সাউথইস্ট ব্যাংকে দুর্নীতির মহোৎসব
সাবেক চেয়ারম্যান ও এমডির দুর্নীতি ধামাচাপার চেষ্টা
- আপডেট সময় : ১৩৮ বার পড়া হয়েছে
সাউথইস্ট ব্যাংকের শত শত কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগ আদালতের স্টে অর্ডারের পরও থেমে নেই আলমগীর কবির ও তার ছেলে রায়হান কবিরের কোটি কোটি টাকা বিদেশে অর্থপাচার, স্বজনপ্রীতি ও ঋণ জালিয়াতি। আদালতের তাদের দেশত্যাগ নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও অনিয়ম দৃশ্যমান।
সাউথইস্ট ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আলমগীর কবির এবং তার ছেলে, সাবেক পরিচালক রায়হান কবির দেশের ব্যাংকিং ইতিহাসে এক অন্ধকার অধ্যায়ের কেন্দ্রবিন্দুতে। বাংলাদেশের স্বনামধন্য এবং সুপ্রতিষ্টিত এই ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান এবং পরিচালক তার ছেলের দুর্নীতি এবং স্বজনপ্রীতির তথ্য এখন সকলের মুখে মুখে।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) তাদের বিরুদ্ধে প্রায় ২০০ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে বলে একটি পরিদর্শন প্রতিবেদন তৈরি করেছে। তারা সিঙ্গাপুরে পালানোর চেষ্টা করেছেন, কিন্তু ব্যর্থ হয়েছেন। চেয়ারম্যানের ক্ষমতার কারণে কেউ সরাসরি প্রশ্ন তুলতে পারেনি। অনিয়ম ধীরে ধীরে নিয়মে পরিণত হয়েছিল ব্যাংকটিতে বলে অভিযোগ করেন একজন ভুক্তভোগী।
বিএফআইইউর তথ্য বলছে, রায়হান কবির এবং তার পুত্রবধূ নুসরাত নাহার ২০১২ সালে সিঙ্গাপুরে ‘আর অ্যান্ড এন হোল্ডিংস পিটিই লিমিটেড’ নামে একটি কোম্পানি খোলেন। এর পরিশোধিত মূলধন ১৪ লাখ সিঙ্গাপুরি ডলার বৈধ উপায়ে এ অর্থ দেশে নেয়া হয়নি, ব্যাংক ১৭টি এলসি খুলে ১ কোটি ৫৯ লাখ ১১ হাজার ৫৮৪ ডলার বিদেশে পাচার নিশ্চিত করেছে, যা বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী প্রায় ১৯৪ কোটি টাকা।
ব্যাংকটির ভুক্তভোগীরা জানান, আমরা কখনো জানতে পারিনি এলসির প্রকৃত গন্তব্য কোথায় যাচ্ছে। নথিপত্র সবসময় গোপন রাখা হয়েছিল । বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এটি একটি সিস্টেমেটিক অর্থ পাচারের প্রক্রিয়া, যেখানে ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তারা সরাসরি জড়িত। রায়হান কবিরের শ্বশুরের প্রতিষ্ঠানের ঋণ স্থিতির তুলনায় ১৩ কোটি টাকা বেশি সুদ মওকুফ করা হয়েছে। এছাড়া ১০ টাকার শেয়ার ২৫ টাকায় কেনা হয়েছে। অভিযোগ কারীরা এবং ভুক্তভোগীরা জানান সাবেক চেয়ারম্যান এবং পরিচালক পরিবারসহ সহযোগীদের সুবিধার জন্য সমস্ত ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করতেন।বিশেষজ্ঞরা মনে করেন এটি সংগঠিত স্বজনপ্রীতি এবং আর্থিক অনিয়মের উদাহরণ, যা ব্যাংকিং নীতিমালার প্রতি চরম অবমাননা।বিএফআইইউ এর প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ব্যাংকের ক্রেডিট কমিটি, ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকিং, ট্রেজারি, সিআরএম, সিএফও ও শাখার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অনিয়মে সরাসরি সহযোগিতা করেছেন।
সূত্র জানায়, ব্যাংকের বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ ইতোমধ্যেই প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তথ্যগুলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে পাঠিয়েছে। ভুক্তভোগীরা বলেন, যদি এই সহায়তা না থাকতো, কেউ এত দীর্ঘ সময় অনিয়ম চালাতে পারত না। বিএফআইইউর তথ্য অনুযায়ী, লুব রেফ বাংলাদেশের শেয়ার তালিকাভুক্তির আগে ৩৩ কোটি ৫০ লাখ টাকার প্রি-আইপিও শেয়ার কিনেছিল ব্যাংক। প্রতিটি শেয়ার কিনা হয়েছে ২৫ টাকায়, যেখানে মূল মূল্য ১০ টাকা, ঋণস্থিতির তুলনায় ১৩ কোটি টাকার অতিরিক্ত সুদ মওকুফ, ব্যাংক কোম্পানি আইন ও পরিচালকদের স্বার্থসংশ্লিষ্টতার নিয়ম ভঙ্গ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের প্রি-আইপিও শেয়ার ক্রয় ও ঋণ মওকুফ সিস্টেমেটিক আর্থিক অপরাধের পরিচায়ক।
বিএফআইইউ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন ফায়ারওয়াল, লোকাল ট্রাফিক ম্যানেজার ও ডিএনএস গার্ড সফটওয়্যার কেনার ক্ষেত্রে অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় ২০০ কোটি টাকা ব্যাংকের অ্যানুয়াল বাজেটের বাইরে ব্যয় করা হয়েছে। ২০২১ সালে নতুন কমিটি গঠন করে পর্ষদ অনুমোদন দেয়, বে লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টে ১৪৬ কোটি টাকার মেয়াদি আমানত রাখা হয়, পরে আরও ৫৪ কোটি টাকা ধার দেওয়া হয়, এই প্রতিষ্ঠানের সাবেক চেয়ারম্যান আলমগীর কবিরের স্ত্রীকে ।
দুদকের আবেদনের পর ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ মো. জাকির হোসেনের আদালত আলমগীর কবির ও রায়হান কবিরের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন। আদালত নিশ্চিত করে, তাদের বিদেশে পলায়ন রোধ করা প্রয়োজন পুলিশ বিশেষ শাখার (এসবি) নির্দেশনা রয়েছে, তারা কোনোভাবেই দেশত্যাগ করতে পারবেন না, বিশেষজ্ঞরা বলেন, কোর্টের স্টে অর্ডারের পরও অনিয়ম এখনও চলছে।
























