ঢাকা ০৬:১৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo জুলাই পুনর্জাগরণ উপলক্ষে মুক্তাগাছায় পরিচ্ছন্নতা অভিযান Logo স্ত্রীর ধোঁকায় যুবকের আত্মহনন Logo শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে মাসিক আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত Logo রাজবাড়ীতে যুবককে কুপিয়ে হত্যা মামলায় দুই আসামির যাবজ্জীবন Logo মাছরাঙা টেলিভিশনের বান্দরবানে ১৪তম বর্ষপূর্তি উদযাপন Logo ভাণ্ডারিয়ায় শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট বিতরণ Logo নগরকান্দা উপজেলায় আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত Logo কমিউনিটিভিত্তিক মডেলে মাঠ ও পার্ক ব্যবস্থাপনা করবে ডিএনসিসি Logo দুর্নীতির অভিযোগে সাবেক ২ জেলা প্রশাসকসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান Logo শিবগঞ্জে নদীগর্ভে প্রায় ৮০টি বাড়ি, ঝুকিতে শতাধিক পরিবার

অপরাধী শনাক্তে কাজে আসছে সিসি ক্যামেরা

স্টাফ রিপোর্টার
  • আপডেট সময় : ২৯ বার পড়া হয়েছে
দৈনিক গনমুক্তি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় চুরি, ছিনতাই, খুন, সন্ত্রাসী হামলা কিংবা সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্রে জড়িতদের শনাক্তে সিসি ক্যামেরা ফুটেজ এখন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি, সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়া দৃশ্যের ভিত্তিতে অপরাধীর পরিচয়, গতিপথ, এমনকি সহযোগীদেরও শনাক্ত করা যাচ্ছে দ্রুত সময়ের মধ্যে। সম্প্রতি রাজধানীর মিটফোর্ড এলাকায় নৃশংস হত্যাকান্ড, কাকরাইল, মগবাজার ও গুলিস্তানে তিন পৃথক ছিনতাইয়ের ঘটনায় সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে অপরাধীদের গ্রেফতার করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
ঢাকা মহানগর পুলিশের উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে রাজধানীর প্রধান সড়ক, মোড় ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অনেক সিসি ক্যামেরা রয়েছে। ফলে যে কোনো ঘটনার পর পরই আমাদের পর্যাপ্ত ভিজ্যুয়াল তথ্য মেলে। এতে অপরাধী শনাক্ত ও গ্রেফতারে সময় কম লাগে। অনেক সময় অপরাধীরা মুখ ঢেকে রাখলেও হাঁটার ভঙ্গি, উচ্চতা, পোশাক বা অন্যান্য সূত্র ধরে প্রযুক্তির মাধ্যমে তাদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়। প্রযুক্তির এই সুফল আরও কার্যকর করতে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ, ভালো মানের ক্যামেরা স্থাপন এবং পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা থাকা জরুরি বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
২০১২ সালে ডিএমপি কমিশনারের উদ্যোগে রাজধানীতে সিসি ক্যামেরা স্থাপন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। ওই সময় সম্পূর্ণ বেসরকারি অর্থায়নে ‘ল অ্যান্ড অর্ডার কো-অর্ডিনেশন কমিটি’ বা এলওসিসি নামের একটি ট্রাস্ট গড়ে তোলা হয়। ট্রাস্টের অধীন গুলশান, বনানী, নিকেতন, বারিধারা ও ডিওএইচএস এলাকায় এক হাজার ৪০০ ক্যামেরা স্থাপন করা হয়। গুলশানে একটি আধুনিক মনিটরিং সেন্টার স্থাপন করে সেখান থেকেই করা হয় মনিটর। এছাড়া ডিএমপির অপারেশনস বিভাগ, আইসিটি বিভাগ ও এমআইএস শাখার মাধ্যমে নবাব আব্দুল গনি রোডে সেন্ট্রাল কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টার থেকে মনিটর করা হয় সাত শতাধিক সিসি ক্যামেরা। পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণের মাধ্যমে এক হাজার ৪০০টির বেশি মামলার রহস্য উদঘাটন হয়েছে। আগের বছরের তুলনায় যা ৩৫ শতাংশ বেশি। সিসিটিভির কার্যকারিতার পাশাপাশি কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। অনেক সময় দুর্বল রেজ্যুলেশনের কারণে অপরাধীর মুখ স্পষ্ট দেখা যায় না। কেউ কেউ মুখ ঢেকে ক্যামেরার আওতা এড়িয়ে যায়। এছাড়া, কিছু এলাকায় এখনো পর্যাপ্ত সিসিটিভি কাভারেজ নেই।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নগরজুড়ে সিসি ক্যামেরা স্থাপন ও রক্ষণাবেক্ষণ আরও জোরদার করা গেলে অপরাধ দমন অনেকটাই সহজ হবে। একই সঙ্গে জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিতেও এটি বড় ভূমিকা রাখবে। জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বেশ কিছু সিসি ক্যামেরা নষ্ট করে ফেলে দুর্বৃত্তরা। এর মধ্যে মোহাম্মদপুর, বাড্ডা, রামপুরা, ভাটারা, মিরপুর, উত্তরা, মতিঝিল ও যাত্রাবাড়ী এলাকার বেশিরভাগ সিসি ক্যামেরা নষ্ট করে ফেলা হয়। ফলে এসব এলাকায় সংঘটিত অপরাধে জড়িতদের শনাক্তে বেগ পেতে হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের।
ডিএমপির এক কর্মকর্তা বলেন, অপরাধীরা অপরাধ করে সব সময় ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকার চেষ্টা করে। সিসিটিভি কাভারেজ রয়েছে এমন জায়গা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে তারা। কাভারেজ নেই এমন জায়গা বাছাই করে চুরি-ছিনতাই, হত্যা, মারামারিসহ নানান অপরাধ ঘটায়। এমন বেশ কয়েকটি ঘটনার কূলকিনারা করতে পারছেন না গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তারা। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে অপরাধী শনাক্ত হলেও অনেক সময় তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে পারছেন না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। যদিও অপরাধ করে কেউ পার পাচ্ছে না। তদন্ত এবং বিভিন্ন বিষয় পর্যালোচনা করতে সময় লাগলেও তাদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। আরেক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, গুলশান-বারিধারা ডিপ্লোম্যাটিক জোন হওয়ায় সেখানে সবচেয়ে বেশি সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। এই ক্যামেরার কারণে অনেক উপকারও পাচ্ছে পুলিশ। রাজধানীর অন্য এলাকার তুলনায় এ এলাকায় অপরাধও কম।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির ডিসি (মিডিয়া) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, রাজধানীতে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা। ডিএমপি থেকে ক্যামেরাগুলো পরিচালনা করা হয়। যেসব ক্যামেরা নষ্ট, সেগুলো মেরামত করা হচ্ছে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে জড়িত অপরাধীদের শনাক্তের পর দ্রুতই গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা যাচ্ছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

অপরাধী শনাক্তে কাজে আসছে সিসি ক্যামেরা

আপডেট সময় :

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় চুরি, ছিনতাই, খুন, সন্ত্রাসী হামলা কিংবা সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্রে জড়িতদের শনাক্তে সিসি ক্যামেরা ফুটেজ এখন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি, সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়া দৃশ্যের ভিত্তিতে অপরাধীর পরিচয়, গতিপথ, এমনকি সহযোগীদেরও শনাক্ত করা যাচ্ছে দ্রুত সময়ের মধ্যে। সম্প্রতি রাজধানীর মিটফোর্ড এলাকায় নৃশংস হত্যাকান্ড, কাকরাইল, মগবাজার ও গুলিস্তানে তিন পৃথক ছিনতাইয়ের ঘটনায় সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে অপরাধীদের গ্রেফতার করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
ঢাকা মহানগর পুলিশের উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে রাজধানীর প্রধান সড়ক, মোড় ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অনেক সিসি ক্যামেরা রয়েছে। ফলে যে কোনো ঘটনার পর পরই আমাদের পর্যাপ্ত ভিজ্যুয়াল তথ্য মেলে। এতে অপরাধী শনাক্ত ও গ্রেফতারে সময় কম লাগে। অনেক সময় অপরাধীরা মুখ ঢেকে রাখলেও হাঁটার ভঙ্গি, উচ্চতা, পোশাক বা অন্যান্য সূত্র ধরে প্রযুক্তির মাধ্যমে তাদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়। প্রযুক্তির এই সুফল আরও কার্যকর করতে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ, ভালো মানের ক্যামেরা স্থাপন এবং পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা থাকা জরুরি বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
২০১২ সালে ডিএমপি কমিশনারের উদ্যোগে রাজধানীতে সিসি ক্যামেরা স্থাপন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। ওই সময় সম্পূর্ণ বেসরকারি অর্থায়নে ‘ল অ্যান্ড অর্ডার কো-অর্ডিনেশন কমিটি’ বা এলওসিসি নামের একটি ট্রাস্ট গড়ে তোলা হয়। ট্রাস্টের অধীন গুলশান, বনানী, নিকেতন, বারিধারা ও ডিওএইচএস এলাকায় এক হাজার ৪০০ ক্যামেরা স্থাপন করা হয়। গুলশানে একটি আধুনিক মনিটরিং সেন্টার স্থাপন করে সেখান থেকেই করা হয় মনিটর। এছাড়া ডিএমপির অপারেশনস বিভাগ, আইসিটি বিভাগ ও এমআইএস শাখার মাধ্যমে নবাব আব্দুল গনি রোডে সেন্ট্রাল কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টার থেকে মনিটর করা হয় সাত শতাধিক সিসি ক্যামেরা। পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণের মাধ্যমে এক হাজার ৪০০টির বেশি মামলার রহস্য উদঘাটন হয়েছে। আগের বছরের তুলনায় যা ৩৫ শতাংশ বেশি। সিসিটিভির কার্যকারিতার পাশাপাশি কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। অনেক সময় দুর্বল রেজ্যুলেশনের কারণে অপরাধীর মুখ স্পষ্ট দেখা যায় না। কেউ কেউ মুখ ঢেকে ক্যামেরার আওতা এড়িয়ে যায়। এছাড়া, কিছু এলাকায় এখনো পর্যাপ্ত সিসিটিভি কাভারেজ নেই।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নগরজুড়ে সিসি ক্যামেরা স্থাপন ও রক্ষণাবেক্ষণ আরও জোরদার করা গেলে অপরাধ দমন অনেকটাই সহজ হবে। একই সঙ্গে জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিতেও এটি বড় ভূমিকা রাখবে। জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বেশ কিছু সিসি ক্যামেরা নষ্ট করে ফেলে দুর্বৃত্তরা। এর মধ্যে মোহাম্মদপুর, বাড্ডা, রামপুরা, ভাটারা, মিরপুর, উত্তরা, মতিঝিল ও যাত্রাবাড়ী এলাকার বেশিরভাগ সিসি ক্যামেরা নষ্ট করে ফেলা হয়। ফলে এসব এলাকায় সংঘটিত অপরাধে জড়িতদের শনাক্তে বেগ পেতে হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের।
ডিএমপির এক কর্মকর্তা বলেন, অপরাধীরা অপরাধ করে সব সময় ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকার চেষ্টা করে। সিসিটিভি কাভারেজ রয়েছে এমন জায়গা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে তারা। কাভারেজ নেই এমন জায়গা বাছাই করে চুরি-ছিনতাই, হত্যা, মারামারিসহ নানান অপরাধ ঘটায়। এমন বেশ কয়েকটি ঘটনার কূলকিনারা করতে পারছেন না গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তারা। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে অপরাধী শনাক্ত হলেও অনেক সময় তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে পারছেন না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। যদিও অপরাধ করে কেউ পার পাচ্ছে না। তদন্ত এবং বিভিন্ন বিষয় পর্যালোচনা করতে সময় লাগলেও তাদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। আরেক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, গুলশান-বারিধারা ডিপ্লোম্যাটিক জোন হওয়ায় সেখানে সবচেয়ে বেশি সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। এই ক্যামেরার কারণে অনেক উপকারও পাচ্ছে পুলিশ। রাজধানীর অন্য এলাকার তুলনায় এ এলাকায় অপরাধও কম।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির ডিসি (মিডিয়া) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, রাজধানীতে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা। ডিএমপি থেকে ক্যামেরাগুলো পরিচালনা করা হয়। যেসব ক্যামেরা নষ্ট, সেগুলো মেরামত করা হচ্ছে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে জড়িত অপরাধীদের শনাক্তের পর দ্রুতই গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা যাচ্ছে।