সারাদেশে টানটান উত্তেজনা
- আপডেট সময় : ৪২ বার পড়া হয়েছে
আওয়ামী লীগের ঢাকা লকডাউন আজ, প্রতিরোধে মাঠে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি
*নাশকতার আশঙ্কায় দেশজুড়ে কড়া নজরদারি
*দেশজুড়ে সহিংসতা ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি
*নাশকতা ঠেকাতে বিমানবন্দর ও সীমান্তে সতর্কতা
*নো ম্যানস ল্যান্ড ও চেকপোস্টে বিশেষ নজরদারি
রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সহিংসতার পটভূমিতে সারাদেশে বিরাজ করছে টানটান উত্তেজনা। কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ঘোষিত আজকের ঢাকা লকডাউন কর্মসূচিকে ঘিরে রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে জোরদার করা হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পাল্টা অবস্থান নিয়েছে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি। তারা বলছে, আওয়ামী লীগের আগ্রাসী তৎপরতা প্রতিরোধে তারা রাজপথে থাকবে। সম্ভাব্য নাশকতা ঠেকাতে পুলিশ, র্যাব ও ডিবির পাশাপাশি বিজিবিকেও মাঠে নামানো হয়েছে। সব মিলিয়ে দেশজুড়ে এখন নিরাপত্তা বাহিনীর সর্বোচ্চ সতর্কতা আর রাজনৈতিক উত্তেজনার তীব্র ছায়া। রাজধানীতে টানা দুই দিন অভিযান চালিয়ে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ৪৪ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগ।
ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীতে ৯টি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ১৭টি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় গত অক্টোবর থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের (কার্যক্রম নিষিদ্ধ) ৫৫২ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, কার্যক্রম নিষিদ্ধ একটি দল রাজধানীতে ঝটিকা মিছিল ও বিস্ফোরণের মাধ্যমে আতঙ্ক সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে। এদের অনেকেই ঢাকার বাইরে থেকে অর্থের বিনিময়ে নাশকতায় অংশ নিচ্ছে। তবে জনগণ আমাদের পাশে আছে-তাই যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা প্রস্তুত। ডিএমপি কমিশনার জানান, হাইকোর্ট এলাকা, সচিবালয় এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, যারা আতঙ্ক সৃষ্টি বা নাশকতা চালানোর চেষ্টা করছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনের সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রয়োগ করা হবে। আমরা শুধু মাঠের কর্মীদের নয়, তাদের পেছনের পরিকল্পনাকারীদেরও চিহ্নিত করছি। তিনি আরও বলেন, রাজধানীতে ভীতিকর পরিবেশ তৈরির কোনো সুযোগ নেই। জনগণের সহায়তায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখব।
দেশজুড়ে সহিংসতা ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে বিমানবন্দর ও সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) এক জরুরি নির্দেশনায় দেশের তিনটি আন্তর্জাতিক ও পাঁচটি অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করেছে। বেবিচকের জনসংযোগ কর্মকর্তা কাউছার মাহমুদ জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে বিমানবন্দর এলাকায় সর্বোচ্চ সংখ্যক নিরাপত্তাকর্মী মোতায়েন, ব্যাগেজ ও যানবাহন তল্লাশি জোরদার, অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা সচল রাখা এবং ২৪ ঘণ্টা সিসিটিভি মনিটরিং চালু রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, বিমানবন্দর প্রবেশপথে এলোমেলো তল্লাশি চালানো হচ্ছে। কার্গো ও লাগেজ পরীক্ষার প্রক্রিয়া আরও কঠোর করা হয়েছে। পাশাপাশি সীমান্ত এলাকায়ও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) জানিয়েছে, দেশের সীমান্তবর্তী নো ম্যানস ল্যান্ড, চেকপোস্ট ও বর্ডার আউটপোস্টগুলোতে বিশেষ নজরদারি কার্যক্রম চলছে। সন্দেহজনক কোনো গতিবিধি দেখলেই তাৎক্ষণিকভাবে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের লকডাউন কর্মসূচির প্রভাবে বুধবার সকাল থেকেই রাজধানীর রাস্তায় যানবাহনের সংখ্যা ছিল তুলনামূলক কম। ব্যক্তিগত গাড়ি ও মোটরসাইকেল থামিয়ে তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ। অফিসগামী ও শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে দেখা গেছে ভোগান্তি। রাজধানীর বিভিন্ন মোড়ে পুলিশ ও র্যাবের চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেওয়া হলেও সন্দেহভাজনদের আটক করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
আওয়ামী লীগের লকডাউন কর্মসূচির প্রতিবাদে বুধবার সকালে বিক্ষোভ করেছে ছাত্রদল। বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন স্থানে মিছিল করে সরকারের দমননীতির প্রতিবাদ জানায়। তবে পুলিশের উপস্থিতি ও কঠোর অবস্থানের কারণে বড় ধরনের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। এ অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে সবাইকে শান্ত, সচেতন ও ধৈর্যশীল থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। ডিএমপি কমিশনার বলেন, গুজবে কান না দিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন বজায় রাখুন। সন্দেহজনক কিছু দেখলে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে জানান। রাজধানী ও বিভাগীয় শহরগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। জনগণের সহযোগিতা পেলে যেকোনো পরিস্থিতি আমরা সামাল দিতে সক্ষম।
























