমানো: নইলে বিরোধী রাজনীতি শুধু প্রতীকী হয়ে পড়বে, মাঠ হারিয়ে ফেলবে।
মাগুরার সাধারণ কর্মীরা তাই বলছেন, ত্যাগী নেতাদের ছাড়া বিএনপি টিকতে পারবে না। রাজনৈতিক ইতিহাস সাক্ষী, মাঠের রাজনীতির মূল শক্তি কখনো সুবিধাভোগীরা নয় বরং ত্যাগী কর্মীরাই।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

মাগুরা জেলা বিএনপির ত্যাগী নেতারা আজ কোণঠাসা

আপডেট সময় :

মাগুরার রাজনৈতিক অঙ্গনে এক সময় যেসব সাহসী নেতার নাম শুনলেই শাসক দল ভয়ে আঁতকে উঠত, আজ সেই ত্যাগী নেতাদের অবস্থান অনেকটাই কোণঠাসা। সাধারণ নেতাকর্মীদের মতে, এই মানুষগুলো না থাকলে আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনামলে মাগুরা জেলায় বিএনপির অস্তিত্বই হয়তো টিকিয়ে রাখা সম্ভব হতো না।
২০১৫ সাল থেকে ২০২৪ সালের ৫ই আগস্ট পর্যন্ত আন্দোলনের প্রতিটি ধাপে তারা ছিলেন মাগুরা জেলা বিএনপির প্রধান ভরসা। রাজপথে পুলিশের লাঠিচার্জ, মামলা, হুলিয়া কিংবা কারাগারের নির্যাতন সবই বুক পেতে সহ্য করেছেন। বারবার গ্রেপ্তার হয়েছেন, পরিবার পরিজনকে ফেলে রাজপথে থেকেছেন। কিন্তু আজ যখন রাজনৈতিক মাঠ কিছুটা উন্মুক্ত, তখন সুবিধাভোগী ও সুযোগসন্ধানীদের দাপটে এসব ত্যাগী নেতারা ক্রমেই অমূল্যায়িত হয়ে পড়ছেন। স্মরণীয় দুঃসময়ের মুখগুলো ২০১৮ সালের নির্বাচনে আন্দোলনের ডাক আসার সাথে সাথে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন সাবেক ছাত্রনেতা ও বর্তমান জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য গোলাম আজম মিয়া সাবু, যুগ্ন আহবায়ক পিকুল খান, ফরিদ খানসহ অসংখ্য নেতা-কর্মী।কারাগারের ভেতরে নির্মম নির্যাতন সহ্য করেছেন আলী আহমেদ। আন্দোলনের ফ্রন্টলাইনে ছিলেন আশরাজ্জামান শামীম, যুবদল সভাপতি এডভোকেট ওয়াসিকুর রহমান কল্লোল সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ আহমেদ, যুবদলের তনময়, সদর উপজেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মানিক হাসানুর রহমান হাসু, মিজানুর রহমান, আলমগীর হোসেন, আব্দুর রহিম, শহীদ মেহেদী হাসান রাব্বি, শফিকুল ইসলাম শফিক প্রমুখ।
এছাড়া পারনান্দুয়ালি ও ভাড়াশিয়া বড়নোতল গ্রামের ইবাদত হোসেন, ইমরান মোল্লা, করিমুল মুন্সি, আমিরুল ইসলাম, মারুফ, আলী হোসেন, রানা, কুতুব উদ্দিনসহ অসংখ্য নেতাকর্মী মাসের পর মাস মামলা-হামলার ভয়ে গ্রামছাড়া ছিলেন। শালিখার জাহাঙ্গীর হোসেন পুলিশের গুলিতে আহত হন, মহম্মদপুরের শাহীনুর রহমান লুকিয়ে থাকেন মাসের পর মাস।পরিবার ও নিঃশব্দ সংগ্রাম এই নেতাদের পরিবারগুলোও সমানতালে ভুগেছে। স্বামী বা পুত্র কারাগারে, স্ত্রী সন্তান নিয়ে রাস্তায় দৌড়াদৌড়ি সবই তাদের নিত্যদিনের বাস্তবতা। স্কুল-কলেজে সন্তানদের খরচ জোগাতে অনেক মা ধারদেনার বোঝা নিয়েছেন। সামাজিক চাপ, আর্থিক ক্ষতি, ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও এসব পরিবার দমে যায়নি।
কিন্তু আজ দুঃখজনকভাবে ছবির ওই পাঁচজন নেতাকে ঠুনকো অভিযোগে বহিষ্কার করা হয়েছে। যাদের ত্যাগে রাজপথে বিএনপির অস্তিত্ব টিকে ছিল, আজ তারাই অযাচিতভাবে অবহেলিত। রাজনৈতিক বিশ্লেষণ: মাগুরা থেকে জাতীয় প্রেক্ষাপট রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিএনপির সামনে সবচেয়ে বড় সংকট শুধু মাগুরায় নয়, সারাদেশেই এক ত্যাগী নেতৃত্বের অবমূল্যায়ন ও সুযোগসন্ধানীদের উত্থান।
ঢাকা থেকে গ্রাম পর্যায়ে দেখা যাচ্ছে, দুঃসময়ের যোদ্ধারা ধীরে ধীরে প্রান্তিক হয়ে যাচ্ছেন। এর ফাঁক গলে দলে প্রবেশ করছে ব্যবসায়ী, সুবিধাভোগী বা ক্ষমতার আশায় ঘুরতে থাকা লোকেরা। ফলে দল যখন আন্দোলনে থাকে, তখন মাটির নেতাকর্মীদের ত্যাগের ওপর ভর করে এগোয়; কিন্তু স্বস্তির সময় এলে মাঠের মানুষগুলো অন্ধকারে চলে যান।
জাতীয়ভাবে এ ধরণের প্রবণতা বিএনপির জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। কারণ অতীতে ২০১৩-১৪ কিংবা ২০১৮ সালের আন্দোলন দমাতে রাষ্ট্রযন্ত্র যতটা ভূমিকা রেখেছিল, তার চেয়েও বেশি কাজ করেছে মাঠের নেতাদের অনমনীয় সাহস। আগামী দিনে যদি আবার দুঃসময় আসে, অথচ এই নেতাদের অনেকে হতাশা থেকে দূরে সরে যান, তাহলে দলীয় আন্দোলন আর আগের মতো শক্তিশালী হবে না। একইসাথে আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের সাংগঠনিক বিস্তার ও রাষ্ট্রক্ষমতার দাপট মোকাবিলায় বিএনপির দরকার ছিল নিবেদিতপ্রাণ, ত্যাগী নেতৃত্ব। কিন্তু তাদের অবমূল্যায়নের ফলে সংগঠন দুর্বল হয়ে পড়ছে, যা শুধু মাগুরা নয় সারাদেশেই বিরোধী রাজনীতিকে সংকটে ঠেলে দিচ্ছে।
ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিএনপির সামনে এখন দুটি বড় দিকনির্দেশনা ১. ত্যাগী নেতাদের যথাযথ মূল্যায়ন: জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে যারা সত্যিকারের ত্যাগ দিয়ে আন্দোলন টিকিয়ে রেখেছেন, তাদের ফিরিয়ে এনে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কৌশলের সাথে যুক্ত করা। ২. দলের ভেতরের সুবিধাভোগীদের দাপট কমানো: নইলে বিরোধী রাজনীতি শুধু প্রতীকী হয়ে পড়বে, মাঠ হারিয়ে ফেলবে।
মাগুরার সাধারণ কর্মীরা তাই বলছেন, ত্যাগী নেতাদের ছাড়া বিএনপি টিকতে পারবে না। রাজনৈতিক ইতিহাস সাক্ষী, মাঠের রাজনীতির মূল শক্তি কখনো সুবিধাভোগীরা নয় বরং ত্যাগী কর্মীরাই।