ঢাকা ০৩:১৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

শিবগঞ্জে আকস্মিক বন্যায় পানিবন্দী প্রায় ১১ হাজার পরিবার

শিবগঞ্জ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ৪৭ বার পড়া হয়েছে

filter: 0; fileterIntensity: 0.0; filterMask: 0; module: h; hw-remosaic: 0; touch: (0.6462963, 0.6462963); modeInfo: ; sceneMode: 32768; cct_value: 0; AI_Scene: (23, -1); aec_lux: 50.976192; hist255: 0.0; hist252~255: 0.0; hist0~15: 0.0;

দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত পদ্মা নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রায় চারটি ইউনিয়নের মানুষ পানিবন্ধী হয়ে পড়েছে। পানিবন্ধী অবস্থায় প্রায় ১১ হাজার পরিবার দূর্বিসহ জীবন যাপন করছে। অনেকগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। প্রায় ৫’শ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। উপজেলা প্রশাসন ইতিমধ্যে বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শণ করেছেন।তবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড ও শিবগঞ্জ কৃষি বিভাগের মতে বন্যার পানি এখনো বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে . ৪৩ সেন্টিমিটার বাকী রয়েছে। সরজমিনে পাঁকা,উজিরপুর, মনাকষা ও দূর্লভপুর ইউনিয়ন ঘুরে দেখা ও সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে পাঁকা ও উজিরপুর ইউনিয়নের সম্পূর্ণ ও দূর্লভপুর ও মনাকষা ইউনিয়নের আংশিক এলাকা বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এ চারটি ইউনিয়নের প্রায় ২০ গ্রামের মানুষ বর্তমানে পানিবন্দী অবস্থায় জীবনযাপণ করছে। দূর্লভপুর ইউনিয়নের বাদশাহ পাড়া গ্রামের প্রতিবন্দী গুমানী মন্ডল জানান, মাত্র কয়েকদিন আগে আমার শেষ সম্বলটুকু সর্বনাশা পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। খোলা আকাশের নিচে বাস করছি। একই এলাকার সোহরাব আলি জানান, বাড়ি ঘর ভেঙ্গে নৌকা যোগে অন্যাত্রে যাবার পথে নৌকা ডুবে যা ছিল তাও হারিয়ে ফেলেছি। এখন আমি পরিবার নিয়ে নিরুপায়। পন্ডিত পাড়ার জামাল উদ্দিন জানান, নদীর ভাঙ্গন ও বন্যার পানি যেন আমাদের কাছে রাহুগ্রাসে পরিণত হয়েছে। পাঁকা ইউনিয়নের আব্দুল বারী মাস্টার জানান, কয়েকবার ভাঙ্গনের কবলে পড়ে নাজেহার অবস্থায় আছি,তারপর আবার এবারের বন্যা ভয়াবহ রুপ ধারণ করায় দিশেহারা হয়ে পড়েছি। দূর্লভপুর ইউপি চেয়ারম্যাম গোলাম আযম জানান, দূর্লভপুর ইউনিয়নের বর্তমানে তিন হাজার পরিবারের প্রায় ১৫ হাজার মানুষ পানি বন্ধী জীবনযাপন করছে। সরজমিনে দেখা গেছে অনেকেই গরুছাগল অন্যাত্রে রেখে এসেছে। আলো চুলায় রান্নার করছে। ছোট ছোট শিশুদের চকি ও টেবিলে ওপরে রেখে সার্বক্ষণিক নজরবন্দী করে রেখেছে। তবে কোন আশ্রয়ন স্থল না থাকায় অনেকেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ও বাধ রোডের ওপর আশ্রয় নিয়েছে। অন্যাদিকে পাঁকা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক জানান,পাঁকা ইউনিয়নের প্রায় পাঁচ হাজার পরিবারের ২৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় অসহায় জীবনযাপন করছে। বন্যার পানি এখনো বৃদ্ধি পাচ্ছে। বন্যা এখন ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। মনাকষা ইউনিয়নের সচিব আব্দুর রাকিব জানান, মনাকষা ইউনিয়নের সিংনগর, চর সিংনগর, রামনাথপুর,তারাপুর ভবানীপুর, রানীনগর হঠাৎপাড়া, হাঙ্গামী,ঠুঠাপাড়া পারচৌকা নতুনপাড়া সহ প্রায় ১০ গ্রামের মানুষ বন্যার পানিতে বন্দী হয়ে পড়েছে। তারমধ্যে ৩’শ পরিবার একেবারে অসাহয় হয়ে পড়েছে। আমরা ইতিমধ্যে এলাকা পরিদর্শণ করেছি। তবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী রকিবুল ইসলাম জানান, পদ্মা নদীর পানি আরো দুদিন বৃদ্ধি পাওযার সম্ভবনা আছে। বর্তমানে বিপদসীমার চেয়ে .৪৩সেন্টিমিটারের নীচে নদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছে। বর্তমানে ওয়াটার প্লেয়িং আছে ২১.৬৪ সেন্টিমিটার। শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার নয়ন মিঞা জানান, পদ্মা নদীর পানি অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় ৪২৭ হেক্টর জমির বিভিন্ন ধরনের ফসল তলিয়ে গেছে। তার মধ্যে ৩৯৫ হেক্টর জমির আউস ধান, ২৫ হেক্টর জমির সবজি, পাঁচ হেক্টর জমির হলুল ও দুই হেক্টর জমির কলা তলিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের তালিকা তৈরীর প্রস্তুতি নিচ্ছি। শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আজাহার আলি জানান, গত রবিবার বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছি।পদ্মা নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রায় চারটি ইউনিয়নের সাড়ে সাত হাজার পরিবার পানি বন্ধী হয়ে পড়েছে। ১২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলোর তালিকা তৈরী করা হয়েছে। আজ সোমবার জেলা প্রশাসক আব্দুস সামাদের নেতৃত্বে প্রায় ৫০০ পরিবারের মাঝে শুকনা খাবার,টিন, নগদ টাকা, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হয়েছে। বন্যা কবলিত মানুষের সহযোগিতায় প্রশাসন সচেষ্ট রয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

শিবগঞ্জে আকস্মিক বন্যায় পানিবন্দী প্রায় ১১ হাজার পরিবার

আপডেট সময় :

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত পদ্মা নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রায় চারটি ইউনিয়নের মানুষ পানিবন্ধী হয়ে পড়েছে। পানিবন্ধী অবস্থায় প্রায় ১১ হাজার পরিবার দূর্বিসহ জীবন যাপন করছে। অনেকগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। প্রায় ৫’শ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। উপজেলা প্রশাসন ইতিমধ্যে বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শণ করেছেন।তবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড ও শিবগঞ্জ কৃষি বিভাগের মতে বন্যার পানি এখনো বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে . ৪৩ সেন্টিমিটার বাকী রয়েছে। সরজমিনে পাঁকা,উজিরপুর, মনাকষা ও দূর্লভপুর ইউনিয়ন ঘুরে দেখা ও সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে পাঁকা ও উজিরপুর ইউনিয়নের সম্পূর্ণ ও দূর্লভপুর ও মনাকষা ইউনিয়নের আংশিক এলাকা বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এ চারটি ইউনিয়নের প্রায় ২০ গ্রামের মানুষ বর্তমানে পানিবন্দী অবস্থায় জীবনযাপণ করছে। দূর্লভপুর ইউনিয়নের বাদশাহ পাড়া গ্রামের প্রতিবন্দী গুমানী মন্ডল জানান, মাত্র কয়েকদিন আগে আমার শেষ সম্বলটুকু সর্বনাশা পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। খোলা আকাশের নিচে বাস করছি। একই এলাকার সোহরাব আলি জানান, বাড়ি ঘর ভেঙ্গে নৌকা যোগে অন্যাত্রে যাবার পথে নৌকা ডুবে যা ছিল তাও হারিয়ে ফেলেছি। এখন আমি পরিবার নিয়ে নিরুপায়। পন্ডিত পাড়ার জামাল উদ্দিন জানান, নদীর ভাঙ্গন ও বন্যার পানি যেন আমাদের কাছে রাহুগ্রাসে পরিণত হয়েছে। পাঁকা ইউনিয়নের আব্দুল বারী মাস্টার জানান, কয়েকবার ভাঙ্গনের কবলে পড়ে নাজেহার অবস্থায় আছি,তারপর আবার এবারের বন্যা ভয়াবহ রুপ ধারণ করায় দিশেহারা হয়ে পড়েছি। দূর্লভপুর ইউপি চেয়ারম্যাম গোলাম আযম জানান, দূর্লভপুর ইউনিয়নের বর্তমানে তিন হাজার পরিবারের প্রায় ১৫ হাজার মানুষ পানি বন্ধী জীবনযাপন করছে। সরজমিনে দেখা গেছে অনেকেই গরুছাগল অন্যাত্রে রেখে এসেছে। আলো চুলায় রান্নার করছে। ছোট ছোট শিশুদের চকি ও টেবিলে ওপরে রেখে সার্বক্ষণিক নজরবন্দী করে রেখেছে। তবে কোন আশ্রয়ন স্থল না থাকায় অনেকেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ও বাধ রোডের ওপর আশ্রয় নিয়েছে। অন্যাদিকে পাঁকা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক জানান,পাঁকা ইউনিয়নের প্রায় পাঁচ হাজার পরিবারের ২৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় অসহায় জীবনযাপন করছে। বন্যার পানি এখনো বৃদ্ধি পাচ্ছে। বন্যা এখন ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। মনাকষা ইউনিয়নের সচিব আব্দুর রাকিব জানান, মনাকষা ইউনিয়নের সিংনগর, চর সিংনগর, রামনাথপুর,তারাপুর ভবানীপুর, রানীনগর হঠাৎপাড়া, হাঙ্গামী,ঠুঠাপাড়া পারচৌকা নতুনপাড়া সহ প্রায় ১০ গ্রামের মানুষ বন্যার পানিতে বন্দী হয়ে পড়েছে। তারমধ্যে ৩’শ পরিবার একেবারে অসাহয় হয়ে পড়েছে। আমরা ইতিমধ্যে এলাকা পরিদর্শণ করেছি। তবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী রকিবুল ইসলাম জানান, পদ্মা নদীর পানি আরো দুদিন বৃদ্ধি পাওযার সম্ভবনা আছে। বর্তমানে বিপদসীমার চেয়ে .৪৩সেন্টিমিটারের নীচে নদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছে। বর্তমানে ওয়াটার প্লেয়িং আছে ২১.৬৪ সেন্টিমিটার। শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার নয়ন মিঞা জানান, পদ্মা নদীর পানি অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় ৪২৭ হেক্টর জমির বিভিন্ন ধরনের ফসল তলিয়ে গেছে। তার মধ্যে ৩৯৫ হেক্টর জমির আউস ধান, ২৫ হেক্টর জমির সবজি, পাঁচ হেক্টর জমির হলুল ও দুই হেক্টর জমির কলা তলিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের তালিকা তৈরীর প্রস্তুতি নিচ্ছি। শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আজাহার আলি জানান, গত রবিবার বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছি।পদ্মা নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রায় চারটি ইউনিয়নের সাড়ে সাত হাজার পরিবার পানি বন্ধী হয়ে পড়েছে। ১২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলোর তালিকা তৈরী করা হয়েছে। আজ সোমবার জেলা প্রশাসক আব্দুস সামাদের নেতৃত্বে প্রায় ৫০০ পরিবারের মাঝে শুকনা খাবার,টিন, নগদ টাকা, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হয়েছে। বন্যা কবলিত মানুষের সহযোগিতায় প্রশাসন সচেষ্ট রয়েছে।