ঢাকা ১১:০০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শে চলছে নুরের চিকিৎসা

বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ১০৫ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

গন অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের জ্ঞান ফিরলেও তিনি শঙ্কা মুক্ত নন। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) পর্যবেক্ষনে রাখা হয়েছে।
এদিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দ্রুত এবং উন্নত চিকিৎসায় নুরের চিকিৎসায় মেডিকেল বোর্ড গঠন করেছে। ৫ সদস্য বিশিষ্ঠ এই মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শ অনুযায়ী ভিন্ন মাত্রায় নুরের চিকিৎসা দেয়া শুরু হয়েছে। এদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিচালক হাসপাতালে ভীড় না করার জন্য সকলের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, রাজধানীর কাকরাইলে হামলায় গুরুতর আহত গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের চিকিৎসায় উচ্চ পর্যায়ের মেডিকেল বোর্ড গঠন করেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল। গত শনিবার দুপুরে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, নুরুল হকের চিকিৎসায় শুক্রবার রাতেই সর্বোচ্চ পর্যায়ের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। তিনি জানান, নুরের মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে, নাকের হাড় ভেঙে গেছে। এ কারণেই তার অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়েছিল। এখন রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়েছে ও জ্ঞান ফিরেছে। ৪৮ ঘণ্টার আগে তিনি আশঙ্কামুক্ত, সেটি বলা সম্ভব নয়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরো সার্জন সহযোগী অধ্যাপক জাহিদ রায়হান বলেন, ‘নাক, কান, মাথায় মারাত্মক আঘাত পেয়েছেন নুর। মাথা ও নাকের হাড় ভেঙ্গেছে, এখনও শঙ্কামুক্ত নয়। মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছে।’ সকালে নুরুল হক নুরকে সিটি স্ক্যান ও এক্স-রে শেষে আবার আইসিইউতে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাহিদ রায়হান।
অপরদিকে নুরের ওপর হামলা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, গভীর ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের অংশ বলে জানান অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। সাবেক ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুরের ওপর হামলাকে কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং একটি গভীর ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের অংশ হিসেবে অভিহিত করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। গত শনিবার ঝিনাইদহে এক অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।
এর আগে শুক্রবার রাত ১১টা ২০ মিনিটের দিকে গুরুতর আহত অবস্থায় নুরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেয়া হয়। ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের আবাসিক সার্জন ডা. মোস্তাক আহমেদ জানিয়েছেন, নুরের মাথায় আঘাতের কারণে রক্তক্ষরণ হয়েছে, নাক ও ডান চোয়ালের হাড় ভেঙে গেছে। বর্তমানে তিনি নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন। ডা. মোস্তাক জানান, মাথার সিটিস্ক্যান রিপোর্টে রক্তক্ষরণের পাশাপাশি সামান্য ফোলা দেখা গেছে। চোখ ও মুখ ফুলে গেছে, ডান চোখে রক্ত জমাট বেঁধেছে। তবে শরীরের অন্য কোথাও গুরুতর আঘাত মেলেনি।
নিউরোসার্জারি বিভাগের চিকিৎসক ডা. জাহিদ রায়হান বলেন, নুর এখনো শঙ্কামুক্ত নন। মাথার ভেতরে পানি জমাট বাঁধলেও আপাতত অপারেশনের প্রয়োজন নেই বলে ধারণা চিকিৎসকদের। নাক-কান-গলা, চক্ষু, নিউরোসার্জারি ও ক্যাজুয়েলটি বিভাগের চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ড নুরের চিকিৎসা পর্যবেক্ষণ করছে। বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম জানান, নুর বর্তমানে অক্সিজেন সম্বলিত বেডে ভর্তি আছেন এবং গুরুতর আহত। পরিবার দেশবাসীর কাছে তার সুস্থতার জন্য দোয়া চেয়েছে।
অপরদিকে নুর ইস্যুতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নামে ভুয়া অডিও নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কঠোর সতর্কবার্তা দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এর নামে একটি ভুয়া বা এআই-সৃষ্ট অডিও ছড়িয়ে পড়েছে। ২৫ সেকেন্ডের ওই অডিও ক্লিপে তাকে ভিপি নুরের বিষয়ে এক অজ্ঞাতনামা পুলিশ কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দিতে শোনা যায় বলে দাবি করা হচ্ছে। তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় স্পষ্ট জানিয়েছে এটি সম্পূর্ণ ভুয়া এবং বিভ্রান্তিকর।
গতকাল শনিবার মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়, প্রকৃতপক্ষে এটি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কণ্ঠ নয়। অডিওটি এআই প্রযুক্তি বা অন্য কোনোভাবে বিকৃত কণ্ঠ ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে। সচেতন নাগরিকরা সহজেই বুঝতে পারবেন যে এটি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কণ্ঠস্বর নয়। বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, ‘ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট’ সহ বিভিন্ন ফেইক ফেসবুক আইডি থেকে ছড়ানো ২৫ সেকেন্ডের ভুয়া অডিও রেকর্ডটিতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে ভিপি নুরের বিষয়ে অজ্ঞাতনামা পুলিশ অফিসারকে নির্দেশনা দিতে শোনা যায়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, এ ধরনের অসত্য ও বিভ্রান্তিকর অডিও রেকর্ড জনমনে ভুল বার্তা ছড়াচ্ছে, যা জনশৃঙ্খলা ও আইনের পরিপন্থী। এতে সমাজে গুজবের সৃষ্টি হচ্ছে এবং জনগণ প্রকৃত তথ্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
মন্ত্রণালয় ভুয়া অডিও তৈরি ও প্রচারের ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। সেই সঙ্গে দায়ীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। সতর্কবার্তায় আরও বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে এ ধরনের ভুয়া কনটেন্ট তৈরি বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানোর চেষ্টা করলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শে চলছে নুরের চিকিৎসা

আপডেট সময় :

গন অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের জ্ঞান ফিরলেও তিনি শঙ্কা মুক্ত নন। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) পর্যবেক্ষনে রাখা হয়েছে।
এদিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দ্রুত এবং উন্নত চিকিৎসায় নুরের চিকিৎসায় মেডিকেল বোর্ড গঠন করেছে। ৫ সদস্য বিশিষ্ঠ এই মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শ অনুযায়ী ভিন্ন মাত্রায় নুরের চিকিৎসা দেয়া শুরু হয়েছে। এদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিচালক হাসপাতালে ভীড় না করার জন্য সকলের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, রাজধানীর কাকরাইলে হামলায় গুরুতর আহত গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের চিকিৎসায় উচ্চ পর্যায়ের মেডিকেল বোর্ড গঠন করেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল। গত শনিবার দুপুরে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, নুরুল হকের চিকিৎসায় শুক্রবার রাতেই সর্বোচ্চ পর্যায়ের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। তিনি জানান, নুরের মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে, নাকের হাড় ভেঙে গেছে। এ কারণেই তার অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়েছিল। এখন রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়েছে ও জ্ঞান ফিরেছে। ৪৮ ঘণ্টার আগে তিনি আশঙ্কামুক্ত, সেটি বলা সম্ভব নয়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরো সার্জন সহযোগী অধ্যাপক জাহিদ রায়হান বলেন, ‘নাক, কান, মাথায় মারাত্মক আঘাত পেয়েছেন নুর। মাথা ও নাকের হাড় ভেঙ্গেছে, এখনও শঙ্কামুক্ত নয়। মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছে।’ সকালে নুরুল হক নুরকে সিটি স্ক্যান ও এক্স-রে শেষে আবার আইসিইউতে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাহিদ রায়হান।
অপরদিকে নুরের ওপর হামলা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, গভীর ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের অংশ বলে জানান অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। সাবেক ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুরের ওপর হামলাকে কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং একটি গভীর ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের অংশ হিসেবে অভিহিত করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। গত শনিবার ঝিনাইদহে এক অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।
এর আগে শুক্রবার রাত ১১টা ২০ মিনিটের দিকে গুরুতর আহত অবস্থায় নুরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেয়া হয়। ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের আবাসিক সার্জন ডা. মোস্তাক আহমেদ জানিয়েছেন, নুরের মাথায় আঘাতের কারণে রক্তক্ষরণ হয়েছে, নাক ও ডান চোয়ালের হাড় ভেঙে গেছে। বর্তমানে তিনি নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন। ডা. মোস্তাক জানান, মাথার সিটিস্ক্যান রিপোর্টে রক্তক্ষরণের পাশাপাশি সামান্য ফোলা দেখা গেছে। চোখ ও মুখ ফুলে গেছে, ডান চোখে রক্ত জমাট বেঁধেছে। তবে শরীরের অন্য কোথাও গুরুতর আঘাত মেলেনি।
নিউরোসার্জারি বিভাগের চিকিৎসক ডা. জাহিদ রায়হান বলেন, নুর এখনো শঙ্কামুক্ত নন। মাথার ভেতরে পানি জমাট বাঁধলেও আপাতত অপারেশনের প্রয়োজন নেই বলে ধারণা চিকিৎসকদের। নাক-কান-গলা, চক্ষু, নিউরোসার্জারি ও ক্যাজুয়েলটি বিভাগের চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ড নুরের চিকিৎসা পর্যবেক্ষণ করছে। বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম জানান, নুর বর্তমানে অক্সিজেন সম্বলিত বেডে ভর্তি আছেন এবং গুরুতর আহত। পরিবার দেশবাসীর কাছে তার সুস্থতার জন্য দোয়া চেয়েছে।
অপরদিকে নুর ইস্যুতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নামে ভুয়া অডিও নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কঠোর সতর্কবার্তা দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এর নামে একটি ভুয়া বা এআই-সৃষ্ট অডিও ছড়িয়ে পড়েছে। ২৫ সেকেন্ডের ওই অডিও ক্লিপে তাকে ভিপি নুরের বিষয়ে এক অজ্ঞাতনামা পুলিশ কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দিতে শোনা যায় বলে দাবি করা হচ্ছে। তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় স্পষ্ট জানিয়েছে এটি সম্পূর্ণ ভুয়া এবং বিভ্রান্তিকর।
গতকাল শনিবার মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়, প্রকৃতপক্ষে এটি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কণ্ঠ নয়। অডিওটি এআই প্রযুক্তি বা অন্য কোনোভাবে বিকৃত কণ্ঠ ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে। সচেতন নাগরিকরা সহজেই বুঝতে পারবেন যে এটি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কণ্ঠস্বর নয়। বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, ‘ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট’ সহ বিভিন্ন ফেইক ফেসবুক আইডি থেকে ছড়ানো ২৫ সেকেন্ডের ভুয়া অডিও রেকর্ডটিতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে ভিপি নুরের বিষয়ে অজ্ঞাতনামা পুলিশ অফিসারকে নির্দেশনা দিতে শোনা যায়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, এ ধরনের অসত্য ও বিভ্রান্তিকর অডিও রেকর্ড জনমনে ভুল বার্তা ছড়াচ্ছে, যা জনশৃঙ্খলা ও আইনের পরিপন্থী। এতে সমাজে গুজবের সৃষ্টি হচ্ছে এবং জনগণ প্রকৃত তথ্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
মন্ত্রণালয় ভুয়া অডিও তৈরি ও প্রচারের ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। সেই সঙ্গে দায়ীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। সতর্কবার্তায় আরও বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে এ ধরনের ভুয়া কনটেন্ট তৈরি বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানোর চেষ্টা করলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।