শ্রেষ্ঠ সন্তানদের শ্রদ্ধা জানাতে স্মৃতিসৌধে গণমানুষের ঢল
- আপডেট সময় : ০৮:০৩:৪০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪ ৯০ বার পড়া হয়েছে
১৬ ডিসেম্বর পরাধীনতার শিকল ছিঁড়ে মুক্তির স্বাদ পেয়েছে বাঙালি জাতি। দিনটির প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর গণমানুষের জন্য উন্মুক্ত করা হয় জাতীয় স্মৃতিসৌধের প্রধান ফটক। এদিন কাতারে কাতারে মানুষ স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে প্রবেশ করে। স্মৃতিসৌধজুড়ে নামে গণমানুষের ঢল।
দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করে ৩০ লাখ শহীদ ও দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে যে বিজয় পেয়েছে বাঙালি, সেই বিজয়ের দিনে শহীদদের শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করছে জাতি। বিজয়ের আনন্দে দলে দলে স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে প্রবেশ করছে মানুষ। স্মরণকালের সমাবেশের মধ্য দিয়ে সোমবার বাংলাদেশে উদযাপন করা হলো ১৬ ডিসেম্বর তথা মহান বিজয় দিবস।
১৯৭১ সালে ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত বিজয় আসার দিনটি উদযাপন করতে দেশজুড়ে দিনভর ছিল নানা আয়োজন। ছিলো বিজয় দিবসের কনসার্ট। সেখানেও ছিলো স্মরণকালের সমাবেশ।
পৌষের সকালে শীত উপেক্ষা করে জাতীয় স্মৃতিসৌধে প্রবেশের অপেক্ষা করছিলেন হাজারো জনতা। ভোরের আলো ফুটতেই শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন, প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস এবং বাংলাদেশে সফররত পূর্ব তিমুরের প্রেসিডেন্ট হোসে রামোস।
তাদের আগমন ঘিরে চারপাশে ছিল কঠোর নিরাপত্তা। তারা চলে যেতেই হাজারো মানুষের স্রোত ঢুকে পড়ে স্মৃতিসৌধে। মুহূর্তে যেন বিজয়ের আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে চারপাশে।
নারীদের কেউ এসেছিলেন লাল-সবুজ শাড়িতে সেজে, পুরুষদের কেউ কেউ পরেছেন পাঞ্জাবি। লাল-সবুজের আধিক্য ছিল শিশুদের পোশাকেও। কারো কপালে ছিল লাল-সবুজের টিপ; কারো মাথার লাল-সবুজের পতাকা; কপালেও বেঁধেছেন কেউ কেউ। লাল-সবুজের ফুলগাছগুলোও তাদের সঙ্গে মিশে যায়।
আশুলিয়ার খেজুরবাগান এলাকা থেকে বন্ধুর সঙ্গে স্মৃতিসৌধে এসেছিলেন মোহাম্মদ জাকিরুল ইসলাম, পেশায় তিনি নির্মাণ শ্রমিক।
১৯৭১ সালে যারা মারা গেছেন, তাদের জন্য দোয়া করতে এসেছেন। এখানে এলে তাদের কথা মনে পড়ে, তাদের জন্য হৃদয় কাঁদে। যেসব বীর মুক্তিযোদ্ধা বেঁচে আছেন, তাদের দীর্ঘায়ু কামনা করেন তিনি।
এবারের বিজয় দিবসের আলাদা তাৎপর্য তুলে ধরেন অনেকে। কেন? বলেন, এই মানব ঢল বলে দিচ্ছে, মুক্ত পরিবেশে তারা উচ্ছ্বল। কতটা দূরন্তপনা শিশু-কিশোরদের মাঝে। অনাবিল এই আনন্দ হারিয়ে গিয়েছিলো প্রায়।
এই সৌধের সঙ্গে যে নানা ইতিহাস জড়িয়ে আছে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চে অপারেশন সার্চলাইটের মধ্য দিয়ে গণহত্যা শুরু করে পাকিস্তানি বাহিনী। শুধু হয় প্রতিরোধ যুদ্ধ। সেই লড়াইয়ে চূড়ান্ত বিজয় আসে ১৬ ডিসেম্বর।
বিজয় দিবসে সরকারি ছুটির দিনে দেশের সব সরকারি-আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনাগুলোয় করা হয় আলোকসজ্জা। সাজানো হয় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপ।
দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, বাংলাদেশ শিশু একাডেমিসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শিশুদের চিত্রাঙ্কন, রচনা ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এবং মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনের আয়োজন করে।