ঢাকা ১২:৩৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৫

নবীনগরে উন্নয়নের নামে হরিলুট

১৮ কোটি টাকার প্রকল্পে নিম্নমানের ইট ব্যবহারের অভিযোগ

নবীনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ৫৫ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে সাড়ে ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন একটি সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পে চরম অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অর্থায়নে লাউর ফতেহপুর বাশারুক বাজার থেকে বিটঘর পর্যন্ত প্রায় ৩.৯ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ১৮ ফুট প্রস্থের পিচঢালা এই সড়কে চারটি সেতু নির্মাণের কথা রয়েছে।
তবে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রকল্পের শুরু থেকেই কাজের মান নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন। সড়কের বিভিন্ন অংশে ব্যবহৃত হচ্ছে দুই নম্বর ইট ও অপর্যাপ্ত বালু। কোথাও কোথাও ইটের বদলে ফেলা হয়েছে সাধারণ মাটি। ফলে পাকা হওয়ার আগেই সড়কের কিছু অংশে বসে গেছে স্তর।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, এই সড়ক নিয়ে তাঁদের দীর্ঘদিনের আশা ছিল। কিন্তু কাজের বর্তমান অবস্থা দেখে হতাশা আর ক্ষোভ প্রকাশ করছেন সবাই।
লাউর ফতেহপুর এলাকার হেলাল উদ্দিন বলেন, “তারা যে ইট দিয়েছে, সব দুই নাম্বার। অনেক জায়গায় তো ইটই দেয়নি। এই কাজের মান যদি তদন্ত হয়, সব বের হয়ে যাবে। আমরা চাই সরকারি তদন্ত হোক।”
স্থানীয় আরেক বাসিন্দা সুমন মিয়া বলেন, “বহু বছর রাস্তাটা ছিল অচল। এখন কাজ শুরু হলেও কোনো মান নেই। মিঠা ইট দেয়ার ফলে রাস্তা বেশি দিন টিকবে না।”
একই অভিযোগ পথচারী শামীম মিয়ার, “তিন বছর রাস্তা ফেলে রাখার পর দলীয় প্রভাবে কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু এখনো গুণগত মানের কোনো তদারকি নেই।”
স্থানীয় ব্যবসায়ী শাহআলম বলেন, “এই রাস্তার স্বপ্ন আমরা অনেক আগে থেকেই দেখেছি। সবাই ভেবেছিল ভালো রাস্তা হবে, ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়বে। কিন্তু যা হচ্ছে, তা শুধু দুর্নীতির উদাহরণ।”
স্থানীয়দের দাবি, ‘ইউনুসেন ব্রাদার্স’ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে কাজটি নিয়েছে। কাজের মান রক্ষার চেয়ে দ্রুত কাগজপত্রে কাজ দেখিয়ে বিল তোলাতেই তাদের বেশি আগ্রহ।
একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শ্রমিক জানান, “আমাদের বলা হয় বেশি বালু দিও, ইট কম দাও। অনেক জায়গায় মাটি দিয়েই ভরাট করতে হয়। আর যারা তদারকি করতে আসে, তাদের আগেই ম্যানেজ করা থাকে।”
লাউর ফতেহপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “প্রথম দিকে কাজের মান খুবই খারাপ ছিল। আমরা চাপ না দিলে ঠিকাদার যেমন খুশি তেমনভাবে কাজ শেষ করে দিত। এখন কিছুটা উন্নতি হয়েছে, কিন্তু এখনও সন্তোষজনক নয়।”
এদিকে নবীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাজীব চৌধুরী বলেন, “বিষয়টি তদন্তাধীন। প্রয়োজনে জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী ও জেলা প্রশাসককে অবগত করা হবে।আমরা চাই গুণগত মান বজায় রেখে কাজ শেষ হোক, যাতে জনগণের ভোগান্তি না হয়।”
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ‘ইউনুসেন ব্রাদার্স’-এর সাইট ম্যানেজার মো. শাহাদাত হোসেন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “সব অভিযোগ ভিত্তিহীন। প্রকল্পের নকশা অনুযায়ী কাজ চলছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

নবীনগরে উন্নয়নের নামে হরিলুট

১৮ কোটি টাকার প্রকল্পে নিম্নমানের ইট ব্যবহারের অভিযোগ

আপডেট সময় :

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে সাড়ে ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন একটি সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পে চরম অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অর্থায়নে লাউর ফতেহপুর বাশারুক বাজার থেকে বিটঘর পর্যন্ত প্রায় ৩.৯ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ১৮ ফুট প্রস্থের পিচঢালা এই সড়কে চারটি সেতু নির্মাণের কথা রয়েছে।
তবে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রকল্পের শুরু থেকেই কাজের মান নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন। সড়কের বিভিন্ন অংশে ব্যবহৃত হচ্ছে দুই নম্বর ইট ও অপর্যাপ্ত বালু। কোথাও কোথাও ইটের বদলে ফেলা হয়েছে সাধারণ মাটি। ফলে পাকা হওয়ার আগেই সড়কের কিছু অংশে বসে গেছে স্তর।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, এই সড়ক নিয়ে তাঁদের দীর্ঘদিনের আশা ছিল। কিন্তু কাজের বর্তমান অবস্থা দেখে হতাশা আর ক্ষোভ প্রকাশ করছেন সবাই।
লাউর ফতেহপুর এলাকার হেলাল উদ্দিন বলেন, “তারা যে ইট দিয়েছে, সব দুই নাম্বার। অনেক জায়গায় তো ইটই দেয়নি। এই কাজের মান যদি তদন্ত হয়, সব বের হয়ে যাবে। আমরা চাই সরকারি তদন্ত হোক।”
স্থানীয় আরেক বাসিন্দা সুমন মিয়া বলেন, “বহু বছর রাস্তাটা ছিল অচল। এখন কাজ শুরু হলেও কোনো মান নেই। মিঠা ইট দেয়ার ফলে রাস্তা বেশি দিন টিকবে না।”
একই অভিযোগ পথচারী শামীম মিয়ার, “তিন বছর রাস্তা ফেলে রাখার পর দলীয় প্রভাবে কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু এখনো গুণগত মানের কোনো তদারকি নেই।”
স্থানীয় ব্যবসায়ী শাহআলম বলেন, “এই রাস্তার স্বপ্ন আমরা অনেক আগে থেকেই দেখেছি। সবাই ভেবেছিল ভালো রাস্তা হবে, ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়বে। কিন্তু যা হচ্ছে, তা শুধু দুর্নীতির উদাহরণ।”
স্থানীয়দের দাবি, ‘ইউনুসেন ব্রাদার্স’ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে কাজটি নিয়েছে। কাজের মান রক্ষার চেয়ে দ্রুত কাগজপত্রে কাজ দেখিয়ে বিল তোলাতেই তাদের বেশি আগ্রহ।
একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শ্রমিক জানান, “আমাদের বলা হয় বেশি বালু দিও, ইট কম দাও। অনেক জায়গায় মাটি দিয়েই ভরাট করতে হয়। আর যারা তদারকি করতে আসে, তাদের আগেই ম্যানেজ করা থাকে।”
লাউর ফতেহপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “প্রথম দিকে কাজের মান খুবই খারাপ ছিল। আমরা চাপ না দিলে ঠিকাদার যেমন খুশি তেমনভাবে কাজ শেষ করে দিত। এখন কিছুটা উন্নতি হয়েছে, কিন্তু এখনও সন্তোষজনক নয়।”
এদিকে নবীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাজীব চৌধুরী বলেন, “বিষয়টি তদন্তাধীন। প্রয়োজনে জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী ও জেলা প্রশাসককে অবগত করা হবে।আমরা চাই গুণগত মান বজায় রেখে কাজ শেষ হোক, যাতে জনগণের ভোগান্তি না হয়।”
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ‘ইউনুসেন ব্রাদার্স’-এর সাইট ম্যানেজার মো. শাহাদাত হোসেন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “সব অভিযোগ ভিত্তিহীন। প্রকল্পের নকশা অনুযায়ী কাজ চলছে।