ঢাকা ০৯:৩৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo জাকসুতে ৪০ ঘণ্টার নাটকীয়তা Logo কাশিয়ানীতে যুবকের মরদেহ উদ্ধার Logo মহেশখালীতে হত্যা চেষ্টা ও ডাকাতির প্রস্তুতি মামলার ৭ আসামি গ্রেপ্তার Logo ইসলামপুরে মিথ্যাচার ও ন্যায় বিচারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন Logo সালথা প্রেসক্লাবের দ্বিবার্ষিক নির্বাচনে সভাপতি নাহিদ সাধারণ সম্পাদক সাইফুল Logo কালীগঞ্জে হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বিএনপির মতবিনিময় সভা Logo রুপগঞ্জে নৌকাডুবিতে নিখোঁজ দুই কিশোরের মৃতদেহ উদ্ধার করেছে কোস্টগার্ড Logo বাগেরহাটে বিআরটিসি গাড়ির অবৈধ কাউন্টার ও মহাসড়কে ইজিবাইক, মাহেন্দ্র, নসিমন, করিমন বন্ধের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন Logo জামালপুরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে মতবিনিময় অনুষ্ঠিত Logo বাংলাদেশ ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন বড়াইগ্রাম শাখা অফিস শুভ উদ্বোধন

১২ বছর শিকলবন্দি ভাই-বোন অর্থাভাবে হয়নি চিকিৎসা, পাশে দাঁড়ালেন ইউএনও

মো. খাইরুল ইসলাম, কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ)
  • আপডেট সময় : ৪৬ বার পড়া হয়েছে

oppo_0

দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে আছমা খাতুন (২৮) ও তার ছোট ভাই জাহাঙ্গীর (২৫) দীর্ঘদিন ধরে শিকলবন্দি জীবন কাটাচ্ছেন। আছমা ১২ বছর আর জাহাঙ্গীর ১০ বছর ধরে হাত-পায়ে শিকল বাঁধা অবস্থায় মানবেতর দিনযাপন করছেন।
অর্থাভাবে এতদিন তাদের চিকিৎসা হয়নি। বিষয়টি সংবাদকর্মীদের মাধ্যমে জানতে পেরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. মাঈদুল ইসলাম শনিবার বিকেলে তাদের বাড়িতে ছুটে যান। পরে তিনি পাবনা মানসিক হাসপাতালে পাঠিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
স্থানীয়রা জানান, ভাঙাচোরা ঘরের এক কোণে আছমার পা লোহার শিকলে বাঁধা থাকে। খানিকটা দূরে খুঁটির সঙ্গে বাঁধা থাকে জাহাঙ্গীর। শীত-গ্রীষ্ম, দিন-রাত একইভাবে ঘরের খুঁটি কিংবা গাছের সঙ্গে শিকলবন্দি থাকতে হয় তাদের। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে, খেয়ে-না খেয়ে বছরের পর বছর কাটছে তাদের জীবন।
আছমা ও জাহাঙ্গীর আচমিতা ইউনিয়নের গণেরগাঁও গ্রামের দরিদ্র দিনমজুর ফজলু মিয়ার সন্তান। বয়সের ভারে ন্যুব্জ মা-কে নিয়ে বৃদ্ধ বাবা দিনমজুরি করে সংসার চালান। দারিদ্র্যের কারণে দুই ভাই-বোনের চিকিৎসার খরচ বহন করতে না পেরে সন্তানরা যাতে হারিয়ে না যায় কিংবা কারও ক্ষতি না করে— এ আশঙ্কায় দীর্ঘদিন তাদের শিকলে বেঁধে রাখা হয়।
বোন সালমা আক্তার জানান, মাত্র ১৫ বছর বয়সে আছমা গার্মেন্টসে কাজ শুরু করেন। ভবিষ্যতের জন্য কিছু টাকা স্থানীয় এক ব্যক্তির কাছে জমা রাখলেও ওই ব্যক্তি টাকা আত্মসাৎ করে উধাও হয়ে গেলে মানসিক ভারসাম্য হারান তিনি। সেই থেকে আছমা শিকলবন্দি জীবনযাপন করছেন। কয়েক বছর পর প্রেমঘটিত কারণে মানসিক ভারসাম্য হারালে ভাই জাহাঙ্গীরকেও শিকলে বেঁধে রাখা হয়।
সালমা আরও বলেন, “আমরা চার বোন ও এক ভাই। তিন বোনের বিয়ে হয়েছে। আমাদের কোনো জমিজমা নেই, ঘরে কোনো আসবাব নেই। তিনবেলা ঠিকমতো খেতে পাই না। মানুষ দিলে খাই, না দিলে উপোস থাকতে হয়। চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য আমাদের নেই।”
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাঈদুল ইসলাম জানান, “১২ বছর ধরে শিকলবন্দি ভাই-বোনের বিষয়টি দৈনিক গণমুক্তি-এর উপজেলা প্রতিনিধির কাছ থেকে জেনে সমাজসেবা কর্মকর্তাকে নিয়ে তাদের বাড়িতে গিয়েছি। তাদের চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছি। সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।”

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

১২ বছর শিকলবন্দি ভাই-বোন অর্থাভাবে হয়নি চিকিৎসা, পাশে দাঁড়ালেন ইউএনও

আপডেট সময় :

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে আছমা খাতুন (২৮) ও তার ছোট ভাই জাহাঙ্গীর (২৫) দীর্ঘদিন ধরে শিকলবন্দি জীবন কাটাচ্ছেন। আছমা ১২ বছর আর জাহাঙ্গীর ১০ বছর ধরে হাত-পায়ে শিকল বাঁধা অবস্থায় মানবেতর দিনযাপন করছেন।
অর্থাভাবে এতদিন তাদের চিকিৎসা হয়নি। বিষয়টি সংবাদকর্মীদের মাধ্যমে জানতে পেরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. মাঈদুল ইসলাম শনিবার বিকেলে তাদের বাড়িতে ছুটে যান। পরে তিনি পাবনা মানসিক হাসপাতালে পাঠিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
স্থানীয়রা জানান, ভাঙাচোরা ঘরের এক কোণে আছমার পা লোহার শিকলে বাঁধা থাকে। খানিকটা দূরে খুঁটির সঙ্গে বাঁধা থাকে জাহাঙ্গীর। শীত-গ্রীষ্ম, দিন-রাত একইভাবে ঘরের খুঁটি কিংবা গাছের সঙ্গে শিকলবন্দি থাকতে হয় তাদের। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে, খেয়ে-না খেয়ে বছরের পর বছর কাটছে তাদের জীবন।
আছমা ও জাহাঙ্গীর আচমিতা ইউনিয়নের গণেরগাঁও গ্রামের দরিদ্র দিনমজুর ফজলু মিয়ার সন্তান। বয়সের ভারে ন্যুব্জ মা-কে নিয়ে বৃদ্ধ বাবা দিনমজুরি করে সংসার চালান। দারিদ্র্যের কারণে দুই ভাই-বোনের চিকিৎসার খরচ বহন করতে না পেরে সন্তানরা যাতে হারিয়ে না যায় কিংবা কারও ক্ষতি না করে— এ আশঙ্কায় দীর্ঘদিন তাদের শিকলে বেঁধে রাখা হয়।
বোন সালমা আক্তার জানান, মাত্র ১৫ বছর বয়সে আছমা গার্মেন্টসে কাজ শুরু করেন। ভবিষ্যতের জন্য কিছু টাকা স্থানীয় এক ব্যক্তির কাছে জমা রাখলেও ওই ব্যক্তি টাকা আত্মসাৎ করে উধাও হয়ে গেলে মানসিক ভারসাম্য হারান তিনি। সেই থেকে আছমা শিকলবন্দি জীবনযাপন করছেন। কয়েক বছর পর প্রেমঘটিত কারণে মানসিক ভারসাম্য হারালে ভাই জাহাঙ্গীরকেও শিকলে বেঁধে রাখা হয়।
সালমা আরও বলেন, “আমরা চার বোন ও এক ভাই। তিন বোনের বিয়ে হয়েছে। আমাদের কোনো জমিজমা নেই, ঘরে কোনো আসবাব নেই। তিনবেলা ঠিকমতো খেতে পাই না। মানুষ দিলে খাই, না দিলে উপোস থাকতে হয়। চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য আমাদের নেই।”
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাঈদুল ইসলাম জানান, “১২ বছর ধরে শিকলবন্দি ভাই-বোনের বিষয়টি দৈনিক গণমুক্তি-এর উপজেলা প্রতিনিধির কাছ থেকে জেনে সমাজসেবা কর্মকর্তাকে নিয়ে তাদের বাড়িতে গিয়েছি। তাদের চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছি। সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।”