সংবাদ শিরোনাম ::
পাথরঘাটায় শ্রমিক দলনেতার হামলায় ৫ শিক্ষক আহত
সংবাদ সম্মেলনে অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মসূচি ঘোষণা

মোঃ ফিরোজ হোসেন পাথরঘাটা (বরগুনা)
- আপডেট সময় : ১২:৫২:১৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ৪ মে ২০২৫ ৩৫ বার পড়া হয়েছে
দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, দ্রুত গ্রেফতার, বিচার না হওয়া পর্যন্ত সকল শিক্ষকের বিদ্যালয়ে দুই ঘন্টা কর্ম বিরতি, প্রতি বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের নিয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি ঘোষণা দেয়া হয়েছে। শনিবার (৩ মে) বেলা ১১ টায় দিকে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি, পাথরঘাটা উপজেলা শাখার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব ঘোষণা দেন সদস্য সচিব নেছার উদ্দিনসহ কয়েকশ’ শিক্ষক।
এর আগে শুক্রবার (২ মে) পাথরঘাটা উপজেলা পরিষদের সামনে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষকের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ অভিযোগ রয়েছে উপজেলা শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক বাকী বিল্লাহ ফরাজী ও তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে। এ ঘটনার পর আহত ৫ শিক্ষককে পাথরঘাটা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
আহত শিক্ষকরা হলেন, পদ্মা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. রেজাউল ইসলাম, চরটানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আতিকুর রহমান, গোলবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গোলাম রব্বানী, পাথরঘাটা আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাইনুর রহমান ও হোগলাপাশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. দুলাল গাজী। তাদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
আহত শিক্ষকরা জানান, বুধবার পৌরশহরের ইমান আলী সড়ক দিয়ে যাচ্ছিল গোলবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক গোলাম রব্বানী। সড়কের গনি মোক্তারের বাসার সামনে পৌঁছলে বিপরীত দিক থেকে বাকী বিল্লাহ ফরাজীর ছোট ভাই সফিউল্লাহ ফরাজী সাইকেল নিয়ে আসার সময় দুজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। বিষয়টি মীমাংসা করিয়ে দিতে শিক্ষক নেতারা বসতে চাইলে শুক্রবার সকালে সময় দেওয়া হয়। শিক্ষকরা নির্ধারিত সময়ে পৌঁছে, উপজেলা পরিষদের সামনের একটি চায়ের দোকানে চা খাওয়ার সময় লোহার পাইপ ও রড দিয়ে শিক্ষকদের ওপরে অতর্কিত হামলা করেন বাকী বিল্লাহ, তার ভাই সফিউল্লাহ ও গোলাম কিবরিয়াসহ কয়েকজন।
এ বিষয়ে বাকী বিল্লাহ অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা সম্পূর্র্ণ মিথ্যা। যাদের মারধর করা হয়েছে তারা সবাই এর আগে ছাত্রলীগ করত। তিনি বলেন, উপজেলা পরিষদের সামনে গিয়ে দেখেন কিছু লোক গন্ডগোল করছেন। তিনি তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেন।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষক সমিতির সদস্য সচিব নেছার উদ্দিন ও অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মতিয়ার রহমান অভিযোগ করেন, শিক্ষকরা হচ্ছে জাতি গড়ার কারিগর। শিক্ষকদের প্রকাশ্যে মারধর করা এটা দুঃখজনক। চিকিৎসার জন্য শিক্ষকদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময়ও বাঁধা প্রদান করা হয়।
সিংড়াবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আখতারুজ্জামান বাদল বলেন, আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতারসহ দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হয় তাহলে পাথরঘাটায় ৮১৮ জন শিক্ষক মাঠে নামবো। শুধু তাই নয় সারাদেশে সাড়ে ৪ লাখ শিক্ষক মাঠে নামবে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সাহেব সভাপতি মাওলানা শামীম আহমেদ বলেন, শিক্ষকদের উপর হামলার ঘটনা দুঃখজনক। আমরা ভিডিও দেখেছি কিভাবে শিক্ষকদের গায়ে লাথি মারে। বর্তমানে এ সমস্ত সন্ত্রাসীরা দখল, চাঁদাবাজি করছে। আমরা এদের আইনের আওতায় আনা উচিত।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সাহেব সভাপতি মাওলানা শামীম আহমেদ, চরদুয়ানী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমান প্রমুখ। এ সময় অভিযুক্ত বাকী বিল্লাহ ফরাজী ও শফিউল্লাহ ফরাজীর বাবা শিক্ষক আবু জাফর মোহাম্মদ সালেহ এসে সমঝোতার প্রস্তাব দিলে উপস্থিত শিক্ষকরা তা মানেনি।
পাথরঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী হাসান জানান, শিক্ষকদের ওপর হামলার বিষয়টি জানার পর পুলিশ পাঠিয়েছি। এ ঘটনায় কয়েকজন শিক্ষক আহত হয়েছেন। আহতদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি মামলার প্রস্তুতিও চলছে।