ঢাকা ১২:৪০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৪ মে ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo চট্রগ্রামের মেরিন ড্রাইভ থেকে সাড়ে ৪ কোটি টাকার মদ ও বিয়ার জব্দ Logo ডামুড্যায় শ্রমিকদলের উদ্যোগে মহান মে দিবস পালিত Logo শেরপুরে প্রতিপক্ষের হামলায় আহত হাজী আব্দুর রহিম-এর মৃত্যু Logo নবীনগরে সার্বজনীন গ্রুপের ফ্রি উদ্যোক্তা ও অলরাউন্ডার প্রশিক্ষণের উদ্বোধন Logo শৈলকুপায় সরকারি গাছ কেটে নিলো বিএনপি নেতা! Logo ডামুড্যায়  সড়ক দুর্ঘটনায়  গৃহবধূর মৃত্যু  Logo ইঞ্জিনিয়ার শাহরিন ইসলাম চৌধুরী তুহিনের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও মুক্তির দাবীতে মানববন্ধন Logo বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে অপপ্রচার, প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন Logo ঈশ্বরগঞ্জে রিক্স সমিতির উদ্যোগে  মহান মে দিবস পালিত  Logo কোম্পানীগঞ্জে বাইতুল আমান আর্দশ সমাজ ফুটবল প্রিমিয়ার লীগের মুকুট উঠল নীল সেনাদের মাথায়

হাসিনার আমলে বছরে ১৬ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে শ্বেতপত্র

গণমুক্তি রিপোর্ট
  • আপডেট সময় : ০৬:৩২:০৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৪৪ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

 

বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার টানা ১৫ শাসনামলে বছরে গড়ে প্রায় ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অবৈধভাবে পাচার হয়েছে। দেশের অর্থনীতির সার্বিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে অন্তর্বর্তী সরকার যে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি গঠন করেছে, তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে। রোববার প্রধান উপদেষ্টা নোবেল জয়ী ড. ইউনূসের কাছে এই প্রতিবেদন জমা দেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে গঠিত শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি।

ড. ইউনূস অর্থনীতিখাতের দুর্নীতি খতিয়ে দেখতে এই কমিটি গঠন করেন। তিন মাসের অনুসন্ধান শেষে তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে হস্তান্তর করেছে। প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, শেখ হাসিনার শাসনামলের দুর্নীতি, লুণ্ঠন ও ভয়ংকর রকমের আর্থিক কারচুপির যে চিত্র প্রতিবেদনে পাওয়া গেছে, তা আতঙ্কিত হওয়ার মতো বলে কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস এই যুগান্তকারী কাজের জন্য কমিটিকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, চূড়ান্ত হওয়ার পর এটি জনসাধারণের জন্য প্রকাশ করা উচিত এবং স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করে শিক্ষার্থীদের পড়ানো উচিত। তিনি আরও বলেন, এটি একটি ঐতিহাসিক দলিল। জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর অর্থনীতিকে যে ভঙ্গুর দশায় আমরা পেয়েছি, তা এই রিপোর্টে উঠে এসেছে। জাতি এই নথি থেকে উপকৃত হবে। প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, আমাদের গরিব মানুষের রক্ত পানি করা টাকা যেভাবে তারা লুণ্ঠন করেছে, তা আতঙ্কিত হওয়ার মতো।

দুঃখের বিষয় হলো, তারা প্রকাশ্যে এই লুটপাট চালিয়েছে। আমাদের বেশির ভাগ অংশই এর মোকাবিলা করার সাহস করতে পারেনি। পতিত স্বৈরাচারী শাসনামলে ভয়ের রাজত্ব এতটাই ছিল যে বাংলাদেশের অর্থনীতি পর্যবেক্ষণকারী বহুপক্ষীয় সংস্থাগুলোও এই লুণ্ঠনের ঘটনায় অনেকাংশে নীরব ছিল। কমিটির প্রধান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ ছাড়াই কমিটি স্বাধীনভাবে কাজ করেছে। তিনি বলেন, আমরা যতটা ভেবেছিলাম, সমস্যাটি তার চেয়ে গভীর।

এই ৩০ অধ্যায়ের ৪০০ পৃষ্ঠার দীর্ঘ শ্বেতপত্রে উঠে এসেছে কীভাবে চামচা পুঁজিবাদ (ক্রনি ক্যাপিটালিজম) অলিগার্কদের জন্ম দিয়েছে, কীভাবে তারা নীতি প্রণয়ন নিয়ন্ত্রণ করেছে। কমিটির সদস্য ও সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান জানান, তারা ২৯টি প্রকল্প বাছাই করে তার মধ্যে ৭টি বড় প্রকল্প পরীক্ষা করে দেখেছেন যে প্রতিটিতে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয় হয়েছে।

এই ২৯টি বড় প্রকল্পে মোট ব্যয় হয়েছে ৮৭ বিলিয়ন (৮ হাজার ৭০০ কোটি) ডলার বা ৭ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, পরীক্ষা করা সাতটি প্রকল্পের আনুমানিক প্রাথমিক ব্যয় ছিল ১ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা। অতিরিক্ত উপাদান যোগ করে, জমির দাম বেশি দেখিয়ে এবং ক্রয়ের ক্ষেত্রে হেরফের করে প্রকল্পের ব্যয় সংশোধিত করে ১ লাখ ৯৫ হাজার কোটি টাকা করা হয়। তাঁর মতে, ব্যয়ের সুবিধা বিশ্লেষণ না করেই প্রকল্পের ব্যয় প্রায় ৭০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। সিপিডির সাবেক এই নির্বাহী পরিচালক অর্থ পাচারে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনতে বিচারকাজ শুরুর পরামর্শ দেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

হাসিনার আমলে বছরে ১৬ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে শ্বেতপত্র

আপডেট সময় : ০৬:৩২:০৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১ ডিসেম্বর ২০২৪

 

বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার টানা ১৫ শাসনামলে বছরে গড়ে প্রায় ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অবৈধভাবে পাচার হয়েছে। দেশের অর্থনীতির সার্বিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে অন্তর্বর্তী সরকার যে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি গঠন করেছে, তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে। রোববার প্রধান উপদেষ্টা নোবেল জয়ী ড. ইউনূসের কাছে এই প্রতিবেদন জমা দেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে গঠিত শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি।

ড. ইউনূস অর্থনীতিখাতের দুর্নীতি খতিয়ে দেখতে এই কমিটি গঠন করেন। তিন মাসের অনুসন্ধান শেষে তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে হস্তান্তর করেছে। প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, শেখ হাসিনার শাসনামলের দুর্নীতি, লুণ্ঠন ও ভয়ংকর রকমের আর্থিক কারচুপির যে চিত্র প্রতিবেদনে পাওয়া গেছে, তা আতঙ্কিত হওয়ার মতো বলে কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস এই যুগান্তকারী কাজের জন্য কমিটিকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, চূড়ান্ত হওয়ার পর এটি জনসাধারণের জন্য প্রকাশ করা উচিত এবং স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করে শিক্ষার্থীদের পড়ানো উচিত। তিনি আরও বলেন, এটি একটি ঐতিহাসিক দলিল। জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর অর্থনীতিকে যে ভঙ্গুর দশায় আমরা পেয়েছি, তা এই রিপোর্টে উঠে এসেছে। জাতি এই নথি থেকে উপকৃত হবে। প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, আমাদের গরিব মানুষের রক্ত পানি করা টাকা যেভাবে তারা লুণ্ঠন করেছে, তা আতঙ্কিত হওয়ার মতো।

দুঃখের বিষয় হলো, তারা প্রকাশ্যে এই লুটপাট চালিয়েছে। আমাদের বেশির ভাগ অংশই এর মোকাবিলা করার সাহস করতে পারেনি। পতিত স্বৈরাচারী শাসনামলে ভয়ের রাজত্ব এতটাই ছিল যে বাংলাদেশের অর্থনীতি পর্যবেক্ষণকারী বহুপক্ষীয় সংস্থাগুলোও এই লুণ্ঠনের ঘটনায় অনেকাংশে নীরব ছিল। কমিটির প্রধান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ ছাড়াই কমিটি স্বাধীনভাবে কাজ করেছে। তিনি বলেন, আমরা যতটা ভেবেছিলাম, সমস্যাটি তার চেয়ে গভীর।

এই ৩০ অধ্যায়ের ৪০০ পৃষ্ঠার দীর্ঘ শ্বেতপত্রে উঠে এসেছে কীভাবে চামচা পুঁজিবাদ (ক্রনি ক্যাপিটালিজম) অলিগার্কদের জন্ম দিয়েছে, কীভাবে তারা নীতি প্রণয়ন নিয়ন্ত্রণ করেছে। কমিটির সদস্য ও সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান জানান, তারা ২৯টি প্রকল্প বাছাই করে তার মধ্যে ৭টি বড় প্রকল্প পরীক্ষা করে দেখেছেন যে প্রতিটিতে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয় হয়েছে।

এই ২৯টি বড় প্রকল্পে মোট ব্যয় হয়েছে ৮৭ বিলিয়ন (৮ হাজার ৭০০ কোটি) ডলার বা ৭ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, পরীক্ষা করা সাতটি প্রকল্পের আনুমানিক প্রাথমিক ব্যয় ছিল ১ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা। অতিরিক্ত উপাদান যোগ করে, জমির দাম বেশি দেখিয়ে এবং ক্রয়ের ক্ষেত্রে হেরফের করে প্রকল্পের ব্যয় সংশোধিত করে ১ লাখ ৯৫ হাজার কোটি টাকা করা হয়। তাঁর মতে, ব্যয়ের সুবিধা বিশ্লেষণ না করেই প্রকল্পের ব্যয় প্রায় ৭০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। সিপিডির সাবেক এই নির্বাহী পরিচালক অর্থ পাচারে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনতে বিচারকাজ শুরুর পরামর্শ দেন।