ঢাকা ০৪:৩৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫

লোহাগাড়া ৪০ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক সংকট: প্রতিনিয়ত ব্যহত হছে পাঠদানে

দেলোয়ার হোসেন রশিদী, লোহাগাড়া (চট্টগ্রাম)
  • আপডেট সময় : ১২২ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলায় ১০৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্য ৪০টি প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। এসব বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের শূন্যপদ ভারপ্রাপ্তদের দিয়েই চলছে শিক্ষার কার্যক্রম। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক সংকটের কারণে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে বলে জানা গেছে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে ১০৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। যার ৪টি ক্লাস্টারে ভাগ করা হয়েছে। লোহাগাড়ায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৯হাজার ৫৭৭জন।
১০৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৪০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদ শূন্য রয়েছে। যার ফলে শিক্ষার কার্যক্রম চালাতে শিক্ষক-শিক্ষিকারা রীতিমত হিমশিম খাচ্ছে।
পদুয়া ওয়াডবারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অলক কান্তি দাশ বলেন, পদ একটি দায়িত্ব দুটি পালন করতে খুব কস্ট হয়ে যায়। দ্রুত প্রধান শিক্ষক নিয়োগ নিলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার মান বাড়বে এবং আমাদের বাড়তি কাজ কমে যাবে।
আমিরাবাদ জনকল্যাণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মুক্তা দাশ বলেন, লোহাগাড়ার অনেক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই। ভারপ্রাপ্ত দিয়ে স্কুল কার্যক্রম চালাতে জটিলতা সৃষ্টি হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রধান শিক্ষক না থাকলে শিক্ষার গুনগত মান ও শিক্ষার কার্যক্রম ব্যাহত হয়।
বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি লোহাগাড়া উপজেলা শাখার সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রধান শিক্ষক নেই সেগুলোতে অচিরেই প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া জরুরী। কারণ স্কূলের কর্মরত শিক্ষকরা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালনের সময় অনেক সমস্যার সৃষ্ঠি হয়। লোহাগাড়ার ৪০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দিলে শিক্ষার মান আরও প্রসার হবে।
তিনি আরও বলেন, একটি স্কুলে প্রধান শিক্ষক না থাকলে স্কুলের শিক্ষাব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়ে। প্রধান শিক্ষকেরা প্রশাসনিক ও একাডেমিক দায়িত্ব পালন করে। প্রধান শিক্ষক না থাকলে শিক্ষার পাশাপাশি প্রশাসনিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়।
মধ্য লোহাগাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা শাহিন আকতার বলেন, একজনে দুটি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমাদের অনেক কষ্ট হয়। ২০২০সাল থেকে এ দায়িত্ব পালন করে আসছি,কোন পদোন্নতি এখনো পায়নি। তাই বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হলে শিক্ষার মান আরও ত্বরান্বিত হবে।
পদুয়া আলি সিকদার পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি, শিক্ষানুরাগী নুরুল ইসলাম সিকদার বলেন, আমাদের স্কুলের প্রধান শিক্ষক পদটি দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। সহকারী শিক্ষক দিয়েই চলছে স্কুল। প্রধান শিক্ষক না থাকার,কারণে বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিয়েছে, শিক্ষার মান ব্যাঘাত হচ্ছে। দ্রুত এসব শূন্য পদে শিক্ষক নিয়োগ না দিলে পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের সঠিক পাঠদান দেওয়া সম্ভব হবে না। পাশাপাশি ঝরে যাওয়া শিশুদের স্কুলমুখী করার পরিকল্পনা করে তাদের স্কুলে ফেরাতে হবে। পড়ালেখায় পিছিয়ে পড়ে শিক্ষার মানে ব্যাঘাত সৃষ্টি হবে। দ্রুত সময়ে শূন্য পদে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ নিলে শিক্ষার মান ফিরিয়ে আসবে।
শিক্ষাবিদ নাছির আহমদ বলেন,ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়ে বিদ্যালয় পরিচালনায় শিক্ষক স্বল্পতার কারণে পাঠদান বিঘ্নিত হচ্ছে। প্রশাসনিক কাজ সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন করতে অসুবিধা হচ্ছে। দুইটি দায়িত্ব একসাথে পালন করায় স্বাভাবিক কাজ করতেও বিঘ্নিত হতে হচ্ছে। অনতিবিলম্বে প্রধান শিক্ষকের শূণ্য পদে নিয়োগ দেয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি।
বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন লোহাগাড়া উপজেলা শাখার সভাপতি অধ্যাপক হামিদুর রহমান বলেন,প্রধান শিক্ষক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার কেন্দ্রবিন্দিু। সেক্ষেত্রে পদটি শূন্য থাকলে কার্যক্রম পরিচালনা বিঘ্নতা ঘটে এবং নানা জটিলতা সৃষ্টি হয়। সুন্দর পরিবেশে ফিরিয়ে আনতে প্রধান শিক্ষকের বিকল্প নেই। অতি দ্রুত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে খুব শূন্যপদগুলো পূরণের জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।
লোহাগাড়া উপজেলা সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা আবু জাফর বলেন, লোহাগাড়ার ৪০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। সেসব স্কুলগুলো তালিকা করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে দ্রুত সময়ে পাঠানো হবে।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ ইবনে মাসুদ রানা বলেন, আমি নতুন যোগদান করেছি। আগামী মাসে সমন্বয় সভায় বিষয়টা উপস্থাপন করব। ইউএনও স্যারের সুপারিশ নিয়ে সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষের কাছে অবগত করা হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

লোহাগাড়া ৪০ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক সংকট: প্রতিনিয়ত ব্যহত হছে পাঠদানে

আপডেট সময় :

চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলায় ১০৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্য ৪০টি প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। এসব বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের শূন্যপদ ভারপ্রাপ্তদের দিয়েই চলছে শিক্ষার কার্যক্রম। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক সংকটের কারণে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে বলে জানা গেছে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে ১০৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। যার ৪টি ক্লাস্টারে ভাগ করা হয়েছে। লোহাগাড়ায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৯হাজার ৫৭৭জন।
১০৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৪০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদ শূন্য রয়েছে। যার ফলে শিক্ষার কার্যক্রম চালাতে শিক্ষক-শিক্ষিকারা রীতিমত হিমশিম খাচ্ছে।
পদুয়া ওয়াডবারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অলক কান্তি দাশ বলেন, পদ একটি দায়িত্ব দুটি পালন করতে খুব কস্ট হয়ে যায়। দ্রুত প্রধান শিক্ষক নিয়োগ নিলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার মান বাড়বে এবং আমাদের বাড়তি কাজ কমে যাবে।
আমিরাবাদ জনকল্যাণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মুক্তা দাশ বলেন, লোহাগাড়ার অনেক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই। ভারপ্রাপ্ত দিয়ে স্কুল কার্যক্রম চালাতে জটিলতা সৃষ্টি হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রধান শিক্ষক না থাকলে শিক্ষার গুনগত মান ও শিক্ষার কার্যক্রম ব্যাহত হয়।
বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি লোহাগাড়া উপজেলা শাখার সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রধান শিক্ষক নেই সেগুলোতে অচিরেই প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া জরুরী। কারণ স্কূলের কর্মরত শিক্ষকরা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালনের সময় অনেক সমস্যার সৃষ্ঠি হয়। লোহাগাড়ার ৪০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দিলে শিক্ষার মান আরও প্রসার হবে।
তিনি আরও বলেন, একটি স্কুলে প্রধান শিক্ষক না থাকলে স্কুলের শিক্ষাব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়ে। প্রধান শিক্ষকেরা প্রশাসনিক ও একাডেমিক দায়িত্ব পালন করে। প্রধান শিক্ষক না থাকলে শিক্ষার পাশাপাশি প্রশাসনিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়।
মধ্য লোহাগাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা শাহিন আকতার বলেন, একজনে দুটি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমাদের অনেক কষ্ট হয়। ২০২০সাল থেকে এ দায়িত্ব পালন করে আসছি,কোন পদোন্নতি এখনো পায়নি। তাই বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হলে শিক্ষার মান আরও ত্বরান্বিত হবে।
পদুয়া আলি সিকদার পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি, শিক্ষানুরাগী নুরুল ইসলাম সিকদার বলেন, আমাদের স্কুলের প্রধান শিক্ষক পদটি দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। সহকারী শিক্ষক দিয়েই চলছে স্কুল। প্রধান শিক্ষক না থাকার,কারণে বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিয়েছে, শিক্ষার মান ব্যাঘাত হচ্ছে। দ্রুত এসব শূন্য পদে শিক্ষক নিয়োগ না দিলে পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের সঠিক পাঠদান দেওয়া সম্ভব হবে না। পাশাপাশি ঝরে যাওয়া শিশুদের স্কুলমুখী করার পরিকল্পনা করে তাদের স্কুলে ফেরাতে হবে। পড়ালেখায় পিছিয়ে পড়ে শিক্ষার মানে ব্যাঘাত সৃষ্টি হবে। দ্রুত সময়ে শূন্য পদে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ নিলে শিক্ষার মান ফিরিয়ে আসবে।
শিক্ষাবিদ নাছির আহমদ বলেন,ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়ে বিদ্যালয় পরিচালনায় শিক্ষক স্বল্পতার কারণে পাঠদান বিঘ্নিত হচ্ছে। প্রশাসনিক কাজ সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন করতে অসুবিধা হচ্ছে। দুইটি দায়িত্ব একসাথে পালন করায় স্বাভাবিক কাজ করতেও বিঘ্নিত হতে হচ্ছে। অনতিবিলম্বে প্রধান শিক্ষকের শূণ্য পদে নিয়োগ দেয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি।
বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন লোহাগাড়া উপজেলা শাখার সভাপতি অধ্যাপক হামিদুর রহমান বলেন,প্রধান শিক্ষক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার কেন্দ্রবিন্দিু। সেক্ষেত্রে পদটি শূন্য থাকলে কার্যক্রম পরিচালনা বিঘ্নতা ঘটে এবং নানা জটিলতা সৃষ্টি হয়। সুন্দর পরিবেশে ফিরিয়ে আনতে প্রধান শিক্ষকের বিকল্প নেই। অতি দ্রুত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে খুব শূন্যপদগুলো পূরণের জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।
লোহাগাড়া উপজেলা সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা আবু জাফর বলেন, লোহাগাড়ার ৪০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। সেসব স্কুলগুলো তালিকা করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে দ্রুত সময়ে পাঠানো হবে।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ ইবনে মাসুদ রানা বলেন, আমি নতুন যোগদান করেছি। আগামী মাসে সমন্বয় সভায় বিষয়টা উপস্থাপন করব। ইউএনও স্যারের সুপারিশ নিয়ে সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষের কাছে অবগত করা হবে।