মানবতার ঠিকানা টিএসটি!
- আপডেট সময় : ০৯:৩৬:৩৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৫ অগাস্ট ২০২৪ ১৭২ বার পড়া হয়েছে
টিএসসিতে ঠাঁই নেই, ত্রাণসামগ্রী নেওয়া হচ্ছে কেন্দ্রীয় মাঠে
শুক্রবার রাত পর্যন্ত ১ কোটি ৭২ লাখ ২৬ হাজার ৩৬৯ টাকা এবং শনিবার সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত
প্রায় ১ কোটি ৮৬ লাখ টাকা নগদ অর্থ সংগ্রহ হয়েছে
আমিনুল হক ভূইয়া
বানভাসি মানুষের সহায়তায় সমগ্র বাংলাদেশ এককাতারে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশের দক্ষিণ-পূর্বঞ্চলের কয়েকটি জেলা ভয়াবহ বন্যাকবলিত।
ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য থেকে জলবিদ্যুতের গেট খুলে দেওয়া বাংলাদেশ আকস্মিক বন্যার কবলে পড়ে। ফেণী, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ির লাখো মানুষ পানিবন্দী। মৃতের সংখ্যা ২০ ছাড়িয়েছে। যদিও পানি ছাড়ার কথা অস্বীকার করে ভারত।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান বলেন, ভারত পানি ছাড়ার আগে বাংলাদেশকে জানায়নি। এটা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্গন।
বন্যাকবলিতদের সহায়তায় গত বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি প্রাঙ্গণে ত্রাণসামগ্রী সংগ্রহের কার্যক্রম শুরু করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এরই মধ্যে ২৫ ট্রাক ত্রাণ সামগ্রী পাঠানো হয়েছে বন্যাকবলিত এলাকায়।
ত্রাণ কার্যক্রমে সাধারণ মানুষের অভূতপূর্ব সাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজপথের আন্দোলনের কথা সরণ করিয়ে দেয়। মানুষের ঐক্যবদ্ধ অংশ গ্রহণ কত বড় বিজয় নিয়ে আসতে পারে, তারই প্রমাণ আবারও দিল এদেশের সকল শ্রেণীপেশার মানুষ।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের হাত ধরে বিজয় অর্জনের পরও পরও দেখা দেয় ভয়াবহ বন্যা। কিন্তু সবরকমের ক্লান্তি ধুয়ে মুছে বানভাসি মানুষকে রক্ষায় ফের মাঠে নামে তারা। শুরু করে ত্রাণসামগ্রী সংগ্রহ কার্যক্রম।
এদেশের সাধারণ মানুষ যেকোন কল্যাকর কাজের জন্য ঝাপিয়ে পড়ার ইতিহাস গোটা দুনিয়ার সামনে উদারহরণ হয়ে আছে। আবারও বাঙালি তার প্রমাণ দিলো ত্রাণসামগ্রী নিয়ে আর্তের পাশে দাঁড়িয়ে।
কেউ হাতে করে, কেউ বা রিকশাযোগে, আবার কেউ মিনিট্রাকে করে ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে হাজরি হচ্ছেন টিএসটিতে। এ যেন মানবতার টিকানা টিএসটি। কেউ নগদ টাকা দিচ্ছেন।
বিস্মিত সহকর্মী তুষার। এতো মানুষ কোথা থেকে এলো? একি মানুষ না ফেরেস্তা! লাইন ধরে নগদ টাকা, ত্রাণসামগ্রী অর্থাৎ যে যতটুকু পারছে, তাই দিয়ে দিচ্ছে। ভাবতে পারছে না তরুণ তুষার। কারণ, সেহেতো একাত্তর দেখেনি।
এদেশের কৃষক, কামার-কুমার খেটে খাওয়া মানুষ রাত জেগে ক্লান্ত মুক্তিযোদ্ধা ভাইদের প্রহরা দিয়েছে। সাধারণ মানুষকে ঘরের ভেতরে থাকতে দিয়ে তারা পরিবার নিয়ে ঘরের বারান্দায়, গাছতলায় মাদুর বিছিয়ে রাত কাটিয়েছে। নিজেরা না খেয়ে মানুষকে খাইয়েছে। প্রতিটি সংকট মুহূর্তকে সঙ্গী করে বীরদর্পে কাজ করেছে। মূলত তারাই প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। অথচ সুবিধাবাদীরা ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বানিয়ে ফায়দা লুটের বংশ বিস্তার করেছে। এ ক্ষেত্রে প্রকৃত মানুষগুলো রয়ে গেছে আড়ালে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সেই পরাধীনতার শিখল ভেঙ্গে দিয়েছে। যতরকমের অনিয়ম-অবিচারের মূল উপড়ে ফেলে নতুন দিনের যাত্রা সূচনা করেছে। সেই আলোর পথে হেটেই আজ সাধারণ মানুষ আর্তের সেবার মিছিলে হাটতে শুরু করেছেন।
যারা ত্রান দিচ্ছেন তাদের নাম ঠিকানা লিখে রাখা হচ্ছে। তুষার বললো, অনেক বিক্ষুকও তার জমানো টাকা নিয়ে হাজির হয়েছেন টিএসটিসিতে। ছোট্ট শিশুটি তার মাটির ব্যাংক নিয়ে হাজির হয়েছে বাবার কাধে চড়ে। এই আবেগের ঠিকানা বাংলাদেশ।
ঠাঁই নেই টিএসসিতে
বন্যার্তদের ত্রাণ দিতে এসে কেউ কেউ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিজেকেও জড়িয়ে নেন কাজে। দীর্ঘ লাইনে দাড়িয়ে ত্রাণ সামগ্রী দিয়ে আর্তের সেবার এই মানবিকমূল্যবোধের শিক্ষাও পেলাম আমরা।
ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে আসা মানুষের এতোইটা চাপ যে টিএসটি এলাকায় যানচলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। ত্রাণসামগ্রীতে পূর্ণ হয়ে গেছে টিএসটি। এখানে ঠাঁই নেই বলে এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে চালু হয়েছে ত্রাণসামগ্রী গ্রহণ কার্যক্রম। শনিবার রাতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
টিএসসি এলাকায় অন্তত ৫০০ সেচ্ছাসেবী বিরামহীন প্যাকেজিংয়ের কাজ করছেন। কেউ কেউ সারাদিনের কাজে ক্লান্ত হয়ে মাদুর বিছিয়ে বিশ্রাম নিচ্ছেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে গত বৃহস্পতিবার থেকে শিক্ষার্থীরা গণত্রাণ সংগ্রহ কর্মসূচি শুরু করেন। তৃতীয়দিনেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিপুল সংখ্যক ত্রাণদাতার উপস্থিতি দেখা গেছে।
টিএসসির প্রবেশপথে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি বুথ রয়েছে। সেখানে ঢাকার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ নগদ অর্থ জমা দিচ্ছেন। নগদ ও বিকাশের মাধ্যমে অনলাইনেও টাকা উত্তোলন করা হচ্ছে।
গত দুইদিনে ত্রাণসামগ্রী নিয়ে অন্তত ২০টি ট্রাক টিএসসি ছেড়ে বন্যাদুর্গত এলাকায়। বৃহস্পতিবার গিয়েছে ৫টি ট্রাক ত্রাণ। মানুষ কতটা স্বতঃস্ফূর্তভাবে আর্তের সহায়তায় এগিয়ে এসেছে।